Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকায় জনভোগান্তি

দু’ঘণ্টার বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় সড়ক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সড়কে গতকাল বৃষ্টির পানি ঢেউ খেলছে। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে এঁকে বেঁকে যাওয়া গলিপথগুলো যেন হয়ে যায় প্রবাহমান নদী। আর এ নদীতে বাস, রিকশাগুলো যেন ছোট ছোট লঞ্চ, ডিঙ্গি নৌকা। বৃষ্টির পানি জমে যাওয়ায় সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। গত কয়েকদিন রাজধানীতে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। দফায় দফায় ঝুম বৃষ্টি এবং বৃষ্টির পানি জমে যাওয়ায় কর্মজীবী মানুষের জন্য রাজধানী দুর্ভোগের শহরে পরিণত হয়।
গতকাল রোববার দুপুর থেকে শুরু হয় তুমুল বর্ষণ। এতে ঢাকা শহরের অধিকাংশ রাস্তা পানি জমে যায়। এ অবস্থায় অফিস ফেরৎ যাত্রীদের নাকাল হতে হয়। এমনিতেই পরিবহন সঙ্কট; আবার ভারী বর্ষণে পানি জমার সঙ্গে সঙ্গে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয় লাখ লাখ মানুষকে। বৃষ্টির কারণে শহরের অলিগলিসহ ছোট-বড় বিভিন্ন সড়কে দেখা দেয় পানিবদ্ধত। প্রায় সারা শহরজুড়ে ছিল অভিন্ন চিত্র।
গত শনিবার দুপুর থেকেই রাজধানীতে শুরু হয় বৃষ্টিপাত। রোববারের প্রবল বর্ষণে নগরীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে চরম ভোগান্তির। দুপুরের পর থেকেই স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয় ও অফিস আদালত থেকে বাসায় ফেরা মানুষসহ নানা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হয়েই নগরবাসীকে পড়তে হয়েছে দুর্ভোগে। রাস্তায় নেমেই নগরবাসীকে বৃষ্টিতে কাকভেজা হতে হয়েছে। বৃষ্টির কারণে রাস্তায় কোথয়ও যানবাহনও ছিল কম আবার কোথায়ও ছিল দীর্ঘ যানজট। বৃষ্টির পানি রাস্তা-ঘাট ডুবে যাওয়ায় রিকশা ও অটোরিকশার চালকরাও যাত্রীদের কাছ থেকে সুযোগ বুঝে আদায় করেছে অতিরিক্ত ভাড়া।
এদিকে দুপুরের বৃষ্টির পানিতে ডুবে যায় সচিবালয়ের বিভিন্ন ভবনের নীচতলা ও প্রবেশ পথসহ ভিতরে চলাললে রাস্তা। বৃষ্টির কারণে চলাচলের ক্ষেত্রে বিপাকে পড়েন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সচিবালয়ে ৬ ও ৭ নম্বর ভবনের মাঝামাঝি স্থান, ৪ নম্বর ভবনের চারপাশ, ৩ নম্বর ভবনের পূর্বপাশে সচিবালয়ের মূল রাস্তাসহ বিভিন্ন স্থান পানিতে তলিয়ে যায়। অফিস শেষে বাড়ি ফিরতে অনেককেই বাধ্য হয়ে পানি দিয়ে সাচিবালয় ছাড়তে দেখা যায়। ৬ নম্বর ভবনসহ ক্লিনিক ভবনের পেছনের রাস্তায় প্রায় হাঁটু পানি জমে যায়। ওপর থেকে দেখলে মনে হয় সচিবালয়ে পার্ক করা গাড়িগুলো পানিতে ভাসছে।
এছাড়া রাজধানীতে মেট্রোরেলের কাজ শুরুর পর থেকে হালকা বৃষ্টি হলেই রাজধানীর কাজীপাড়া থেকে ১০ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত পানি জমে যায়। পুরো রাস্তাজুড়েই কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর পরিমাণ পানি। আর তাতে যান চলাচলের এমনই অবস্থা হয় যে, সাধারণ জনগণকে বাস ছেড়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে উঠতে হয় ভ্যান, রিকশা অথবা নৌকায়।
