পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ ওরফে মন্টি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই পুলিশের হাতে ধরা পড়ায় আন্ডারওয়ার্ল্ডের সদস্যদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। একই সাথে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কতিপয় দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীর মধ্যে। যাদের সাথে বছরের পর বছর ধরে সখ্যতা ছিল তার। যার মাধ্যমে টেন্ডারবাজি, জমি দখল ও প্রতিপক্ষকে গায়েল করার কাজে ব্যবহার করা হতো জিসানকে।
সম্প্রতি র্যাবের ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ও জি কে শামীম গ্রেফতার হওয়ার পর শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদের ঢাকার কানেকশন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসে। এর পর ইন্টারপোলের মাধ্যমে তথ্য প্রদান করা হলে দুবাই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। দ্রত তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। কারণ তার কাছে রয়েছে এই অন্ধকার জগতের যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত। একটি দায়িত্বশীল সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সংস্থার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীরা বিদেশে বসে ঢাকার অপরাধ জগৎ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে- সেসব প্রক্রিয়ার একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র এখন গোয়েন্দাদের হাতে। শুধু তাই নয়, তাদের (খালেদ-শামীম) দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই জিসানের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে তাকে (জিসান) সহজেই গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় দুবাই পুলিশ। জিসান ধরা পড়ায় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আশীর্বাদ নিয়ে ঠিকাদারিসহ বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ লুটকারীরাও এখন আতঙ্কে আছেন। গ্রেফতার এড়াতে তাদের অনেকেই গা-ঢাকা দিয়েছেন। কেউ কেউ বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা ঘন ঘন জায়গা বদল করছেন।
তিনি আরো বলেন, অনেকে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো ও ভাইবারে যোগাযোগ করছেন। তবে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে সন্ত্রাসীদের যোগাযোগ শনাক্ত করতে সক্রিয় রয়েছে পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থা। চাঁদা, টেন্ডারবাজি, গরুর হাট, ঝুট ও ডিশ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, জমি-বাড়ি দখল এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কানেকশনের তথ্য রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে। বিভিন্ন সময় কতিপয় দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী জি কে শামীম ও খালেদ মাহমুদের মাধ্যমে জিসানকে ব্যবহার করে টেন্ডারবাজি ও জমি-বাড়ি-মার্কেট দখলের যে সহযোগিতা নিয়েছিল সে সব তথ্য নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হবে জিসানকে। এ জন্য জিসানকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে গ্রেফতার তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে জানিয়েছেন গতকাল শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, শিগগিরই তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের মুখোমুখি করা হবে।