Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখর আরাফাত

২৫ লক্ষাধিক মুসলিমের পবিত্র হজ আদায়

মুহাম্মদ সানাউল্লাহ | প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০০ এএম

‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ অর্থাৎ ‘আমি উপস্থিত হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত’ বারবার এই ঘোষণায় আকাশ-বাতাস মুখর করে আরাফাত ময়দানে গতকাল পবিত্র হজ পালন করলেন ২৫ লক্ষাধিক মুসলিম। ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম এ মৌলিক ইবাদাত পালনের জন্য শুক্রবার রাত থেকেই মানব জাতির আদি পিতা আদম ও মা হাওয়া আলাইহিমাস সালামের মিলনের স্মৃতিবিজড়িত ময়দানে সমবেত হন এ বছর আল্লাহর মেহমান হিসেবে সম্মানিত হাজীগণ। সূর্যাস্ত পর্যন্ত ৩১ বগকিলোমিটারের এ মাঠে সফেদ-শুভ্র কাপড় পরে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে মোনাজাত করেছেন জীবনের যাবতীয় গুনাহ-খাতা মাফের জন্য। এ মাঠে উপস্থিত হয়ে আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে তওবা করে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করে দেন। আল্লাহর নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি হজ আদায় করলো অথচ অশ্লীল কথাবার্তা বললো না এবং স্ত্রীর সাহচর্য থেকে বিরত থাকলো সে এমনভাবে ফিরবে যেন আজই তার মা তাকে জন্ম দিয়েছে’।

গতকাল আরাফাতের ময়দান সংলগ্ন মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা দেন সউদী আরবের বিশিষ্ট আলেম, শায়খ মুহাম্মদ বিন হাসান আলে আশ-শায়খ। তিনি সউদী আরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদ এবং গবেষণা-মুফতি বোর্ডের সদস্য। পাশাপাশি খাদেমুল হারামাইন শরিফাইন হাদিস কমপ্লেক্সের পরিচালক।

খুতবায় তিনি আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা, রাসূলুল্লাহর (সা.) ওপর দরুদ পাঠ করেন। উপস্থিত হাজীদের সুস্থতা কামনা করেন। তাদের জন্য দোয়া করেন। তিনি একটি হাদিস পড়েন, যার মূল কথা হলো, কোনো মুসলমানের যদি সক্ষমতা অর্জন হয়, তাহলে জীবনে একবার হলেও তাকে অবশ্যই হজ করতে হবে।

শায়খ মুহাম্মদ বিন হাসান বলেন, তাওহীদ ও খতমে নবুওয়তের সাক্ষী ইসলামের মৌলিক রোকন। এছাড়াও নামাজ ও যাকাত ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। যাকাতের মাধ্যমে গরিব অসহায়দের ব্যাপক কল্যাণ সাধিত হয়। হজের খুতবায় আরও বলা হয়, আল্লাহ তায়ালার হুকুম কখনও পরিবর্তন হয় না। আল্লাহ তায়ালা মানুষ এবং জিন জাতিকে তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। এ জন্য তাওহীদ ও আল্লাহর একত্ববাদের বিষয়টি আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।

মুসলিম উম্মাহর মুক্তির উপায় উল্লেখ করে শায়খ মুহাম্মদ বিন হাসান এ বছরের হজের খুতবায় বলেন, পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালার রহমতের কথা বারবার বলা হয়েছে। আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরাই মুক্তির একমাত্র উপায়। এ ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। হজের খুতবা সউদী আরবের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও বিশ্বের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন সরাসরি স¤প্রচার করছে। অনেক হজ এজেন্সি নিজ উদ্যোগে আরাফার ময়দানে উপস্থিত হাজীদেরকে খুতবার অনুবাদ শোনানোর ব্যবস্থা নিয়েছেন।

আরাফার ময়দানে উপস্থিত সফেদ-শুভ্র কাপড়ের ইহরাম পরিহিত হাজীদের সামনে দেওয়া হজের খুতবা বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এ খুতবা যেমন সমবেত হাজীরা শোনেন, তেমনি শোনেন বিশ্ববাসী।
প্রচন্ড গরমের মধ্যে গতকাল খুৎবা এবং যোহর ও আসর নামায শেষ হলেও বেলা তিনটার দিকে নামে স্বস্তির বৃষ্টি। শান্ত হয় পরিবেশ এবং আল্লাহর রহমতের বারিতে সিক্ত হন হাজীরা।
খুৎবার পর দুই ইকামাতে কসর করে যোহর ও আসর সলাত আদায় করেন। জামাতে ইমামতি করেন ড, মুহাম্মাদ হাসান আল-শায়খ।

