রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জোরেশোরে তদন্তে নেমেছে প্রতিপক্ষ ডেমোক্র্যাট দল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে অসদুপায়ে প্রভাবিত করতে সম্প্রতি তিনি বিদেশি শক্তিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন। এ তদন্তের জেরে এবার ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহচর পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে তলব করেছে ডেমোক্র্যাটরা। গতকাল শনিবার বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
অভিযোগে বলা হয়, চলতি বছরের ২৫ জুলাই ট্রাম্প ও ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকির মধ্যে ৩০ মিনিটের মতো এক ফোনালাপ অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু, পরবরতীতে ঊর্ধ্বতন হোয়াইট হাউজ কর্মকর্তারা ওই ফোনালাপের সব তথ্য ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। ফোনকলে ট্রাম্প আসন্ন মার্কিন নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রধান প্রতিদ্বন্ধী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন ও তার ছেলের বিরুদ্ধে পূর্ব এক ঘটনার জেরে নতুন তদন্ত শুরু করতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে চাপ প্রয়োগ করেন।
অন্যথায় ইউক্রেনে বড় অংকের মার্কিন সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে সে সময় জেলেন্সকিকে হুমকিও দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এর মধ্য দিয়ে জো বাইডেনের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করে ট্রাম্প মূলত আসন্ন নির্বাচনে এগিয়ে থাকার চেষ্টা করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
জানা যায়, ইউক্রেনের একটি গ্যাস কোম্পানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেন। ২০১৬ সালে হান্টারসহ ওই গ্যাস কোম্পানির কয়েক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়। ডেমোক্র্যাট জো বাইডেন সে সময় ওবামা প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। সেই ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ইউক্রেনকে চাপ দিয়ে তিনি ছেলের বিরুদ্ধে ওই তদন্ত বন্ধ করান। যদিও এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
অবশ্য ট্রাম্পও জো বাইডেনকে ঘায়েল করতে ইউক্রেন প্রেসিডেন্টকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেননি বলে জানিয়েছেন। ফোনকলের কথা স্বীকার করলেও, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা অপব্যবহারের কথা অস্বীকার করছেন তিনি। তার মতে এ ধরনের অভিযোগ ‘গুজব’।
তাই যদি হয়, তাহলে সেই ফোনকলের তথ্য গোপন করার চেষ্টা হলো কেন? এই প্রশ্নই এখন সামনে এসেছে। আর সেই সূত্র ধরেই ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা ট্রাম্প-জেলেন্সকি ফোনালাপের সব তথ্য প্রকাশ করতে পম্পেওকে তলব করেছে ডেমোক্র্যাটরা। এক চিঠিতে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তাকে এ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়।
অভিযোগ প্রমাণিত হলে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব আনা হবে। অভিশংসন দুই ধাপের একটি রাজনৈতিক চর্চা। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করলে কদাচিৎ প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ‘অভিশংসন’ আনা হয়। এতে করে প্রেসিডেন্টকে নিজের পদ থেকে সরেও দাঁড়াতে হয়।
যদিও মার্কিন পার্লামেন্টের ‘হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস’-এ ডেমোক্র্যাটরা অভিশংসন আনলেও, ‘সিনেট’ রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় এ যাত্রায় পদত্যাগ থেকে ট্রাম্পের বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
এদিকে ট্রাম্প-জেলেন্সকি ফোনালাপ ডামাডোলের মধ্যেই গতকাল শুক্রবার ইউক্রেনে নিযুক্ত মার্কিন দূত কার্ট ভোলকার পদত্যাগ করেছেন। সব মিলিয়ে আগামী কয়েকদিনে এ পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, তা নিয়ে সবার কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে।