দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
বন্ধু শব্দটি খুবই আরাম প্রিয় শব্দ। ইংরেজীতে বলে ফ্রেন্ড এবং আরবীতে বলে ‘খলিল’। বন্ধুত্ব হল এমন একটা বন্ধন, যা মানুষকে যেমন কাছে টানে তেমনি দূরেও ঠেলে দেয়। এর টান এমন শক্তিশালী যে বন্ধুর প্রয়োজনে নিজের সবচেয়ে দামি প্রাণটাও দেওয়া যায়। আবার অন্যকে বন্ধুর অমোঘ টানে আটকে রেখে খুব সুন্দর কায়দায় প্রতারনা করে নিজের উদ্দ্যেশ্য হাসিল করা যায় এমনকি তার সস্তা প্রাণটাও নেওয়া যায়। বন্ধু এমন আর্কষনীয় এক জিনিস যা খুবই রহস্যময়। আসলে বন্ধুত্ব এমন একটি পবিত্র সর্ম্পক যা একই সাথে পরম নির্ভরতা, সহযোগিতা, ভালবাসার মিথষ্ক্রিয়তায় গঠিত।
ছেলে -মেয়েদের বন্ধুত্ব বৈধ কি নাঃ
ইংরেজীতে কিছু শব্দ রয়েছে জাস্ট ফ্রেন্ড, গুড ফ্রেন্ড, এবং বেস্ট ফ্রেন্ড। বন্ধুদের মাঝে প্রায়ই শব্দগুলো শোনা যায়। ্র কি হয় তোরগ্ধ? এই তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। সমাজে অনেক রকম বন্ধুত্বের সস্পর্ক বিদ্যমান। কারো রয়েছে ক্লাসের বন্ধু, কারো আবার জাস্ট ফ্রেন্ড অথবা বেস্ট ফ্রেন্ড। সমাজে প্রচলিত ছেলে মেয়েদের মধ্যে গড়ে ওঠা বন্ধুত্ব ইসলাম একেবারেই নিষেধ করে দিয়েছে। যেখানে একজন পুরষের জন্য ১৪ জন্য নারী ব্যাতিত সব নারী এবং একজন নারীর জন্য ১৪ জন পুরুষ ব্যতিত সব পুরুষের সাথে সাথে দেখা-সাক্ষাত হারাম করেছেন সেখানে বন্ধুত্বের সম্পর্ক করা একেবারেই অসম্ভব। কারন, বন্ধুত্ব নামক সম্পর্ক থেকে আস্তে আস্তে সেটি বেহায়াপনার সম্পর্কে গিয়ে পৌছায়। এমনকি ব্যভিচারও হয়ে থাকে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে- “(হে রাসুল সাঃ) মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। ঈমানদার নারীদেরকে বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত ও নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। - সুরা আন-নুর। (আয়াত ৩০-৩১)
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে : যে, গুপ্ত অঙ্গ দেখায় এবং দেখে উভয়ে অভিশপ্ত। কাম প্রবৃত্তির প্রথম ও প্রারম্ভিক কারণ হচ্ছে দৃষ্টিপাত করা ও দেখা এবং সর্বশেষ পরিণতি হচ্ছে ব্যভিচার। (তাবারানী)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণনা করেন দৃষ্টিপাত শয়তানের একটি বিষাক্ত শর।
(তাফসীরে মায়ারিফুল কুরআন।)
এ থেকে বোঝা যায় যে, বন্ধুত্ব করতে হবে পুরষ পুরষের সাথে এবং মহিলা মহিলার সাথে। কোন বিপরীত লিঙ্গের গায়রে মুহাররমের সাথে জাস্ট, গুড, এবং বেস্ট ফ্রেন্ড নামক সম্পর্ক একেবারেই হারাম।
ছেলে এবং মেয়েদের মাঝে বন্ধুত্বের কুফলঃ
প্রথমে বন্ধুত্ব দিয়ে শুর হওয়া সম্পর্কের শেষ পরিনতি অনেক সময় ব্যভিচারেও রূপান্তরিত হয়। প্রথমে বন্ধুত্ব, তারপরে ফোনে কথা বলা, এরপরে ক্যাম্পাসে অথবা কোন রেস্টুরেন্ট কিংবা কোন পার্কে গিয়ে পাশাপাশি বসা অথবা হাত ধরে হাটা এবং গল্প করা। এরপরে থাকতে পারে বিভিন্ন আবদার। মোট কথা ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্ব সম্পর্কের মাঝে যতগুলো কাজ হয়ে থাকে প্রত্যেকটি কাজই হাদীস শরীফ অনুযায়ী ব্যভিচার। এ বিষয়ে হাদীস শরীফে এসেছে- আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ্রচোখের যিনা হচ্ছে- দেখা; জিহ্বার