মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
ইফতেখার আহমেদ টিপু
নগরজুড়ে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির উৎসব নাগরিকদের বিপর্যস্ত অবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। রাজধানীর এমন কোনো সড়ক নেই যেখানে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে না। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে যানজটের ঢাকা কার্যত অচল নগরীতে পরিণত হচ্ছে। সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, তিতাস, ডেসকোসহ সবাই মিলে প্রতিদিনই কোনো না কোনো সড়ক, অলিগলি খুঁড়ছে।
আজ এ প্রতিষ্ঠান কাটছে তো কাল আরেক প্রতিষ্ঠান। সে কাজ শেষ হতেই আরেক প্রতিষ্ঠান এসে নতুন করে সড়ক খনন করছে। নগরবাসীকে উন্নত রাস্তাঘাট, পরিচ্ছন্ন নর্দমা বা সুষ্ঠুভাবে গ্যাস, বিদ্যুৎ আর পানির সেবা পৌঁছে দেওয়ার নামে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি হলেও তাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে নাগরিক জীবন। প্রতিদিন রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির ফলে নগরজুড়ে উড়ছে ধুলাবালি। নোংরা হয়ে উঠছে পরিবেশ। শ্বাসকষ্টসহ নগরবাসী নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আওতায় রয়েছে প্রায় ২২০০ কিলোমিটার সড়ক। এর মধ্যে কমপক্ষে ৫০ ভাগ সড়কে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি, যার ৮০ ভাগেই উন্নয়নকাজ করছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। আর এ উন্নয়ন করতে গিয়েই কয়েক মাস ধরে রাজধানীর রাস্তাঘাট হয়ে পড়েছে বিপন্ন। এ উন্নয়নের খপ্পরে নগরবাসী পড়েছে মহাবিপাকে। শুষ্ক মৌসুমে এসব উন্নয়নকাজ শুরু হলেও বর্ষা মৌসুম প্রায় চলে আসার পরও থেমে নেই রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে প্রতিটি সড়কেই যানজট প্রায় স্থায়ী রূপ নিচ্ছে। যান্ত্রিক যানবাহনে যে পথ সাধারণ অবস্থায় ১০ মিনিটে অতিক্রম করার কথা, সে পথ পাড়ি দিতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০ গুণ সময়ও লাগছে। উন্নয়নকাজের সমন্বয়হীনতার কারণে জনভোগান্তি যেন স্থায়ী রূপ নিচ্ছে। রাজধানীর মৌচাক, মগবাজার, মালিবাগ, শান্তিনগরে ফ্লাইওভারের নামে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলছে দীর্ঘদিন ধরে। গুলশানে ওয়াসার পাইপলাইন বসানোর কাজ চলছে। কাজ শেষ হওয়ার পরও রাস্তা মেরামত না হওয়ায় চলছে ভোগান্তি। রাজধানীর একাংশে চলছে ভূগর্ভস্থ ক্যাবল স্থাপনের কাটাছেঁড়া। সেবার নামে নগরজুড়ে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির যে বাড়াবাড়ি চলছে তাতে নগরবাসীর অবস্থা দাঁড়িয়েছে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচির মতো।
নগরবাসী অবশ্যই সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে মানসম্মত সেবা চায়। পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, টেলিফোন কিংবা ওয়াসার উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন কাজে সাময়িক ভোগান্তির শিকার হতেও তারা রাজি। কিন্তু তা যেভাবে স্থায়ী রূপ নিচ্ছে তা মেনে নেওয়া যায় না। এ অকাম্য অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে।
এক সময় রাজধানীর পানি নিষ্কাষণের জন্য ব্যবহƒত হতো বেশ কিছু প্রাকৃতিক খাল। এসব খালের বেশির ভাগই বেদখল এবং ভরাট হয়ে গেছে। অদ্ভুত এ দেশে সরকারি বা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন খাল এমনকি নদীও বেদখল হয়ে যায়। যারা জনগণের ট্যাক্স টাকায় পরিচালিত হন, সরকারের ভূমি দফতরের কিছু অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে তা আত্মসাতের কৃতিত্ব দেখাচ্ছে একশ্রেণীর খালখেকো লুটেরারা। ফলে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয় রাজধানীতে। অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় নগরজীবনে। নাগরিকদের ভোগান্তির সৃষ্টি হয়।
জলাবদ্ধতা নিরসনে রাজধানীতে ড্রেন ও স্যুয়ারেজ মেরামত এবং উন্নয়ন কাজগুলো মার্চ মাসের আগেই শেষ করা উচিত। প্রতি বছর এসব কাজ এপ্রিল-মে মাসে শুরু করা হয় এবং জুন, জুলাই ও আগস্টের ভরা বর্ষা মৌসুমে ঠিকাদাররা রাস্তা খুঁড়ে বসে থাকে। এসব কারণেও রাজধানীর অনেক স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। অর্থবছর যেখানে শুরু হয় জুলাই মাসে, সেখানে নয়-দশ মাস পার করে বর্ষার আগে কাজ শুরু করার বদঅভ্যাসটি বন্ধ হওয়া সবচেয়ে বেশি জরুরি। জলাবদ্ধতা বন্ধে রাজধানী তিন সেবা দানকারী সংস্থার কাজের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। রাজধানীর ওয়াসা, ডেসা ও স্যুয়ারেজের কাজের সমন্বয়ে আলাদা কোন মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দিতে হবে অথবা সিটি কর্পোরেশনকে এর তদারকির দায়িত্ব দিতে হবে।
অপরিকল্পিত নগরায়নের কুফল ভোগ করছে রাজধানীর সমস্ত মানুষ। এত মানুষের এই দুর্ভোগ যদি রাজধানীতে প্রতিবারই সৃষ্টি হয় আর এর পরেও যদি যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়া হয় তবে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে! ক্রমাগত সৃষ্টি হওয়া রাজধানীর এই জলাবদ্ধতা যেভাবে ঘটে চলেছে তা নিরসনে সঠিক উদ্যোগ নিতে হবে। কেননা একটি স্বাধীন দেশে গণতান্ত্রিক সরকার থাকতে এভাবে বৃষ্টির পানি আটকে পুরো শহরের মানুষের স্বাভাবিক গতি থমকে যাবে তা হতে পারে না। ফলে এ অবস্থাকে কাটিয়ে উঠতে পদক্ষেপ নিতেই হবে। গড়ে তুলতে হবে পর্যাপ্ত ড্রেনেজ-ব্যবস্থা। পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক পাম্প বসানো, নর্দমা, কালভার্ট এবং খালগুলো পরিষ্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। আর এগুলো যত দিন না বাস্তবায়ন করা হবে তত দিন এই দুর্ভোগের কবলে পড়তে থাকবে রাজধানীবাসী। সরকারকে মনে রাখতে হবে, বছরের পর বছর ধরে সামান্য বৃষ্টিতেই এ নগরীর অধিকাংশ রাস্তায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। দুর্বল ও অপ্রতুল পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাই এর প্রধান কারণ। জলাবদ্ধতার আরেকটি কারণ হচ্ছে রাজধানীর গুলশান, ধানমন্ডি, বনানী ও উত্তরার লেকের আশপাশের নির্মাণাধীন ভবনের ব্যবহƒত রাবিশ লেকে ফেলা হচ্ছে। যার কারণে লেকের নাব্যতা হারিয়ে ময়লার স্তূপ হতে বসেছে। কর্তৃপক্ষকে সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে।
ষ লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক নবরাজ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।