পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একজন অদম্য, বাংলাদেশের রাজনীতিতে অপ্রতিরোধ্য ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৩তম জন্মদিন আজ। দেশ-বিদেশে নানা পুরস্কার পেলেও আজ তিনি পুরস্কারের ঊর্ধ্বে একজন রাজনীতিক।
একজন গৃহিণী থেকে দেশীয় রাজনৈতিক অঙ্গন পেরিয়ে বিশ্বের দরবারে এক সাহসী বিস্ময় নেতৃত্বের নাম শেখ হাসিনা। ফিনিক্স পাখির মতো একক দক্ষতায় দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন চারবারের এই প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি ৩৮ বছর ধরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী উপমহাদেশের প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের। সাহসী নেতৃত্বের জন্য ইতোমধ্যে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি এই নারীর। একই সাথে আমেরিকা, ভারত, চীনের সঙ্গে সম্পর্কের সমন্বয় করে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন। উন্নয়নের জন্য কোনো বাধাবিপত্তি যেন তাকে আটকাতে পারছে না। বিশ্বব্যাংকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেও এগিয়ে নিচ্ছেন বাংলাদেশকে, যা তৃতীয় সারির যে কোনো দেশের জন্য অনন্য উদাহরণ। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে নিজ দলের দুর্নীতিবাজ, অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন, যা দেশীয় রাজনীতিতে বিস্ময়। বর্তমানে শেখ হাসিনার অদম্য নেতৃত্বে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ।
১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোলাগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। তার ডাক নাম হাসু। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা শেখ রেহানা ছাড়া শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল কেউই বেঁচে নেই। ছাত্রজীবনে শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে ১৯৬৭ সালে বিয়ের পর পুরোপুরি গৃহিণী ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বিপথগামী একদল সেনা কর্মকর্তার হাতে বাবা-মা, ভাইসহ পুরো পরিবার নিহত হওয়ার পর নির্বাসনে ছিলেন ছয় বছর। সব বাধা উপেক্ষা করে ও জীবন বাজি রেখে দেশে ফেরেন ১৯৮১ সালে। তার এই ফিরে আসাটা ছিল গণতন্ত্রের মুক্তি, দেশের উন্নয়ন ও প্রগতির নবস্বপ্ন। নিজের নীতি ও আদর্শকে সমুন্নত রাখার এই যাত্রায় আততায়ীর হামলার শিকার হয়েছেন ১৯ বার। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যাওয়াটা ছিল নতুন জীবন।
১৯৫৪ সালে গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসেন শেখ হাসিনা। এরপর আজিমপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে মেট্রিক, ১৯৬৭ সালে সরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমানে বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ) থেকে ইন্টার পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। ১৯৭৩ সালে স্নাতক শেষ করেন। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। সরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি ছিলেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৮১ সালে তার অনুপস্থিতিতেই দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। আজ পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর এক ভঙ্গুর আওয়ামী লীগকে তিনি শক্তিশালী করে চারবার ক্ষমতায় এনেছেন।
রাষ্ট্র পরিচালনার শত ব্যস্ততার পাশাপাশি বাঙালি নারীর মতো ঘর-সংসারও দক্ষতার সঙ্গে সামলেছেন শেখ হাসিনা। ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও নানা ও মায়ের আদর্শ ধারণ করেন। তার প্রয়াত স্বামী ড. এম ওয়াজেদ মিয়া ছিলেন একজন স্বনামধন্য পরমাণুবিজ্ঞানী। দিনের নির্দিষ্ট একটি সময়ে নাতি-নাতনীদের সঙ্গেও একান্তে সময় কাটান শেখ হাসিনা। ইসলাম ধর্মের অনুশাসন প্রতিপালন করা এই নেত্রীর দিন শুরু হয় ফজরের নামাজের মধ্য দিয়ে। সূর্য ওঠার আগেই ঘুম থেকে উঠে দিনের পরিকল্পনা শুরু করেন তিনি। ৭৩ বছরে পা দেয়া এই নেত্রীর গতির সঙ্গে দল ও সরকারের কম বয়সের নেতারাও তাল মিলিয়ে উঠতে পারেন না বেশির ভাগ সময়।
চলতি মেয়াদসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের জিডিপি ছিল বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। এছাড়া অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে একটি রোল মডেল হিসেবে পরিচিত করেছেন। সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনেও তিনি বিশ্বনেতাদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ চলতি তিন মেয়াদে ১১ বছরসহ ১৬ বছর দেশ শাসন করছে। এ সময়ে বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নতির পাশাপাশি শেখ হাসিনার ঝুলিতে জমেছে অনেকগুলো অর্জন। পেয়েছেন আন্তর্জাতিক একাধিক সম্মাননা পদক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সাফল্য ছিল ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা পানি চুক্তি। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ এখনো কম-বেশি পানির ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছে। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও বাঙালিদের মধ্যকার দীর্ঘদিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
