পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের একমাত্র সরকারি রেল স্লিপার কারখানাটি বিভিন্ন জেলার রেললাইনের মতোই জীর্ণ-দীর্ণ। সুনামগঞ্জের ছাতকে অবস্থিত কংক্রিট স্লিপার কারখানাটিতে প্রায় পাঁচ মাস ধরে উৎপাদন বন্ধ। মিটারগেজ রেললাইনের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এই কারখানায় উৎপাদিত স্লিপার দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা হয়ে আসছে। অভিযোগ রয়েছে, ভারত থেকে স্লিপার আমদানি এবং বেসরকারি দুটি কারখানার কংক্রিট স্লিপার বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতেই প্রতিবছর নানা অজুহাতে একাধিকবার বন্ধ রাখা হচ্ছে কারখানাটি। বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রেলওয়ের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা যোগসাজশ করে নানা অজুহাতে কারখানাটি বন্ধ রাখছে। তবে প্রকাশ্যে বলা হচ্ছে, দরপত্র আহ্বানে বিলম্ব, কাঁচামাল সঙ্কটের কারণে কারখানাটির উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
এদিকে, রেলপথ মন্ত্রণালয় এ কারখানা সংস্কার করে আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বাড়াতে এবং পশ্চিমাঞ্চলে নতুন কংক্রিট স্লিপার কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে। রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের তথ্য অনুসারে, দেশে রেলপথ আছে দুই হাজার ৯২৯ কিলোমিটার। তার মধ্যে ট্রেন চলাচলের জন্য মান বজায় আছে ৭৩৯ কিলোমিটার বা ২৫ দশমিক ২৩ শতাংশের। রেলের প্রকৌশলীদের মতে, রেললাইনের মান কমার অন্যতম কারণ কংক্রিটের স্লিপারের সঙ্কট। কাঠের স্লিপার পচে নষ্ট হয়ে গেছে বিভিন্ন স্থানে। এতে ট্রেনের গতি কমিয়ে দেয়া হয়েছে। কাঠের স্লিপারের চেয়ে কংক্রিটের স্লিপারের স্থায়িত্ব বেশি। রেলপথ নির্মাণ ও সংস্কারে বছরে কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকার কংক্রিট স্লিপারের দরকার। তার মধ্যে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে বছরে গড়ে ৬০ কোটি টাকার স্লিপার কেনে রেলওয়ে। এর দুই-তৃতীয়াংশই কংক্রিটের স্লিপার। নতুন প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য বছরে কেনা হয় ৫০ কোটি টাকার কংক্রিটের স্লিপার। কাঠের স্লিপারের স্থায়িত্ব ১০-১২ বছর। কংক্রিটের স্লিপার টেকে ৩০ বছরের বেশি।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, গত বছরের জুনে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোফাজ্জেল হোসেন ছাতক রেল স্লিপার কারখানায় গিয়ে অবস্থা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অথচ এর মধ্যে এক বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে রহস্যজনক কারণে অবস্থার উন্নয়ন ঘটেনি। স্থানীয়দের ভাষ্য, লুটপাটের কারণে সরকারি কারখানাটি বন্ধ হয়ে গেছে।
জানা গেছে, ১৯৮৬ সালে ১২ কোটি ২১ লাখ টাকায় ছাতক রেলস্টেশনের কাছে ছয় একর জমির ওপর কংক্রিট স্লিপার কারখানাটি স্থাপন করে রেলওয়ে। ১৯৮৮ সালের মে থেকে পরীক্ষামূলকভাবে এবং পরে ২৭ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে এ কারখানায় উৎপাদন শুরু হয়। বছরে ২৪০ কোটি টাকা দামের স্লিপার উৎপাদনের সক্ষমতা আছে কারখানাটির। প্রধান কাঁচামাল ইস্পাতের রড ও পাত আমদানি করা হয় ভারত থেকে। তার সঙ্গে ছাতক সিমেন্ট কারখানার বিশেষ সিমেন্ট ও পাশের ভোলাগঞ্জের পাথর, বালু ব্যবহার করে তৈরি করা হতো উন্নতমানের স্লিপার। চালু হওয়ার ২৫ বছর পর কাঁচামাল সঙ্কটে একাধিকবার বন্ধ হয় কারখানাটি। