Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অমিতব্যয়িতা এবং কৃপণতার পরিণাম

ড. মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

অমিতব্যয়িতা বা অপচয় করা এবং কৃপণতা পরিভাষা দুইটি আমাদের সমাজে একটি অপরটির বিপরীত অর্থে বহুল প্রচলিত। এ দুইটির কোনটিরই আমরা পছন্দ করি না। কিন্তু অজান্তেই আবার এর সাথে নিজেদেরকে জড়িয়ে ফেলি। কারণে অকারণে আবার সেগুলোকে বৈধ ও ভাল বলে ছাপাই গাইতেও কুন্ঠা বোধ করি না।
ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে তার অবস্থানকে এ দুই পরিভাষার মধ্যবর্তী স্থানে নিশ্চিত করেছে। অর্থাৎ ইসলাম অমিতব্যয়িতাকেও যেমন প্রশ্রয় দেয় না তেমনি কৃপণতাকেও নয়। এই অবস্থানটি যৌক্তিক এবং একে অন্যের জন্যে কল্যাণকরও।
আমাদের মাঝে একটি ভুল ধারণা হলো শুধুমাত্র অর্থনৈতিক ব্যাপারগুলোর সাথে এই দুইটি পরিভাষা অর্থাৎ অপচয় ও কৃপণতা জড়িত। যমন, খাবার, অর্থ এবং সম্পত্তি। কিন্তু এটি ঠিক নয়। বরং অন্যান্য বিষয়সমূহেও অমিতব্যয়িতা এবং কৃপণতা হতে পারে। যেমন: সময়, জ্ঞান, চিন্তা, দক্ষতা, মানসিকতা ইত্যাদি। অর্থাৎ এ বিষয়গুলোর যেমন অপচয় হতে পারে তেমনি বিপরীত দিকে কৃপণতাও হতে পারে। সুতরাং এসব বিষয়গুলোতেও আমাদেরকে মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে হবে। অর্থাৎ যার যতটুকু করার সুযোগ ও ক্ষমতা আছে সে ঠিক ততটুকুই করবে। সুযোগ ও ক্ষমতার বেশি ব্যবহার যেমন অমিতব্যয়িতা হিসেবে গণ্য হবে তেমনি ব্যবহারে কুন্ঠাবোধ করলে কৃপণতা হিসেবে বিবেচিত হবে। বিষয়টি নতুন মনে হলেও উদাহরণ স্বরুপ আমরা ‘সময়ের অপচয়’ পরিভাষাটিকে উল্লেখ করতে পারি। এ পরিভাষাটিও আমাদের মাঝে বহুল পরিচিত ও প্রচলিত। তবে, প্রতক্ষ্য ঘটনায় খাদ্য, অর্থ এবং সম্পত্তির অপচয় এবং কৃপণতা আমরা বেশি লক্ষ্য করি বিধায় তা নিয়েই আমরা আলোচনা-সমালোচনা বেশি হয়। ইসলাম মূলতঃ সর্বাবস্থায় এই দুইয়ের মধ্যবর্তী অবস্থান নির্ণয় করে দিয়েছে। যা, প্রত্যেক অনুসারীর জন্যে পালন করা বাধ্যতামূলক। তার কারণ হলোঃ
অপচয় ও কৃপণতা করা হারাম (নিষিদ্ধ): ইসলামে কোন অর্থেই অপচয় ও কৃপণতা করার সুযোগ নেই। এগুলো নিষিদ্ধ। কারণ, এগুলো সমাজের অন্যদেরকে বঞ্চিত করে। আল্লাহ বলেন, “... এবং অপব্যায় করো না। নিশ্চয়ই তিনি অপব্যয়ীকে পছন্দ করেন না।” (সূরা আল-আন‘আম, ৬: ১৪১) অন্য আয়াতে তিনি বলেন, “... এবং কিছুতেই অপচয় করো না।” (সূরা আল-ইসরা’, ১৭: ২৬) অপরদিকে, কৃপণতার ব্যাপারে তিনি বলেন, “তুমি একেবারে ব্যয়-কুণ্ঠ হয়ো না এবং একেবারে মুক্ত হস্তও হয়ো না। তাহলে তুমি তিরস্কৃত, নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে।” (সূরা আল-ইসরা’, ১৭: ২৯)
আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না। কুরআনুল কারিমে স্পষ্ট ঘোষণা দেয়া হয়েছে, “হে বনি আদম, তোমরা প্রত্যেক নামাজের সময় সাজসজ্জা পরিধান করো, খাও এবং পান কর এবং অপব্যয় করো না। তিনি অপব্যয়ীদেরকে পছন্দ করেন না।” (সূরা আল-আ‘রাফ, ৭: ৩১)
