Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আল্লাহর কাছে অতি প্রিয় যিলহজের প্রথম দশ দিন

লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক

মুহাম্মদ সানাউল্লাহ | প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০১৯, ১২:১২ এএম

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা। তিনি কিছু সৃষ্টিকে অন্যান্য সৃষ্টির ওপর বিশেষ মর্যাদা প্রদান করেছেন এবং বিশেষভাবে পছন্দ করেছেন। তেমনি বছরের কোন কোন বিশেষ দিবসকে অন্যান্য দিবসের ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন। বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন বস্তু বা বিষয়সমূহের মধ্যে আল্লাহ তা‘আলা রমজান মাস এবং রমজান মাসের শেষ দশকের রাতগুলোকে (এর মধ্যে লাইলাতুল কদর বিদ্যমান থাকায়) বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন করেছেন। অনুরূপ যিলহজ মাসকেও বিশেষ করে এর প্রথম দশ দিনকে অনেক ফযীলতপূর্ণ করেছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন: ‘কসম ভোর বেলার, কসম দশ রাতের।’ সূরা আল-ফাজর আয়াত: ১,২
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.)সহ অনেক মুফাস্সির ‘ওয়া লায়ালিন আশ্র্’ (কসম দশ রাতের) আয়াতের অর্থ করেছেন যিলহজ্জ মাসের দশ দিন। আল্লামা ইবনু কাসীর (রহ.) এই অর্থটিকেই সঠিক বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাফসীর ইবনু কাসীর- ৪/৫০৫

এখানে একটি বিষয় সহজেই বোধগম্য যে, কোন বিষয়ে আল্লাহর কসম করার অর্থই হচ্ছে ঐ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা। এখানেও আল্লাহ তা‘আলা কসমের মাধ্যমে যিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এর গুরুত্ব সম্পর্কে সূরা হাজ্জে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যেন তারা নিজেদের কল্যাণের স্থানসমূহে হাজির হতে পারে এবং তাদের নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে।’ সূরা আল-হাজ্জ আয়াত: ২৮
সূরা হজ্জে ‘নির্দিষ্ট দিনসমূহ’-এর ব্যাখ্যায় ইবনু আব্বাস (রা.) যিলহজ্জ মাসের দশ দিনকেই বলেছেন। যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন ফযীলতপূর্ণ দিনসমূহের অন্যতম দিন। এ মর্মে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর বাণী: ‘আল্লাহর নিকট যিলহজ্জ মাসের দশ দিনের চেয়ে অতি মর্যাদাবান এবং প্রিয়দিন অন্য কোনটি নেই। সুতরাং এই দিনগুলোতে তোমরা বেশি করে তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) তাকবীর (আল্লাহু আকবার) ও তাহ্মীদ (আলহামদু লিল্লাহ) পাঠ কর।’ মুসনাদে আহমাদ হাদীস নং-৫৪৪৬

যিলহজ্জের প্রথম দশদিনের মধ্যে আরাফার এবং কুরবানীর দিবস রয়েছে বলে এর ফযীলত এত বেশি। এ ব্যাপ্যারে হাদীসে এসেছে, ‘দিনসমূহের মধ্যে আল্লাহর নিকট সর্বশ্রেষ্ঠ দিন নহর করার (কুরবানী করার দিন), অতঃপর এর পরবর্তী দিন। সুনানে আবূ দাউদ হা: ১৭৬৫

অনুরূপ আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘আরাফার দিবসের তুলনায় এমন কোন দিন নেই, যেদিন আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক সংখ্যক লোককে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেন। আল্লাহ নিকটবর্তী হন, অতঃপর বান্দাদের সম্পর্কে ফেরেশতাদের সামনে গৌরব করে বলেন: তারা কী উদ্দেশ্য সমাবেত হয়েছে, অথবা তারা কী চায়?’ -সহীহ মুসলিম হা: ১৩৪৮
যিলহজ্জের প্রথম দশ দিনের আমল অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি ফযিলতপূর্ণ হওয়ার ব্যাপারে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর বাণী :
‘এমন কোন দিন নেই, যে দিনসমূহের সৎকাজ আল্লাহ তা‘আলার নিকট যিলহজ্জ মাসের এই দশ দিনের (প্রথম দশ দিনের) সৎকাজ অপেক্ষা বেশি প্রিয়। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তা‘আলার পথে জিহাদ করাও কি (এত প্রিয়) নয়? রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আল্লাহ তা‘আলার পথে জিহাদও তার চেয়ে বেশি প্রিয় নয়। তবে জানমাল নিয়ে যদি কোন লোক আল্লাহ তা‘আলার পথে জিহাদে বের হয় এবং এ দু’টির কোনটিই নিয়ে ফিরে আসতে না পারে তার কথা (অর্থাৎ, সে শহীদের মর্যাদা পাবে) ভিন্ন।’ তিরমিযী হা: ৭৫৭



