Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সুশাসনের অভাবই বন উজাড় হচ্ছে দেশের বড় সমস্যা: ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০১৯, ৮:৩০ পিএম

রাবার বাগান ও সামাজিক বনায়নের নামে বন বিভাগ মধুপুর গড়ের প্রাকৃতিক বন উজাড় করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সেখানকার বাসিন্দারা। গতকাল আগারগাঁওয়ে বন অধিদপ্তরে আয়োজিত ‘মধুপুর শালবন : বন বিনাশ, জনসংখ্যাগত পরিবর্তন এবং প্রথাগত ভূমির অধিকার’ শীর্ষক গোলটেবিলে তারা অভিযোগ করেন। তারা বলেন, সামাজিক বনায়নের নামে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের নীরবে উচ্ছেদ চলছে। সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (সেড) এই গোলটেবিলের আয়োজন। এই অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেয়া বন বিভাগের কর্মকর্তারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। তারা বলছেন, মধুপুরের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে পরিবেশের সহ-ব্যবস্থাপনায় তারা সেখানে কৃত্রিম উপায়ে নতুন বনায়ন করছেন।
পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
প্রধান অথিতির বক্তব্যে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, সুশাসনের অভাব বাংলাদেশের বড় সমস্যা। দেশে অব্যাহত বন বিনাশেও সুশাসনের অভাব একটা কারণ। মধুপুর অঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ ভূমি অধিকার বিষয়ে যেন প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা পায়, সেদিকেও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
মধুপুরে ভূমি সমস্যা সমাধানে নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন করা জরুরি বলে মত দেন অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, মধুুপুর বনাঞ্চলের সঙ্গে জনবসতির সামঞ্জস্যতা কিভাবে নিশ্চিৎ করা যায়, সেজন্য আমাদের একটি নীতিমালা প্রণয়ণ করতে হবে। পাশাপাশি একটা আইনও করতে হবে। এখন সেখানে আইনের অপপ্রয়োগ যেভাবে চলছে, তা চলতে থাকলে সম্পূর্ণ বন ধ্বংস হয়ে যাবে। সমন্বিতভাবে জাতীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেড- এর পরিচালক ফিলিপ গাইন। সভার শুরুতে জয়েন শাহী আদিবাসী সমাজ কল্যাণ সংস্থার সভাপতি ইউজিন নকরেক, গারো লেখক থিওফিল নকরেক মধুপুর গড়ে বন বিভাগের কার্যক্রমের সমালোচনা করেন।
ইউজিন নকরেক বলেন, বন বিভাগ স্থায়ী প্রকল্পের নামে রাবার বাগান ও সামাজিক বনায়নের নামে প্রাকৃতিক বন উজাড় করে ফেলছে। তারা বলছে, সেসব পতিত জমি। সামাজিক বনায়নের এমন প্রকল্পে আমরা এখন উচ্ছেদ আতঙ্কে আছি।
৪৫ হাজার একর বনভূমি এখন মাত্র ৮-৯ হাজারে নেমে এসেছে দাবি করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এই প্রতিনিধি বলেন, ইকো ট্যুরিজমের কথা বলা হচ্ছে। তারপর পর্যটন বিভাগ এসে বনভূমি দখল করতে শুরু করবে। এভাবে চলতে থাকলে মধুপুর বন একদিন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
ফিলিপ গাইন তার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বলেন, রাবার ও সামাজিক বনায়নের ফলে মধুপুর বনের শত শত স্থানীয় প্রজাতি ধ্বংস হয়ে গেছে। সামাজিক বনায়নের অংশীদারদের মতের কোনো দাম নেই। নিজেদের জমি লিজ দিয়ে তারা কিছু টাকা পাচ্ছে।
সামাজিক বনায়ন বন মামলার একটি বড় উৎস। ৪৪টি গ্রামে জরিপ করে দেখা গেছে, ৩ হাজার ২৯টি মামলা রয়েছে। পুরো মধুপুর বন এলাকায় মামলার সংখ্যা সাড়ে চার হাজার।এসব মামলার নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতায় ক্ষোভ জানান থিওফিল নকরেক।
সহকারী প্রধান বন সংরক্ষক জহিরুল হক মধুপুরে প্রাকৃতিক বন উজাড় করে কৃষিজমি বাড়ানোর জন্য সেখানকার বাসিন্দাদের দায়ী করেন। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক বন উজাড় করে কৃষি জমির পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে একই কথা বলেন সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক মো. ইউনুস আলী। তিনি বলেন, মধুপুর গড়ে ১৯৮৯ সালে প্রাকৃতিক বনের পরিমাণ ছিল ৪৩ শতাংশ। ২০০৭ সালে তা নেমে আসে ২৯.৮ শতাংশে। এখন তা আরো কমছে। সেখানে বসবাসরত গারো ও বাঙালি উভয়েই জড়িত।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির প্রতিনিধিদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বারবার বলা হয়, সেখানে ইকো পার্ক করা হচ্ছে। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, বন বিভাগ সেখানে কোনো ইকো পার্ক নির্মাণ করছে না। মধুপুরে প্রাকৃতিক বন আরও বাড়াতে কাজ করছে বন বিভাগ। সোসিও-কালচারাল দিকটিও মাথায় রাখছে বন বিভাগ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