নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ক্রিকেটের তীর্থভুমি লর্ডসে গতকাল পঞ্চমবারের মত অনুষ্ঠিত হলো বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল। টুর্নামেন্টর ইতিহাসে সবচেয়ে আকর্ষনীয় ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবার শিরোপা জিতেছে স্বাগতিক ইংল্যান্ড।
ভেন্যু হিসেবে সবচেয়ে বেশিবার ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হলো লর্ডসেই। এর আগে এই মাঠেই হয়েছে ১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৮৩ ও ১৯৯৯ আইসিসি বিশ্বকাপের ফাইনাল। বিশ্বকাপের বাকী ফাইনাল ম্যাচগুলো হয়েছে যথাক্রমে ১৯৮৭ সালে ইডেন গার্ডেনে, ১৯৯২ ও ২০১৫ সালে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে, ১৯৯৬ সালে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে, ২০০৩ ওয়ান্ডারার্সে, ২০০৭ সালে কিংস্টন ওভাল এবং ২০১১ সালে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে।
দীর্ঘ ২০ বছর পর ‘হোম অব ক্রিকেটে’ ফিরেছে বিশ্বকাপের ফাইনাল। সেখানে এর আগে চার ফাইনালের তিনটিতেই জয়লাভ করেছে প্রথমে ব্যাটিং পাওয়া দল। কেবলমাত্র অস্ট্রেলিয়া ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের দেয়া লক্ষ্য অতিক্রম করতে পেরেছিল।
১৯৭৫- প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা ওয়েস্ট ইন্ডিজের :
১৯৭৫ সালের ২১ জুন লর্ডসে অনুষ্ঠিত হয় ক্রিকেটের বিশ্বকাপের প্রথম ফাইনাল। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে শিরোপা জয় করে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইতিহাসের প্রথম ফাইনালে গ্যারি গিলমার ৫ উইকেট তুলে নিলেও নির্ধারিত ৬০ ওভারে ২৯১ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় ক্যারিবীয় দল। ম্যাচে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন ক্লাইভ লয়েড। মারকুটে ব্যাটিং দিয়ে মাত্র ৮৫ বলে সংগ্রহ করেন ১০২ রান। ফলে জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার টার্গেট দাঁড়ায় ২৯২ রান। সেই লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে গিয়ে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে অস্ট্রেলিয়া। তবে রানআউট হবার আগে অসি ব্যাটসম্যান ইয়ান চ্যাপেল খেলেন ৬২ রানের চোখ ধাঁধানো এক ইনিংস। যে কারণে ২৩৩ রানে অসিদের ৯টি উইকেট পড়ে গেলেও শেষ উইকেট জুটিতে জেফ থমসন ও ডেনিস লিলি শিরোপার স্বপ্ন দেখিয়ে যাচ্ছিলেন অসি শিবিরকে। কিন্তু ৪১ রান যোগ করার পর থমাস রান আউট হলে সেটি দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। ১৭ রানে ম্যাচ জিতে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
১৯৭৯- শিরোপা ধরে রাখে ওয়েস্ট ইন্ডিজ :
১৯৭৯ সালে ফের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের শিরোপা ঘরে তোলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এটি ছিল লর্ডসে তাদের টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপের শিরোপা। ফাইনাল ম্যাচে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে ৯২ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
৬০ ওভারের ওই ম্যাচে স্যার ভিভ রিচার্ডের হার না মানা ১৩৮ রানের সঙ্গে কোলিস কিংয়ের ৬৬ বলে ৮৬ রানের সুবাদে ২৮৬ রান সংগ্রহ করে ক্যারিবীয়রা। জবাবে দুই ওপেনার মাইক ব্রেয়ারলি ও জিওফ বয়কটের দুই হাফ সেঞ্চুরিতে দুর্দান্ত সূচনা পায় ইংল্যান্ড। কিন্তু ক্যারিবিয় পেসার মাইকেল হোল্ডিং দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে দেয়ার পর একেবারেই মুখ থুবড়ে পড়ে স্বাগতিক দলের ব্যাটিং। বিনা উইকেটে ১২৯ রান সংগ্রহ করা দলটি অল আউট হয়ে যায় ১৯৪ রানে। নজর কাড়া বোলিং দিয়ে ১১ ওভারে ৩৮ রানে ৫ উইকেট তুলে নেন জোয়েল গার্নার। গ্র্যাহাম গুচ, ডেভিড গাওয়ার, ক্রিস ওল্ড, ওয়েইন লার্কিনস ও বব টেইলরের মত গুরুত্বপুর্ন ব্যাটসম্যানরা সবাই গার্নারের শিকার হন। ক্যারিবীয়দের কাছে ৯২ রানে পরাজিত হয় ইংল্যান্ড। টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জয় করে ৭০ দশকে বিশ্ব ক্রিকেটের দাপুটে দল লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
১৯৮৩-ওয়েস্ট ইন্ডিজেক হঠিয়ে ভারতের প্রথম শিরোপা :
