মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
গত বছর পাকিস্তানে ইমরান খানের নির্বাচনী বিজয় আশাবাদ ও উপহাস উভয়েরই সৃষ্টি করেছিল। বিজয় লাভের দিন তিনি টিভিতে উপস্থিত হন, দৃশ্যত উৎসব মুখর পাকিস্তানিদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখার জন্য। যদিও তিনি বক্তব্যে তার নির্বাচনী অঙ্গীকারের বিষয়েই থাকলেন। তারপরও কিছু আলাদা কথা শোনা গেল।
তিনি তার সমর্থকদের চোখে চোখ রেখে কথা বললেন। তাদের আশ্বাস দিয়ে বললেন এখন উদ্বিগ্ন হওয়ার সময় নয়। নিজেকে উপস্থাপন করলেন জবাবদিহি করার প্রথম সারিতে। প্রতিশ্রুতি দিলেন নয়া পাকিস্তানের। মনে হল, শেষ পর্যন্ত রাজনীতিক থেকে রাষ্ট্রনেতায় তার রূপান্তর ঘটেছে সৎ, মিলনকামী ও মানবিক।
এমন একটি দেশ যে দেশের মানুষ অনেক আগেই তাদের আশা হারিয়ে ফেলেছে। তার কথা তাদের মধ্যে নব জীবনের স্পন্দন জাগাল এবং মানুষ প্রচন্ডভাবে তা আঁকড়ে ধরল। তখন থেকে তার বিশ্বাসযোগ্য, প্রেরণাদায়ক চালিক শক্তির পুনরাবির্ভাব ঘটেছে, ক্ষুধার্ত পাকিস্তানিদের মধ্যে দীর্ঘকালের বিলুপ্ত দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলেছে।
ইমরান খানের নয়া পাকিস্তানের কথা আশাবাদের সৃষ্টি করেছে। হিংস্র চোখের ধর্মান্ধতা ও তাদের নির্মম হামলার মধ্যে, অগোছালো, বিশৃঙ্খল পাকিস্তানের সামনে কোনো সম্ভাবনা থাকতে পারে। সে কথা বেশির ভাগ মানুষই আসলে ভুলে গিয়েছিল। গত পাঁচ দশক ধরে পাকিস্তান পরিচালিত হচ্ছিল এক ভুল লক্ষ্যে।
এক উৎপাটনমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক এলিট সৃষ্টি করে যার পরিণতিতে জনগণের ব্যয়ে সুবিধাভোগী অংশ গড়ে ওঠে সমাজে। সাগর তরঙ্গময় না থাকায় তাদের নৌবিহার শুরু হয়। কিন্তু এসব পরিবর্তন টেকসই হয়নি। এ ধরনের অপশাসনের প্রেক্ষাপটে বৈধ রাজনৈতিক বিকল্প হিসেবে ইমরান খানের আত্মপ্রকাশ অপরিসীম প্রত্যাশার সৃষ্টি করে।
আজ এ কথা অস্বীকার করা কঠিন যে চিত্রনাট্য অনুযায়ী ঘটনা ঘটেনি। সবচেয়ে হতাশাজনক রোগের চেয়েও পাকিস্তানের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ কঠিন রূপ নিচ্ছে। কাশ্মীরের চলমান বিষাদ গাথার সাথে ভূ রাজনীতি জড়িত হয়ে তা পাক খেয়ে খেয়ে ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। এক বছরের বেদনাদায়ক নীতি ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের পর অধিকাংশ মানুষই মনে হয় আশাবাদ সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করেছে।
সাধারণ বিশ্বাস, ভোর হওয়ার আগে আঁধার গভীর হয়। ইমরান খানের নেতৃত্ব যে কঠোর বাস্তবতার সম্মুখীন তার সাথে প্রত্যাশার যদি অনুকূল সমন্বয় ঘটে তাহলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আঙ্গিনায় সবুজ অঙ্কুরোদ্গম সম্ভব। খান যা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন তা হচ্ছে ব্যাপক সংস্কার যা দেশকে এক অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় চালিত করবে। রাষ্ট্রশাসনের কৌশলগত উদ্দেশ্যগুলো পুনর্নির্মাণ করার মাধ্যমে পূর্ববর্তী সরকারগুলোর ধোঁয়া ও আয়নার খেলার বিলুপ্তি ঘটছে। সংস্কারের গতি ধীর ও কঠিন, সুফল তাক্ষণিক ভাবে মেলে না। তবে দিকনির্দেশনা সঠিক মনে হচ্ছে।