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, জিসানকে দুবাই থেকে ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে আমাদের বন্দি বিনিময় চুক্তি নেই। তবে তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক চমৎকার। পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে তাকে ফেরত আনার চেষ্টা চলছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ও জি কে শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন র্যাবের এমন একজন কর্মকর্তা জানান, খালেদ মাহমুদকে গ্রেফতারের পর জিসানের নাম নতুন করে আলোচনায় আসে। তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলেও স্বীকার করেছে জি কে শামীম এবং খালেদ মাহমুদ। টেন্ডার ও চাঁদাবাজি এবং দখলকান্ডে জিসানের সহযোগিতা নিতো ওই দু’জন। এমনকি জিসানকে তারা হুন্ডির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা পাঠাতো। কিন্তু এক থেকে দেড় বছর তারা জিসানের বলয় থেকে বেরিয়ে নিজেরাই আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছিল। এ নিয়ে জিসান তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়। এরপরই তাদের সঙ্গে শত্রুতা তৈরি হয় জিসানের। এ নিয়ে খালেদ ও শামীম দুবাইয়ে জিসানের সঙ্গে বৈঠকও করে। কিন্তু সমঝোতা না হওয়ায় কয়েক মাস আগে খালেদ ও শামীমকে খুন করতে ঢাকায় একে-২২ মডেলের অত্যাধুনিক অস্ত্র পাঠায়। জুলাইয়ের শেষের দিকে একে-২২-সহ জিসানের দুই সহযোগী ধরা পড়ে। এ সময় কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা জি কে শামীম ও খালেদ মাহমুদের পক্ষে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেন। সম্প্রতি ঢাকায় ক্যাসিনো কান্ডের আগে সিঙ্গাপুরে ম্যারিনা বে স্যান্ডস হোটেলে ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, যুবলীগ নেতা খালেদা মাহমুদ ভূঁইয়া ও জিসানের বৈঠক হয়েছিল বলে জানতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেই বৈঠকে জিসান তাদের কাছে ক্যাসিনো চালানো বাবদ আয়কৃত টাকা থেকে ১০ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
তিনি আরো বলেন, জিজ্ঞাসাবাদ ও অন্যান্য তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, রাজধানীর মিরপুরের পাইকপাড়ার শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ এখন ভারতে পলাতক। তার ভাই আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রকাশ কুমার বিশ্বাস এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে ফ্রান্সের প্যারিসে বসবাস করছে। মিরপুরের আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাত হোসেন ও তার শিষ্য তানভীরুল ইসলাম জয় এবং সুব্রত বাইন এখন ভারতে পলাতক। জিসানের এক সময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হারিস এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ এই সন্ত্রাসীরা অনেক সময় স্থান পরিবর্তন করে।
সানরাইজ হোটেল দুই পুলিশকে হত্যা
২০০২-০৩ সালে জিসান মতিঝিলের খালেদের সঙ্গে টেন্ডারবাজি করতে থাকে। খালেদ ছিল তৎকালীন পূর্ত মন্ত্রী মির্জা আব্বাসের ছোট ভাই মির্জা খোকনের বন্ধু। ফলে গণপূর্তে জি কে শামীম ও খালেদ এককভাবে টেন্ডারবাজি করে যায়। টেন্ডারবাজিতে ভয়ভীতি দেখাতে জিসান গ্রুপ ও শাহাজাদা গ্রুপ অস্ত্রবাজি করত। এই দুই গ্রুপ রামপুরা ও মালিবাগ এলাকায় প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিত। ২০০৩ সালের ১৫ মে রাতে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ১৫ লাখ টাকা ছিনতাই করতে যায় জিসান গ্রুপ। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তৎকালীন এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সোর্স বাবুল জানায় যে একটা গ্রুপ সানরাইজ হোটেলে অস্ত্র বিক্রি করতে আসবে। পুলিশ অস্ত্র ক্রেতা হিসাবে সেজে গিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করতে পারবে। অপরদিকে, এই সোর্স বাবুল জিসান গ্রুপের কাছে বলেছে যে একটা গ্রুপ ১৫ লাখ টাকা নিয়ে সানরাইজ হোটেলে আসবে। তাদেরকে ভয়ভীতি দেখালেই টাকাটা ছিনতাই করা যাবে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর নুরুল আলম শিকদার এবং এসআই আলমগীর হোসেনসহ ৫ জন সাদা পোশাকের পুলিশ সানরাইজ হোটেলের ১৩ ও ১৪ নম্বর কক্ষ ভাড়া নিয়ে অবস্থান করেন। আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে হঠাৎ হোটেলের দ্বিতীয় তলায় গোলাগুলি শুরু হয়। ৭-৮ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হোটেলের কক্ষ লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে থাকে। পুলিশ সদস্যরা কক্ষ থেকে বের হতেই সামনের বারান্দায় গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন দুই সদস্য। