নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বিশেষ সংবাদদাতা : বিতর্ক পেছনে ফেলে অন্য এক আবাহনী হাজির বিকেএসপিতে! চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডান, অথচ এই প্রতিপক্ষকেই কি-না পাড়া-মহল্লা মানে নামিয়ে এনেছে আবাহনী। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেট মর্যাদা পাওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে রেকর্ড স্কোর (৩৭১/৫), রেকর্ড ২৬০ রানের ব্যবধানে জয়ে কাগজে সেরারা মাঠের শ্রেষ্ঠত্বেরও প্রমাণ দিল এদিন লাকি গ্রাউন্ড বিকেএসপি ‘থ্রি’ তে।
কি হয়নি এদিন? গতবারে প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগের আলোচিত ব্যাটসম্যান লিটন দাস এবার লীগের প্রথম পর্বে ছিলেন না ফর্মে। সুপার লীগে এসেই যেনো ফিরে পেয়েছেন আবাহনীর এই টপ অর্ডার ফর্ম। প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে প্রথম পর্বে ১৪৮ রান, গড় মাত্র ১৪.৮০, সেই লিটন প্রাইম দোলেশ্বরের বিপক্ষে ৪৮ রানে ছন্দ খুঁজে পেয়ে গতকাল ফিরেছেন স্বরূপে। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি (১২৫ বলে ১৮ চার ১ ছক্কায় ১৩৯ রানের ঝকঝকে এক ইনিংস দিয়েছেন উপহার। শুধু লিটন একাই নন, সেঞ্চুরি করেছেন ভারতের টেস্ট ব্যাটসম্যান দিনেশ কার্তিকও (৯৭ বরে ১১ চার ৪ ছক্কা)। তৃতীয় উইকেট জুটিতে তাদের ১৬২ রানেই মোহামেডানকে রান পাহাড়ে চাপা দিতে পেরেছে আবাহনী। ৩ বছর আগে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেট মর্যাদা পেয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে এতোদিন সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ৩৫৭/৬, ২০১৪-১৫ ক্রিকেট মওশুমে ওল্ড ডিওএইচএস’র বিপক্ষে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের সেই স্কোর টপকে গতকাল মোহামেডানের বিপক্ষে আবাহনীর স্কোর ৩৭১/৫। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে ইতোপূর্বে সর্বাধিক ব্যবধানের জয় ছিল গত আসরে ডিওএইচএস’র বিপক্ষে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের ২৪৭ রানের জয়টি, সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে গতকাল ২৬০ রানে জিতে সবচেয়ে বেশি রানের ব্যবধানে জয়ের রেকর্ডও করলো আবাহনী।
১৬ ছক্কা, ৩৭ চার এর ইনিংসে ৩৭১’র মধ্যে শেষ ১০ ওভারে আবাহনীর আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে যোগ হয়েছে ১২২ ! তা সম্ভব হয়েছে সাকিবের চাবুক চালানোয়। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০০৫ সালে ২১ বলে ফিফটি (৪ চার ৫ ছক্কা) এখনো বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মধ্যে ৫০ ওভারে দ্রুততম। আশরাফুলকে শ্রদ্ধা করে সাকিব ফিফটি উদযাপন করেছেন ২২ বলে (২ চার ৬ ছক্কা)। ২৪ বলে ৫৭ রানের ঝড়ো ইনিংসে সাকিব শো দেখেছে বিকেএসপির দর্শক ৪৫,৪৬ও৪৭তম ওভারে। ৪৫তম ওভারে এনামুল জুনিয়রকে মেরেছেন এই বাঁ হাতি ২ ছক্কা, ৪৬তম ওভরে তিসারা পেরেরাকেও ১টি ছক্কা ২ চার, ৪৭তম ওভারে সেখানে নাইমকে ২ ছক্কা!! সাকিবের এমন ঝড়ো ব্যাটিংয়ের ফলেই ৪র্থ উইকট জুটিতে আবাহনী যোগ করতে পেরেছে ৫২ বলে ১০১ রান! লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে ১৯৮তম ম্যাচে অল রাউন্ড পারফরমেন্সেও লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে প্রথম ৫ উইকেটের মুখ দেখেছেন সাকিব (৫/১৮)। প্রথম স্পেলে ৩-১-৯-১, দ্বিতীয় স্পেলে সেখানে ৩.৩-০-৯-৪! তার জাত চেনানো এমন বোলিংয়েই ১১১ তে থেমে গেছে মোহামেডান! আশ্চর্য হলেও সত্য, ১৬ বছরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেটের মুখ দেখেছেন সাকিব জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজের সর্বশেষ ম্যাচে (৫/৪৭), লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারেও প্রথমবারের মতো ৫ উইকেটের মুখ দর্শনে করতে হলো এই বাঁ হাতি স্পিনারকে ১৬ বছরের প্রতীক্ষা!
