Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘কাঁচা চামড়া রফতানি ঠেকাও’

ট্যানারি মালিকদের দৌড়ঝাঁপ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

‘ঠেলার নাম বাবাজি’ গ্রামীণ প্রবাদটি ট্যানারি মালিকদের দৌড়ঝাঁপ দেখে অনেকেই ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। সিন্ডিকেট করে কোরবানির চামড়ার দরে ধস নামানো হয়েছে। এতে বিক্ষুব্ধ দেশের কোটি কোটি মানুষ। পরিস্থিতি বুঝে সরকার কাঁচা চামড়া রফতানির সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্তকে অর্থনীতিবিদ ও সাধারণ মানুষ স্বাগত জানালেও ট্যানারি মালিকরা সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। ইতোমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে তারা কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে সরকারের বেঁধে দেয়া দামে নির্ধারিত সময়ের আগে কাঁচা চামড়া কেনারও ঘোষণা দিয়েছেন। পাশাপাশি চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত থেকে সরকার যেন সরে আসে সেজন্য ব্যবসায়ীরা নানা জায়গায় ‘দৌড়ঝাঁপ’ করেছেন।

আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার চাহিদা নেই এবং ট্যানারিগুলোতে আগের বছরের ৫০ শতাংশ চামড়া অবিক্রিত অবস্থায় রয়েছে, বাংলাদেশে বর্তমান অবস্থায় এতো চামড়ার চাহিদা নেই, চামড়া কেনার জন্য পর্যাপ্ত ব্যাংক ঋণ পাওয়া যায়নি ইত্যাদি মনগড়া অজুহাত দেখিয়ে এতোদিন ট্যানারি মালিকরাই কাঁচা চামড়া কেনার প্রতি অনাগ্রহ দেখিয়ে এসেছেন। ফলে চলতি বছর কোরবানির ঈদের পর সারা দেশে কাঁচা চামড়া বিক্রিতে ধস নামে। মূলত ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেট করেই এটা করেন। কিছু মিডিয়াকর্মীকে বখশিশ দিয়ে নিজেদের মতো করে প্রচারণা চালান। চামড়ার বাজারের অবস্থা এতোই খারাপ করা হয় যে লাখ টাকা কোরবানির গরুর চামড়া মাত্র ১০০ টাকাতেও বিক্রি করেছেন অনেকে। আবার অনেক স্থানে দাম না পেয়ে মাটিতেই পুঁতে ফেলা হয়েছে কোরবানির পশুর চামড়া।

গণমানুষের কথা চিন্তা করে এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য গত ১৩ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত মূল্য কাঁচা চামড়া ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে না। তাই চামড়ার উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করতে সরকার কাঁচা চামড়া রফতানির অনুমতি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে চামড়া শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীল হওয়ারও আহŸান জানানো হয়।

সরকারের কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্তের পর নড়েচড়ে বসেন ট্যানারি মালিক তথা সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) ও বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএলএলএফইএ) ১৪ আগস্ট বুধবার আলাদা সংবাদ সম্মেলন করে কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসার দাবি জানায়। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এখনো চামড়া রফতানির সিদ্ধান্তে অটল।

জানতে চাইলে গতকাল বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মফিজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এখনো চামড়া রফতানির সিদ্ধান্তে অটল রয়েছি। এই মুহূর্তে চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত আমরা প্রত্যাহার করব না। আমরা চাই দেশের রফতানিমুখী শিল্প উন্নত হোক। সেজন্য আমরা ওয়েড বøু চামড়া আগে রফতানির অনুমতি দেব। তারপর পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনে লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত দেব।

জানতে চাইলে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, কোরবানির চামড়ার বিষয়ে সরকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এই ক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পনার অভাব ছিল। সরকারের উচিত ছিল দেশের উৎপাদন ও চাহিদার কথা বিবেচনা করে চামড়া রফতানির বিষয়ে আরো আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নেয়া। এখন চামড়া রফতানি করা হলেও সাধারণ মানুষ তার সুফল পাবে না।

জানতে চাইলে সিপিডি’র সিনিয়র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এবার যে পরিমাণ চামড়া উৎপাদন হয়েছে ও আগের বছরের অনেক চামড়া মজুদ রয়েছে সব কিছু বিবেচনা করলে এই বিপুল পরিমাণ চামড়া দেশের ভেতর ব্যবহারের সুযোগ সীমিত। সুতরাং ব্যবসায়ীরা চাইলেও এত চামড়া কিনে দেশের ভেতর ব্যবহার করার মত অবস্থা তাদের নেই। আমরা দেখতে পাই যখন চামড়া মাঠিতে পুতে দেয়া হচ্ছে, নদীতে ফেলে দেয়া হচ্ছে, অথবা রাস্তায় ফেলে দিলেও কেউ তা সংগ্রহ করছে না। এতে করে ইঙ্গিত পাওয়া যায় আসলে ব্যবসায়ীদের বিপুল পরিমাণ চামড়া ব্যবহার করার সামর্থ নেই। ফলে সরকারের চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত আমাদের কাছে যৌক্তিক বলেই মনে হয়।

