নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ইমরান মাহমুদ : গতকালের লুইসভিল শহরের সাথে আজকের লুইসভিল যেন একেবারেই আলাদা। যেন অন্য কোনো এক শহর। নিত্যদিনের জীবনযাপনের পথটা যেন ছন্দহীন। কী যেন একটা নেই! কন্টাকির আলো-বাতাসে নেই সেই উদ্যামতা, নেই ভেঙেচুরে ফেলার শক্তি। থমথমে এক পরিবেশ চারদিকে। মানুষের চলাচলেও নেমে এসেছে স্থবিরতা। পা দুটো যেন চলতেই চায় না। একজন ব্যক্তির শূন্যতা এতটা ভারী করে ফেলতে পারে একটি শহরকে?
তার জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে কত অপেক্ষা করেছে এখানকার জনগণ। তবে আজকের এই অপেক্ষার প্রহরের সাথে তারা যেন অপরিচিত। আগে বিশ্বজয় করে যখন লুইসভিলে পা রেখেছে, হাসিমাখা মুখ নিয়ে সকলের হাতেই তখন শোভা পাচ্ছিলো হাজারো ফুলের মালা, শুভেচ্ছাবাণী সংবলিত প্ল্যাকার্ড আর অসংখ্য ভালোবাসার উপহার। আজ সেই মানুষটির জন্যই অপেক্ষা, তবে কেন এত বিষাদে ভরা? কেন হৃদয়ে হচ্ছে রক্তক্ষরণ? এটা যে শেষ বিদায়ের অপেক্ষা। গত শুক্রবার অ্যারজোনার হাসপাতালে চিরবিদায় নেয়া কিংবদন্তি মোহাম্মদ আলীর জানাযার জন্য এই অপেক্ষা। মৃত্যুর এক সপ্তাহ বাদে আগামী শুক্রবার নিজ জন্মভূমি কেন্টকিরে লুইসভিলেই দাফন করা হবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়। শেষ বিদায় বেলায় তার রুহের মাগফেরাত কামনা করে ভাষণ দেবেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডবিøউ বুশ। তার আগের দিন তাকে স্মরণ করে দোয়ার আয়োজন করেছে আলীর পরিবার।
ফুটবলের কিংবদন্তি পেলে-ম্যারাডোনা, ক্রিকেটের শচীন টেন্ডুলকার, ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে উসাইন বোল্ট, সাঁতারে মাইকেল ফেল্পস, টেনিসে রজার ফেদেরার। তবে যদি বিশ্বজোড়া ক্রীড়াঙ্গনকে এক করে একজনের নামের পাশে এই তকমাটি বসিয়ে দিতে বলা হয়, তবে নির্দ্বিধায় মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীর নামের পাশে লিখে দেয়া যাবে। ‘দ্য গ্রেটেস্ট অব অল স্পোর্টস, অল টাইম’। জীবনের ৬৫ লড়াইয়ে ৬১ জয়। ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত ১৯ ম্যাচে টানা অপরাজিত! শুধু বক্সিং রিংয়েই কেন? মানবতাবাদী আর শান্তির দূত হিসেবেও কি তার নামটি উচ্চারিত হবে না বিশ্বময়? সেই মানুষটিই কিনা ৩০ বছর ধরে লড়াই করে ক্লান্ত-অবশ্রান্ত শরীর, হেরে গেছেন পারকিনসন্স রোগের কাছে। এটা যেন মানতেই পারছে না লুইসভিলবাসী। এই শহরে আরো অনেকেই তো অনেক বছর বাঁচে? তবে এমন একজন মানুষ কেন ‘মাত্র’ ৭৪ বছর বয়সেই বিদদায় নেবেন পৃথিবী ছেড়ে?
