Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিজেকে পরিচিত করবেন বলেই আল্লাহ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন

মুনশী আবদুল মাননান | প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:২৫ এএম

সকল জগতের স্রষ্টা, সকল সৃষ্টির স্রষ্টা মহান আল্লাহ ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন, এটাই আমাদের একান্ত ও দৃঢ়বিশ্বাস। তিনি নিজেই বলেছেন, তিনি ছিলেন লুকায়িত গুপ্তধনস্বরূপ। কত দিন এ অবস্থায় ছিলেন, তিনি ছাড়া কেউ জানেন না। তার ভেতর একটি আবেগের সৃষ্টি হয় যাকে আত্মপরিচয় প্রকাশের বা ভালোবাসার আবেগ হিসেবে অভিহিত করা যায়।

এই আবেগ থেকেই তিনি সৃষ্টি করেন নূরে মুহাম্মদী সা.। এই নূরে মুহাম্মদী আল্লাহপাকের প্রথম সৃষ্টি। প্রথম ভালোবাসা। নূরে মুহাম্মদীর সঙ্গেই প্রথমবার কথা ও সংলাপ হয়। সেটাই প্রথম ও দ্বিতীয় বাক্য বা কথোপকথন। নূরে মুহাম্মদী প্রথম উচ্চারণ করেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আল্লাহ ছাড়া ইলাহ নেই। এতে আল্লাহর প্রকৃত স্বরূপ ও পরিচয় উদ্ভাসিত হয়। আল্লাহপাক হন অতিশয় সন্তুষ্ট। তিনি এ কথার জবাবে বলেন, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল)।

সৃষ্টি ও বাক্যের এই শুরু। আল্লাহপাক সৃষ্টির সূচনা করেছেন নূরে মুহাম্মদী সৃষ্টির মাধ্যমে। তিনিই তার উদ্দেশ্য, তিনিই প্রিয়তম এবং তিনিই সবচেয়ে সম্মানিত। তাকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহপাক কোনো কিছুই সৃষ্টি করতেন না। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, সর্বপ্রথম আল্লাহ তায়ালা আমার নূরানী রূহ সৃষ্টি করেছেন।

আল্লাহ তায়ালা রব ও রাব্বুল আলামীন। রাসূল সা: স্বয়ং বলেছেন, আল্লাহ দাতা আর তিনি বণ্টনকারী। তার মর্যাদা সবার উপরে। বায়হাকী ও তাবারানীর বর্ণনা : উমর ইবনে খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, আদম আ.-এর বেহেশত থেকে যখন পৃথিবীতে আগমন হয়, তখন তিনি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা.-এর অছিলা নিয়ে মাগফিরাতের জন্য দোয়া করেন। আল্লাহ তায়ালা অতঃপর বলেন, হে আদম তুমি কী রূপে মুহাম্মদ সা.-কে জানতে পেরেছ? অথচ এখন পর্যন্ত তাঁকে সৃষ্টি করিনি। তিনি জবাবে বলেন, যখন আপনি আমাকে কুদরত দ্বারা সৃষ্টি করেন এবং রূহ দান করেন। তখন আমি ওপর দিকে মাথা তুলে আরশের গায়ে দেখতে পেলাম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। আমার বিশ্বাস হলো, আপনার নামের সঙ্গে যার নাম লিখিত রয়েছে, অবশ্যই তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ ও প্রিয় হবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে আদম, তুমি সত্য বলছো। তিনিই হবেন তোমার সন্তানদের মধ্যে সর্বশেষ নবী।

যাকে আল্লাহ সকল সৃষ্টির জন্য রহমত স্বরূপ সৃষ্টি করেছেন। যার প্রশংসা তিনি স্বয়ং করেছেন এবং সবাইকে যার প্রশংসা করতে বলেছেন, যার প্রতি সালাম ও দরুদ পেশ করতে নির্দেশ দিয়েছেন, যার আনুগত্য করতে ও অনুসরণ করতে বলেছেন, তার মর্যাদা, মান ও সম্মান কোনো ভাষাতেই প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে রাসূল সা.-কে উদ্দেশ করে বলেছেন, বলুন আমিও তোমাদের মতোই মানবকূলের একজন, আমার ওপর প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহ একমাত্র আল্লাহ। ১৮ : ১১০।
অন্য এক আয়াতে আল্লাহপাক বলেছেন, মুহাম্মদ তোমাদের কোনো ব্যক্তির পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। ৩৩ : ৪০।

