Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আসন্ন ঈদে দশ লাখ যাত্রী দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত করবে

রাষ্ট্রীয় নৌপরিবহন সংস্থার উদাসীনতায় যাত্রী দুর্ভোগ বাড়বে

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই, ২০১৯, ৬:৩০ পিএম

আসন্ন ঈদ উল আজহার আগে পড়ে রাজধানী ঢাকা সহ চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে অন্তত দশ লাখ মানুষ বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত করলেও সরকারী নিরাপদ নৌ পরিবহন ব্যবস্থা হতাশাব্যাঞ্জক। বেসরকারি নৌযানগুলো ৮আগষ্ট থেকে বিশেষ সার্ভিস পরিচালন শুরু করবে। ৯ আগস্ট থেকে অন্তত ২০টি নৌযান ঢাকা-বরিশাল-ঢাকা নৌপথে প্রতিদিন ডবল ট্রিপে যাত্রী পরিবহন করবে। তবে ঈদকে সামনে রেখে বেসরকারি নৌযানগুলোতে যাত্রী ভাড়াও বাড়ছে। এক্ষেত্রে বেসরকারি নৌযান মালিকদের দাবী, সারা বছরই তারা মন্ত্রণালয় নির্ধারিত ভাড়ার কমে যাত্রী পরিবহন করে থাকেন। ঈদের সময় তা কিছুটা পুষিয়ে নিতে সরকার নির্ধারিত ভাড়াই আদায় করেন। তবে যাত্রী সাধারণের অভিযোগ, সরকারী নৌযানের অভাবেই বেসরকারি নৌযানে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় সহ ওভারলোডিং হয়ে থাকে।

এদিকে এবারের ঈদেও বরিশাল চট্টগ্রাম রুটে উপকূলীয় স্টিমার সার্ভিস পুণর্বহাল হচ্ছেনা। অথচ এ রুটের জন্য প্রায় ৬০ কোটি টাকা ব্যায়ে দুটি পুরনো জাহাজ পূণর্বাশন সহ আরো একটি নতুন নৌযান সংগ্রহে বিআইডব্লিউটিসি’কে আর্থিক সহায়তা দেয় সরকার। এমনকি বরিশাল লক্ষ্মীপুর রুটে সী ট্রাক সার্ভিসটিও গত বছর থেকে বন্ধ রয়েছে। এরফলে চট্টগ্রাম অঞ্চলের যাত্রীদের সড়ক পথে লক্ষ্মীপুর এসে সেখান থেকে নিরাপদ নৌযানে বরিশালে পৌছার পথও রুদ্ধ হয় গেছে। অথচ উপক’লীয় নিরাপদ নৌ যোগাযোগের জন্য সরকার প্রতিবছর ৫০ লাখ টাকা নগদ ভতর্’কি দিচ্ছে রাষ্ট্রীয় এ নৌ পরিবহন সংস্থাটিকে। এরপরেও নিরাপদ উপক’লীয় সার্ভিসটি পূণর্বহালে উদাশীন রাষ্ট্রীয় নৌ পরিবহন সংস্থাটি।

এমনকি কথিত নৌযানের অভাবে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্র“ত ঢাকা-বরিশাল-খুলনা রকেট স্টিমার সার্ভিসটি আবারো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে । মোংলা ঘাশিয়াখালী চ্যানেলটি উন্নয়নের পরে ২০১৬ সালে সপ্তাহে একদিন করে ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে খুলনা পর্যন্ত রকেট স্টিমার সার্ভিসটি চালু করা হয়েছিল। অথচ সংস্থাটির হাতে ৪টি প্যাডেল জাহাজ ও ২টি নতুন স্ক্রু-হুইল নৌযান রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, নিয়মিত রক্ষনাবেক্ষন ও মেরামতের অভাবে সংস্থার নতুন পুরনো সবগুলো নৌযানেরই জীর্ণ দশা। কোন নৌযানেই এখন আর নুন্যতম যাত্রী সেবার মান অবশিষ্ট নেই। অথচ এসব নৌযানের মেরামতের নামে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা ব্যায় দেখান হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