গতরাতে আরাফাতের ময়দান থেকে মুসল্লিরা মাগরিবের নামাজ আদায় না করেই রওনা দেন মুযদালিফার দিকে। সেখানে পৌঁছে মাগরিব ও এশা একসঙ্গে আদায় করেন। মুযদালিফায় খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করেন তারা। এখানে ‘মাশআরিল হারাম’ নামে একটি মসজিদ রয়েছে। কুরআন মাজীদে এখানে আল্লাহর যিকর করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হাজীরা পরবর্তী তিনদিন মিনার জামারাতে নিক্ষেপের জন্য পাথর সংগ্রহ করবেন এখান থেকেই। সউদী কর্তৃপক্ষ হাজীদের সংগ্রহের জন্য প্রচুর কঙ্কর বিছিয়ে রাখেন মুযদালিফার প্রায় প্রতিটি এলাকায়।
আজ রোববার সকালে মুযদালিফায় ফজরের নামাজ শেষে হাজীরা আবার ফিরে আসবেন মিনায়। হাজীদের অনেকেই সেখান থেকে সরাসরি জামারাতে চলে যাবেন কঙ্কর নিক্ষেপ করতে। আবার অনেকে তাদের সাথে থাকা মাল-সামান রাখতে ফিরে যাবেন তাঁবুতে। আজ অন্যান্য কাজের মধ্যে রয়েছে হাদী জবাই করা। অর্থাৎ আমরা যাকে কোরবানী বলে থাকি। এদিন বড় জামারাতে ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ ও পশু কোরবানির পর পুরুষরা মাথা মুন্ডন করে ইহরাম ত্যাগ করবেন। এরপর এদিনই অথবা পরদিন পবিত্র কাবা শরিফে ফরজ তাওয়াফ করে ফিরবেন মিনায়। ১১ ও ১২ যিলহজও হাজীরা সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে যাবার পর তিনটি জামারাতে ৭টি করে ২১টি কঙ্কর মারবেন। ১২ যিলহজ মাগরিবের পূর্বেই মিনা ত্যাগ করতে পারলে আর মিনায় ফিরতে হবে না। তবে মিনায় থাকাবস্থায় সূর্য অস্ত গেলে হাজী সাহেবদের ১৩ যিলহজ সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাবার পর ৩টি জামারাতে পাথর নিক্ষেপের পর মিনা ত্যাগ করতে পারবেন। এর মাধ্যমে হজের পূর্ণ আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।

হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষে যারা আগে মদিনায় যাননি তারা বিদায়ী তাওয়াফ সেরে মদিনায় যাবেন। সেখানে হাজীরা সাধারণত ৪০ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। পরে শুরু হবে হাজী সাহেবদের দেশে ফেরার পালা। আল্লাহ তা‘আলা সবার হজ কবুল করুন এবং নিষ্পাপ করে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসুন। আমীন।

বাংলাদেশ থেকে যাওয়া উর্ধ্বতন ব্যক্তিগণের মধ্যে রয়েছেন, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ. কে আব্দুল মোমেন, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব এডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী ও রত্মা আহ্মেদ, ধর্ম সচিব মো. আনিছুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক-৩ মো. আজিজুর রহমান, সাবেক মুখ্যসচিব মো. আবদুল করিম, মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী এবং সউদী আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল এফ এম বোরহান উদ্দিন।

সাউদিয়া ও বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের ৩৬৫টি ফ্লাইটে সউদী আরবে নেয়া শুরু হয় ৪ জুলাই এবং শেষ হয় গত ৫ আগস্ট। হজ শেষে আগামী ১৭ আগস্ট থেকে বাংলাদেশি হাজীরা বাংলাদেশে ফেরা শুরু করবেন এবং আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর সবার ফেরা শেষ হবে ইন শা আল্লাহ।



 

Show all comments
  • Rubel Chowdhury ১১ আগস্ট, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
    আল্লাহ মৃত্যুর আগে এক বার নসিবে লিখো।
    Total Reply(0) Reply
  • Niloy Hasan Nill ১১ আগস্ট, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
    প্রভু আমাকেও একদিন সামিল করে নিও এ দলে..
    Total Reply(0) Reply
  • Md Saiful Islam ১১ আগস্ট, ২০১৯, ১:৫৬ এএম says : 0
    হে আল্লাহ আপনি আপনার মেহমানদের কবুল করে নিন। পবিত্র হজ্জ এর উছিলায় বিশ্বের সকল মুসলিমদের উপর রহমত দান করুন,বিশ্বের আনাচে কানাচে বিধর্মী জালিমদের হাতে যে সমস্ত মুসলমানগণ জুলুম, অন্যায় , অত্যাচার এবং অবিচারের শিকার হচ্ছে আপনি সকল মুসলমানদেরকে রক্ষা করুন,আপনি মুসলিমদের ঈমানি শক্তি বাড়িয়ে দিন,যাতে তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে,আপনি আমাদের সবাইকে আপনি মাফ করুন,এবং সেই সাথে আমাদের সবাইকে হেদায়াত দান করুন। আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Sayed ১১ আগস্ট, ২০১৯, ১:৫৭ এএম says : 0
    হজ করা কি যে কষ্ট আমি জানি আল্লাহ আমাকে সেই সুযোগ একবার দিয়ে ছিল,,আল্লাহ সবার হজ কবুল করে নেন,,যাদের ইচ্ছে আছে সবার ইচ্ছে টা পুরোন করেন আমিন ছুম্মা আমিন,
    Total Reply(0) Reply
  • Md Moslem Sorker ১১ আগস্ট, ২০১৯, ১:৫৮ এএম says : 0
    ইয়া আল্লাহ,,আপনি সবার হজ কবুল করে নেন
    Total Reply(0) Reply
  • তুষার আহমেদ ১১ আগস্ট, ২০১৯, ১:৫৯ এএম says : 0
    'লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নিয়মাতা লাকা ওয়াল মুলক। লা শারিকা লাক্'
    Total Reply(0) Reply
  • Md Ajmain Intisar Rahman Nabil ১১ আগস্ট, ২০১৯, ২:০০ এএম says : 0
    আল্লাহ তায়ালা এই দুনিয়ায় শান্তি ও সুখ বর্ষণ করুন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হজ

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