এ দুই আয়াত থেকে রাসূল সা.-এর পরিচয়ের কয়েকটি দিক উন্মোচিত হয়। প্রথমত, তিনি (রাসূল সা.) এর আগমন মানবকূলে হলেও তার প্রকৃত পরিচয় হলো, তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়। তিনি এই বাণী প্রচার করেন যে, আল্লাহই একমাত্র ইলাহ। আর তিনি আল্লাহর রাসূল। তার এই পরিচয়ই বড়, অন্য পরিচয় গৌণ এবং তিনি শেষ নবী। তার প্রতি যথোচিত শ্রদ্ধা, ভক্তি, ভালোবাসা ও আনুগত্য প্রদর্শন মানুষের অপরিহার্য কর্তব্য। এর মধ্যেই রয়েছে মানুষের অপরিসীম মঙ্গল ও কল্যাণ। রাসূল সা.-এর প্রতি সর্বোচ্চ ভালোবাসা মুমিন হওয়ার অনিবার্য শর্ত করে দেয়া হয়েছে। রাসূল সা. আল্লাহর নামে শপথ করে বলেছেন, যে পর্যন্ত না তার প্রতি ভালোবাসা নিজের পিতাপুত্র, নিজসহ সমস্ত মানবকুল থেকে অধিক হবে, ততক্ষণ সে মুমিন হবে না।

আল্লাহপাক রাসূলুল্লাহ সা.-কে লক্ষ করে বলেছেন, আমি আপনাকে সমস্ত জাহানের জন্য রহমত বানিয়ে প্রেরণ করেছি। আল্লাহপাক সঙ্গে সঙ্গে রাসূল সা.-এর প্রতি ঈমান আনার কথা বলেছেন। ব্যতিক্রমে জাহান্নামের পরিণাম ভোগের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তার ভাষায়Ñ আর যে ঈমান আনবে না আল্লাহর প্রতি ও তার রাসূলের প্রতি; আমি অবশ্যই তৈরি করে রেখেছি কাফিরদের জন্য জাহান্নাম। ৪৮ : ১৩।

মানুষের আনুগত্য একান্তভাবেই আল্লাহর জন্য; কিন্তু আল্লাহ নিজেই রাসূল সা.-এর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করতে বলেছেন। একইভাবে সকল কাজে তাকে অনুসরণ করতে বলেছেন, মান্য করতে বলেছেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। ৪ : ৮০। আরো বলা হয়েছে, আমি রাসূলকে এ জন্য প্রেরণ করেছি, যাতে আল্লাহর নির্দেশে রাসূলের আনুগত্য করা যায়। ৪ : ৬৪। আল্লাহ ও রাসূল সা.-এর আনুগত্যের ফল সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে, তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করো, যাতে আশা করা যায় যে, তোমাদের দয়া করা হবে। ৩ : ১৩২।

তার অনুসরণ ও আনুগত্য করা ছাড়া মানুষের ইহ-পরকালে মুক্তি হবে না। তার প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা পোষণ করতে হবে। নিষ্ঠার সঙ্গে তার দেখানো পথ অনুসরণ করতে হবে। স্বয়ং আল্লাহ, তার ফেরেশতাগণ যার প্রতি দরুদ পাঠ করেন। তার প্রতি আবশ্যই দরুদ পাঠ করতে হবে।



 

Show all comments
  • আবেদ খান ৪ অক্টোবর, ২০১৯, ২:১৭ এএম says : 0
    লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Mohsin ৪ অক্টোবর, ২০১৯, ৩:৪৩ এএম says : 0
    লেখককে সাধুবা। কিন্তু লেখাটা পড়ে অতৃপ্তি আরো বেড় গেল!এ বিষয় নিয়ে আরও বিস্তারিত লেখা আশা কর।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Mohsin ৪ অক্টোবর, ২০১৯, ৩:৪৫ এএম says : 0
    লেখককে সাধুবাদ। কিন্তু লেখাটা পড়ে অতৃপ্তি আরো বেড় গেল!এ বিষয় নিয়ে আরও বিস্তারিত লেখা আশা করছি।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ নাজমুল ইসলাম ৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১১:০১ এএম says : 0
    নুরে মুহাম্মাদ নিয়ে যে তথ্য দেওয়া হলো তার সমর্থনে সুষ্পষ্ট দলিল দিলে খুশি হতাম!!!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আল্লাহ

৩১ জুলাই, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন