Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফাইভজি চালুর উদ্যোগ

জানুয়ারিতে পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রতারণা বলছে গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৪ এএম, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

কলড্রপ, মিউটকল, ধীরগতির ইন্টারনেট সেবাসহ টেলিযোগাযোগে মানসম্মত সেবা নিয়ে গ্রাহকদের বিস্তর অভিযোগ। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির জরিপেও ওঠে এসেছে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর নিম্নমানের সেবার চিত্র। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতেই এখানো ফোরজি সেবা পুরোপুরি দিতে ব্যর্থ হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে সেই জরিপে। রাজধানীর বাইরে জেলা শহর ও উপজেলা শহরগুলোতে ফোরজির নামে টুজি, কখনো কখনো থ্রিজি সেবা পাওয়ার অভিযোগও আছে গ্রাহকদের। উপজেলা শহরগুলো বাইরের চিত্র তো আরও ভয়াবহ। গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা অনেকটা দুষ্কর বিষয়। রাষ্ট্রীয় মোবাইল ফোন অপারেটর এখনো অনেকটা পিছিয়ে, অন্য তিন অপারেটর ফোরজি সেবা চালু করলেও তারা এখনো থ্রিজিতেই রয়েছে। এরই মধ্যে দেশে পঞ্চম প্রজন্মের (ফাইভ-জি) মোবাইল ফোন সেবা চালুর উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এজন্য আগামী বছরের জানুয়ারিতে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়নের দিকে এগোচ্ছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।

বিটিআরসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মোঃ জাকির হোসেন খাঁন জানান, মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত গঠিত কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। তিনি বলেন, ফাইভ-জি সেবা চালু করতে পরিকল্পনা ও একটি নীতিমালা প্রণয়নে সরকারের প্রতিনিধি, নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিনিধি, অপারেটরগুলোর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কমিশন গত ৪ অগাস্ট একটি কমিটি গঠন করে। কমিটি বাংলাদেশে এই প্রযুক্তি চালু করতে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা যেমন- ফাইভ-জির রূপরেখা, সম্ভাব্য তরঙ্গ, তরঙ্গমূল্য এবং বাস্তবায়ন সময়কাল ইত্যাদি প্রণয়ন করবে। সেইসাথে আগামী জানুয়ারির মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালও তৈরি করবে।

মোবাইল ব্রডব্যান্ড সেবার সর্বশেষ সংস্করণ ফাইভ-জি প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে ফোর-জি প্রযুক্তির চেয়ে নেটওয়ার্ক সক্ষমতা বহুগুণ বাড়ানো যায়। বর্তমানে প্রচলিত মোবাইল গ্রাহক হিসেবে শুধু মানুষকে বিবেচনা করা হলেও ফাইভ-জি প্রযুক্তির অন্যতম প্রধান সেবা হল ইন্টারনেট অব থিংকস- আইওটি, যেখানে যন্ত্র থেকে যন্ত্রে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসগুলোকেও গ্রাহক হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

বিটিআরসি জানায়, দক্ষিণ কোরিয়া, আয়ারল্যান্ড, স্পেন, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরই এই প্রযুক্তিতে প্রবেশ করেছে। প্রতিটি দেশেই অপারেটরকে ৩৩০০-৪২০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে প্রায় ১০০ মেগাহার্টজ এবং মিলিমিটার ওয়েভের জন্য ২৬-২৮ গিগাহার্টজ বা তদূর্ধ্ব ব্যান্ডে ৮০০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে কিছু কিছু দেশ ২.৫ গিগাহার্টজ (২৫০০-২৬৯০ মেগাহার্টজ) ব্যান্ডে ফাইভ-জির জন্য তরঙ্গ বরাদ্দ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

বিটিআরসি জানায়, ২৮ গিগাহার্টজ ব্যান্ডে ফাইভ-জি সেবার ওপর একটি উপস্থাপনা প্রদর্শন করা হয়েছে। বর্তমানে ২.৬ গিগাহার্টজ, ৩.৫ গিগাহার্টজ ইত্যাদি ফাইভ-জি সেবার জন্য জনপ্রিয় ব্যান্ড হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার-২০১৮ অনুযায়ী ২০২১-২৩ সালের মধ্যে দেশে ফাইভ-জি সেবা চালুর প্রতিশ্রুতি রয়েছে।

৫জি চালুর সিদ্ধান্ত গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা: বর্তমান সময়ে টেলিযোগাযোগ নেটোয়ার্ক ব্যবস্থা ও কোয়ালিটি অব সার্ভিস এতোটাই খারাপ যে, ৪জি’র যায়গায় ৩জি পাওয়া দুষ্কর। এমতাবস্থায় বিটিআরসি ও সরকারের ৫জি চালুর সিদ্ধান্ত গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয় বলে মনে করে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন। গতকাল মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, গণমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারলাম বিটিআরসি ৫জি চালুর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। এ খবরে সবচাইতে খুশি হবার কথা আমাদের। কিন্তু খুশি না হয়ে এ ধরণের সিদ্ধান্তে আমরা আতঙ্কিত হচ্ছি। কারণ ৪জি চালুর সময় টেলিযোগাযোগের যে অবস্থা ছিল বর্তমানে তা নেই। ৪জি চালুর ১৭ মাস পার হলেও সারাদেশে এখন পর্যন্ত ৪জি দূরে থাক ৩জি নিশ্চিত করা যায়নি। সেই সাথে বর্তমানে যোগ হয়েছে ৬৪ ভাগ মার্কেট দখলকারী গ্রামীণফোন ও রবি’র বিরুদ্ধে পাওনা নিয়ে ঝামেলা। বিটিআরসি তাদের ব্যান্ডউইথ ও এনওসি বন্ধ করার ফলে গ্রাহকরা কাক্সিক্ষত সেবা থেকে এমনিতেই বঞ্চিত।

তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে কোয়ালিটি অব সার্ভিস যদি মাপা হয় তাহলে দেখা যাবে যে কোন সময়ের চাইতে অনেক নিম্নমানের। নিয়ন্ত্রক সংস্থা একদিকে পাওনা আদায়ের জন্য অপারেটর দুটি লাইসেন্স বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আবার অন্যদিকে ৫জি চালুর সিদ্ধান্ত নিতে যাচে। বিষয়টি এমন যে, যে ডালে বসে আছেন সে ডালই আপনি কাটছেন। এনওসি বন্ধের ফলে তারার আর নতুন করে স্পেকট্রাম ক্রয় করতে পারবে না। রাষ্ট্রীয় অপারেটর টেলিটক এখনও ৪জি চালু করতে পারেনি। গ্রাহকদের ৯০ শতাংশ এখনও ৪জি সেবা গ্রহণ করেননি। ৫জির ডিভাইস দেশে পর্যাপ্ত নয়, তাও আবার অতি উচ্চ মূল্যে। নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। অপারেটরদের এখন পর্যন্ত স্পেকট্রাম আছে ৩৫ মেগাহার্জ। অথচ ৫জিতে লাগবে প্রায় ১০০ মেগাহার্জ। এখন পর্যন্ত সবচাইতে বড় স্ট্রেক হোল্ডার গ্রাহকদের সাথে সরকার বা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আলোচনা করেনি। এমতাবস্থায় যদি ৫জি চালু করা হয় তা হবে শুধু কাগজে কলমে। এটি একদিকে যেমন হাস্যকর অন্যদিকে গ্রাহকদের কাছে প্রতারণা ছাড়া কিছুই না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