বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মিয়ানমার থেকে সরাসরি পেঁয়াজ আসছে। পেঁয়াজবোঝাই অসংখ্য ট্রাক টেকনাফ স্থলবন্দর হয়ে আসছে দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের আড়তে। চীন, মিসর ও মিয়ানমার থেকে আরও অন্তত এক হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ এখন চট্টগ্রাম বন্দরে। আজকালের মধ্যে এসব পেঁয়াজ খালাস হয়ে বাজারে চলে যাবে। আড়ত-গুদামেও আছে বিশাল মজুদ। পেঁয়াজের সরবরাহে কোন ঘাটতি না থাকলেও মূল্য কারসাজি থেমে নেই।
ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে এমন খবরে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে কেজিতে পেঁয়াজের দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। মজুতদারেরা সক্রিয় হয়ে উঠে। এ প্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার খাতুনগঞ্জের আড়তগুলোতে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমান আদালত। অভিযান চলাকালে আড়তে আড়তে পেঁয়াজের পাহাড় দেখতে পান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। প্রায় সবকটি আড়তে অস্বাভাবিক মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রির প্রমাণও পান হাতেনাতে। জরিমানার পাশাপাশি সতর্ক করা হয় আড়তদারদের।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান ইনকিলাবকে বলেন, যারা মজুদদারি, কালোবাজারির মাধ্যমে বাজারে মূল্যবৃদ্ধি আর কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ জন্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসনসহ সকল ডিসিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বাজারে পেঁয়াজ বা কোন নিত্য পণ্যের ঘাটতি বা অভাব থাকলে অর্থনীতির নিয়মেই মূল্য বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে মজুদদারির কারণেই পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়েছে। আমি আগেই বলেছিলাম সরকারকে বিব্রত করতে এমনটা করা হচ্ছে, মজুদদারদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
সকালে বিপুল সংখ্যক পুলিশ নিয়ে আড়তে হাজির হন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম। অভিযানের শুরুতে পেঁয়াজের তিন আড়ত মেসার্স হাজী অছিউদ্দিন সওদাগর, মেসার্স আবদুল আউয়াল ও মেসার্স শাহজালাল ট্রেডার্সে মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পেঁয়াজ ক্রয়মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রির প্রমাণ পান আদালত। ক্রয়-বিক্রয় রশিদ পর্যালোচনা করে আদালত দেখেন, মেসার্স অছিউদ্দিন ট্রেডার্সে মিয়ানমার থেকে আসা প্রতিকেজি পেঁয়াজ সোমবার তারা কিনেছে ৪২ টাকায়, তা বিক্রি করেছে ৭৫ থেকে ৮৯ টাকায়।
মেসার্স আবদুল আউয়ালের হিসাব থেকে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রতিকেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ৪২ টাকা, ১৫ সেপ্টেম্বর ৫৬ টাকা, ২৪ সেপ্টেম্বর ৬০ টাকা, এর দুইদিন পর ৫৮ টাকা, গত রোববার ৫২ টাকা এবং সোমবার ৯০ টাকা দরে বিক্রি করেছে। আর শাহজালাল ট্রেডার্সের নথিতে দেখা যায়, ২৫ ও ২৮ সেপ্টেম্বর তারা প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করেছে ৬০ টাকা দরে। এছাড়া বাগদাদী করপোরেশন ও এসএন ট্রেডার্সে গিয়ে তাদের সতর্ক করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানের শেষ পর্যায়ে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করায় খাজা ট্রেডার্স নামের আড়তকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে আদালত। এছাড়া মূল্য স্বাভাবিক রাখা হবে এমন মুচলেকা আদায় করা হয় আড়তদার সমিতির নেতাদের কাছ থেকে।
ব্যবসায়ীরা জানান, খাতুনগঞ্জে আড়াইশ পেঁয়াজের আড়ত রয়েছে। তারা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আমদানিকারকদের কাছ থেকে পেঁয়াজ কমিশন ভিত্তিতে কিনে এনে খাতুনগঞ্জে বিক্রি করে। তবে পেঁয়াজের দাম বাড়ার জন্য আমদানিকারকদের দুষছেন চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির নেতারা। তারা বলেন, আড়তদার আছেন ২০০-২৫০ জন। মূল আমদানিকারক দশজন। এরা হিলি-বেনাপোল ও সোনা মসজিদ বন্দর এলাকার। আড়তদারা আমদানিকারকদের হাতে জিম্মি। বাজারে পেঁয়াজের প্রচুর সরবরাহ রয়েছে। যখন আমদানিকারক বলে ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি করতে হবে, নইলে ভবিষ্যতে মাল দেবে না, তখন আড়তদাররা নিরূপায়। চট্টগ্রাম বন্দর ও অন্যান্য জায়গায় যত পেঁয়াজ এসেছে, সেসব বৃহস্পতিবারের মধ্যে বাজারে আসলে দাম ৫০-৬০ টাকায় নেমে আসবে বলেও জানান তারা।
মূলত তখন থেকেই বিকল্প বাজার খুঁজতে শুরু করেন আমদানিকারকেরা। ইতোমধ্যে মিয়ানমার থেকে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ এসেছে। আড়তদাররা জানান, একদিনেই মিয়ানমার থেকে ট্রাকভর্তি পেঁয়াজ চট্টগ্রাম এসে পৌঁছাতে পারে। প্রতিদিনই পেঁয়াজ নিয়ে অসংখ্য ট্রাক আসছে। মিয়ানমারের পাশাপাশি মিসর ও চীন থেকেও পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি চালান বন্দরে এসে খালাসের পর্যায়ে রয়েছে। কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি না হলে বাজারে পেঁয়াজের দাম দ্রæত কমে যাবে বলে জানান আড়ত ও ব্যবসায়ীরা।
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সংবাদতাদা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে পেঁয়াজের পাইকারি বাজারেও অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানের পর পেঁয়াজের পাইকারি দর এক লাফে কমে গেছে প্রতি কেজিতে ১৫ টাকা করে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমীনের নেতৃত্বে পেঁয়াজের পাইকারি বাজার পুরাতন বাজারে অভিযানে যায় ভ্রাম্যমাণ আদালত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।