মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বছরটি শুরুর দিকেই বিশ্ব আবহাওয়াবিদরা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, উষ্ণতার সব রেকর্ড ভেঙে যেতে পারে ২০১৯ সালে। হলোও তাই। পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার মাস ছিল এবারের জুলাই।
স্যাটেলাইটের ডাটার ভিত্তিতে গবেষণা করে সোমবার (০৫ আগস্ট) আনুষ্ঠানিকভাবে এ তথ্য জানায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের জয়বায়ু বিষয়ক সংস্থা দ্য কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস (সি৩এস)। যদিও এর কয়েকদিন আগেই জাতিসংঘ মহাসচিবসহ বিভিন্ন নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান বলেছিলেন, এবারের জুলাই হতে পারে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার মাস। প্রচণ্ড রকমের দাবদাহে অতিষ্ঠ মানুষ। বিশেষ করে ইউরোপ অঞ্চল।
সি৩এস’র বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবী উষ্ণায়নের নজিরবিহীন অভিজ্ঞতা পেয়েছে। বিশ্বব্যাপী অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় পৌঁছেছিল জুলাই মাস।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, গত মাসে ইউরোপজুড়ে উত্তপ্ত তাপমাত্রা ছিল। অস্বাভাবিক উচ্চ তাপমাত্রায় ভুগেছে ইউরোপসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। ১৯৮১ থেকে ২০১০- এই ২৯ বছরের গড় তাপমাত্রা যা ছিল, এর চেয়ে ০ দশমিক ৫৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল এবারের জলাইয়ের তাপমাত্রা। এর আগে বিশ্বব্যাপী ২০১৬ সালের জুলাই মাসটি ছিল উষ্ণতম। যে রেকর্ড ভেঙে গেছে এবার। সেসময়ের চেয়ে এবার তাপমাত্রা ছিল প্রায় ০ দশমিক ০৪ ডিগ্রি বেশি।
সি৩এস’র প্রধান জিন নোয়েল দ্যপাউট জানিয়েছেন, যদিও বিশ্বজুড়ে বছরের জুলাই মাসটি সাধারণত উষ্ণতম হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের তথ্য এবার ভিন্ন। এ অনুযায়ী বিশ্বের ইতিহাসের গড় তাপমাত্রা থেকে এবারের জুলাই খুব সামান্য ব্যবধানে রেকর্ড গড়ে সবচেয়ে উষ্ণ মাসও। এসময় তিনি এই তাপমাত্রা শিল্পায়নের আগের যুগের চেয়ে ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল বলে উল্লেখ করেন।
এর কয়েকদিন আগে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) এবং সি৩এস থেকে প্রাপ্ত নতুন তথ্যের বরাত দিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছিলেন, গত জুলাই ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ মাস হতে পারে। এ নিয়ে সি৩এস’র গবেষণা চলছে। শিগিগির নিশ্চিত হওয়া যাবে।
মহাসচিব এও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়ে মহাসাগরগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি উষ্ণ। এ বিষয়ে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আবহাওয়া পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করবে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীরা আমাদের বলেছেন, যদি জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব এড়াতে চাই, তাহলে আমাদের অবশ্যই তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখতে হবে। এছাড়া আমাদের ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন ৪৫ শতাংশ হ্রাস করা দরকার।
বছরের শুরুর দিকে ২০১৯ সালে ইতিহাসের সব রেকর্ড ভেঙে সাগরে উষ্ণতা আরও বাড়তে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রের জার্নাল সায়েন্সের একটি গবেষণায় উঠে এসেছিল। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, মানুষের কারণে দিন দিন জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। আর এ থেকে আগের তুলনায় মহাসাগরগুলোতে ব্যাপকভাবে উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে নানা বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের হুমকিতে পড়ছে বিশ্বের উপকূলীয় দেশগুলো। এছাড়া যখন পানি উত্তপ্ত হয়, তখন এটি অনেক বেশি জায়গা নেয়। আর মহাসাগর উষ্ণ হওয়া মানেই সমুদ্রের স্তরের বৃদ্ধি পাওয়া।
গবেষণাটি এও বলেছিল, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যে হারে মহাসাগরে পড়ছে, ধারণা করা হচ্ছে- এ শতাব্দীর শেষ নাগাদই সমুদ্রের স্তরের মাত্রা ৩০ সেন্টিমিটার (১২ ইঞ্চি) বৃদ্ধি পেতে পারে।
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব এক্সটারের সামুদ্রিক জীববিজ্ঞান ও বৈশ্বিক পরিবর্তন বিষয়ক সহযোগী অধ্যাপক স্টিফেন সিম্পসন বলেছেন, এভাবে সমুদ্রের স্তর বৃদ্ধি পাওয়াটা একেবারেই শোভনীয় নয়। এছাড়া বিশ্বজুড়ে অনেক বড় বড় শহর রয়েছে, যেগুলো সমুদ্র থেকে পুনরুদ্ধার করা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। যা সমুদ্রতল থেকে ৩০ সেন্টিমিটারের বেশি উঁচুও নয়।
রুশ ফেডারেল সার্ভিস ফর হাইড্রোমিটিওরোলজি এবং এনভায়রনমেন্টাল মনিটরিংয়ের প্রধান রোমান ভিলফ্যান্দ জানিয়েছেন, এল-নিনোর (El-Nino) কারণে বিশ্বব্যাপী এ বছর সবচেয়ে বেশি গরম বা উষ্ণ আবহাওয়া। এল-নিনো ঘটনা ঘটে যখন, তখন প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব এবং মধ্যবর্তী দিক দিয়ে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। আর এই উষ্ণ তাপমাত্রা বিশাল এলাকা নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন মহাসাগরসহ বিশাল এলাকাজুড়ে প্রভাব ফেলছে। এছাড়া সমুদ্র থেকে বায়ুমণ্ডলে বিশাল তাপমাত্রা স্থানান্তর হচ্ছে। যা ধীরে ধীরে সমগ্র পৃথিবীকে গ্রাস করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।