নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গণে চট্টগ্রামের রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস। স্টার সামার, স্টার যুব ক্রিকেট টুর্নামেন্ট সহ অন্যান্য খেলাধুলার আসর বসতো বন্দর নগরী চট্টগ্রামে। ভারতের কোলকাতা ইস্ট বেঙ্গল, মোহনবাগান সহ নামী-দামি দল ক্রিকেট খেলতে আসতো এখানে। ফুটবলে জৌলুশ ছিল আরও বেশি। জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় সুনীল কৃষ্ণ দে, ইকবাল খান, আশীষ ভদ্র সহ আরো অনেক ফুটবলার মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। খেলায় ছিল উত্তেজনা, মাঠ থাকত দর্শকে ঠাঁসা। আহা! কোথায় হারিয়ে গেল সেই দিন!
দেশের ফুটবল এখন মৃত্যুপথযাত্রী। অথচ ক্রীড়াঙ্গণে চট্টগ্রামের সুনাম ছিল সবার মুখে মুখে। ক্রীড়াঙ্গণের এই দৈন্য দশা খুঁজতে গেলে দেখা যায়, যাদের মূল কাজ হচ্ছে খেলাধুলার উন্নতিতে পরিকল্পিতভাবে কাজ পরিচালনা করা, তারাই উঠেপড়ে লেগেছে ক্রীড়াঙ্গনকে ডোবাতে। খেলাধুলার আড়ালে ক্লাবগুলোর ভেতর চলছে ক্যাসিনো ও জুয়ার আসর। খেলাধুলার জন্য জন্ম হলেও এসব ক্লাব নিজেদের উদ্দেশ্য বেমালুম ভুলে গিয়ে করে যাচ্ছে অনৈতিক কাজ আর ব্যস্ত থাকছে নিজেদের আখের গোছাতে। যা শুধু খেলাধুলা নয়, ধ্বংশ হচ্ছে সমাজের অবকাঠামো, ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দেশ।
চট্টগ্রামের এসব ক্লাবগুলোতে র্যাব ও পুলিশ সম্প্রতি অভিযান চালানোর পর ৫টি ক্লাবের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র, মোহামেডেন স্পোটিং ক্লাব এবং আবাহনী লিমিটেড-এ জুয়ার আসর চালানোর প্রমাণ পেয়েছে। অভিযান শেষে এ ক্লাবগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। নগরীতে ক্লাবগুলোতে মদ ও জুয়ার আসরের প্রমাণ পাওয়ার কারণে ক্রীড়ামোদীসহ সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে।
ক্লাব পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট এসব অনৈতিক কর্মকাÐ পরিচালনার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারায় ব্যস্ত থাকায় চট্টগ্রামের ঐতিহ্য ও সুনাম হারিয়ে যাচ্ছে। উঠে আসছে না কোনো মেধাবী খেলোয়াড়। নামের খেলা চলছে শুধু মাঠে, নেই কোনো দর্শকের চিহ্ন। ক্লাবে মদ ও এমন জুয়া বাণিজ্য পত্র-পত্রিকায় জানাজানি হওয়ার পর ক্রীড়া সংগঠক ও খেলোয়াড়রা সহজে মেনে নিতে পারছে না।
৭৪ বছর বয়সী আগ্রাবাদ নওজোয়ান ক্লাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রবীণ ক্রীড়া সংগঠক মো: কামাল উদ্দিন অভিনন্দন জানিয়েছেন ক্রীড়া বান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর সিদ্ধান্তকে, ‘খেলাধুলার উন্নয়নের জন্য ক্লাবে জুয়ার আসর বসাতে হবে এটা ঠিক নয়। খেলাধুলাকে অত্যন্ত ভালোবাসি বলে আমি দীর্ঘ বছর সিজেকেএস ফুটবল, ক্রিকেট ও অ্যাথলেটিক্স এর সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। আমার ক্লাব ছিল আগ্রাবাদ নওজোয়ান। এই ক্লাব চালানোর জন্য নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ খরচ করেছি। এলাকায় দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে টাকা চেয়েছি। অনেক সময় খেলোয়াড়দের থাকা খাওয়ার বন্দোবস্ত করেছি নিজের বাসায়। আমরা আট ভাই এই ক্লাবের হয়ে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলতাম। এখান থেকে হয়েছি ক্রীড়া সংগঠক। কই আমি তো ক্লাব চালাতে গিয়ে এসব অনৈতিক কাজ করিনি। এমনও সময় দেখা গেছে খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক দিতে পারছি না। দিয়েছি শুধু যাতায়াত ভাতা। তাতেই খেলোয়াড়রা সন্তুষ্ট থাকতো। খেলাধুলা চালাতে গেলে আগে ভালোবাসতে হবে খেলোয়াড়দের তারপর ক্লাবকে। ক্লাবের সাথে খেলোয়াড়দের থাকতে হবে নিবিড় সম্পর্ক। তাহলেই ক্লাব চালানো যাবে। এতে আর্থিকভাবে ক্লাবের তেমন টাকার টানাপোড়ন হবে না।’
