পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল-হামদা ওয়ান নি‘মাতা লাকা ওয়াল-মুলক লা শারীকা লাক-এই তালবিয়া পাঠের মধ্যদিয়ে আজ সন্ধ্যার পরই শুরু হচ্ছে হজ্জের আনুষ্ঠানিকতা। আগামীকাল ৮ যিলহজ সূর্যোদয়ের পর স্ব স্ব গৃহ থেকে ইহরাম বেঁধে তালবিয়াসহ মিনা অভিমুখে রওনা হবার মধ্যদিয়ে তারবিয়াহ বা হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করাই হল সুন্নাতি তরিকা। কিন্তু ২০ লক্ষাধিক হজযাত্রীকে নির্ঝঞ্ঝাটে মিনায় পৌঁছানোর স্বার্থে আজ সন্ধ্যার পর থেকেই মিনায় নেয়া শুরু করবেন। আর স্বভাবতই হজযাত্রীদের যেতে হবে ইহরাম বেঁধে তালবিয়াহ পাঠ করতে করতে। সুতরাং আজই শুরু হচ্ছে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। সন্ধ্যার পর থেকেই মেসফালাহ, কেদুয়া, জিয়াদ, গাজ্জা, শেয়াবে আমেরসহ মক্কা নগরীর অলিগলিতে দাঁড়িয়ে থাকবে মিনাগামী হজযাত্রীদের বিলাসবহুল সব বাস। এক একটি বাস দু’ থেকে তিনটি পর্যন্ত ট্রিপ দেয় হজযাত্রীদের মিনা পৌঁছাতে। হজযাত্রীদের জন্য মিনার তাঁবুনগরীও রয়েছে প্রস্তুত। দক্ষিণ এশিয়া মুতাওয়িফ সংস্থার অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশের হজযাত্রীরাও বিশ্বের লাখ লাখ মুসল্লির সাথে মিলেমিশে কাল থেকেই পদচারণায় মুখর করে রাখবেন মিনা প্রান্তর।
হজযাত্রীরা ৮ যিলহজ রাত থেকেই হজ পালনের জন্য আরাফার ময়দানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ৯ যিলহজ আরাফাতে অবস্থান করতে হয়। এটাই মূলত হজ। এখানে অবস্থিত মসজিদে নামিরাহ থেকে যোহর সালাতের আযানের পর খুৎবা প্রদান করেন খতীব এবং এরপর যোহর ও আসর সালাত কসর (দুই রাকআত) এবং জমা করে (যোহর ও আসর পরপর দুই ইকামাতে) আদায় করেন। এরপর সূর্যাস্ত পর্যন্ত হাজত্রীরা আরাফাত ময়দানের সীমানায় অবস্থান করে জীবনের সব গুনাহ-খাতা ক্ষমার জন্য কায়মনোবাক্যে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে মোনাজাত করেন। আরাফাতের তাঁবু বিভিন্ন কোণে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দোয়া করতে থাকেন।
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে হজযাত্রীদের সামনে বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। পাহাড়টি গ্রানাইটে গঠিত এবং উচ্চতা প্রায় ৭০ মিটার। সারা বছর পতিত থাকে এই ময়দান। বরাদ্দপ্রাপ্ত মোয়াল্লিমরা তাদের নিজের কর্মী দিয়ে হজের দিনের জন্য প্রস্তুত করেন এ ময়দানের অবস্থিত বিভিন্ন নাম্বারের তাঁবুগুলো। টয়লেট পরিষ্কার, পানির ব্যবস্থা, কার্পেট বিছানো এবং দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করেন মোয়াল্লিমরা।
আরাফাতের ময়দানে ৯ যিলহজ নাযিল হয় আল্লাহ তা‘আলার বিশেষ রহমত। সউদী আরবের শীর্ষস্থানীয় সব কোম্পানি এদিন উদার হস্তে বিলিয়ে দেন তাদের পণ্য। লাবান, দুধ, হরেক রকম জুস, মাল্টা, আপেল, কমলা, আঙ্গুর, খেজুর, ছাতা, মাস্ক এবং পানির বোতলের ছড়াছড়ি পড়ে যায় সমগ্র আরাফাত ময়দান জুড়ে। সন্ধ্যার পর এসবের উচ্ছিষ্টে অবশেষে মুযদালিফাগামী হাজীগণ পড়েন বিড়ম্বনায়।
৯ জিলহজ্জ আরাফাতের ময়দানের আমল ও অনুষ্ঠানসমূহ সমাপ্ত হওয়ার পর এই ময়দান হতে মুযদালিফার দিকে রওয়ানা হতে হয়। সূর্যাস্ত সম্পূর্ণ রূপে হওয়ার পরই রওয়ানা দিতে হবে। যাবার সময় পথে পথে আল্লাহ তা‘আলার দরবারে দোয়া করতে হয়। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা-ই করেছেন। এ প্রসঙ্গে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন : রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্যাস্তের পর আরাফাতের ময়দান হতে মুযদালিফার দিকে রওয়ানা হলেন। এ সময় হযরত উসামা বিন্্ যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু তার সহ-আরোহী ছিলেন। অতঃপর তিনি খুব ধীর-মন্থর ও মর্যাদাসম্পন্ন গতিতে চলতে লাগলেন। শেষ পর্যন্ত মুযদালিফায় এসে পৌঁছলেন। এ সময় তিনি দোয়ায় মগ্ন ছিলেন। তার দু’খানি হাত ঊর্ধ্বে এমনভাবে উত্তোলিত ছিল যে, হাত দু’খানি তার মস্তক মোবারক অতিক্রম করে যায়নি। মুসনাদে আহমাদ ও সহীহ মুসলিম।