অপচয়কারী শয়তানের ভাই। যারা এসকল কাজের সাথে নিজেদেরকে জড়িত করবে তাদেরকে শয়তানের ভাই হিসেবে কুরআনে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।” (সূরা আল-ইসরা’, ১৭: ২৭) অর্থাৎ অপচয়কারীরাও আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ। হ্যাঁ, আর একটি কথা ভাই বলতে শুধুমাত্র পুরুষদেরকে বুঝানো হয়নি বরং নারীরাও এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। অর্থাৎ তারা শয়তানের বোন হিসেবে সাব্যস্থ হবে।
কৃপণ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। সামর্থ থাকার পরেও যে ব্যক্তি নিজের এবং অন্যের প্রয়োজনে অর্থ, সম্পত্তি, মেধা, বুদ্ধি, চিন্তা, দক্ষতা ব্যয় করে না যে কখনও জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা দিচ্ছেন, “কৃপণ ব্যক্তি কখনও জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” (মুসনাদু আহমাদ, খÐ ১, হাদিস নম্বর ১৯১)
কৃপণদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের আযাব। আল্লাহ ঘোষণা করছেন, “যারা নিজেরাও কার্পন্য করে এবং অন্যদেরকেও কৃপণতা শিক্ষা দেয় আর গোপন করে সে সব বিষয় যা আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে দান করেছেন স্বীয় অনুগ্রহে- বস্তুতঃ কাফেরদের জন্যে তৈরি করে রেখেছি অপমান জনক আযাব।” (সূরা আন-নিসা, ৪: ৩৭; আরো দেখুন: সূরা আল-হাদিদ, ৫৭: ২৪)
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, ইসলাম তাহলে আমাদেরকে কী শিক্ষা দিচ্ছে? উত্তর হলো আমাদেরকে এ দুইয়ের মধ্যবর্তী হতে হবে। ছলে-বলে, কলে-কৌশলে এই দুইটির কোনটিরই প্রয়োগ করা যাবে না। অর্থাৎ যদি কোন ব্যক্তির সামর্থ থাকে উত্তমভাবে জীবন নির্বাহ করার তাহলে সে তাই করবে। তাতে কোন দোষ নেই।
আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যাদের সামর্থ থাকার পরেও রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাদা-সিদে জীবন-যাপনের উদাহরণ টেনে অর্থ কড়ি খরচ না করে দীন-হীনভাবে চলাফেরা করেন। কিন্তু তারা ভুলে যান যে, রাসূল (সা.)-এর কোন গচ্ছিত অর্থ-কড়ি সম্পত্তি ছিল না। বিধায় তিনি দীন-হীন সহজ-সরল জীবন যাপন করতেন, অনাহারে, বুভুক্ষ অবস্থায় থাকতে বাধ্য হতেন। তাঁর (সা.) আর্থিক সচ্ছলতার দিনে অনাহারে ছিলেন বা পরিবারের প্রয়োজন পুরুণ করেননি তার কোন প্রমাণ আমরা পাইনা।
সুতরাং আমাদেরকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া উচিত যে আমরা আমাদের সামর্থ অনুযায়ী জীবন নির্বাহ করব, অন্যের উপকারে আসব। সেক্ষেত্রে অমিতব্যয়ীও হবো না আবার কৃপণতাও করব না।



 

Show all comments
  • Abu Faiz Bulbul ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৬:১৯ পিএম says : 0
    Right.
    Total Reply(0) Reply
  • Khaled Reza ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৫:৫৭ এএম says : 0
    Very nice.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