প্রবীণ এই ক্রীড়া সংগঠক ২০০৮ সালে ক্রীড়াঙ্গণ ছেড়ে এখন বাসায় অবসর জীবন কাটাচ্ছেন। পত্র-পত্রিকা এবং ক্রীড়ামোদীদের কাছ থেকে বিভিন্ন ক্লাবে জুয়ার আসর বসে জানতে পেরে হয়েছেন খুব ব্যথিত।
জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শ্রেষ্ট ক্রীড়া সংগঠক মরহুম রাশেদ আজগর চৌধুরীর উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ক্রিকেটের জন্য তিনি অনেক অবদান রেখেছিলেন। সেই সময় জাতীয় দলের ক্রিকেটে নিয়মিত ছয়জন খেলোয়াড় ছিল। এসব খেলোয়াড় ছিল মরহুম রাশেদ আজগর চৌধুরীর সৃষ্টি। এদের বাদ দিয়ে জাতীয় দল গঠন করা হতো না। তিনি নিজের ঘাটের পয়সা খেলোয়াড়দের পেছনে খরচ করতেন। তাদের নিয়ে মাঠে সময় কাটাতেন। নিজের পারিবারিক স্টার ক্লাব চালাতেন নিজের পয়সায়। অনেক সময় খেলোয়াড়দের বাসায়ও রাখতেন। তিনি তো খেলোয়াড় সৃষ্টি এবং ক্লাব চালাতে গিয়ে কোনো অনৈতিক কাজে জড়ায়নি। আজ ক্রীড়াঙ্গণে ক্লাব চালানোর নামে জুয়ার আসর ও মদ এসব অনৈতিক কাজ ক্লাবে কেন হচ্ছে।
নব্বইয়ের দমকে ঢাকা মোহামেডেন স্পোটিং ক্লাবের হয়ে খেলেছেন চট্টগ্রামের খেলোয়াড় এজাহারুল হক টিপু। খেলেছেন জাতীয় দলেও। ক্লাবের ভেতর মদ ও জুয়ার ব্যবসাকে তিনি কী চোখে দেখছেন জানতে চাইলে বাফুফের সহ-সভাপতি জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার বাদল রায়ের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা নিজের স্বার্থে বিভিন্ন ক্লাবে জুয়ার বোর্ড ভাড়া দেন। এই ব্যবসার টাকা ঐ ক্লাবের উন্নয়নের জন্য খরচ হয় না। যারা এ ব্যবসার সাথে জড়িত সেইসব ক্লাবগুলোর খেলা দিন দিন নেমেই যাচ্ছে। ফলে খেলোয়াড়দের মেধার বিকাশ ঘটছে না। উঠে আসছে না ভালো কোনো খেলোয়াড়।
এদিকে দেশে ক্যাসিনো বা জুয়া বাণিজ্য নিয়ে সরকার যখন সজাগ। সারা দেশের বিভিন্ন ক্লাব বা ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানে জুয়ার মতো অনৈতিক কাজ বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়ে ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন সবার বাহবা কুড়াচ্ছেন, ঠিত তখই এর পক্ষে কথা বলেছেন চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেডের মহাসচিব ও জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী এমপি। এসব বেআইনি কাজের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না চেয়ে তিনি বলেছেন নিজের মনগড়া কথা। ২১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামস্থ আবাহনী ক্লাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে তার ক্লাবের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে বলে দাবী করেন শামসুল হক চৌধুরী। ২২ সেপ্টেম্বর রাতে একটি বেসরকারী টেলিভিশনের টক শো অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের এই এমপি বলেন,‘৫০০/১০০০ টাকা দিয়ে তাস খেলাটা জুয়া খেলা নয়। আমাদের চট্টগ্রাম আবাহনীর একটি জুনিয়র টিম আছে ওই টিমের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তরা মাঝে মাঝে সময় কাটানোর জন্য তাস খেলে থাকেন। এটা খারাপ কিছু নয়। যারা লক্ষ বা কোটি টাকার জুয়া চালান তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো উচিত। আমাদের ক্লাবে শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কই কিছু তো পেলেন না তারা। এতে চট্টগ্রাম আবাহনীর ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে।’ শামসুল হক চৌধুরীর এমন বক্তব্যে হতাশ দেশের ক্রীড়াপ্রেমীরা। তাদের প্রশ্ন, শামসুল হক চৌধুরীর মতো একজন দায়িত্ববান রাজনীতিবিদ, যিনি জাতীয় সংসদের গুরুত্বপূর্ণ পদেও আছেন তিনি কি করে এমন বক্তব্য দিতে পারেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।