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ সানরাইজ হোটেল ঘেরাও করে। পরে সেখান থেকে থেকে পালানোর সময় মগবাজার এলাকায় পুলিশের গুলিতে জিসান গ্রুপের আলোচিত ক্যাডার মগবাজার উপল নিহত হয়। এ ঘটনার পরপরই জিসান আত্মগোপনে চলে যায়। ২০০৪ সালে ডিবি পুলিশ নিশ্চিত হয় যে জিসান ভারতে আত্মগোপন করেছে। ২০০৫ সালে ডিবি পুলিশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে ইলিয়াস নামে জিসানের এক শিষ্যকে আটক করে। ইলিয়াস সানরাইজ হোটেলে পুলিশকে গুলি করেছিল। পরবর্তীতে ইলিয়াস ডিবি পুলিশের বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।
পুলিশ হত্যার বিচার হয়নি
দুই পুলিশ হত্যা মামলার বিচারকাজ ১৬ বছরেও শেষ হয়নি। ওই ঘটনায় ডিবির তৎকালীন ইন্সপেক্টর জিএম এনামুল হক মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করে ২০০৪ সালের ২ নভেম্বর ডিবির তৎকালীন ইন্সপেক্টর নূর মোহাম্মদ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন জিসান আহমেদ জিসান, তার ভাই শামীম আহমেদ, ইখতিয়ারুল কবির, আরিফুল ইসলাম ওরফে এমরান, স্বপন ওরফে নাসির উদ্দিন, মেহেবুব চৌধুরী শান্ত ওরফে রুদ্র, জসিম উদ্দিন জাসু এবং বাশার ওরফে জামাই বাশার। ৮ আসামির মধ্যে প্রথম চারজন পলাতক রয়েছেন। বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় কারাগারে থাকা অপর ৪ জন আসামি জামিনে আছেন। ২০০৭ সালে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। চার্জগঠনের পর ১২ বছরে মাত্র ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। মামলাটির বিচার কবে শেষ হবে সে বিষয়ে সন্দিহান সংশ্লিষ্টরা।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালে কৌশলে সীমান্ত পর হয়ে জিসান ভারতে চলে যায়। পরে ভারতে বসেই সে ফের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালায়। কারণ সে ভারতের কলকাতায় চলে গেলেও দেশে তার বিশাল অস্ত্রধারী ক্যাডার বাহিনী ছিল। যাদের মাধ্যমে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি নিয়ন্ত্রণে হস্তক্ষেপ করে। এক সময় সে পুরো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যায়। কলকাতায় বসে নানা অপরাধে জড়িয়ে গেলে সেখানকার পুলিশ থাকে গ্রেফতার করে। পরে জিসান ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করে চলে যায় দুবাইতে। সেখানে বসে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যায়। গণপূর্ত, শিক্ষাভবনসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের টেন্ডারবাজিতে একক নিয়ন্ত্রণ ছিল তার। পরে যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াদের সকল অপরাধ নিয়ন্ত্রণে শেল্টার দিত জিসান। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ক্লাবভিত্তিক ক্যাসিনো চালানোর নেপথ্য ছিল তার নাম। বিনিময়ে তার কাছে পৌঁছে যেত নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার ভাগ। গণপূর্ত অধিদপ্তরের টেন্ডারবাজি নিয়ন্ত্রণে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জি কে শামীমকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করত জিসান। যখন টেন্ডার হত তখন জিসান তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের চারপাশ নিয়ন্ত্রণে নিত। জিসানের সহযোগিতা নিয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) থেকে শুরু করে রেলভবন, গণপূর্ত, ক্রীড়া পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব ভবন, কৃষি ভবন, ওয়াসার বিভিন্ন জোনের টেন্ডারের নিয়ন্ত্রণ নেয় তারা (শামীম-খালেদ)। সূত্র জানিয়েছে, দুবাই, জার্মানি থেকে শুরু করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তার যাতায়াত ছিল। এসব দেশ থেকেই ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করত। শীর্ষ পলাতক আরও কয়েকজন সন্ত্রাসীর