Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যুক্তরাষ্ট্রে রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগে দ্বিধাগ্রস্ত চীন

বাণিজ্য যুদ্ধের পরিণতি-২

নিউ ইয়র্কস টাইমস | প্রকাশের সময় : ২৬ জুলাই, ২০১৯, ১২:০১ এএম

চীনা বিনিয়োগকারীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আবাসিক রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগের জন্য কম আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব রিয়েলটরস-এর সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত চীনা ক্রেতাদের আমেরিকায় বাড়ি কেনা ৫৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এর অর্থমূল্য ১৩.৪ বিলিয়ন ডলার। চীনের এ বিনিয়োগ শীতলতা মার্কিন বাণিজ্যিক রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্রকে ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

রিয়েলটরস গ্রæপের প্রধান অর্থনীতিবিদ লরেন্স ইউন বলেন, এ হ্রাসের পরিমাণ যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রে একটি সম্পত্তির মালিক হওয়ার ক্ষেত্রে তা আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে। মে মাসের এক রিপোর্টে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে চীনারা দ্বিধাগ্রস্ত। তাদের মধ্যে ইতোমধ্যে শুরু করা কাজ নিষ্পন্ন করার তাড়া দেখা যাচ্ছে।

তবে এই হ্রাস সত্তে¡ও চীন গত বছরের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত আমেরিকান সম্পত্তির শীর্ষ বিদেশি ক্রেতা ছিল।
ব্যাংক ও প্রাইভেট ইকুইটিসহ আর্থিক খাত এ প্রভাব অনুভব করছে। গোল্ডম্যান স্যাকস ২০১৭ সালে চায়না ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশনের সাথে একটি তহবিল শুরু করে। দুইজন ট্রেজারি কর্মকর্তার মতে, মার্কিন অর্থ বিভাগ এদিকে তীক্ষè দৃষ্টি রেখেছে। চীন-যুক্তরাষ্ট্র শিল্প সহযোগিতা অংশীদারিত্ব নামের এ তহবিল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আমেরিকান ম্যানুফ্যাকচারিং ও স্বাস্থ্য সেবা কোম্পানিতে বিনিয়োগের জন্য। চীনের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তোলাই ছিল লক্ষ্য।

গোল্ডম্যান স্যাকস-এর এক মহিলা মুখপাত্র বলেন যে ব্যাংক সরকারের সকল আইনবিধি মেনে চলছে।
আন্তঃসীমান্ত লেনদেন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ওয়াশিংটন ভিত্তিক আইনজীবী জন কাবিয়ালো বলেন, আমেরিকান প্রাইভেট ইকুইটি ফান্ডগুলো অধিগ্রহণের সময় বিদেশি ফান্ডের সাথে কমই দলবদ্ধ হতে চায়। কারণ তা করলে বিপদ হতে পারে।

কাবিয়ালো বলেন, আমি মনে করি বিশ^ব্যাপী এই তহবিলে বর্তমানে ব্যাপক উদ্বেগ বিরাজ করছে। তহবিল এখনো চীনা অর্থ গ্রহণ করতে চায়। কিন্তু তারা এ ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতন।
এমনকি দুই দেশ যদি একটি বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছেও, কিছু কিছু পরিমাণে চীনা বিনিয়োগ অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা। প্রশাসন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন প্রতিবন্ধকতার জন্ম দিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের আমেরিকান প্রযুক্তির উপর নিয়ন্ত্রণ যা বিদেশে বিক্রি করা যেতে পারে। হুয়াবেইর মত চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারি কালো তালিকাভুক্ত করা।

যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি বিনিয়োগ বিষয়ক কমিটি, যার আগে শুধু আমেরিকান ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ দখলকারী বিদেশি বিনিয়োগের লেনদেন পর্যালোচনার কর্তৃত্ব ছিল। সে কমিটি এখন ব্যাপকমাত্রার লেনদেন পর্যালোচনা করার দায়িত্বে। যার মধ্যে রয়েছে আমেরিকান ব্যবসায়ে বিদেশীদের যৌথ উদ্যোগ এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগ।

মার্কিন অর্থ দফতরের বিনিয়োগ নিরাপত্তা বিষয়ক সাবেক সহকারি সচিব বর্তমানে ল ফার্ম ফ্রেশফিল্ড ব্রæক হাউস ডেরিঞ্জারে কর্মরত আয়মেন মীর বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগের ব্যাপারে চীনে অবশ্যই এক ধরনের দ্বিধা রয়েছে। এই বাস্তবতার বিরুদ্ধে যুক্তি দেয়া কঠিন যে চীনা বিনিয়োগের উপর এসব আইনের সুস্পষ্ট প্রভাব রয়েছে।
দুর্বল চীনা বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে লাইনচ্যুত করবে না। যেহেতু তা হচ্ছে ব্রিটেন, কানাডা, জাপান ও জার্মানির মত একটি আংশিক বিনিয়োগ। চীন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারির এখনো বৃহত্তম ক্রেতা। তবে অর্থ দফতরের সর্বশেষ তথ্যমতে , সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের হোল্ডিংস হ্রাস পেয়ে ১.১ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

তবে বিনিয়োগ হ্রাস ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক ভাবে অনগ্রসর ক্ষেত্রগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে যেগুলো চীনা নগদ অর্থের উপর নির্ভরশীল। মিশিগানের মত অঙ্গরাজ্যগুলো চীনা বিনিয়োগকে তোষণ করেছে যার ফল হয়েছে দেশের সে অংশে নতুন নতুন কারখানা ও চাকরি যে অংশটি মহামন্দা কাটিয়ে ওঠার লড়াই করছে।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ক্রেইগ অ্যালেন বলেন, চীনা বিনিয়োগ হ্রাসের প্রধান প্রভাব অনুভ‚ত হবে গ্রাম এলাকায় যেখানে চীনা বিনিয়োগকারীরা কারখানা ক্রয় করেছে ও ব্যবসার লড়াইয়ের পুনরুজ্জীবন ঘটিয়েছে।
তিনি বলেন, চীনাদের তেমন ভাবে স্বাগত না জানানোর দিন চলে গেছে, বরং যুক্তরাষ্ট্রের অপেক্ষাকৃত দরিদ্র এলাকাগুলোতে যেখানে চাকরি প্রয়োজন সেখানে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে।
অ্যালেন বলেন, চীনারা আমাদের অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছ থেকে স্বাগত শুনতে পায়, কিন্তু কেন্দ্রীয় কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তারা পায় এর বিপরীত আচরণ।

কেন্টাকির ব্যালার্ড কাউন্টির স্থানীয় কর্মকর্তারা কৃতজ্ঞ যে চীনের শানইং ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিংস গত বছর একটি বন্ধ হয়ে যাওয়া কাগজ কল অধিগ্রহণ করেছে। মে মাসে মিলটি চালু হয়েছে। মিলের ৩০০টি পদের বেশির ভাগেই লোক নেয়া হয়েছে।

এ বছর কোম্পানির নির্বাহী সদস্যদের সাথে সাক্ষাত করতে চীন ঘুরে আসা কেন্টাকির পাদুকাহর নারী মেয়র ব্রান্ডি হারলেস বলেন, এটা লজ্জার বিষয় হবে যদি মার্কিন-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা তার শহরের মত স্থানগুলোতে উৎপাদন বিনিয়োগ ব্যাহত করে। (শেষ)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্র


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