Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শেষ লড়াই হেরে গেলেন আলী

প্রকাশের সময় : ৫ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইমরান মাহমুদ : ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ফুসফুসের সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে। সেখান থেকে ফিরেছিলেন অমোঘ জীবনী শক্তি দিয়ে। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে আবারো চিকিৎসকের দ্বারস্থ, এবার সংক্রমণ মূত্রঘটিত। লাখো-কোটি ভক্ত, শুভাকাক্সিক্ষর দোয়া আর আশীর্বাদে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরেন নিজ পায়ে হেঁটে। নাতি, নাতনি নিয়ে বেশ চলছিলো তার ‘গৃহবন্দী’ দিন। সেই যে ঘরমুখো হলেন, সবশেষ জনসম্মুখ্যে এলেন গত এপ্রিলে পারকিনসন্স সেন্টারের সহায়তার জন্য অ্যারিজোনায় আয়োজন করা ‘সেলেব্রিটি ফাইট নাইট’এ। ঐ শেষ। পরে আর কখনও বাড়ির চৌকাঠ পেরোননি ‘চৌকোণ’ রিংয়ের রাজা। কে জানতো সেচ্ছায় না বেরুলেও, তাকে যে যেতে হবে। শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত সমস্যা কারণে গেলপরশু আলীকে আবারও নেয়া হয় হাসপাতালে। সেখান থেকে আর সুস্থ হয়ে ফেরা হয়নি, সকলকে কাঁদিয়ে নিশ্চুপ এক লাশ হয়েই ফিরেছেন বাড়িতে। গেলপরশু সকালটা আর পার হয়নি তার। অ্যারিজোনার ফিনিক্স-এরিয়া হাসপাতালেই ৭৪ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন সর্বকালের সেরা এই বক্সার। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। ১৯৮১ সালে বক্সিং থেকে অবসর নেয়ার তিন বছর পর থেকেই পারকিনসন্স রোগে ভুগছিলেন তিনবারের বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন আলী। তিরিশ বছরের লড়াই শেষে অবশেষে হেরে গেলেন এই রোগের কাছে। পরিবারের সদস্যরা জানান, আলীর জন্মস্থান কেন্টাকির লুইসভিলে জানাজা ও দাফন অনুষ্ঠান হবে।
১৯৪২ সালের ১৭ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকি রাজ্যের লুইসভিলে জন্ম। বাবা ক্যাসিয়াস মারসেলাস ক্লে’র নামানুসারে প্রথমে নাম রাখা হয়েছিল ক্যাসিয়াস মারসেলাস ক্লে জুনিয়র। পরে ১৯৭৫ সালে ইসলাম গ্রহণের পর নিজেই মোহাম্মদ আলী নাম বেছে নেন। আলী বিখ্যাত হয়ে উঠেন ১৯৬০ সালে রোম অলিম্পিকে লাইট-হেভিওয়েটে স্বর্ণপদক জিতে। ১৯৬৪ সালে বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপে সনি লিস্টনকে হারিয়ে সারা পৃথিবীতে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন ২২ বছরের ক্যাসিয়াস ক্লে। পরের প্রায় ২০ বছর বক্সিংয়ের রিংয়ে রাজত্ব করেছেন বিশাল দাপটের সঙ্গে, ক্যাসিয়াস ক্লে থেকে হয়ে উঠেছেন কিংবদন্তি মোহাম্মদ আলী! জো ফ্রেজিয়ারের সঙ্গে ‘ফাইট অব দ্য সেঞ্চুরি’, ‘থ্রিলা ইন ম্যানিলা’, জর্জ ফোরম্যানের সঙ্গে ‘রাম্বল ইন দ্য জঙ্গল’ সহ আরও কত স্মরণীয় লড়াইয়ের জনক ‘দ্য গ্রেটেস্ট’! পরে তিনি প্রথম বক্সার হিসেবে তিনবার বিশ্ব হেভিওয়েট শিরোপা জেতেন। আর ১৯৮১ সালে পেশাদার বক্সিং থেকে অবসর নেয়ার আগে সর্বমোট ৬১টি লড়াইয়ের মধ্যে ৫৬টিতেই জেতেন আলী।
সর্বকালের সেরা ক্রীড়াবিদ আলী শুধু বক্সিংয়ের রিংয়েই দুর্দান্ত ছিলেন না, ম্যাচের আগে-পরে কথাবার্তাতেও ছিলেন পটু। তিনি ছিলেন একজন মানবাধিকার কর্মী যিনি খেলা ও জাতীয়তার সীমা ছাড়িয়ে পুরো বিশ্বে পরিচিত হয়ে ওঠেন। সেই বিশ্বের একটুকরো বাংলাদেশেও আছে তার পদচিহ্ন, এ দেশের একজন তিনি। ১৯৭৮ সালের ১৮ ফেব্রæয়ারী স্ত্রী ভেরোনিকাকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্ব নন্দিত বক্সার চির সবুজের এদেশে হাজির হয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমন্ত্রণে।
মাঠে ও মাঠের বাইরে অসাধারণ ব্যক্তিত্ব দিয়ে হয়ে উঠেছিলেন দারুণ প্রভাবশালী একজন। স্পোর্টস ইলাস্ট্রাটেড তাঁকে সম্মানিত করেছিল গত শতাব্দীর সেরা ক্রীড়াবিদ হিসেবে। বিবিসি চোখে হয়েছিলেন শতাব্দীর সেরা ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব। আর সারা বিশ্বের ক্রীড়াপ্রেমীদের অনেকের কাছে তো তিনি সর্বকালের সেরা ক্রীড়াবিদই। ‘দ্য গ্রেটেস্ট’ নামটা তো সে কারণেই! মৃত্যু তাঁকে অন্য এক ভুবনে নিয়ে গেছে। কিন্তু এই ভুবনে তিনি তাঁর কীর্তি দিয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন চিরকাল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শেষ লড়াই হেরে গেলেন আলী
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