সঙ্গেও তার সখ্যতা ছিল। সেই সন্ত্রাসীরা অন্য দেশে থাকলেও জিসানের হয়েই কাজ করত তারা। দুবাই এনসিবির কাছে জিসান গ্রেপ্তার হওয়ার খবর পেয়ে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী টিএনটি নাদিম তাকে ছাড়ানোর জন্য তৎপরতা শুরু করেছে। ইতিমধ্যে সে ওই দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলছে। সে যেকোনো উপায়ে জিসানকে মুক্ত করতে চায়। নাদিম ছাড়াও ওয়ারী এলাকার রাজিব হত্যা মামলার আসামি শাকিল ও জিসানের ছোটভাই শামীম মালয়েশিয়া থেকে দুবাই অবস্থান করছে। টিএনটি নাদিম, শাকিল ও শামীম তিনজনই একসঙ্গে অবস্থান করছে। জিসানকে মুক্ত করার পরিকল্পনা করতে তারা বেশ কয়েকটি বৈঠকও করেছে।
ওই সূত্র জানায়, ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও ডিএসসিসি কাউন্সিলর একে এম মোমিনুল হক সাইদ, টেন্ডারমোঘল জি কে শামীম প্রায়ই জিসানের সঙ্গে মিলিত হতেন সিঙ্গাপুরের একটি হোটেলে। ক্যাসিনো ব্যবসা, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, আধিপত্য বিস্তার, দখলবাজির নানা পরিকল্পনা ও ভাগবাটোয়ারা নিয়ে আলোচনা করতেন। মূলত জিসানের সন্ত্রাসীমূলক কর্মকান্ডের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ফায়দা হাসিল করতেন ঢাকায় থাকা ওই নেতারা। টেন্ডার বা চাঁদা নিতে জিসানের ভয়ভীতি দেখানো হত। প্রয়োজনে জিসান নিজেই ফোন করে হুমকি-দিত। জিসানের সখ্যতা ছিল বেশ কয়েকজন দুর্নীতিবাজ রাজনৈতি নেতার সাথেও। তবে জিসানকে দেশে ফিরিয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এ সব বিষয়ে আরো পরিষ্কার তথ্য পাওয়া যাবে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।
স্কুল শিক্ষিকার ছেলে হয়ে গেল ডন
রাজধানীর রামপুরা টিভি স্টেশনের পিছনে ৩৩৩, পশ্চিম রামপুরার দোতালা বাড়িতে বসবাস করত জিসান। তার মা মগবাজারের একটি স্কুলের শিক্ষিকা। ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে রামপুরায় গার্মেন্টেসের ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে জিসানের পরিচয় হয় আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে। তার ছোট ভাই শামীম প্রথম দিকে এই ঝুট ব্যবসা শুরু করে। ওই সময় রামপুরা ও মালিবাগ এলাকায় ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের পর বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। জিসান ও তার ছোট ভাই শামীম এই ছিনতাইয়ে নেতৃত্ব দিত। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় রামপুরার শাহাজাদা গ্রুপ। জিসানের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল যুবদল নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার সঙ্গে। খালেদ ছিলেন মতিঝিল ক্লাব পাড়ায় বিশেষ করে আরামবাগ ক্লাবে জুয়ার আসরের নিয়ন্ত্রক। সেই সূত্র ধরে জিসানের যাতায়াত হয় ক্লাব পাড়ায়। ২০০০ সালের শেষের দিকে আরামবাগ ক্লাবে জুয়ার টাকার চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। জিসান গ্রুপের গুলিতে বুলু ওরফে খোকন নামে একজন নিহত হয়। ওই ঘটনায় মামলা দায়েরের পর ডিবি পুলিশের হাতে জিসান গ্রেফতার হয়। কিন্তু গ্রেফতারের মাস তিনেক পর জামিনে জিসান মুক্ত হয়। এরপর তাকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি। জিসানের আধিপত্য ছড়িয়ে মগবাজার, মালিবাগ, রামপুরা, খিলগাঁও, সবুজবাগ, মতিঝিলসহ বাড্ডা এবং কাওরানবাজারের শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ হয়। বাড্ডার মেহেদী গ্রুপ, ডালিম-রবিন গ্রুপ এবং কাওরানবাজারের নরোত্তম সাহা ওরফে আশিক গ্রুপ ছিল জিসানের সম বয়সী। ওই সময় আন্ডারওয়ার্ল্ডের সেভেন স্টার ও ফাইভ স্টার গ্রুপকে সবাই সমীহ করে চলত। মালিবাগের মোল্লা মাসুদ, শুভ্রত বাইন ওরফে ত্রিমতি বাইন, ইস্কাটনের লিয়াকত, মগবাজারের টিক্কা, আরমান, কাওরানবাজারের পিচ্চি হান্নান, কাফরুলের কালা জাহাঙ্গীর, তাজ, পুরান ঢাকার ডাকাত শহীদ রাজধানীর একেকটি এলাকা নিয়ন্ত্রণে ছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।