Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জানুয়ারি-ডিসেম্বরকে অর্থবছর করার দাবি

প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বর্তমানে প্রচলিত অর্থবছরের ত্রæটি-বিচ্যুতি তুলে ধরে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এ কে এম মাঈদুল ইসলাম অর্থবছরের সময়কাল পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন। জানুয়ারি-ডিসেম্বর অর্থবছর করার প্রস্তাব করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ দাবি জানান।
মাঈদুল ইসলাম বলেন, এবারের বাজেট একটু বড় হয়েছে ঠিকই। কিন্তু আমাদের প্রয়োজনে আরও বড় আকারের বাজেট হওয়া দরকার ছিল। কেননা একমাত্র আমার এলাকায় রাস্তাঘাট, অবকাঠামো ইত্যাদি উন্নয়নের জন্য আরও ৫ হাজার কোটি টাকার দরকার। কিন্তু বাজেট বড় করলেই আমরা তার কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারি সেটা একটা বড় বিষয়। আমাদেরকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে যেন বাজেট পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন হয়। না হলে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা থাকবে না। জনগণ হতাশ হবে।
তিনি বলেন, বাজেট বাস্তবায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমাদের বর্তমান অর্থবছর পরিবর্তন করা। দেশে প্রকল্প বাস্তবায়নের অবস্থা এতই খারাপ যে, পরিকল্পনামন্ত্রী নিজেই উদ্বিগ্ন। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, চলতি অর্থবছরের প্রকল্প বাস্তবায়নের অবস্থা ভালো নয়। এডিবি বাস্তবায়নের হার ছিল অর্থবছর ২০১১-১২ এ ৫৫ ভাগ, ২০১২-১৩ এ ৫৪ ভাগ, ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ এ ৫৫ ভাগ এবং ২০১৫-১৬ এ মাত্র ৫০ ভাগ। এটি খুবই হতাশাজনক।
তিনি বলেন, এদেশের বাজেট কোনোদিনই পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবে না-যতদিন পর্যন্ত আমাদের অর্থবছরের পরিবর্তন করা না হবে। জুলাই থেকে জুন, এ সময়ে আমাদের দেশের আবহাওয়া খারাপ থাকে। জুন মাস থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিভিন্ন সমস্যার কারণে এ সময়ে বাজেট বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়। এছাড়া বাজেট পাস হওয়ার পর অর্থ ছাড় করাতে বেশ কিছু সময় লেগে যায়। এভাবে কাজের অগ্রগতি যতটা হওয়ার কথা ততটা হয় না।
জাপা এমপি বলেন, আগে এদেশে নবান্ন বছরের (বৈশাখ-চৈত্র) সঙ্গে মিল রেখে অর্থবছর চালু ছিল। পরে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর ছিল আমাদের অর্থবছর। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তান সরকার জুলাই-জুন অর্থবছর চালু করে, যা এখনও আমাদের দেশে চলছে। পাকিস্তানের আবহাওয়া আর আমাদের আবহাওয়া এক নয়। পাকিস্তানের আবহাওয়ার উপর ভিত্তি করে দাঁড়ানো এ অর্থবছর পরিবর্তন করা দরকার।
তিনি বলেন, আমাদের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও জানুয়ারি-ডিসেম্বর অর্থবছরে ক্লোজিং করে থাকে। সুতরাং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে মিল রেখে ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে এবং আমাদের আবহাওয়া উপযোগী সময় অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর অর্থবছর চালু করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
অর্থমন্ত্রীর আইকন টাওয়ার স্বপ্ন তুঘলকী কাÐ
অর্থমন্ত্রীর আইকন টাওয়ার গড়ার স্বপ্ন সম্পর্কে তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী তার একটি স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবেন। সেটা হলো, একটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার, একটি আধুনিক স্পোর্টস কমপেক্স ও ১৪২তলা বিশিষ্ট আইকনিক টাওয়ার স্থাপন। কিন্তু এতে সর্বসাধারণ মানুষের কি লাভ হবে। তিনি বহুদিন আমেরিকায় ছিলেন। সেখানে বড় বড় টাওয়ার দেখে হয়তো স্বপ্ন জেগেছে যে, বাংলাদেশেও এমনটি দরকার। কিন্তু বাংলাদেশ তো আর আমেরিকা নয়। এটা বুঝতে হবে। তবে আমাদের দেশে ট্রেড সেন্টার করা দরকার যাতে চীন সরকার অর্থায়ন করেছে।
