মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
সালটা ১৯৫৯। বিশ্ববিখ্যাত সাহিত্যিক রোয়াল্ড ডাল লিখলেন এক অদ্ভুত ছোটগল্প। গল্পের নাম ‘উইলিয়াম অ্যান্ড মেরি’। গল্পে দেখা যায় মৃত উইলিয়ামের মস্তিষ্ককে রিঙ্গার দ্রবণে চুবিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। মস্তিষ্কের সঙ্গে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে একটি চোখ এবং হৃৎপিণ্ড। সবচেয়ে ভূতুড়ে ব্যাপার, মৃত উইলিয়ামের মস্তিষ্ক স্ত্রী মেরি পার্লের সঙ্গে কথা বলে।
সাহিত্যিকদের কল্পনায় এমন ঘটতেই পারে। কিন্তু বাস্তবে? খুলি থেকে বের করে উপযুক্ত দ্রবণে মস্তিষ্ককে সংরক্ষণ করার পদ্ধতি বিজ্ঞানীদের মধ্যে নতুন নয়। তবে সেই মস্তিষ্ক কথা বলবে, এমনটা অলীক কল্পনা। ‘উইলিয়াম অ্যান্ড মেরি’ প্রকাশিত হওয়ার ঠিক ৬০ বছর পরে অবশ্য এই ধারণা ভেঙে পড়ার মুখে। সান ডিয়েগো-র ক্যালিফর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাল-এর কল্পনার অনেকটাই বাস্তবে পরিণত। সেখানকার স্টেম সেল ইউনিটের গবেষণাগারে বিশেষ দ্রবণে চোবানো মস্তিষ্ক কথা বলা শুরু করেছে। পার্থক্য হল, এই কথা বলা মস্তিষ্ক উইলিয়ামের মতো কোনও মৃত ব্যক্তির নয়। মানব কোষ থেকেই কৃত্রিম ভাবে তৈরি।
৩০ আগস্ট ক্যালিফর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় টেলিভিশন একটি ভিডিও প্রকাশ করে। সেখানে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় অ্যালিসন মুয়োত্রি-র কথায় ফুটে উঠছিল একরাশ বিস্ময়। তিনি বলছিলেন, ‘প্রেসিল্লা এবং ক্লেবার এসে যখন বলল, অরগ্যানয়েড-এ যুক্ত মাইক্রোইলেকট্রোড থেকে যা সাড়া পাওয়া যাচ্ছে, তা মানুষের মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিন প্রতিক্রিয়ার মতোই জটিল। আমি বিশ্বাস করিনি। ভাবছিলাম নিশ্চয়ই মাইক্রোইলেকট্রোড-এ কোনও গন্ডগোল হয়েছে। অথবা কম্পিউটারে কোনও ভাইরাস প্রবেশ করেছে। ফলে তথ্য বিশ্লেষণে কোনও ভুল হচ্ছে।’ আসলে অ্যালিসন মুয়োত্রির গবেষণাগারেই ঘটেছে মস্তিষ্কের কথা বলার ঘটনা।
মস্তিষ্কের কথা বলার ভাষা হল বৈদ্যুতিন সঙ্কেত। এই সঙ্কেতই মস্তিষ্কের ভাবনা, যা স্বরযন্ত্রের সাহায্যে আমরা নিজেদের ভাষায় ব্যক্ত করে থাকি। মুয়োত্রি-র গবেষণাগারের দুই পোস্ট-ডক্টরেট গবেষক প্রেসিল্লা নেগ্রেস ও ক্লেবার ত্রুজ়িল্লো দীর্ঘ দিন ধরেই মানুষের দেহকোষ থেকে কৃত্রিম মস্তিষ্ক তৈরির চেষ্টায় সফল। তবে এই প্রথম বার তাদের তৈরি কৃত্রিম মস্তিষ্ক সত্যিকারের মানুষের মস্তিষ্কের মতো জটিল বৈদ্যুতিন প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করেছে। গত সপ্তাহেই এই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে‘সেল স্টেম সেল’ জার্নালে। তার পর থেকেই বিশ্ব জুড়ে জীববিজ্ঞানীদের মধ্যে হইচই পড়ে গিয়েছে।