 

Show all comments
  • আমিনুল ইসলাম হুসাইনী ৩ আগস্ট, ২০১৯, ২:৩৮ এএম says : 0
    দয়াময় আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা এতই দয়ালু যে, তিনি চান না তাঁর কোনো একটি বান্দাও জাহান্নমের নিকষ অনলে দগ্ধ হোক। তিনি তাঁর বান্দাদের এতই ভালবাসেন যে, তিনি বান্দার অনন্ত সুখময় জীবনের জন্য সৃষ্টি করেছেন পরম সুখনিবাস তথা জান্নাত।
    Total Reply(0) Reply
  • মামুন ৩ আগস্ট, ২০১৯, ২:৩৮ এএম says : 0
    তাই যারা ভুল পথে পা বাড়িয়েছিল আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদের ভুল শোধরানোর জন্য এমন কিছু বিশেষ সময়কে নির্ধারিত করে রেখেছেন, যে সময়গুলোতে বান্দা বেশি বেশি ইবাদত করার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি অত্যন্ত খুশি হয়ে বান্দার সকল গুনাহই ক্ষমা করে দেন। আর এ ধরনের ইবাদতেরই একটি সময় বা মৌসুম হলো যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন ও তার পরবর্তী তাশরিকের দিনসমূহ।
    Total Reply(0) Reply
  • মেঘদূত পারভেজ ৩ আগস্ট, ২০১৯, ২:৩৯ এএম says : 0
    এ দিনগুলোকে রাসূল সা. আখ্যায়িত করেছেন শ্রেষ্ঠ দিন বলে। যেমন- বিশিষ্ট সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন, ‘এমন কোনো দিন নেই, যার আমল যিলহজ থেকে আল্লহর কাছে অধিক প্রিয়। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল সা. আল্লাহর পথে জিহাদও নয়? জবাবে রাসূল সা. বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে যে ব্যক্তি তার জান মাল নিয়ে আল্লাহর পথে যুদ্ধে বের হলো এবং এর কোনো কিছু নিয়েই ফিরে না এল।’ (যে শাহাদত বরণ করেছেন তাঁর কথা ভিন্ন)। বুখারি শরিফ: ৯৬৯, অাবু দাউদ: ২৮৮০
    Total Reply(0) Reply
  • সিদরাতুল মুনতাহা ৩ আগস্ট, ২০১৯, ২:৪০ এএম says : 0
    থমত আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রত্যেকটা দিনই অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কেন না তিনিইতো এই দিন-রাত্রির স্রষ্টা। তিনি দিন-রজনী প্রত্যেককেই অনন্য স্বকীয়তার গুণে করেছেন গুণান্বিত। তবে এ দিনগুলোতে যেহেতু সবগুলো মৌলিক ইবাদতের সমাবেশ ঘটে তাই এদিনগুলোর শ্রেষ্ঠত্ব অন্যান্য দিনেন চেয়ে অধিক হওয়াই যুক্তিসংগত। যেমনটা হাফেজ ইবনে হাজর রহ. তার ফাতহুল বারী গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন- ‘যিলহজের দশকের বৈশিষ্ট্যের কারণ যা প্রতীয়মান হয় তা হলো, এতে সকল মৌলিক ইবাদতের সন্নিবেশ ঘটে। যথা- সালাত, সিয়াম, সাদাকা, হজ ইত্যাদি। অন্যকোনো দিন এতগুলো ইবাদতের সমাবেশ ঘটে না।’ ফাতহুল বারী, ২/৪৬০
    Total Reply(0) Reply
  • সোয়েব আহমেদ ৩ আগস্ট, ২০১৯, ২:৪০ এএম says : 0
    আসুন! এই মাহাত্ম্যপূর্ণ দিনগুলো ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করে মহান আল্লাহর কৃপা অর্জনে সচেষ্ট হয়। করি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা। কেন না আমরা জাগতিক পরীক্ষার দিনগুলোতে যদি সবচেয়ে ভালো ফলাফল অর্জন করার লক্ষ্যে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাতে পারি, তবে কেন আখেরাতের পরীক্ষার জন্য এমন মাহাত্ম্যপূর্ণ দিনগুলোতে সর্বাধিক প্রচেষ্টা ব্যয় করতে পারবো না? এ দিনগুলোতে আমল করা তো বছরের অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক অনেক বেশি।
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফুল ইসলাম ৩ আগস্ট, ২০১৯, ২:৪১ এএম says : 0
    আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে তাঁর ইবাদত করিয়ে জাহান্নাম থেকে বাঁচিয়ে সুখময় জান্নাতের মালিক হিসেবে কবুল করুন আমিন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হজ

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