১৯৮৩ সালে আপসেট ঘটিয়ে ফেভারিট ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছ থেকে বিশ্বকাপের শিরোপা ছিনিয়ে নেয় ভারত। আগের দুই শিরোপা জয় করা ক্যারিবীয় দলটি চার বছর পর ফের লর্ডসের ফাইনাল খেলে।
অপরদিকে আগের দুই আসরে বলতে গেলে দুর্বল পারফর্মেন্স প্রদর্শন করেছে ভারত। একটি মাত্র ম্যাচে তারা জয়ের দেখা পেয়েছিল। তবে ১৯৮৩ সালে দারুন খেলেই ফাইনালে পৌঁছেছিল কপিল দেবের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলটি।
ফাইনাল ম্যাচেও আগ্রাসন চালিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসাররা। এন্ডি রবার্টস ১০ ওভার বোলিং করে ৩২ রানে তুলে নেন ৩ উইকেট। সেই সঙ্গে দুটি করে উইকেট নেন ম্যালকম মার্শাল, মাইকেল হোল্ডিং ও ল্যারি গোমেজ। তাদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ১৮৩ রানেই গুটিয়ে যায় ভারতীয় ইনিংস। কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত ভারতীয় দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৮ রান করেন।
জবাবে ১৮৪ রানের টার্গেট বেশ সহজেই অতিক্রম করার স্বপ্ন দেখছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু ভারতীয়দের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে ক্যারিবিয় ব্যাটসম্যানরা। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের স্বপ্ন পুরণ হয় ভারতের। মদন লাল ও মহিন্দর অমরনাথ ৩টি করে উইকেট তুলে নিয়ে ভারতীয় জয়কে ত্বরান্বিত করেন। ক্লাইভ লয়েডের দলটি ১৪০ রানেই গুটিয়ে গেলে ৪৩ রানের জয় পায় ভারত।
১৯৯৯-পাকিস্তানকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম শিরোপা :
লর্ডসে পাকিস্তানকে হারিয়ে শিরোপা জয় করে অস্ট্রেলিয়া। আসরের দুই ফাইনালিস্ট শিরোপা জয়ের জন্য এতটাই উন্মুখ হয়ে পড়েছিল যে সবাই ধরানা করেছিল রোমঞ্চকর একটি ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে গ্রুপ পর্বে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল পাকিস্তান।
কিন্তু প্রথমে ব্যাটিং করা পাকিস্তানকে শুরুতেই কাবু করে ফেলে অজিরা। ৯ ওভারের মধ্যেই ৩৩ রানে ৪ উইকেট তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া। শেষ পর্যন্ত ৩৯ ওভারেই ১৩২ রানে অল আউট হয়ে যায় পাকিস্তান।
পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ২২ রান করেন ইজাজ আহমেদ। শেন ওয়ার্ন নেন চার উইকেট। গ্লেন ম্যাকগ্রা ও টম মুডি দুটি করে উইকেট নেন।
জবাবে অ্যাডাম গিলক্রিস্টের বিধ্বংসি ব্যাটিংয়ে ভর করে মাত্র ২০.১ ওভারেই জয়ের লক্ষ্যে পৌছে যায় অস্ট্রেলিয়া। গিলক্রিস্ট ৩৬ বলে ৮টি চার ও একটি ছক্কা হাকিয়ে ৫৪ রান সংগ্রহ করেন। ম্যাচে ৮ উইকেটে জয়লাভ করে অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেটিই ছিল একমাত্র একপেশে ম্যাচ। লর্ডসে সেটিই ছিল অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনাল। ওই জয়ের পর বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভুত হয় অস্ট্রেলিয়া। এরপর ২০০৩, ২০০৭ ও ২০১৫ সালের শিরোপা তিনটিও ঘরে তোলে অজিরা।
২০১৯-যে ফাইনালে হারেনি কেউ :
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে আকর্ষনীয়, উত্তেজনাকর, অবিস্মরণীয় অবর্ণনীয় এক ফাইনাল উপভোগ করে ক্রিকেট বিশ্ব। যেখানে মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড।
রাউন্ড রবীন লিগ পদ্ধতিতে দশ দলের এ টুর্নামেন্টে অনেকটাই ভাগ্যের জোড়ে সেমিফাইনালে ওঠার পর শক্তিশালী ভারতকে পরাজিত করে ফাইনাল নিশ্চিত করা নিউজিল্যান্ড টস জিতে আগে ব্যাটিং করে মধ্যমানের ২৪১ রান সংগ্রহ করে। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৫ রান করেন অভিজ্ঞ রস টেইলর। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টম লাথামের ৪৭ এবং অধিনায়ক উইলিয়ামসনের ৩০ রানে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৪১ পর্যন্ত যেতে সক্ষম হয় টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলতে নামা নিউজিল্যান্ড।
জবাবে বেন স্টোকসের নায়কোচিত ৮৪ রানে ভর করে ইংল্যান্ডও ২৪১ রান করলে টাই হওয়া ম্যাচটি গড়ায় সুপার ওভারে। সুপার ওভারেও টাই হলে ম্যাচে বাউন্ডারি সংখ্যায় ২৪-১৭ ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় শিরোপা ঘরে তোলে ইংল্যান্ড।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।