পাকিস্তানের অর্থনীতির জন্য উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ঋণ ও ঘাটতির পরিমাণ বিপুল যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করেছে। অনুৎপাদনশীল জমি ও ভোক্তা পণ্য আমদানি নিরুুৎসাহিত করা। অন্যদিকে অব্যাহত ভাবে উৎপদাদন কমে আসা একটি দেশে রফতানি বৃদ্ধি ও আমদানি বিকল্প একটি দীর্ঘ ও বিলম্বিত প্রক্রিয়া।
বহু বছরের অবহেলার পর রফতানি খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে এবং উদ্যোক্তারা আমদানি বিকল্পের ভিত্তিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করছেন। পাকিস্তানে দেরীতে হলেও অবশেষে প্রযুক্তি প্রতিবেশ বাস্তবায়ন হচ্ছে। করজালের আওতায় আরো বহু লোককে আনার উচ্চাকাক্সক্ষী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। গত বছর করদাতাদের সংখ্যা ৬৫ শতাংশ বেড়েছে।
কিন্তু ইমরান খানের সামনের পথ দীর্ঘ ও দুরূহ। তবে খানের কর্মকান্ড কয়েক দশক ধরে পাকিস্তান যে পথ অনুসরণ করছিল সেই আত্মঘাতী পথ থেকে পাকিস্তানকে সরিয়ে আনতে শুরু করেছে। দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় তার প্রাথমিক সংস্কার উদ্যোগকে অপরিবর্তনীয় বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। তবে এখন তা সফল বলে মনে হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খানের নেতৃত্ব পন্থা পূর্বসূরিদের পন্থাকে পরিত্যাগ করেছে। রাজনীতির আগে স্বীকৃতি, সে সাথে দুর্নীতিমুক্ত থাকার অঙ্গীকার তার কূটনৈতিক মর্যাদার ইঙ্গিত দেয়। কাশ্মীর সঙ্কট ও তার পুলওয়ামা অধ্যায় খানের কূটনৈতিক নেতৃত্বকে তাৎক্ষণিক পরীক্ষার সম্মুখীন করে এবং উভয়বারই তিনি সফল হয়েছেন। মার্কিন-আফগান ও মার্কিন-ইরান ঘটনায় সৎ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করার জন্য তাকে প্রস্তাব তার উপর একই আস্থার পরিচায়ক।
পাকিস্তান দায়িত্বশীল বিশ্ব খেলোয়াড় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। শান্তির আশ্রয়স্থল হিসেবে তার বক্তব্য সকলকে জ্ঞাত করেছে। বিশ্ব নেতাদের কাছে বার্তা জোরালো ও পরিষ্কার- পাকিস্তান আর দাবার গুটি, এক তামাশা, বিশ্ব আঙ্গিনার এক দর্শক নয়। পাকিস্তান সক্রিয়, সম্পর্কিত ও দায়িত্বশীল। অতীতের তুলনায় এটা নাটকীয় পরিবর্তন যা বৃহত্তর স্বীকৃতি এনে দিতে পারে।
জটিলতার শিকার এ দেশটিতে ইমরান খানের নয়া পাকিস্তানের স্বপ্ন হয়ত একটি দূর কল্পনা হতে পারে, অন্তত এখনকার জন্য। কিন্তু পাকিস্তানকে আমূল পরিবর্তন করে দিতে পারে, রাতারাতি এমন কিছু প্রত্যাশা করা অবাস্তব। পরিবর্তে যা স্বীকৃতি যোগ্য হাচ্ছে দেশে গোলযোগ সত্ত্বেও যে রাজনৈতিক আবহাওয়া প্রবাহিত হচ্ছে তা স্থপতিকে আসল, বাস্তব পরিবর্তনের কাজে এগিয়ে নিচ্ছে যদিও তার গতি ও সুযোগ অনেককেই হতাশ করেছে।
খানের নিন্দা ও তীব্র সমালোচনা যাই করা হোক, পাকিস্তানি হিসেবে দেশের মানুষের বাস্তব ভিত্তিক কথা বলতে হবে। পাকিস্তানিদের উচ্চাকাক্সক্ষা হচ্ছে অর্থনৈতিক স্থিতিশীল এক পাকিস্তান। সম্পর্কিত ও বিশ্ব আঙ্গিনায় দায়িত্বশীল এক খেলোয়াড়। এটা যদি অর্জিত হয় তাহলে নতুন পাকিস্তানের স্বপ্নও বাস্তব হবে। তার চেয়ে কম যদি কিছু বলতে হয় তা হচ্ছে ২০ কোটি মানুষের একটি দেশকে রসাতলে যাওয়া থেকে হারকিউলিসের বিক্রমে সংস্কারের মাধ্যমে টেনে তোলার প্রচেষ্টার জন্য ক্রিকেটার কাম রাজনীতিক ইমরান খান নিন্দার চেয়ে বেশি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।