পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অধিকাংশ সেতু নির্মিত হয়েছে ব্রিটিশ আমলে। এসব সেতুর বেশিরভাগই ঝুঁকিপূর্ণ-জরাজীর্ণ। জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা হয় এসব সেতু। এর সাথে আছে জরাজীর্ণ রেললাইন। মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন-কোচ দিয়ে এসব রেললাইন ও সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন। প্রতি বছর বর্ষা এলে এই ঝুঁকির মাত্রা অনেকটাই বেড়ে যায়। বন্যার পানির তোড়ে রেললাইনের নীচ থেকে মাটি ও পাথর সরে যায়। একই কারণে দুই পাশের মাটি সরে গিয়ে দেবে যায় সেতু। সব মিলিয়ে ট্রেনের লাইনচ্যুতি হওয়ার আশঙ্কাসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা দিন দিন বাড়ছে। তবুও এসব ভয় শঙ্কা নিয়েই যাত্রীরা ট্রেনে ভ্রমণ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
রেলের হিসাবে, চলতি আগস্টের প্রথম ১৯ দিনে পূর্বাঞ্চলে সাতটি লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে। আর পশ্চিমাঞ্চলে লাইনচ্যুতি হয়েছে আটটি। এর মধ্যে দুটি লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে গুরুত্বপূর্ণ প্রধান লাইনে। ঈদুল আজহার দুদিন আগে গত ৯ আগস্ট টাঙ্গাইলে সুন্দরবন ট্রেন লাইনচ্যুত হলে চার ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। এর প্রভাবে ঈদ যাত্রায় লন্ডভন্ড হয়ে যায় রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনের সিডিউল। সে সময় ৩ থেকে ২৩ ঘণ্টা বিলম্বে চলাচল করেছে ট্রেন। তাতে হাজার হাজার যাত্রীকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। সর্বশেষ গত রোববার ঝিনাইদহে কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস লাইনচ্যুতির কারণে সাড়ে আট ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। এতে রাজশাহী থেকে খুলনা এবং ঢাকা থেকে খুলনার পথে চলাচলকারী সবগুলো ট্রেনের সিডিউল ভেঙে পড়ে। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত যা স্বাভাবিক হয়নি। রেলের কর্মকর্তাদের মতে, ঈদের আগে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পাড়ে ট্রেন লাইনচ্যুতির কারণে এবারের ঈদ যাত্রায় শত চেষ্টা করেও ট্রেনের সিডিউল ধরে রাখা যায়নি। ভুক্তভোগিদের মতে, এবারের ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। যাতে বিব্রতবোধ করেছেন স্বয়ং রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।
ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটে প্রধানত ত্রুটিপূর্ণ রেললাইন ও সেতুর কারণে। বিকল্প রেললাইন না থাকায় কোনো রেললাইনে একবার ট্রেন লাইনচ্যুত হলে উদ্ধারকারী ট্রেনের জন্য বিকল্প রেলপথ তৈরী করতেই অনেক সময় লেগে যায়।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, সারাদেশে মোট ৩ হাজার ৬২৯টি রেলসেতুর মধ্যে ৩ হাজার ২০০টিই ঝুঁকিপূর্ণ। যার মধ্যে ৮৫ শতাংশই ব্রিটিশ আমলে তৈরি। মোট সেতুর মধ্যে ৭৪টি গুরুত্বপূর্ণ, ৪২৪টি মেজর আর ৩ হাজার ১৩১টি মাইনর। ডবিøউবিবি ট্রাস্টের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, সারা দেশে মানসম্পন্ন রেললাইন রয়েছে মাত্র ৭৩৯ কিলোমিটার, যা দেশের মোট রেলপথের মাত্র ২৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। আর বছরের পর বছর রেলসেতুগুলো সংস্কার করা হয় না। এতে ৪০২টি রেল সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের মতে, নির্মাণের ৫০ থেকে ৫৫ বছর পর সেতুর মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। অথচ রেলওয়েতে ৭০ থেকে ১০০ বছরের কিংবা তারও বেশি পুরনো সেতু আছে। যেগুলো শুধু ঝুঁকিপূর্ণই নয়, চরম আতঙ্কেরও বটে। এছাড়া স্টিল কিংবা লোহার ব্রিজগুলো আরও ঝুঁকিপূর্ণ। রেলের দুই অঞ্চলে (পূর্ব-পশ্চিম) কেপিআইভুক্ত সেতু রয়েছে প্রায় ৪৫টি। সেতুগুলোর মধ্যে ৯০ শতাংশেরই মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। অভিযোগ রয়েছে, রেলসেতুগুলো বছরের পর বছর মেরামত বা সংস্কার করা হয়না। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কোনোমতে জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করে রঙ লাগিয়ে কাজ শেষ করে প্রকৌশল বিভাগ।