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, শুধুমাত্র কাঁচামাল সঙ্কট নয়, ভিন্ন কোনো কারণেও বন্ধ রাখা হয় কারখানাটি। একজন কর্মকর্তা জানান, ছয় বছর আগে বেসরকারি দুটি কারখানার কংক্রিট স্লিপার এবং এই কারখানার স্লিপার নিয়ে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, বেসরকারি কারখানার স্লিপারগুলো নিম্নমানের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কারখানাটি চালু থাকলেও নানা সমস্যা সৃষ্টি করে এখানকার উৎপাদিত স্লিপার সরবরাহে বিঘ্ন সৃষ্টি করে রাখা হতো। স্লিপার সরবরাহের জন্য এখানে রেলওয়ের ওয়াগন ও ইঞ্জিন রাখা হয় না। লৌহজাত পণ্যের আমদানি খরচ বাড়ার কারণ দেখিয়ে ২০১০ সালে এক দফা বন্ধ রাখা হয় কারখানাটি। কেনা হয় বিদেশ থেকে কাঠের স্লিপার। দীর্ঘদিন অচল থাকায় এখন নষ্ট হচ্ছে কারখানার ভয়লা, কার্সার, মিকশ্চার, ভাইব্রেটর, প্রিসটেনিং, ভান্ডার, কংক্রিটিংয়ের মতো মূল্যবান যন্ত্র।
কারখানার স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলীর কাছ থেকে চাহিদা পাওয়ার পর উৎপাদন শুরু করা হয় কারখানায়। সর্বশেষবার ১৫ হাজার স্লিপার উৎপাদন করা হয়েছে এ কারখানায়। এ কারখানা আধুনিক ও মানসম্মতভাবে গড়ে তুলতে সুপারিশমালা তৈরির জন্য সম্প্রতি পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীকে (সেতু) প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠিন করা হয়। কমিটি আগস্টের মওধ্যই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা। কমিটির এক সদস্য বলেন, যাতে এই কারখানা উৎপাদনক্ষম করে তোলা যায় সে জন্যই সুপারিশ তৈরি করবে কমিটি। কারখানায় উৎপাদন একেবারে বন্ধ হয়নি। আমরা সর্বশেষ ১৫ হাজার কংক্রিটের স্লিপার উৎপাদন করেছি।
কারখানা সূত্রে জানা গেছে, উৎপাদন চালু থাকলে গড়ে প্রতিদিন ২০০-২৫০টি স্লিপার উৎপাদন হয়। তবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কখনোই কারখানাটি স্লিপার উৎপাদন ও বিতরণ করতে পারেনি। বর্তমানে স্লিপার উৎপাদন বন্ধ থাকায় মজুদও ফুরিয়েছে। শুধু জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহার করার জন্য কিছু স্লিপার রাখা আছে। সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা জানান, প্রতিবছর এলসি করে পাথর আমদানির জন্য সরকারিভাবে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়। কারখানা-ইয়ার্ডে স্লিপার তৈরির প্রধান উপকরণ পাথরের মজুদ শেষ হয়ে গেলে চলতি বছরের মার্চে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে জানুয়ারিতেও একবার মিকশ্চার মেশিনে ত্রুটির কারণে উৎপাদন বন্ধ ছিল কিছুদিন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কারখানার ১৫৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে কর্মরত ৪৫ জন। অপারেটরের ১৮টি পদই শূন্য। উৎপাদনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত কারখানার ওয়েল্ডার, বয়লার অপারেটর, কাস্টিং মেশিন অপারেটর, মিকশ্চার মেশিন অপারেটর, গেন্টি অপারেটর নেই। এ ছাড়া গ্যাস কাটার, ল্যাবরেটরি অ্যাসিস্ট্যান্ট, টেনশনিং মেশিন অপারেটর, ওয়েজেস অ্যান্ড ব্যারেল অপারেটর, রড কাটিং অপারেটর, ডিমোন্ডিং অপারেটরসহ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রের চালকও নেই। নতুন করে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না।
কর্মচারীরা জানান, স্লিপারের প্রধান উপকরণ বোল্ডার পাথর। একসময় পাশের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ থেকে রোপওয়ে দিয়ে তা নিয়ে আনা হতো। কিন্তু দেড়যুগ ধরে সেখানে বোল্ডার পাথর মিলছে না। এতে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে পাথর। রোপওয়েও বন্ধ বহুদিন। কারখানার একজন প্রকৌশলী দাবি করেন, ঠিকাদার নিয়োগে জটিলতায় উৎপাদন বন্ধ আছে। উৎপাদন ঠিকাদার ও কাঁচামাল ঠিকাদার নিয়োগের জন্য পূর্ব রেলের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দরপত্র সংক্রান্ত ফাইল পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত এলে এবং চাহিদা পাঠালে উৎপাদন করা হবে স্লিপার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।