পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মিথ্যা ঘোষণায় বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা প্রায় ২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা মূল্যের ভায়াগ্রার দুটি বিশাল চালান আটকের পর ব্যবসায়ী মহলে হৈচৈ পড়ে গেছে। ওষুধের কাঁচামাল ও ফুড ফ্লেভার ঘোষণা দিয়ে আলাদাভাবে ২ হাজার ৭০০ কেজি ভায়াগ্রা পাউডার আমদানি করা হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। ভারত থেকে আমদানি করা ২ হাজার ৫০০ কেজি পাউডারের চালানটি রাসায়নিক পরীক্ষা করা হয় ৫টি প্রতিষ্ঠানে। কাস্টমস এর স্পেকটো মিটার মেশিন, খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ও ড্রাগ প্রশাসনের ল্যাবের টেস্ট রিপোর্টে সিলডেনাফিল সাইট্রেট বা ভায়াগ্রার উপাদান রয়েছে উল্লেখ করা হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) তাদের পরীক্ষা রিপোর্টে কোন মন্তব্য না করেই রিপোর্ট দিয়েছে। বিসিএসআইআর’র রিপোর্ট সরাসরি আমদানিকারকের ঘোষণা অনুযায়ী ‘সোডিয়াম স্টারর্স গ্লোকোলেট’ রিপোর্ট প্রদান করা হয়।
এমনকি ল্যাব টেস্টের রিপোর্ট পক্ষপাতমূলক করায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী ২৭ আগস্ট এনবিআরের চেয়ারম্যান বরাবর এক চিঠিতে এ অনুরোধ করেন। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানান, মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আমদানি করা এ পণ্যগুলো সরকারের শুল্ক করও পরিশোধ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, একদিনেই ২ হাজার ৫০০ কেজি রাসায়নিক পাউডার আটকের পর তাতে ভায়াগ্রার উপাদান আছে মর্মে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়। এটি নিশ্চিত হতে সরকারের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে রাসায়নিক পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়। এর মধ্যে সায়েন্স ল্যাব বা বিসিএসআইআর ছাড়া সবকটি দফতরের রাসায়নিক পরীক্ষায় আটককৃত পাউডারে ভায়াগ্রার উপাদান আছে বলে প্রমাণ মেলে। এই বাস্তবতায় সায়েন্স ল্যাবের পক্ষপাতদুষ্ট পরীক্ষা ও রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কাস্টমস বিভাগ। সাদা পাউডারের আড়ালে ভায়াগ্রার ওই বিশাল চালানটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আইবি ট্রেডার্স থেকে আমদানি করে ঢাকার মিটফোর্ডের (আমদানিকারক) প্রতিষ্ঠান মেসার্স বায়েজিদ এন্টারপ্রাইজ।
এ প্রতিষ্ঠানের বেনাপোল স্থানীয় সিএন্ডএফ এজেন্ট সাইনী শিপিং সার্ভিসেস। বায়েজিদ এন্টারপ্রাইজ ‘সোডিয়াম স্টারর্স গ্লোকোলেট’ বা এসএসজি পাউডার ঘোষণা দিয়ে ওই চালানটি ভারত থেকে আমদানি করে। ওষুধ তৈরির উপাদান হিসেবে সোডিয়াম স্টারর্স গ্লোকোলেট এই চালানে যে পরিমাণ পাউডার ছিল বন্দরে তার মূল্য দেখানো হয় ১২ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি এই চালান বাবদ সরকারকে ১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ট্যাক্সও পরিশোধ করেন। বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হলে এতে কী আছে, তা নিরূপণের জন্য আমদানিকৃত পাউডারের উপাদান পরীক্ষা করতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), সায়েন্স ল্যাব, কাস্টমসের নিজস্ব ল্যাব ও ড্রাগ প্রশাসনের ল্যাবে সাদা সোডাজাতীয় সেম্পল পাঠায়।
পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তাদের ল্যাব পরীক্ষার রিপোর্ট বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করে। এ পর্যায়ে কুয়েট, বেনাপোল কাস্টম ল্যাব ও ড্রাগ প্রশাসনের ল্যাব রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নমুনা তারা পরীক্ষা করেছে তাতে ‘সিলডেনাফিল সাইট্রেট’ বা ভায়াগ্রার উপাদান রয়েছে।
বায়েজিদ এন্টারপ্রাইজ সোডিয়াম স্টারর্স গ্লোকোলেট বলে যে বড় চালানটি দেশে আনে তা মূলত ভায়াগ্রার চালান। অন্যদিকে বুয়েটের ল্যাব টেস্টে সোডিয়াম স্টারর্স গ্লোকোলেট এর ভেতর আর কী উপাদান আছে তা শনাক্ত করতে পারেনি মর্মে রিপোর্ট দেয়।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষের ল্যাব টেস্টের বিষয়ে যুগ্ম কমিশনার মো. জাকির হোসেন বলেন, আমরা নিজেদের ল্যাবে পরীক্ষা করেই নিশ্চিত হয়েছি এটি ভায়াগ্রার চালান। আরও অধিকতর প্রমাণের জন্য সরকারের অন্যান্য দফতরে সেম্পল পাঠাই।
সায়েন্স ল্যাবের রিপোর্ট সম্পর্কে জানতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের পরিচালক ডা. শাহীন আজিজকে ফোন করে ওই রিপোর্টের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যামিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান বাদল বলেন, আমাদের কাছে সাদা পাউডার সেম্পল হিসেবে পাঠানো হয়েছিল। বেনাপোল কাস্টম হাউসের পাঠানো সেই সেম্পল পরীক্ষা করে তাতে ভায়াগ্রার উপাদান পেয়েছি।
ড্রাগ প্রশাসনের পরিচালক নাইয়ার সুলতানা বলেন, আমাদের কাছে যে নমুনা দেয়া হয়েছিল তা ড্রাগ কন্ট্রোল ল্যাবে পরীক্ষা করে ভায়াগ্রার উপাদান পেয়েছি।
যে চালানটি (২ হাজার ৫০০ কেজি) আটক করা হয়েছে, তা দিয়ে ১০০ মিলিগ্রামের ২ কোটি ৫০ লাখ ভায়াগ্রা টেবলেট তৈরি সম্ভব। বিসিএসআইআর’র রিপোর্টের ওপর জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তসহ শত শত কোটি টাকার রাজস্ব নির্ভর করে। গোপন সংবাদের ভিত্ততে জানা যায়, বিসিএসআইআর’র ওই রিপোর্ট আমদানিকারক চক্র কর্তৃক প্রভাবিত ও পক্ষপাতদুষ্ট।
আমদানিকারক বায়েজিদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমাদের বিশাল চালানটি আটকে দিয়েছে। তারা সন্দেহ করছে আমরা ‘সোডিয়াম স্টারর্স গ্লোকোলেট’ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে যে চালানটি এনেছি তাতে ভায়াগ্রার উপাদান আছে।
তবে সায়েন্স ল্যাবের রিপোর্টে তা বলা হয়নি। তারপরও কর্তৃপক্ষ যেহেতু ভায়াগ্রা বলছে তাই আমি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান আইবি ট্রেডার্সের কাছে চিঠি লিখেছি। তাদের কাছে জানতে চেয়েছি, পণ্যের চালানে ভায়াগ্রার উপাদান সংবলিত পণ্য দেয়া হয়েছে কি না? আমি ওই চিঠির কপি কাস্টমস কর্তৃপক্ষকেও দিয়েছি।
বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, আমরা উদ্বিগ্ন যে ট্রাকভর্তি আড়াই টন ভায়াগ্রা তড়িঘড়ি করে খালাসের পূর্ব মুহূর্তে গোপন সংবাদ পেয়ে জব্দ করি। বিসিএসআইআরের রিপোর্ট সঠিক ধরে বিধি মোতাবেক শুল্কায়ন করে খালাস করার উদ্যোগ নেয় আমদানিকারক। আমার অবাক লাগে বিসিএসআইআর ‘সোডিয়াম স্টারর্স গ্লোকোলেট’ নাম কোথা থেকে পেল! আমাদের চিঠিতে কোথাও এ নাম ছিল না।
তিনি আরো বলেন, আশঙ্কা করছি, ভায়াগ্রাও ইয়াবা হয়ে উঠতে পারে। দেশবিরোধী অপরাধী চক্র এর সঙ্গে জড়িত। নানাভাবে চাপ ও প্রভাব খাটিয়ে খালাসের চেষ্টা করছে। জনস্বাস্থ্য ও তরুণসমাজ বিনষ্টকারী এ জঘন্য পণ্য যে কোনো মূল্যে প্রতিরোধ করা হবে। ভায়াগ্রা নিয়ে সাড়ে চার হাজার পয়েন্টে রেড এলার্ট পাঠিয়েছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।