Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্প

সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার অভাব : আর্থিক সঙ্কটে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা : সরকারি উদ্যোগে ব্যবসায়ীরা খুশি

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

বিরাট সম্ভাবনাময় শিল্প চামড়া। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু শিল্পটির সার্বিক উন্নয়ন, গতিশীলতা ও শৃঙ্খলায় বাজার ব্যবস্থাপনাও গড়ে ওঠেনি দীর্ঘদিনেও। প্রায় প্রতিবছর কোরবানির পর চামড়া বাজারের অস্থিরতা, সঙ্কট, ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া আদায়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দেন দরবার, পুঁজির অভাবও সমস্যাসহ নানা বিষয় নিয়ে কমবেশি হৈ চৈ হয়।
কিন্তু স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম চামড়া নিয়ে দেশব্যাপী সৃষ্টি হয় বিরাট তোলপাড়। যার জন্য সরকারি হস্তক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে মাঠপর্যায়ের চামড়া ব্যবসায়ীদের নেতা আলাউদ্দীন মুকুল গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের উপস্থিতিতে বৈঠকে চামড়া বাজারের অস্থিরতা কাটানোর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। আমরা খুব খুশি। তিনি বলেন, ক্ষুদে ব্যবসায়ীসহ শিল্পটির সাথে জড়িতরা এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার বৃহত্তম চামড়ার হাট যশোরের রাজারহাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবার কোরবানির পর প্রথম হাটে চামড়া বেচাকেনা হয় প্রায় ৩ কোটি টাকা। এবার চামড়া বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করায় বেচাকেনা হয়নি বললেই চলে। লবন দিয়ে আড়তে আড়তে চামড়া সংরক্ষণ করা হচ্ছে। আড়তগুলোতে চামড়ার স্তুপ জমেছে। যারা গ্রাম থেকে চামড়া সংগ্রহ করেন তাদের মন ভালো নেই। ভালো নেই মাদরাসা ও এতিমখানা সংশ্লিষ্টদের। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরাও বেচাকেনা করতে না পেরে চরম আর্থিক সঙ্কটে।
শিল্পটির সঙ্গে জড়িতরা এর আগে লাভ-লোকসান যেটিই হোক অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন। এবার একেবারে মাথায় হাত উঠেছে নানা জটিলতা ও সমস্যায়। যশোরে ঈদের চামড়ার দ্বিতীয় হাট আজ। এটিও জমবে না বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। তবে অস্থিরতা কাটাতে সরকারি উদ্যোগে আশার আলো দেখতে পারছেন মাঠ ব্যবসায়ীরা।
বৃহত্তর যশোরের চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দীন মুকুল ও রাজারহাট মোকামের ব্যবসায়ী নাজির আহমেদ জানালেন, শুধুমাত্র যশোরের শতাধিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি চামড়া ব্যবসায়ীরা ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে প্রায় ২২ কোটি টাকা পাবেন। বকেয়া আদায়ের চেষ্টা করেও তারা ব্যর্থ হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, যশোর অঞ্চল থেকে ছোট বড় ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিরা ঈদের আগেও পরে ঢাকায় ট্যানারি মালিকদের কাছে ধর্ণা দিয়েছেন। কেউ কেউ যৎসামান্য টাকা পেলেও সিংহভাগ টাকা রয়েছে আটকা। সূত্রমতে, শুধু যশোর মোকামের ব্যবসায়ী নয় ট্যানারি মালিকদের কাছে টাকার জন্য ধর্ণা দিয়েছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মাঠর্পায়ের চামড়া ব্যবসায়ীরা। ট্যানারি মালিকদের বক্তব্য, অর্থ সঙ্কটের কারণে তারা মাঠ পর্যায়ে ব্যবসায়ীদের বকেয়া পরিশাধ করতে পারছেন না।

সুত্র জানায়, বাংলাদেশের গরু ও ছাগলের চামড়া খুবই উন্নতমানের। বিশেষ করে বাছাই করা গরু ও ছাগল কোরবানী দেওয়ায় ওই চামড়া খুবই ভালো। বরাবরই চামড়া ও চামড়াজাত শিল্প পণ্যের ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে। কোরবানীর পশুর চামড়া থেকেই মূলত দেশের মোটা চামড়ার চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে।

সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্পটির সমস্যা, সংকট দূর করতে পারলে দেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বিরাট লাভবান হবে, শিল্পটি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে এবং বাঁচবেন শিল্পটির সাথে জড়িতরা-এই অভিমত যর্শো এম এম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মো. নাসিম রেজা ও চামড়া শিল্পের সাথে জড়িত ফারুক হোসেনসহ সংশ্লিষ্টদের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চামড়া

১৩ ডিসেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