পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার গত ৫ আগস্ট কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেয়ার পর থেকে ভারতশাসিত কাশ্মীরের আন্দোলনকর্মী, স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীসহ কয়েক হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে।এদের অনেককেই ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। উত্তর প্রদেশের এমনই একটি কারাগার পরিদর্শন করে বন্দীদের সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। আগ্রায় শুক্রবার সকাল শুরু হয় প্রচন্ড গরম ও গুমোট ভাব নিয়েই। উত্তর প্রদেশের এই জনাকীর্ণ ও ধুলাবালিময় শহরটি তাজমহলের আবাসস্থল হিসেবেও পরিচিত। মাঝে মধ্যে হালকা বাতাস এই গরম আবহাওয়াকে সহনীয় করে তোলে। তবে কাশ্মীর উপত্যকা থেকে আসা অসংখ্য নারী-পুরুষের জন্য এই আবহাওয়া মোটেও সহনীয় নয়। কেননা কাশ্মীরে যেখানে সেপ্টেম্বর মাসের তাপমাত্রা ১৮ সেন্টিগ্রেডের কাছাকাছি থাকে সেখানে আগ্রায় তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি স্পর্শ করেছে। আগ্রার কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্ধ গেটের বাইরে একটি বিশাল ওয়েটিং হলে বসে আছেন কাশ্মীরের অনেক মানুষ। পরিবারের কারাদন্ড পাওয়া সদস্যদের সঙ্গে অল্প সময় সাক্ষাতের পালা কখন আসবে তার জন্য সবাই ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছেন। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী কাশ্মীর থেকে কয়েকশ বন্দীকে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের কারাগারে স্থানান্তর করেছে। কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে ৮০ জনেরও বেশি বন্দীকে আগ্রায় পাঠানো হয়েছে। কড়া নিরাপত্তায় ঘেরা আগ্রা কেন্দ্রীয় কারাগারটি ভীষণ গরম আর দুর্গন্ধে ভরা। টয়লেটের দুর্গন্ধ ওয়েটিং হল থেকেও পাওয়া যাচ্ছিল। যেখানে পরিবারগুলো বসে অপেক্ষা করছেন তাদের স্বজনের সঙ্গে দেখা করার জন্য। এই দুর্গন্ধের কারণে তাদের বেশিক্ষণ ধরে অপেক্ষা করাও হয়ে পড়েছিল বেশ কঠিন। এক কাশ্মীরি নিজের জামা দিয়ে মুখের ঘাম মুছতে মুছতে বলেন, ‘এখানে খুবই গরম। আমি এখানেই মরে যাব। সেখানে অপেক্ষায় থাকা পরিবারের সদস্যদের সবাই একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। একজন সামান্য হাসি দিয়ে বলেন, আমার নাম জিজ্ঞেস করবেন না। আমরা নয়তো ঝামেলায় পড়তে পারি। তিনি এসেছেন কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর থেকে ৩০ কিলোমিটার দ‚রের শহর থেকে।আগ্রা কারাগারে তার ভাইকে আনা হয়েছে সে খবর জানলেন কীভাবে? এ প্রশ্নে সেই কাশ্মীরি বলেন, ৪ আগস্টের রাতে নিরাপত্তা বাহিনী আমার ভাইকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কাশ্মীরের আন্দোলনের সঙ্গে তার কোনো যোগস‚ত্রতা ছিল না। পুলিশ বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর দিকে পাথর ছুড়েছিলেন আমার ভাই। তিনি একজন সাধারণ গাড়িচালক।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রায় এক মাস ধরে আমরা জানতামই না যে আমার ভাইকে কোথায় বন্দি করে রাখা হয়েছে। ভাইয়ের খোঁজ জানতে আমি নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বারবার দেখা করেছি। অনেক খোঁজখবরের পর তারা জানায়, আমার ভাইকে শ্রীনগরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’ কিন্তু শ্রীনগরে গিয়েও ভাইয়ের কোনো খোঁজ পাননি বলে জানান তিনি। এর পর অনেক চেষ্টা করার পর ভাইকে আগ্রায় আনা হয়েছে বলে জানতে পারেন তিনি। জানার পর পরই ২৮ আগস্ট আগ্রায় পৌঁছলে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে জানায়, ‘বিষয়টি প্রমাণ করতে কাশ্মীরের স্থানীয় পুলিশের কাছ থেকে একটি ভ্যারিফিকেশন লেটার আনতে হবে। সেই চিঠি আনতে আবারও পুলওয়ামায় যান তিনি এবং আজ চিঠিটি নিয়ে আগ্রায়ে ফিরেছেন।’ এখন শুধু ভাইকে একনজর দেখার অপেক্ষায়। আপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আগ্রার এই গরমে মনে হচ্ছে আমিই মরে যাব। আর কারাগারের ভেতরে ভাই আমার কেমন আছেন আল্লাহ জানেন।’ সাক্ষাৎকালে বিবিসির সাংবাদিক তার নাম জিজ্ঞেস করলে স্মিত হাসি দিয়ে সেই কাশ্মীরি বলেন, ‘আমাদের কারও নাম জিজ্ঞেস করবেন না। আমরা তা হলে ঝামেলায় পড়ে যাব। কাশ্মীরের কুলগাম শহর থেকে ছেলে এবং ভাগ্নের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন দিনমজুর শ্রমিক আবদুল গনি। তবে কোনো ভেরিফিকেশন লেটার আনতে পারেননি বলে বেশ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত তিনি।’ তিনি বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে-পায়ে ধরে জানতে পেরেছি আমার ছেলে ও ভাগ্নে এখানে বন্দি। তাই ১০ হাজার রুপি খরচ করে এখানে এসেছি। এখন সেই চিঠি না হলে ওরা দেখা করতে দেবে না ভেবে আমি উদ্বিগ্ন।’ কী কারণে তার ছেলে ও ভাগ্নেকে আটক করা হয়েছে সে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘রাত ২টার দিকে ঘুমের মধ্যে তাদের তুলে নিয়ে যায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা। কেন তাদের সেদিন তুলে নেয়া হয়েছিল, তার কারণ আজও জানতে পারিনি। তারা কখনই নিরাপত্তা বাহিনীর দিকে পাথর নিক্ষেপ করেনি।’ বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।