মুয়োত্রি ও তার গবেষক দলের এই কৃত্রিম মস্তিষ্ক আসলে ঠিক কী? সহজ ভাষায়, মানুষেরই পরিণত দেহকোষকে কাজে লাগিয়ে ছোট পাত্রে (গবেষকেরা যাকে পেট্রিডিশ বলে থাকেন) মস্তিষ্কের কোষ তৈরি করা হয়েছে। সেই মস্তিষ্কের কোষগুলি নিজেরাই একত্রিত হয়ে ছোট ছোট বলের আকার নিয়েছে। এই বলগুলিকে বলা হয় অরগ্যানয়েড। মস্তিষ্কের কোষ জুড়ে তৈরি এই অরগ্যানয়েডকে মিনি ব্রেনও বলা হয়।
দেহকোষ থেকে এই কৃত্রিম মিনি ব্রেন তৈরির পদ্ধতিটি খুব সহজ নয়। এই কাজে ব্যবহৃত হয় ইনডিউস্ড প্লুরিপোটেন্ট সেল (যে ধরনের স্টেম সেল যে কোনও দেহকোষ তৈরি করতে পারে) প্রযুক্তি। ২০০৬ সালে জাপানি বিজ্ঞানী শিনিয়া ইয়ামানাকা এই সেল তৈরি করেন। এই যুগান্তকারী আবিষ্কার ২০১২ সালে তাকে এনে দেয় নোবেল প্রাইজ।
মুয়োত্রি ও তার দল মিনি ব্রেন তৈরিতে কাজে লাগিয়েছেন ইয়ামানাকার পদ্ধতি। তারা ত্বকের কোষকে পরিণত করেছেন আইপিএসসিতে। তার পরে বিশেষ দ্রবণে আইপিএসসিগুলিকে পরিণত করা হয়েছে মস্তিষ্কের কোষে। তরলে ভাসমান কোষগুলিকে একটি নির্দিষ্ট গতিতে ঘোরালেই কিছু দিন পরে তৈরি হয় বলের মতো অর্গ্যানয়েড। আসলে সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে মানুষ যেমন জীবন ও জীবিকার স্বার্থে একজোট হয়ে বাস করতে চায়, তেমনই ভাসমান কোষগুলি নিজেদের মধ্যে তথ্য ও পুষ্টি আদানপ্রদানের জন্য গড়ে তোলে কলোনি। ভাসমান এই কলোনিগুলি ধীরে ধীরে কয়েক মাসের মধ্যেই ছোট পরিসরে তৈরি করে মস্তিষ্কের ছোট সংস্করণ।
এই প্রথম মিনি ব্রেন এমন জটিল বৈদ্যুতিন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, যা মানব মস্তিষ্কের জটিল বৈদ্যুতিন প্রতিক্রিয়ার কাছাকাছি। দীর্ঘ ১০ মাস ধরে ভাসমান মস্তিষ্কের কোষগুলির কলোনি তৈরি ও তার বিবর্তন নিরীক্ষণ করে বোঝা গিয়েছে কী ভাবে মস্তিষ্কের বিভিন্ন ধরনের কোষের সংখ্যা বাড়ে কমে। তবে সব কিছুকেই ছাপিয়ে গিয়েছে ১০ মাস বয়সের মিনি ব্রেনগুলির নিজেদের ভাষায় কথা বলে ওঠা। যে ভাষা হল জটিল বৈদ্যুতিন প্রতিক্রিয়া।
ক্যালিফর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ এথিক্স কমিটির প্রধান মাইকেল কালিচম্যান অবশ্য এই গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তার বক্তব্য, এই ধরনের গবেষণা ভবিষ্যতে নীতির প্রশ্নে বিদ্ধ হতে পারে। কালিচম্যান জানিয়েছেন, তিনি অত্যন্ত আশাবাদী এই গবেষণা মস্তিষ্কের গঠন বুঝতে, বিশেষ করে বিভিন্ন স্নায়ুজনিত রোগ নিরাময়ে সাহায্য করবে। কিন্তু যে হেতু মিনি ব্রেনগুলি মানব মস্তিষ্কের কাছাকাছি জটিল বৈদ্যুতিন সঙ্কেত দেখাতে শুরু করেছে, হয়তো ভবিষ্যতে গবেষণাগারেই এমন মস্তিষ্ক তৈরি হবে, যা মানব মস্তিষ্কের সমতুল্য। অর্থাৎ, মিনি ব্রেনগুলি ভাবতে শুরু করবে। তখন বাইরে মস্তিষ্কগুলির সঙ্কেত বা ভাবনাও বিজ্ঞানীরা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবেন। তখনই উঠবে নীতির প্রশ্ন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।