অন্যদিকে বিটিএ সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, কাঁচা চামড়া রফতানির সুযোগ দেয়া হলে চামড়া শিল্প কঠিন সম্মুখীন হবে। তাই সার্বিক বিবেচনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেয়া কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা উচিত। কাঁচা চামড়া রফতানির সুযোগ দেয়া হলে এই বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়বে। সাভারের চামড়া শিল্পনগরী কাঁচা চামড়ার অভাবে সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়বে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা আগামী ১৭ আগস্ট থেকে সরকার বেঁধে দেয়া দামে ট্যানারি মালিকরা লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করবে। বিএফএলএলএফইএ’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. দিলজাহান ভুইয়া বলেন, সাভারে ট্যানারিগুলো পুরোপুরি চালু হলে দেশের কাঁচা চামড়া ট্যানারিগুলোর চাহিদার মাত্র ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ চাহিদা পূরণে করতে পারবে। তখন বিদেশ থেকে কাঁচা চামড়া আমদানি করতে হবে। এই অবস্থায় কাঁচা চামড়া রফতানির সরকারি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। সরকার বেঁধে দেয়া দামে লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া ক্রয় করব।

 

 



 

Show all comments
  • Wasim ১৬ আগস্ট, ২০১৯, ১২:১৮ এএম says : 0
    টেনারীর মালিকরা বেশির ভাগ তৃনমূল বেবসায়ীদের কথা কম ভাবে
    Total Reply(0) Reply
  • আলী ১৬ আগস্ট, ২০১৯, ১:২৪ এএম says : 0
    চামড়া দিয়ে কি করবেন দেশে কোন গরীব নাই আমরা মধ্যআয়ের দেশে পোছে গেছি
    Total Reply(0) Reply
  • করিম ১৬ আগস্ট, ২০১৯, ১:২৮ এএম says : 0
    যে খানে যাবেন দুরনীতি ,ভোটে দুরনীতি, বিদেশে যাবেন দুরনীতি হসপিটালে যাবেন দুরনীতি ত্রককথায় সব জাগায় দুরনীতি
    Total Reply(0) Reply
  • Md Nurul ১৬ আগস্ট, ২০১৯, ৬:১৩ এএম says : 0
    এই বছর এটা করে দেখা যাক চামড়া বাজারে কি প্রভাব পরে। সিন্ডিকেড মুক্ত ও সঠিক দাম পাওয়া গেলে রপ্তানী বন্ধ করা হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Alamin Hossain ১৬ আগস্ট, ২০১৯, ৬:১৩ এএম says : 0
    কাঁচা চামড়া রপ্তানি করা ভালো একটা উদ‍্যোগ সিন্ডিকেট কমে যাবে
    Total Reply(0) Reply
  • Shamim Ahmed ১৬ আগস্ট, ২০১৯, ৬:১৫ এএম says : 0
    ট্যানারি মালিকরা কাচা চামরা কিনতে চায়না আবার রপ্তানি ও করতে দিবেনা। আসলে তাদের উদ্দেশ্য কি। দেশের লোক সব চামরা ওদের ...................
    Total Reply(0) Reply
  • Hossni Mubarak ১৬ আগস্ট, ২০১৯, ৬:৩৯ এএম says : 0
    একসময় আমরা গর্ব করতাম আমা‌দের নদ~নদী নিয়ে ‘তেরো শত নদীর দেশ বাংলা‌দেশ’। তারপর আমরা পাট নি‌য়ে গর্ব করতাম ‘সোনা‌লি আঁ‌শের দেশ বাংলা‌দেশ’, এরপর আমরা চামড়া নি‌য়ে গর্ব কর‌তে শেখলাম ‘কাঁচা সোনার দেশ বাংলা‌দেশ’ নিয়ে। নদীখে‌কোরা গি‌লে খে‌লো নদ~নদী, অথর্ব রাজনী‌তিক বুঝ‌লো না পা‌টের কদর। এখন আমরা তিলদিল ক‌রে গ‌ড়ে ওঠা চামড়া শিল্পকে গলা টি‌পে হত্যা কর‌ছি।
    Total Reply(0) Reply
  • Saleh Ahmed Tapu ১৬ আগস্ট, ২০১৯, ৬:৪৯ এএম says : 0
    আসুন আমরা আগামী ১ বছর চামড়াজাত পণ্য ক্রয় থেকে বিরত থাকি। ইনশাআল্লাহ দেখবেন এর একটা নিরব প্রতিক্রিয়া ঘটবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Alam Prantiik ১৬ আগস্ট, ২০১৯, ৬:৫১ এএম says : 0
    চামড়া শিল্প শেষ।... কুরবানির সময় চামড়ার জন্য গেঞ্জাম করতাম... আবার বাইরের কেও এসে চামড়া না নিয়া জায়... আর এখন ফেলে দেয়া হচ্ছে... হাইরে দুরভাগ্য বরতমান সময়ের।
    Total Reply(0) Reply
  • Rafiq Ahmed ১৬ আগস্ট, ২০১৯, ৬:৫১ এএম says : 0
    সব কিছুর জন্য দায়ী ইসলাম বিরোধী কিছু ব্যাবসায়ি আর সরকারের কিছু চেলা পেলা।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Sayfur Rahman ১৬ আগস্ট, ২০১৯, ৬:৫৩ এএম says : 0
    যুগযুগ ধরে মাদ্রাসা শিক্ষার পেছনে দুশমন কাফির বেইমান নাস্তিকরা ষড়যন্ত্র করেছে....কিন্তু দমাতে পারেনি এ শিক্ষাকে....কারন এটা নিয়ন্ত্রণ করেন সয়ং আল্লাহ.... তাই একটু বুদ্দি খাঠালেই এসব সিন্ডিকেট দালালরা উড়ে যাবে..ইনশাআল্লাহ ..চাই সঠিক পদক্ষেপ।।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চামড়া

১৩ ডিসেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