মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইনকিলাব ডেস্ক : ভারতে পরিচ্ছন্নতা সমস্যা তীব্র। একারণেই বোধ করি নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার নেয়ার পর পরিচ্ছন্নতার জন্য বিশেষ কর্মসূচি নিতে হয়েছে। ভারতেই আছে পরিচ্ছন্ন গ্রামের উদাহারণ। মেঘালয়ের ছোট্ট গ্রাম মলিনঙ। এ গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে পরিচ্ছন্নতা যেন প্রার্থনার সমার্থক। ৬শ’ মানুষের এই গ্রামের হাঁটি হাঁটি পা পা করা শিশু থেকে দন্তহীন নবতিপর বৃদ্ধÑ সকলেই পরিচ্ছন্নতার প্রতি বিশেষ যতœবান। ভারত সম্পর্কে সাধারণ ধারণা হলো পথ-ঘাটে পড়ে আছে ভাঙা বোতল, অভুক্ত খাবারসহ ঠোঙ্গা আর গোবর। মলিনঙ এই ধারণার অনেক ঊর্ধেŸ। ২০০৩ সালে এই গ্রামকে এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রামের স্বীকৃতি পায়। আর ২০০৫ সালে মলিনঙকে স্বীকৃতি দেয়া হয় ভারতের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম হিসেবে। ডিস্কভার ইন্ডিয়া ম্যাগাজিনের স্বীকৃতি গ্রামটি নজর কাড়ে ভারতের ঊর্ধŸতন কর্তৃপক্ষের। আর মলিনঙকে ঘোষণা করা হয় আদর্শ গ্রাম হিসেবে, যাকে অনুসরণ করে পরিচ্ছন্ন ভারতের অন্য গ্রামগুলো।
গ্রামে গেলে কোনো আবর্জনা নজরে পড়ে না। দেখলে মনে হয় মন্ত্রবলে ময়লা সরানো হয় এ গ্রামে। কী করে আপনারা এত পরিচ্ছন্ন? এ প্রশ্নের জবাবে মলিনঙ-এর যে কেউ বলবে শিশুবেলা থেকে শুরু করুন। এগারো বছরের এক তরুণী। নাম তার ব্যকরডর। দিন শুরু করে সকাল সাড়ে ৬টায়। তার সঙ্গে থাকে গ্রামের সব শিশু। তাদের কাজ গ্রামকে পরিচ্ছন্ন রাখা। ঝাঁটা হাতে এই শিশুবাহিনী গ্রামের পথে পড়ে থাকা আবর্জনা ও ঝরা পাতা সরিয়ে ফেলে সকাল সকাল। তারপর নিজেরা পরিচ্ছন্ন হয়ে স্কুলে যায়। কিছু দূর পর পর মলিনঙ-এ রাখা আছে ময়লা ফেলার পাত্র। এগুলো দেখতে সুন্দর। হাতে তৈরি, আইসক্রিম কোণের মতো দেখতে। এই বিনগুলো পরিষ্কার করাও ছোটদের দায়িত্ব। এরা বিন পরিষ্কার করার সময় পচনশীল দ্রব্য আর পুড়ানো যায় এমন দ্রব্য আলাদা করে ফেলে। পরে লতাপাতাসহ অন্য পচনশীল দ্রব্যগুলো পুঁতে ফেলা হয় মাটির নিচে। আর বাকিগুলো নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাইরে পুড়ে ফেলার জন্য। এটা ছোটদের এবং সংশ্লিষ্ট বড়দের নিত্যদিনের কাজ। এই গ্রামে আছে বড় বাগান, পত্রে পুষ্পে সুশোভিত বৃক্ষে ভরা বাগান। আছে সুন্দর ফুটপাত। ছায়াময় ফুটপাত। ব্যকরডর এবং তার সঙ্গীরা এই গ্রামে বাস করে খুবই আনন্দিত। কোনো অতিথি যদি গ্রামের সড়কে বা অঙ্গনে কোনো ময়লা বা পাতা-ফুল ফেললে ছেলেমেয়েরা তখুনি তা তুলে নিয়ে বিনে রেখে দেয়। মেহমানদের কিছু বলে না।
মলিনঙ-এ প্রতিদিনের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম যেমন আছে, তেমনি আছে শনিবারের বাড়তি পরিচ্ছন্নতার কাজ। আর এ কাজ করে ছোট বড় সকলেই। গ্রামপ্রধান সামাজিক কাজকর্মগুলো ভাগ করে দেন। এসব কাজের মধ্য দিয়েই পরিচ্ছন্ন থাকে তাদের প্রাণের গ্রাম। ব্যকরডর তার গ্রামের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের বাইরে তার স্কুলঘর পরিষ্কার করে। সে এই বয়সেই জানে এই পদ্ধতিটা কেবল ভালো একটা কাজ নয়, এটা তাদের নিয়ম-নিষ্ঠার অংশ। তারা জানে পরিচ্ছন্নতা সুস্থ জীবনযাপনের জন্য বড় প্রয়োজন। হোসানা এক বয়সী নারী। তিনি প্রতিদিন ছোটদের পরিশ্রমের ফলাফল দেখে খুশি হন। তিনিও বসে থাকেন না। তিনিও ভাঁজ করে রাখেন ঘরের পর্দা, মাদুর। সহায়তা করেন বাড়ি ও গ্রামকে পরিচ্ছন্ন রাখতে। এই পরিচ্ছন্নতার ধারণা এ গ্রামে কবে এলো। এ বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলতে পারে না। তবে একটা ধারণা প্রচলিত আছে, ১৩০ বছর আগে গ্রামে কলেরা দেখা দিয়েছিল। আর কলেরার বিস্তার ঠেকাতে শুরু হয় পরিচ্ছন্নতা অভিযান। সেই থেকে শুরু, আজও বহমান এই ধারা। এ গ্রামের বাসিন্দারা খাসিয়া নৃগোষ্ঠীর মানুষ। এখানে এখনো মাতৃতান্ত্রিক সমাজ। নারীরা সমাজের নেতৃত্বে থাকায় বাড়ি ও চারপাশের পরিবেশ অধিকতর পরিচ্ছন্ন থাকে। মলিনঙবাসীরা মনে করেন, এটা অভ্যাস নয়, জীবনের অঙ্গ।
মলিনঙ-এ প্লাস্টিক ব্যাগ দেখা যায়। এ সমস্যা কি করে মোকাবিলা করা হয়? এটাও জানা আছে তাদের। প্লাস্টিক পোড়ায় না তারা। জমা করে রাখে। তারপর কারো দরকারে ব্যবহারের জন্য দেয়া হয়। আবার জমা করে রাখা হয়। এ গ্রামে আছে বেশকিছু পুকুর। জল দেখে মনে হয় যেন স্বচ্ছ কাচ। এমন গ্রামইতো স্বর্গের প্রতিচ্ছবি। মলিনঙবাসীরা মনে করেন, তাদের গ্রামের মতো হোক এশিয়ার সকল গ্রাম। বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।