আসন্ন ঈদ উল আজহার আগে ৮আগস্ট অপ্রোয়জনীয়ভাবে ঢাকা থেকে দুটি নৌযান ছাড়া হচ্ছে চাঁদপুর-বরিশাল হয়ে পিরোজপুরের বড় মাছুয়া ও বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ পর্যন্ত। অভিযোগ রয়েছে, সাধারন যাত্রীর চাপ না থাকলেও শুধুমাত্র কেবিন যাত্রীদের জন্য এ বিশেষ ব্যাবস্থা। অথচ ৯আগস্ট মূল জনশ্রোত শুরু হলেও সেদিন মাত্র একটি নৌযান ঢাকা থেকে ছাড়ছে সংস্থাটি। অনুরূপভাবে ঈদের আগের দিন ১১আগস্ট সর্বাধীক ভীড়ের দিনও ঢাকা থেকে মাত্র ১টি নৌযান ঢাকা ছাড়ছে।

উপরন্তু সংস্থার নিয়মিত নৌযানগুলো সন্ধা সাড়ে ৬টায় এবং বিশেষ সার্ভিসগুলো সন্ধা ৭টায় ঢাকা থেকে ছাড়ার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। যা মোটেই যাত্রী বান্ধব নয় বলে অভিযোগ উঠেছে ইতোমধ্যে। যানযট অতিক্রম করে ঐ সময়ে কোন যাত্রীর পক্ষে ঢাকার সদরঘাটে পৌছা সম্ভব নয় বলে সরকারী নৌযানগুলো আরো অন্তত এক ঘন্টা পরে ঢাকা থেকে ছাড়ার ব্যাবস্থা করার দাবী রয়েছে। বিগত ঈদের সময়ও ঐসব সময় কার্যকর থাকায় রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির নৌযানগুলো ধারন ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করেছে। এবারো যে তার খুব অন্যথা হবে তা মনে করছেন না পর্যবেক্ষক মহল।

এদিকে মেরামতের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যায়ের পরেও সংস্থাটির নতুন পুরনো সবগুলো নৌযানই কারিগরি ত্র“টির কারনে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে প্রায় ৫৭কোটি টাকা ব্যায়ে সংগ্রহ করা ‘এমভি বাঙালী’ ও ‘এমভি মধুমতি’ নৌযান দুটি যাত্রী বান্ধব না হওয়ায় তাতে ভ্রমনে সবার আগ্রহ কম। উপরন্তু এসব নৌযানেও একের পর এক কারিগরি ত্র“টি লেগে আছে। অত্যাধিক পরিচালন ব্যায়বহুল এসব নৌযানে গত জুন পর্যন্ত প্রায় ১৬ কোটি টাকা লোকশান গুনতে হয়েছে সংস্থাটিকে। ফলে এসব নৌযান বানিজ্যিক পরিচালনের চেয়ে বসিয়ে রাখলে লোকশানের মাত্রা কমে। তবে অভিযোগ রয়েছে, সংস্থাটির একটি স্বার্থান্বেশী মহল ব্যায় সাশ্রয়ী প্যাডেল হুইল নৌযানগুলোর পরিবর্তে এসব ব্যায়বহুল নৌযান পরিচালন-এ অতিমাত্রায় আগ্রহী।

দুটি স্ক্রু-হুইল নৌযান সংগ্রহের পরে মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষনে চরম উদাশীনতায় বিশ্ব ঐতিহ্যেতর স্মারক ৪টি প্যাডেল-হুইল জাহাজই এখন ধংশের পথে। ইতোমধ্যে বিনা দরপত্রে ‘পিএস অস্ট্রিচ’ জাহাজটি একটি বেরকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেয়া হয়েছে। অপর ৩টি নৌযানেরও জীর্ণদশা। নামে মাত্র যোড়াতালি দিয়ে চলছে। অথচ মূল ইঞ্জিন সহ এসব নৌযান-এর পরিপূর্ণ পূণর্বাশন করলে তা আরো অন্তত দুদশক চলতে সক্ষম বলে কারিগরি বিশেষজ্ঞগন জানিয়েছেন। ১৯৯৫সালে নতুন ইঞ্জিন সংযোজন ও পূণর্বাশনের পরে গত প্রায় ২৫বছরে এসব নৌযানের আর কোন পরিপূর্ণ মেরামত সহ মেজর ওভারহলিং হয়নি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