নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
লড়াকু এক ইনিংসের পথে বেন স্টোকসকে কভার ড্রাইভে বাউন্ডারি মেরে পৌঁছে যান তিন অঙ্কে। আকাশের পানে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে বেশ বড় করে শ্বাস ছাড়লেন। যেন বোঝাতে চাইলেন, এ সময়টুকুর জন্যই তো এত অপেক্ষা!
প্রতিকূল গ্যালারি, বেশ কঠিন উইকেট, চরম ব্যাটিং বিপর্যয়-টেস্ট ক্রিকেটে ফেরার ইনিংসে এসবের মুখোমুখি হতে হয়েছে। এজবাস্টন টেস্টের প্রথম দিনে ১২২ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল অস্ট্রেলিয়া। স্মিথ একপাশ আগলে উইলো দিয়ে লিখেছেন ১৪৪ রানের ‘মহাকাব্য’!
ম্যাচে হার-জিত আছেই। এই ম্যাচও হয়ত জিতবে অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইংল্যান্ড অথবা ড্র। কিন্তু এদিন প্যাভিলিয়নে ফেরার পথে সতীর্থতো বটেই, প্রতিপক্ষ শিবির কিংবা স্বাগতিক দর্শকদের কাছ থেকেও যে অভিনন্দনের করতালি পেয়েছেন সেটির জন্যই তো খেলেন অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট! তবে পথটা কি এতই মসৃণ ছিল?
টেস্ট ক্রিকেটে দুর্দান্ত সব ‘কামব্যাক’-এর নজির আছে। স্মিথের ফেরা সেসব ‘কামব্যাক’-এর মধ্যেও আলাদা মর্যাদা পাবে। গত বছর মার্চে কেপ টাউন টেস্টে বল টেম্পারিংয়ে জড়ানোর অপরাধে ১২ মাস নিষিদ্ধ ছিলেন। তখন তাঁকে দেখতে হয়েছে জীবনের উল্টো পিঠ। চারপাশ থেকে ধেয়ে এসেছে সমালোচনা, ধিক্কার। নিজেকে শোধরাতে অংশ নিতে হয়েছে সামাজিক কাজে। প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলার সুযোগ হয়নি। ছাড়তে চেয়েছিলেন ক্রিকেটও!
গত বিপিএলে কনুইয়ে চোট পাওয়ায় অস্ত্রোপচারের পর ভীষণ বাজে সময় কেটেছে তাঁর। তখন ভাবনাটা পেয়ে বসেছিল। কিন্তু হাতের ব্যান্ডেজ খোলার পর ফিরে আসে খেলার প্রতি ভালোবাসাটুকু। ওয়ানডেতে তো আগেই ফিরেছেন। আর টেস্টে ফিরলেন এমন এক মঞ্চে, সবশেষবার যেখানে শেষ করেছিলেন, এবার যেন সেখান থেকেই শুরু করলেন! গত অ্যাশেজে মোট সাত ইনিংসে ৬৮৭ রান করেছিলেন স্মিথ। এবার ফিরেই খেললেন অ্যাশেজের ইতিহাসে তো বটেই, তাঁর ক্যারিয়ারেরই অন্যতম সেরা ইনিংস। ২৪তম সেঞ্চুরিকে এ মর্যাদাই দিচ্ছেন স্মিথ, ‘এটা আমার অন্যতম সেরা ইনিংস।’
১৬ মাস পর সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ফিরেই খেললেন ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংস। স্মিথের চোখ ধাঁধানো ব্যাটিং অস্ট্রেলিয়াকে যেমন বিপদ থেকে উদ্ধার করেছে, তেমনি ক্রিকেটপ্রেমীদের দিয়েছে নিখাঁদ বিনোদন। ক্যারিয়ারের কালো অধ্যায় পেরিয়ে প্রত্যাবর্তনের গল্পটা এর চেয়ে ভালো কি আর হতে পারত?
১৪৪ রানের স্মরণীয় ইনিংসটি খেলার পর স্মিথ অবশ্য স্বীকার করতে পিছপা হননি যে, বল টেম্পারিংয়ের ঘটনার পর তিনি সংশয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। তার মনের মধ্যে এই দুশ্চিন্তা উঁকি দিয়েছিল যে, আর হয়তো ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন না। প্রথম দিনের খেলা শেষে স্মিথ বলেছেন, ‘(বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত) গেল ১৫ মাসে বেশ কয়েকবার এমন হয়েছে যে, আমি জানতাম না আবার কখনও ক্রিকেটে ফিরতে পারব কি-না। এক সময় তো আমি খেলাটার প্রতি কিছুটা ভালোবাসাও হারিয়ে ফেলেছিলাম। বিশেষ করে যখন আমার কনুইয়ের অস্ত্রোপচার হয়েছিল। এটা খুবই অদ্ভুত বিষয় ছিল। তবে যেদিন আমার কনুইয়ের বন্ধনী খুলে ফেলা হলো, আমি আবার ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা ফিরে পেলাম। আমি জানি না এটা কী ছিল। এটা ছিল একটার তাড়নার মতো যে, আমি খেলতে চাই, আমি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলতে চাই, আর হয়তো আমি মানুষকে গর্বিত করতে চাই এবং যা ভালোবাসি তা-ই করতে চাই।’
২০১৮ সালের মার্চে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কেপটাউন টেস্টে বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগ আনা হয় স্মিথের বিরুদ্ধে। এরপর দোষী প্রমাণিত হন তিনি। পান এক বছরের নিষেধাজ্ঞা। শাস্তি চলাকালে চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) খেলতে গিয়ে পড়েন কনুইয়ের চোটে। করাতে হয় অস্ত্রোপচার। এরপরের সময়টাই সবচেয়ে কঠিন ছিল স্মিথের জন্য। জীবনে প্রথম ও ওই একবারই তিনি ক্রিকেট খেলার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছিলেন। তবে সৌভাগ্যজনকভাবে ক্রিকেটে ফেরা-না ফেরা নিয়ে তার শঙ্কাটা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষে ইংল্যান্ডের মাটিতে বিশ্বকাপ আসরে গায়ে চড়ান অস্ট্রেলিয়ার রঙিন পোশাক। আর ইংলিশদের বিপক্ষেই মর্যাদার অ্যাশেজ সিরিজ দিয়ে ফিরেছেন টেস্ট আঙিনায়। সেজন্যও কৃতজ্ঞতা নুহ্য স্মিথ, ‘ভাগ্যক্রমে ভালোবাসাটা ফিরে এসেছে আর এই অবস্থানে আসতে পেরে আমি কৃতজ্ঞ। আবারও অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলছি এবং যা ভালো লাগে তা-ই (ক্রিকেট খেলা) করছি।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।