Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফের বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য ট্রাম্পের, বারাক ওবামার প্রতিবাদ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০১৯, ৩:৫৩ পিএম

ফের স্বমূর্তিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ বার তার লক্ষ্য, মার্কিন কংগ্রেসের আফ্রো-মার্কিন সদস্য অ্যালাইজ়া কামিংস। টুইটে ট্রাম্প বলেছেন, ওই সদস্য যে জেলা থেকে এসেছেন, সেই বল্টিমোর ‘বিরক্তিকর, ইঁদুরভরা আবর্জনার স্তূপ’ ছাড়া আর কিছুই নয়। কামিংসের অপরাধ, তিনিও মেক্সিকো সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস-এ সরব হয়েছিলেন। ট্রাম্প বলতে চেয়েছেন, মার্কিন সীমান্তের তুলনায় ‘আরও খারাপ অবস্থা’ বল্টিমোরের এবং কৃষ্ণাঙ্গ-প্রধান এই জেলা খুবই ‘বিপজ্জনক।’ কামিংস-সহ বল্টিমোরের সব বাসিন্দাই ক্ষুব্ধ ট্রাম্পের উপরে। অ্যালাইজ়ার সমর্থনে বল্টিমোরের মেয়র জ্যাক ইয়ং বলেছেন, ‘আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতা এ ভাবে একটা প্রাণবন্ত শহরকে কলঙ্কিত করছেন, এটা মেনে নেওয়া যায় না।’

ট্রাম্পের বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে সম্প্রতি মুখ খুলেছেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও। সমকালীন রাজনীতি নিয়ে তাকে খুব একটা মন্তব্য করতে দেখা যায় না। কিন্তু এ বিষয়ে চুপ নেই তিনিও।

সম্প্রতি ট্রাম্প কংগ্রেসের চার ‘অ-শ্বেতাঙ্গ’ মহিলাকে বর্ণবিদ্বেষী আক্রমণ করার পরে সরব হয়েছেন ১৪৮ জন আফ্রো-মার্কিন নাগরিক। এদের প্রত্যেকেই ওবামার আমলে মার্কিন প্রশাসনে ছিলেন। এদেরই পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। একটি মার্কিন দৈনিকে সম্পাদকীয় পাতায় ওই ১৪৮ জন কলম ধরেছেন। সেই লেখার লিঙ্ক টুইটারে শেয়ার করে ওবামা লিখেছেন, ‘আমার প্রশাসনে এই দলটি যে ভাবে কাজ করেছে, তা নিয়ে আমি বরাবরই গর্বিত। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা, এখনও আমেরিকার জন্য ওরা যে ভাবে লড়াই চালাচ্ছেন, সেটাও গর্বের কারণ।’

লেখার শিরোনাম: ‘আমরা আফ্রো-মার্কিন, আমরা দেশপ্রেমী, আমরা অলস ভাবে বসে থাকতে চাই না।’ লেখার শেষে সই করেছেন ১৪৮ জনই। ওবামা প্রশাসনের সেই অফিসারেরা শপথ নিয়েছেন, যে কোনও মূল্যে ‘বর্ণবিদ্বেষ, লিঙ্গবৈষম্য, সমকাম-ভীতি এবং বিদেশি-ভীতি’-র বিরোধিতা করবেন। তাদের বক্তব্য, ‘এই সব ক’টি বিষয়েই বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্টের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। শুধু তিনি নন, প্রশাসনে থাকা বহু অফিসার আমাদের গণতন্ত্রকে বিষাক্ত করে তুলতে পূর্ণ মদত দিয়ে চলেছেন।’ এর পরে তাদের সংযোজন, ‘সহ-নাগরিককে দেশ থেকে চলে যেতে বলার মতো খারাপ কিছু হয় না। এটা মার্কিনসংস্কৃতির পরিপন্থী।’

ট্রাম্প কংগ্রেসের ওই চার সদস্যকে বলেছিলেন, যেখান থেকে এসেছেন, সেখানেই ফিরে যান। তার নিশানা ছিলেন আলেকজ়ান্দ্রিয়া ওকাসিয়ো কোর্তেজ়, ইলাহান ওমর, রশিদা তালিব এবং আইয়ানা প্রেসলি। ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হলেও প্রেসিডেন্ট স্বীকারই করেননি যে, তিনি বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য করেছেন। উল্টে এক প্রচারসভায় তাঁর সমর্থকেরা ফের ইলানকে লক্ষ্য করে আক্রমণ শানিয়েছেন। ফের স্লোগান দিয়েছেন, ‘ওকে ফেরত পাঠানো হোক।’ ইলান আদতে সোমালিয়ার অভিবাসী যিনি মার্কিন নাগরিকত্ব পান ২০০০ সালে।

ইলানদের এ ভাবে ‘কোণঠাসা’ করার চেষ্টার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামাও। তিনিও ট্রাম্প-আমলের বিতর্কিত প্রসঙ্গ থেকে দূরত্ব বজায় রাখাই পছন্দ করেন। মিশেলের এ বারের টুইট, ‘আমাদের দেশ মহান, তার বৈচিত্রের জন্য। বছরের পর বছর ধরে দেশের মাটিতে সেই সৌন্দর্য আমি দেখেছি। আমরা এখানে জন্মাই বা আশ্রয় চাই, সবার জন্য এখানে জায়গা রয়েছে। আমাদের মনে রাখা উচিত, এটা আমার আমেরিকা বা তোমার আমেরিকা নয়। আমাদের সবার আমেরিকা।’ ওবামা তার স্ত্রীর টুইটটি রিটুইট করেছেন।

পদ ছাড়ার পর থেকে যে কোনও বিষয়ে মন্তব্য করার আগে খুবই সতর্ক থাকেন ওবামা। এমনিতে মার্কিন ঐতিহ্য অনুযায়ী, প্রাক্তন প্রেসিডেন্টরা তাদের উত্তরসূরিদের সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকেন। যদি তারা বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য হন, তবুও। তা সত্ত্বেও ওবামা-সমর্থকদের একাংশের ক্ষোভ রয়েছে, ‘ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস’ ওবামার তৈরি করা ধারা সুপরিকল্পিত ভাবে নষ্ট করছে দেখেও কেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নীরব?

২০১৮ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রচার-পর্বের শেষ দিকে ওবামাকে কিছুটা সক্রিয় হতে দেখা গিয়েছিল। সে বার তিনি বলেছিলেন, ‘ব্যালটই আমাদের দেশের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করবে।’ কিন্তু ২০২০-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে পাখির চোখ করে ডেমোক্র্যাটরা যখন ট্রাম্পকে সরাতে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন, তার ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন কর্মীরা যখন বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে গলা তুলছেন, প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হিসেবে আর চুপ থাকতে পারেননি বারাক ওবামা।



 

Show all comments
  • MOHAMMAD DULAL MIAH ২৯ জুলাই, ২০১৯, ৫:৩৯ পিএম says : 0
    যেহেতু রক্তের রঙ এক ওঅভিন্ন সেহেতু বর্ণবিদ্বেষ ভুলে যাওই শ্রেয়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ট্রাম্প-বারাক ওবামা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