বিভিন্ন জটিলতায় সেই চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়িত না হলেও এখন আর পাহাড়ে আগের মতো যুদ্ধের ডামাডোল নেই। শেখ হাসিনার আমলেই ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরের বছর থেকেই দিবসটিকে যথাযথ মর্যাদায় পালন করছে জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলো। ২০০৯ সালে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমানা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য হেগের সালিশি আদালতে নোটিশ করে। এর পথ ধরেই ২০১২ সালে মিয়ানমার ও ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ সমুদ্রসীমার রায় পায়। এতে সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশ ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের রাষ্ট্রীয় সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল মহীসোপান এলাকায় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। শেখ হাসিনার চলতি মেয়াদে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি কার্যকর করায় দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান হয়। ৬৮ বছর পর নাগরিক হিসেবে পরিচয় পায় ছিটমহলবাসী।
শেখ হাসিনার ঝুলিতে ৩৭ আন্তর্জাতিক পদক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক জীবনে অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পদক পেয়েছেন। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মোট ৩৭টি পুরস্কার পেয়েছেন। এর কোনোটি পেয়েছেন তার ব্যক্তিগত অর্জনের জন্য, আবার কোনোটি পেয়েছেন সরকারপ্রধান হিসেবে বাংলাদেশের সামগ্রিক সাফল্যের জন্য। শেখ হাসিনা জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্যের এবারেট ডান্ডি ও ব্রিজপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের বিশ্বভারতী, অস্ট্রেলিয়া ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টর অব ল’জ ডিগ্রি পেয়েছেন।
শেখ হাসিনা যেসব পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ভ্যাকসিন হিরো (২০১৯), চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ (২০১৯), ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড (২০১৯), এজেন্ট অব চেঞ্জ পুরস্কার (২০১৬), প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন (২০১৬), চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ (২০১৫), আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পদক (২০১৫), সাউথ-সাউথ ভিশনারি পুরস্কার (২০১৪), শান্তি বৃক্ষ (২০১৪), রোটারি শান্তি পুরস্কার (২০১৩), এঅঠও পুরস্কার (২০১২), সাউথ- সাউথ পুরস্কার (২০১১), ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার (২০১০), এমডিজি পদক (২০১৩ ও ২০১০), গ ক এধহফযর পুরস্কার (১৯৯৮), ঈঊজঊঝ মেডেল (১৯৯৯), চবধৎষ ঝ. ইঁপশ পুরস্কার (২০০০), মাদার তেরেসা শান্তি পুরস্কার (১৯৯৮), ইউনেস্কোর ঋবষরী ঐড়ঁঢ়যড়ঁবঃ- ইড়রমহু শান্তি পুরস্কার (১৯৯৮) ইত্যাদি।
এসব অর্জনের পাশাপাশি শেখ হাসিনা তার নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্বের কারণে বিভিন্ন স্বীকৃতিও অর্জন করে নিয়েছেন। এর মধ্যে বিশ্বখ্যাত ফোর্বস সাময়িকীর দৃষ্টিতে ২০১৮ সালে বিশ্বের ক্ষমতাধর একশ নারীর তালিকায় ৩৬তম স্থান পান শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিউ ইয়র্ক টাইমস সাময়িকীর জরিপে তিনি ২০১১ সালে বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী নারী নেতাদের তালিকায় সপ্তম স্থান দখল করেন।
শেখ হাসিনার ৭৩তম জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল জুমার নামাজের পর সারাদেশেই মসজিদে দোয়ার আয়োজন করা হয়েছিল। এছাড়া আজ আনন্দ র্যালি ও শোভাযাত্রার আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন। বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে শোভাযাত্রা করবে ছাত্রলীগ। এ ছাড়াও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সংগঠনটি। এদিকে আজ মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকার রাস্তায় শোভাযাত্রা ও আনন্দ র্যালি করবেন। বিকাল সাড়ে ৩টায় খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।