যিনা হচ্ছে- কথা, অন্তর কামনা করে ও উত্তেজিত হয় এবং যৌনাঙ্গ সেটাকে বাস্তবায়ন করে অথবা বাস্তবায়ন করে না।” সহিহ মুসলিমে আরো এসেছে- “দুই চক্ষুর যিনা হচ্ছে- দেখা, দুই কানের যিনা হচ্ছে- শুনা, জিহ্বার যিনা হচ্ছে- কথা, হাতের যিনা হচ্ছে- ধরা, পায়ের যিনা হচ্ছে- হাঁটা, অন্তর কামনা-বাসনা করে; আর যৌনাঙ্গ সেটাকে বাস্তবায়ন করে অথবা করে না। ”ইবনে বাত্তাল (রহঃ) বলেন: “দৃষ্টি ও কথাকে যিনা বলা হয়েছে যেহেতু এগুলো প্রকৃত যিনার আহŸায়ক। এজন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যৌনাঙ্গ সেটাকে বাস্তবায়ন করে অথবা করে না।” (ফাতহুল বারি)
বন্ধুত্ব থাক দূরের কথা কোন বেগানা নরীর দিকে তাকানও নিষেধ এ বিষয়ে হাদীস শরীফে বলা হয়েছে -হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ বাজালী থেকে মুসলিম শরীফে বর্ণিত হাদিস মতে-ইচ্ছা ছাড়াই হঠাৎ কোন বেগানা নারীর উপর দৃষ্টি পতিত হলেই সেদিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নাও। হযরত আলী (রা) বর্ণিত হাদিস মতে- প্রথম দৃষ্টি মাফ এবং দ্বিতীয় দৃষ্টিপাত গোনাহ্। হঠাৎ ও অনিচ্ছাকৃত দৃষ্টিপাত ক্ষমারযোগ্য। এর দ্বারা এটাই প্রমানিত হয় যে, পর্দার ব্যপারে হাদীসে এত কঠিন ভাষায় বলা হয়েছে যে, একবারের বেশি দ্বিতীয়বার কোন বেগানা নারীর দিকে তাকানো যাবে না। সুতারং জাস্ট, গুড, এবং বেস্ট ফ্রেন্ড নামক সম্পর্ক একেবারে হারাম।
কাদের সাথে বন্ধুত্ব করবঃ
বন্ধুত্ব যেহেতু ভালো জিনিস সেহেতু ভালো মানুষদের সাথেই বন্ধুত্ব করতে হবে। বন্ধু বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কুরআন মাজিদ ও হাদীস শরীফে সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন-“ঈমানদার ব্যক্তিরা কখনো ঈমানদারদের বদলে কাফেরদের বন্ধু বানাবে না। যদি তোমাদের কেউ তা করে, তবে আল্লাহর সাথে তার কোন সম্পর্কই থাকবে না।” [সূরা আলে-ইমরান : ২৮]
এ আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে, এমন ব্যক্তিকে আমরা বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করবো যে ঈমানদার, ধর্মপ্রাণ, সত্যবাদী, সদাচারী, সৎকাজে অভ্যস্ত এবং নীতিবান। যেহেতু আমরা বন্ধুছাড়া চলতে পারি না সেহেতু বন্ধু গ্রহণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে।
এ সম্পর্কে মহানবী (সাঃ) বলেন, “মানুষ তার বন্ধুর ধর্মের দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাই তোমাদের যে কেউ যেন বিবেচনা করে দেখে কাকে সে বন্ধুরূপে গ্রহণ করছে। [তিরমিজি]
এ হাদীস দ্বারা এটাই বোঝায় যে, বন্ধু বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কোন খারাপ মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না। যার সাথে বন্ধুত্ব করার ফলে জীবন ধ্বংসের দিকে যেতে পারে। যেমন: বর্তমান যুগ অনুযায়ী উদাহরন দেয়া যেতে পারে মাদকাসক্ত, চরিত্রহীন, চোর, ডাকাত, ধর্ষক ইত্যাদি। তবে কাউকে দ্বীনের পথে নিয়ে আসার উদ্দেশ্যে নিজের চরিত্রকে ঠিক রেখে তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা এটা দোষনীয় নয়।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে বাস্তব জীবনে তার হুকুম আহকাম গুলো মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।