রেলের হিসাবে, ২০১৪ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ বছরে ৮৬৮টি দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটে ৬৩৯টি। এ সময়ের মধ্যে ৩৯৯ বার গুরুত্বপূর্ণ পথে লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রতি সপ্তাহে গড়ে দুটি করে লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে অন্তত একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে গুরুত্বপূর্ণ লাইনে। বাকিগুলো শাখা লাইন ও স্টেশনে ঘটেছে। মূল লাইনে একটি লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটলে কয়েক ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। এর জের টানতে হয় পুরো সপ্তাহ।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রতিটি আন্তনগর ট্রেন সপ্তাহে এক দিন বন্ধ থাকে। পুরো সপ্তাহে যেসব ট্রেন বিলম্বে চলাচল করে, বন্ধের পরদিন থেকে সেগুলো স্বাভাবিক করার চেষ্টা থাকে। কিন্তু পথে একটি ট্রেনের লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা পুরো প্রক্রিয়া ভন্ডুল করে দেয়। সাধারণত ঈদে কোনো ট্রেনেরই সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে না। এর মধ্যে টাঙ্গাইল ও ঝিনাইদহে দুটি লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটে। এর সিডিউল বিপর্যয় অব্যাহত আছে।
এদিকে, রেলসেতুর কারণে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা সব সময় ভয়াবহ হয়। গত ২৪ জুন রাতে ঢাকা-সিলেট লাইনে কুলাউড়ার মনছড়া রেলসেতুতে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ঢাকামুখি উপবন এক্সপ্রেস। এতে ৪ জন নিহত ও শতাধিক যাত্রী আহত হন। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, রেলসেতু ভেঙে যাওয়া বা দেবে যাওয়ার এমন ঘটনা নতুন নয়। ৩ হাজার ৩৩৬ কিলোমিটার রেলপথে লাইনচ্যুতের ঘটনা প্রায় প্রতিনিয়ত ঘটছে। কিন্তু ভয়াবহ দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে রেলসেতুকেন্দ্রিক।
ঢাকা-সিলেট, সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে গত দেড় বছরে ৯টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ-কুশিয়ারার মধ্যস্থলের রেলসেতু ভেঙে দুই দিন ওই পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। একই পথে ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ মাধবপুরের ইটাখলা রেলসেতু ভেঙে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ট্রেন। ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ পাঁচ দিন বন্ধ ছিল। সংশ্লিষ্টরা জানান, রেলের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়হীনতা, রেলপথ নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না করা, আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার পর ইঞ্জিন-কোচ দিয়ে ট্রেন চালানো, দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেয়া, সংশ্লিষ্ট কারও তেমন কোনো জবাবদিহিতা না থাকা এবং পদে পদে দুর্নীতির কারণেই মূলত গোটা রেলওয়েতে সৃষ্টি হয়েছে নাজুক পরিস্থিতির।
আলাপকালে রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একটি কথা স্পষ্ট করে বলেছেন- রেলওয়েতে যেসব ‘রেলসেতু’ রয়েছে তার অধিকাংশই ব্রিটিশ আমলে নির্মিত। একশ’ থেকে দেড়শ’ বছরের পুরনো। ঝুঁকিপূর্ণ এসব সেতু পুনর্বাসনের মধ্য দিয়ে সচল রাখার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে তারা স্বীকার করেছেন, ব্রিটিশ আমলের এসব সেতু একেবারেই অনুপযোগী। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এবং ঘটছেও। এমতাবস্থায় সেতুগুলো সময়োপযোগী করে পুননির্মাণের কোনো বিকল্প নেই।
এ প্রসঙ্গে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, বর্তমান সরকার রেলওয়েতে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করছে। আমরা নতুন নতুন উন্নয়ন প্রকল্প যেমন গ্রহণ করছি, তেমনি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নও করছি। কিন্তু পুরাতন সেতু, সিঙ্গেল রেললাইন, মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন বগির ত্রুটির জন্য উন্নয়ন প্রকল্পের সুফল যথাযথ পাওয়া যাচ্ছে না। ঝুঁকিপূর্ণ সেতু ও রেললাইন মেরামত ও পূনর্বাসনের প্রক্রিয়া চলছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।