কিন্তু পূর্বাচলকে যদি অর্থমন্ত্রী স্বর্গরাজ্য বানাতে চান তাহলে সেটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ যে দেশের অর্ধেক মানুষের ঘরবাড়ি নেই, মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, সেখানে এ ধরনের বিলাসী স্বপ্ন দেখা ঠিক হবে না। অর্থমন্ত্রী একজন অভিজ্ঞ মানুষ। তার চিন্তা করা উচিত, গ্রামের দরিদ্র মানুষগুলোকে কিভাবে একটি করে ঘর বা একটি করে বাড়ি করে দেওয়া যায়। যেটা প্রধানমন্ত্রীর চিন্তা ভাবনায় আছে।
তিনি বলেন, ঢাকা শহর কলকাতা থেকে অনেক বড় হয়ে গেছে। আমরা লাক্সারি বিল্ডিং করেছি, গুলশান, বানানী, বারিধারা, ধানমন্ডি তৈরি করেছি। এরপরেও ধনী লোকদের জন্য আরও সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করার কোনো যুক্তি নেই। এরকম আইকন টাওয়ার করলে দেশে একদিন বিপ্লব হবে। যাদের বাড়ি নেই, ঘর নেই, খেতে পারে না তারা আপনার সেই আইকন টাওয়ারের ইট খুলে নিয়ে নিয়ে যাবে। সুতরাং এরকম উচ্চাভিলাসী প্রকল্প গ্রহণ করে তুঘলকী কাÐ না ঘটানোর জন্য অনুরোধ করছি।
বাংলাদেশে জঙ্গি-আইএস নেই, আছে মুস্তাফিজ-সাকিব
নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও কার্টার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমানের প্রশংসা করে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার বলেছেন, বিশ্বের বাঘা বাঘা দল এখন বাংলাদেশে খেলতে এসে আমাদের নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হয়। মুস্তাফিজ-সাকিব থাকায় তাদের চিন্তায় পড়তে হচ্ছে।
ক্রীড়া ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, বাঙালি অসম্ভবকে সম্ভব করার জাতি। ক্রীড়াক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন সারাবিশ্বের মধ্যে একটি উজ্জ্বল নাম। বিশ্বের যে কোনো দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে খেলতে আসার আগে তাদের অনেক কিছু বিবেচনা করে আসতে হয়।
তিনি আরও বলেন, জঙ্গি আছে- এ অজুহাতে অস্ট্রেলিয়া খেলতে আসেনি, কিন্তু কেন আসেনি তা আমরা জানি। কারণ আমাদের দেশে মুস্তাফিজ-সাকিবের মতো খেলোয়াড় রয়েছে। ক্রিকেট খেলতে না এলেও ফুটবল খেলতে ঠিকই এসেছিল অস্ট্রেলিয়া।
নবম শ্রেণি থেকে কারিগরি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি
বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে নতুন করে সাজানোর দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী। তিনি বলেন, আমাদের যে শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে তাতে শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী করার দুরূহ হয়ে যাচ্ছে। তাই নবম শ্রেণি থেকে অন্তত কারিগরি শিক্ষার একটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।
কেরামত আলী বলেন, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় জিপিএ বাড়ছে, কিন্তু বেকারের সংখ্যা কমছে না। তাই শিক্ষাব্যবস্থায় কারিগরি শিক্ষা অন্তর্ভূক্তি এখন সময়ের দাবি। একই সঙ্গে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় অন্তত ৯টি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভূক্ত করার দাবিও জানান তিনি।
প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নের জন্য ‘কর’ এর আওতা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে বলেন, অর্থমন্ত্রী যে বাজেট দিয়েছেন, তা বাস্তবায়ন করতে হলে ‘কর’ এর আওতা বাড়াতে হবে। আমাদের মতো লোকরাই অনেক সময় ঠিকমতো কর দেন না। আমরা সবাই কর ফাঁকি দিতে অভ্যস্ত।
পদ্মার ভাঙন থেকে রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধের কাজ দ্রæত শুরু করার আহŸান জানিয়ে বলেন, অচিরেই শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু না হলে রাজবাড়ী শহর হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জানুয়ারি-ডিসেম্বরকে অর্থবছর করার দাবি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