জন্মটা যার লড়াইয়ের মধ্যে সেই মানুষটির এমন বিদায়ে হতবিহŸল লুইসভিলের প্রতিটি নারী-পুরুষ, ছেলে-বুড়ো।
বারো বছরের কিশোর, ক্ষিপ্ত ক্যাসিয়াস ক্লে জুনিয়র ছুটল পুলিশ অফিসার জো মার্টিনের কাছে নালিশ জানাতে। বক্তব্য খুব স্পষ্ট। জন্মদিনে পাওয়া সাইকেল চোরকে সে চিনে ফেলেছে এবং শাস্তি দিতে চায় তাকে। নিজস্ব কর্মজীবনের বাইরে একটি জিমও চালাতেন পুলিশ অফিসার মার্টিন। ক্রুদ্ধ ক্যাসিয়াসকে শান্ত করতেই মার্টিন পরামর্শ দিলেন, ভাল করে আগে বক্সিংটা শেখো। তবে না চোরকে শাস্তি দেবে। সম্ভবত মার্টিনও কল্পনা করতে পারেননি, তিনিও ভবিষ্যতে এক সোনালি, স্মরণীয় ইতিহাসের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করে ফেললেন!
গগনচুম্বী আত্মবিশ্বাস নিয়ে বক্সিং রিংয়ে ঝড় তুলে একচ্ছত্র শাসনের বার্তা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন আলী। সদর্পে ঘোষণা করেছিলেন, ‘আই অ্যাম দ্য গ্রেটেস্ট।’ বহুমাত্রিকতায় রঙিন সেই ব্যক্তিত্বই আবার ১৯৬০ সালে রোম অলিম্পিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দলে ডাক পেয়ে শুরুতে দোটানায় পড়ে গিয়েছিলেন! কারণ? বিমানে চড়তে খুব ভয় পেতেন! শেষ পর্যন্ত একটি প্যারাশ্যুট কিনে ক্যাসিয়াসের পিঠে বেঁধে দেয়া হয়েছিল তাঁকে! বিমানে উঠেছিলেন ক্যাসিয়াস ক্লে।
১৮ বছর বয়সে পেশাদার বক্সিংয়ে প্রবেশ ক্যাসিয়াসের। বিদ্যুতের মতো গতি, অবিশ্বাস্য ফুটওয়ার্ক এবং অকল্পনীয় শারীরিক নমনীয়তায় তিনি তখন রিংয়ের রাজা। ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত ১৯ ম্যাচে টানা অপরাজিত।
বিদ্রোহী ক্যাসিয়াস দীক্ষা নিয়ে ফেললেন ইসলাম ধর্মে। ফিরলেন মোহাম্মদ আলীর পরিচিতি নিয়ে! যা নিয়ে আত্মজীবনীতে তিনি পরে লিখলেন, ‘বাবা-মার দেয়া নামটা যেন বিদ্রƒপ করত যে, আমরা আসলে শ্বেতাঙ্গদের দাস! আমি তার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছিলাম।’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আঁচে তখন পুড়েছে পৃথিবী। ‘নিরপেক্ষ’ তকমা সরিয়ে রেখে হিটলার-দমন অভিযানে যুক্ত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আমজনতার কাছে মার্টিন লুথার কিং তখনো এক অজানা, অচেনা ব্যক্তিত্ব। বক্সিং-বিশ্ব পেয়ে গেল অবিসংবাদী শাসককে। যার বক্সিং গøাভস নিষ্ঠুরের মতো আছড়ে পড়বে প্রতিপক্ষের চোয়ালে। যিনি চোয়াল শক্ত করে বলবেন, ‘জেলে যেতে হলে যাব। কিন্তু শ্বেতাঙ্গ শাসকদের কথায় যুদ্ধে যাব না। কোনো ভিয়েতকং তো আমাকে নিগার বলে সম্বোধন করেননি।’ সেই প্রতিবাদী মানসিকতা থেকে ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে মার্কিনীদের অন্যায় আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে কারান্তরালে গিয়েছেন পাঁচ বছরের জন্য। কিন্তু নিজস্ব দর্শনে অটল ছিলেন আলী। ১৯৮১ সালে অবসর নেয়ার আগে পর্যন্ত পেশাদার রিংয়ে নেমেছেন ৬১ বার। জয় ৫৬!
হারিয়ে যেতে যেতে আবার ফিরে আসা, বাধা সরিয়ে ঘুরে দাঁড়নোর চ্যালেঞ্জ, বুকভরা সাহস, তীক্ষè আত্মসম্মানবোধ আর মানুষকে ভালবাসাÑএসব দিয়েই তো একটা মোহাম্মদ আলী তৈরি হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।