এই ম্যাচে লিটন এসেছেন আলোচনায়। প্রথম বলে রান পেয়েই দারুণ একটি দিনের বার্তা দিয়েছিলেন লিটন। দ্বিতীয় বলের মোকাবেলায় বাউন্ডারিতে চেনা ছন্দ ফিরে পেয়ে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ৭ম ওভারে হাবিবুর রহমান জনিকে পর পর ২ বলে বাউন্ডারি, ২২তম ওভারে বাঁ হাতি স্পিনার এনামুল জুনিয়রকে ছক্কা মেরেছেন, ৩৭তম ওভারে আরিফুলকে মেরেছেন পর পর ২টি চার। ৬০ বলে ফিফটি, সেঞ্চুরির জন্য পরবর্তী ৪২ বলে দ্বিতীয় ফিফটি। দিনেশ কার্তিককে যারা টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে এতোদিন চিনতেন, গতকাল তারা চিনেছেন তাকে ওয়ানডে ব্যাটসম্যান হিসেবেও। ৯৭ বলে ১০৯ রানের ইনিংসে ১১টি চারের পাশে শোভিত তার ৪টি ছক্কা। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ৮ম সেঞ্চুরির দিনে ফিফটি পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে তাকে ৬৬ বল, সেঞ্চুরির জন্য অবশিষ্ট ফিফটিতে লেগেছে তার মাত্র ২৩টি বল। আক্রমণটা চালিয়েছেন তিনি তিসারা পেরেরাকে বাগে পেয়ে। তার পর পর ২ ওভারে নামতা গুনে এক চার এক ছক্কা মেরেছেন তিনি।
ম্যাচ শুরুর আগে অধিনায়ক পরিবর্তন, মুশফিকের পরিবর্তে নাঈম ইসলামের হাতে অধিনায়কত্ব তুলে দেয়ায় বিরুপ প্রভাব পড়েছে মোহামেডানে। তার উপর দলের প্রধান ২ ভরসা পেস বোলার শুভাশিষ এবং বাঁ হাতি স্পিনার নাইম ইসলাম জুনিয়রকে ছাড়া আবাহনীর বিপক্ষে অবতীর্ণ হওয়া যে কতোটা দুরূহ, তা টের পেয়েছে মোহামেডান। সবচেয়ে বেশি ৮৪ রান খরচা করেছেন এদিন অভিজ্ঞ বাঁ হাতি স্পিনার এনামুল জুনিয়র। পেরেরার খরচা সেখানে ৭৫ রান। প্রথম পর্বে মোহামেডানের কাছে হারের বদলাটা এদিন একটু বেশিই নিয়েছে আবাহনী। এমন জয়ে শিরোপা পুনরুদ্ধার স্বপ্ন দেখতেই পারে আবাহনী (১২ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট)। অন্যদিকে এই ম্যাচ হেরে মোহামেডানের শিরোপা পুনরুদ্ধার মিশন কঠিন হয়ে গেল (১৩ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট)। সুপার লীগে এসে ছন্দ হারানো মোহামেডানের উপর্যুপরি হারের ২টিই বড় ব্যবধানে।
আবাহনী-মোহামেডান
আবাহনী : ৩৭১/৫ (৫০.০ ওভারে), তামীম ২২,লিটন ১৩৯,শান্ত ৭,দিনেশ কার্তিক ১০৯,সাকিব ৫৭, মোসাদ্দেক সৈকত ১৯*, রাজু ১২*,তিসারা পেরেরা ১/৭৫, নাইম ১/৪৫, এনামুল জুনি. ১/৮৪, আরিফুল ২/৫৫।
মোহামেডান : ১১১/১০ (২৪.৩ ওভারে), নাইম ৩২, মুশফিকুর ২৬, তিসারা ৫,ডিকেন্স ১৭, তাসকিন ১/২২, সাকিব ৫/১৮, সাকলায়েন সজীব ২/২৭, মোসাদ্দেক সৈকত ২/১২।
ফল : আবাহনী ২৬০ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : লিটন ( আবাহনী)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।