মিরপুর-১২, ১১, ১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, তালতলা ও আগারগাঁওয়ের সড়কজুড়ে দিনরাত নির্মাণযজ্ঞ চলছে মেট্রোরেলের। এ এলাকাগুলোতে প্রকল্পের পাইলিংয়ের জন্য বসানো হয়েছে বিশাল আকৃতির ক্রেন, এসকেভেটর ইত্যাদি। আর মেট্রোরেলের এ কাজের কারণে পানিবদ্ধতার ভেগান্তি বেড়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে।
কয়েকজন বাস চালক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাস্তার মধ্যে নির্দিষ্ট একটি অংশ ব্যারিয়ার দিয়ে বন্ধ রেখে নির্মাণ কাজ করার কারণে অনেক ছোট হয়ে গেছে রাস্তা। আর যানবাহনের চাপ তো বাড়ছেই। ফলে যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। বৃষ্টি হলে কনক্রিটের ব্যারিয়ারের কারণে পানিও আটকে যাচ্ছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে দুর্ভোগ।
এদিকে সড়কের বিভিন্ন ম্যানহোল ও ড্রেন উন্মুক্ত করে দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করেছে সিটি কর্পোরেশন। দুই সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা ওয়াসা সূত্র জানিয়েছে, বৃষ্টিতে সৃষ্ট পানিবদ্ধতায় কাজ করার জন্য অঞ্চলভিত্তিক কাউন্সিলর ও আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন করা আছে। বর্তমানে রাজধানীর ১৩টি স্থানে পানিবদ্ধতা নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রকল্প এলাকায় খাল খনন ও প্রশস্ত করে তীর উন্নয়ন এবং ওয়াকওয়ে নির্মাণের মাধ্যমে খালের দুই তীরের পরিবেশ উন্নত করা হবে।
এছাড়া নগরীর অধিকাংশ সড়কের পাশে সিটি কর্পোরেশনের ড্রেন ও ওয়াসার পানির সংযোগ লাইনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার কাজ চলমান থাকায় খোঁড়া গর্তে পানি জমে সড়কের সঙ্গে সমান হয়ে গেছে। এসব গর্তে পড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন পথচারীরা।
মতিঝিলের অফিস থেকে বাড্ডার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে রাস্তায় কাদা ও নোংরা পানিসহ নানা সমস্যার কথা জানিয়েছেন রাসেল নামের এক কর্মজাবী। তবে শুধু মতিঝিল, বাড্ডা-মিরপুর কিংবা মালিবাগ নয়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট নানা দুর্ভোগের কথা জানিয়েছেন আরও অনেক পথচারী।
বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতা দেখা দিয়েছে পুরান ঢাকার বেশিরভাগ এলাকায়। এছাড়াও পোস্তগোলা, সায়েদাবাদ, শনিরআখড়া, যাত্রাবাড়ি, মানিকনগর, মুগদা, মান্ডা, বাসাবো, মাদারটেক, নন্দিপাড়া, গোড়ান, সিপাইবাগ, মেরাদিয়া, রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিবাগ, গুলবাগ, রাজারবাগ, মৌচাক, শান্তিনগর, মগবাজার, রমনা, খিলগাও, তালতলা, মিরপুর, পল্লবী, শ্যমলি, কল্যাণপুর, শ্যাওড়াপাড়া, মণিপুর, কাজীপাড়া, জিগাতলা, আগারগাঁওয়ের নিচু এলাকা ও গলিতে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
বিকালে শাহজাহান পুর আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজের সামনে কথা হয় শিরিন সুলতানার সাথে। তিনি বলেন, বাচ্চার কোচিং শেষ করে বসেছিলাম, বৃষ্টিও থামে না, রিকশাও মেলে না। হেঁটে যাওয়ারও উপায় নেই। রাস্তায় হাঁটু পানি। ওদিকে রাত হয়ে আসছে। রিকশাও পাচ্ছি না। দু’একটি পাওয়া গেলেও অতিরিক্ত ভাড়া চায়।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জনভোগান্তি

৯ ডিসেম্বর, ২০২১
২১ নভেম্বর, ২০১৯
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