Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হজযাত্রীদের পদভারে মুখর মক্কা নগরী

মুহাম্মদ সানাউল্লাহ | প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশ থেকে শেষ ফ্লাইটের হজযাত্রীরা গতকাল মক্কা নগরীতে গিয়ে ওমরা পালন করেছেন। তামাত্তু হজ পালনকারীরা ইহরাম খুলে হালাল হলেও যারা ইফরাদ বা কেরান হজ করবেন তারা থাকবেন ইহরাম পরেই। দূর-দূরান্তের হজযাত্রীরা চলে এলেও আশপাশের আরব দেশগুলোর হজযাত্রীরা আসবেন শুক্রবার সকাল পর্যন্ত। অধিকাংশ কুয়েত, আরব আমিরাত, বাহরাইন, ওমান এসব দেশ থেকে বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে হজে অংশ নেন। মিনা, আরাফা এবং মুযদালেফা পর্যন্ত তারা নিজস্ব বাসে করে যান। পবিত্র মদিনা থেকে আজ সব হজযাত্রী মক্কায় চলে আসবেন। নিয়মমাফিক আগামী শুক্রবার থেকে হজের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ২০-২২ লাখ হজযাত্রীকে স্বাচ্ছন্দ্যে ও নির্ঝঞ্ঝাটে মিনায় পৌঁছানোর স্বার্থে আগামীকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকেই তাদের নেয়া শুরু করবেন মোয়াল্লিমরা। এর মাধ্যমে শুরু হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা। পবিত্র মক্কা নগরীর পথে পথে গুঞ্জরিত হতে শুরু করবে তালবিয়াহ তথা লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল-হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল-মুলক। লা শারীকা লাক। অর্থাৎ ‘আমি হাজির হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত! আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির। আপনার কোনো অংশীদার নেই। নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা ও সম্পদরাজি আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্য আপনার। আপনার কোনো অংশীদার নেই।’

মোয়াল্লিমদের নির্দেশনা অনুযায়ী তামাত্তু হজ পালনকারীরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে যে কোনো সময় হজের নিয়তে ইহরাম বেঁধে স্ব স্ব আবাসে অবস্থান করবেন এবং রাতেই তাদের নেয়া হবে মিনায়। উল্লেখ্য, ইহরাম বাঁধার পর নিয়ত করার সাথে সাথে তালবিয়াহ পাঠ শুরু করতে হয়।
তাঁবুর শহর বলেও পরিচিত মিনা হলো সউদী আরবের মক্কা প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত মক্কা শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকা। মক্কা থেকে এর দূরত্ব ৫ কিলোমিটার এবং এটি মক্কা থেকে আরাফাতের দিকে যাওয়ার সড়কের পাশে অবস্থিত। এর আয়তন প্রায় ২০ বর্গকিলোমিটার।

হজের অংশ হিসেবে মিনায় অবস্থান করতে হয় বলে মিনায় এ সময় পানি, পয়ঃ, বিদ্যুৎ, এসির ব্যবস্থা করা হয়। হজ মৌসুমের ৫ দিন ছাড়া সারা বছর মিনার তাঁবুগুলো পতিত পড়ে থাকে। অপরূপ সৌন্দর্যের লক্ষাধিক তাঁবুতে অবস্থান করে হজযাত্রীরা ৮ যিলহজ রাত থেকেই হজ পালনের জন্য আরাফার ময়দানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ৯ যিলহজ আরাফাতে অবস্থান করতে হয়। এটাই মূলত হজ। এখানে অবস্থিত মসজিদে নামিরাহ থেকে যোহর সালাতের আজানের পর খুতবা প্রদান করেন খতিব এবং এরপর যোহর ও আসর সালাত কসর (দুই রাকাত) এবং জমা করে (যোহর ও আসর পরপর দুই ইকামাতে) আদায় করেন। এরপর সূর্যাস্ত পর্যন্ত হজযাত্রীরা আরাফাত ময়দানের সীমানায় অবস্থান করে জীবনের সব গুনাহখাতা ক্ষমার জন্য কায়মনোবাক্যে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে মুনাজাত করেন। আরাফাতের তাঁবু বিভিন্ন কোণে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দোয়া করতে থাকেন।

মক্কা থেকে ১৪ কিলোমিটার পূর্বে আরাফাতের অবস্থান। ৩১ বর্গকিলোমিটারের আরাফাতের ময়দান প্রসিদ্ধ মানবজাতির আদি পিতা-মাতা আদম ও হাওয়া আলাইহিমাস সালামের পৃথিবীতে পুনর্মিলন ও দোয়া কবুলের স্থান হিসেবে। এখানে রয়েছে একটি পাহাড়। একে জাবালে রহমত (রহমতের পাহাড়) বলেও উল্লেখ করা হয়। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে হজযাত্রীদের সামনে বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। পাহাড়টি গ্রানাইটে গঠিত এবং উচ্চতা প্রায় ৭০ মিটার। সারা বছর পতিত থাকে এই ময়দান। বরাদ্দপ্রাপ্ত মোয়াল্লিমরা তাদের নিজের কর্মী দিয়ে হজের দিনের জন্য প্রস্তুত করেন এ ময়দানের অবস্থিত বিভিন্ন নাম্বারের তাঁবুগুলো। টয়লেট পরিষ্কার, পানির ব্যবস্থা, কার্পেট বিছানো এবং দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করেন মোয়াল্লিমরা।

সূর্যাস্ত পর্যন্ত এখানে অবস্থানের পর হজযাত্রীরা রওনা হবেন মুযদালিফার উদ্দেশ্যে। সেখানে গিয়ে এক আজান ও দুই ইকামাতে মাগরিব তিন রাকাত ও এশা দুই রাকাত আদায় করবেন। সারা রাত খোলা ময়দানে আরাম করতে হবে পরের দিনের কার্যাবলি সম্পাদনের উদ্দেশ্যে শক্তি সঞ্চয়ের লক্ষ্যে। হাজীরা পরের তিন দিন জামারাতে নিক্ষেপের জন্য এখান থেকে কঙ্কর সংগ্রহ করতে পারেন। সউদী সরকার সেখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক কঙ্কর ছড়িয়ে রাখেন।

১০ যিলহজ সকালে মিনার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে মোয়াল্লিমের নির্দেশনা মোতাবেক হয় জামারাতে, নয়তো তাঁবুতে চলে যেতে হবে। এ দিন হাজী সাহেবদের বেশ কয়েকটি কাজ সম্পন্ন করতে হয়। বিশেষ করে সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়ার আগে বড় জামারাতে ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ, কোরবানি এবং কাবা শরীফে গিয়ে ফরজ তাওয়াফ-সায়ী। তবে যে কোনো দু’টি সম্পাদনের পর মাথা মুন্ডন করে ইহরাম ত্যাগ করতে পারেন। পরে ১১ ও ১২ যিলহজ সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়ার পর ৩টি জামারায় ৭টি করে ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন। এরপর কেউ দ্রুত শেষ করতে চাইলে ১২ যিলহজ সূর্যাস্তের পূর্বেই মিনা ত্যাগ করবেন। না পারলে ১৩ তারিখ সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়ার পর ৩টি জামারাতে কঙ্কর নিক্ষেপ শেষে মক্কায় ফিরে আসবেন। মক্কা ত্যাগের দিন হজযাত্রীদের শেষ কাজ হবে বিদায়ী তাওয়াফ করা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হজ

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