বস্তুত এ সময়ে দোয়া ও যিকির করার নির্দেশ আল-কুরআনেও দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : ‘তোমরা যখন আরাফাতের ময়দান হতে রওয়ানা হয়ে যাবে, তখন মুযদালিফার নিকটে আল্লাহ পাকের যিকির করবে।’ সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৯৮।
এই আয়াতের ভিত্তিতেই ইমাম শাফেয়ী রহ. ও ইমাম লাইস রহ. মুযদালিফায় অবস্থান করা, যিকির করা ও তালবিয়াহ পাঠ করাকে ফরজ বলেছেন। ইমাম আবু হানিফাহ রহ. ও অন্যান্য ইমামগণের মতে মুযদালিফায় অবস্থান করা, তালবিয়াহ পাঠ করা ও যিকির করা ফরজ নয়, বরং সুন্নাত। ম‚ল হাদীসে একথাও বলা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সময়ের দু’হাত ঊর্ধ্বে উত্তোলন করে দোয়া করেছিলেন এবং তার দু’হাত ঊর্ধ্বে এমনভাবে উত্তোলিত ছিল যে, তা’ তার মস্তক মোবারক অতিক্রম করে যায়নি। তবে দোয়া ও মোনাজাতে হাত উত্তোলন করতে গিয়ে আদব রক্ষা করা একান্ত দরকার। যেন হাত মাথার উপর অথবা মাথা পর্যন্ত উত্তোলিত হয়ে না যায়।
মুযদালিফায় পৌঁছে মাগরিব এবং এশার নামাজ এক সঙ্গে আদায় করতে হয়। এক সাথে আদায় করার কথাটি বুঝাতে গিয়ে হাদীস শরীফে ‘জাময়ান্’ শব্দের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন : রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুযদালিফায় উপস্থিত হলেন। এখানে তিনি লোকদের নিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ পড়লেন এবং এখানেই রাত্রি যাপন করলেন।’। মুসনাদে আহমাদ। মুযদালিফায় একটি নাম ‘মাশয়ারুল হারাম’ এখানে একটি মসজিদ আছে। সমগ্র মুযদালিফাই অবস্থানস্থল। এর যে কোন অংশে অবস্থান করলেই হয়। ইসলামী শরীয়তে এ ব্যাপারে কোন কাড়াকড়ি আরোপ করা হয়নি।
হাজীরা পরের তিন দিন জামারাতে নিক্ষেপের জন্য এখান থেকে কঙ্কর সংগ্রহ করতে পারেন। সউদী সরকার সেখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক কঙ্কর ছড়িয়ে রাখেন।
১০ যিলহজ সকালে মিনার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে মোয়াল্লিমের নির্দেশনা মোতাবেক হয় জামারাতে, নয় তো তাঁবুতে চলে যেতে হবে। এদিন হাজী সাহেবদের বেশ কয়েকটি কাজ সম্পন্ন করতে হয়। বিশেষ করে সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাবার আগে বড় জামারাতে ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ, কোরবানী এবং কাবা শরীফে গিয়ে ফরজ তাওয়াফ-সাঈ। তবে যে কোন দুটি সম্পাদনের পর মাথা মুন্ডন করে ইহরাম ত্যাগ করতে পারেন। পরে ১১ ও ১২ যিলহজ সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাবার পর ৩টি জামারায় ৭টি করে ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন। এরপর কেউ দ্রুত শেষ করতে চাইলে ১২ যিলহজ সূর্যাস্তের পূর্বেই মিনা ত্যাগ করবেন। না পারলে ১৩ তারিখ সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাবার পর ৩টি জামারাতে কঙ্কর নিক্ষেপ শেষে মক্কায় ফিরে আসবেন। মক্কা ত্যাগের দিন হজযাত্রীদের শেষ কাজ হবে বিদায়ী তাওয়াফ করা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।