মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
এত তোড়জোড়, এত প্রস্তুতির পর সোমবার ভোর রাতে কেন আচমকা স্থগিত হয়ে গেল ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযান? কার গাফিলতি ছিল? গলদ, ত্র্রুটি-বিচ্যুতি ছিল কোথায়? আপাতত তা নিয়ে বিশ্বজুড়েই শুরু হয়েছে জল্পনা। কেউ বলছেন, রকেটে জ্বালানি ভরার সময় কোনও বিপত্তি ঘটেছে। কেউ বলছেন, উৎক্ষেপণের জন্য খুব ভাল ভাবে পরীক্ষা করে নেওয়া হয়নি অত্যন্ত শক্তিশালী ও সর্বাধুনিক জিএসএলভি মার্ক থ্রি রকেটকে।
ইসরো সূত্রের খবর, সরষের মধ্যে ভূতটা ছিল রকেটের ‘ও’ রিং-এ। জ্বালানি ভরার সময় সেই ‘ও’ রিং ঠিকমতো ফুলে ফেঁপে উঠতে পারেনি বলে রকেটে ভরা জ্বালানি লিক হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে শুরু করে। যার ফলে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়।
এই ‘ও’ রিং বলতে কী বোঝায়? জিএসএলভি রকেটের চেহারাটা একটা ১৪ তলার বাড়ির সমান। তার একেবারে নীচে থাকে বড় একটি সলিড প্রপেল্যান্ট চেম্বার, যা ভরা থাকে জ্বালানিতে। সেই চেম্বারের চারপাশ থেকে চারটি পা বেরিয়ে মাটির সঙ্গে লাগানো থাকে। এই পাগুলোকে বলা হয় সলিড প্রপেল্যান্ট বুস্টার। এই সলিড প্রপেল্যান্ট চেম্বারের উপর থেকে পরপর বসানো থাকে তরল জ্বালানি ভরার জন্য দুটি চেম্বার। এই চেম্বারগুলোর নাম লিকুইড প্রপেল্যান্ট চেম্বার। এই দুটি চেম্বারের মধ্যে একটিতে থাকে তরল হাইড্রোজেন গ্যাস। অন্যটিতে থাকে তরল অক্সিজেন গ্যাস। রকেট উৎক্ষেপণের সময় একেবারে নীচের সলিড প্রপেল্যান্ট চেম্বারে থাকা জ্বালানিতে যেই অগ্নিসংযোগ করা হয়, সঙ্গে সঙ্গে তা প্রচণ্ড একটা চাপের সৃষ্টি করে, সেই চাপের ফলে ওপরে লিকুইড প্রপেল্যান্ট চেম্বার অসম্ভব জোরে নড়তে শুরু করে। সেই প্রচণ্ড চাপ আর কম্পনে দুই লিকুইড চেম্বারের মধ্যে রাখা গ্যাস (হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন) মিলে গিয়ে পানি তৈরি করে।
এখানে আরও একটি ঘটনা ঘটে। নীচের সলিড প্রপেল্যান্ট চেম্বারে যেহেতু অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল, সেই তাপে উপরের লিকুইড প্রপেল্যান্ট চেম্বারের মধ্যের পানি বাষ্পে পরিণত হতে শুরু করে। পানি ক্রমাগত বাষ্পে পরিণত হলে চেম্বারের চাপ ব্যাপক মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। সেই চাপে বাষ্প যাতে বাইরে বেরিয়ে আসতে না পারে তার জন্য দুই চেম্বারের মাঝে লাগানো থাকে ওই ‘ও’ রিং। এখানে প্রয়োগ করা হয় অনেকটা প্রেসার কুকারের নীতি। ঠিক যেমন বাষ্পের লিক আটকাতে প্রেসার কুকারের ঢাকনার চারপাশে রাবারের রিং আটকানো থাকে। যাতে ঢাকনার চারপাশ দিয়ে বাষ্প লিক না করে। ঠিক সে রকমই বাষ্পের লিক রুখতে জিএসএলভি-র ওই দুই চেম্বারের মাঝে রাবারের ‘ও’ রিং লাগানো থাকে। যাতে তাপে রাবার ফুলে উঠে জায়গাটা আরও ব্লক করে দেয়। আর একটা নির্দিষ্ট জায়গা দিয়ে প্রচণ্ড চাপে ওই বাষ্প বেরিয়ে আসে এবং রকেটকে উপরের দিকে ঠেলে তুলে দিতে সাহায্য করে।
ইসরো সূত্রে খবর, এখানেই সমস্যাটা হয়েছিল। সলিড প্রপেল্যান্ট চেম্বারে অগ্নিসংযোগ করার পর নিয়ম মেনে উপরের লিকুইড প্রপেল্যান্ট চেম্বারে পানি বাষ্পে পরিণত হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু চারপাশে লাগানো ‘ও’ রিং প্রসারিত না হওয়ার ফলে দুই চেম্বারের মাঝ থেকে লিক করতে থাকে বাষ্প।
এ বার রকেট যতই ওপরের দিকে উঠকে থাকে, ততই নীচের সলিড প্রপেল্যান্ট চেম্বারে সব জ্বালানি শেষ হয়ে গিয়ে তার চারটি বুস্টারের খোলস রকেট থেকে খসে পড়ে সমুদ্রের মধ্যে। পৃথিবী থেকে যখন ৪০ হাজার কিমি ওপরে চলে যায় রকেট তখন দুটি লিকুইডের একটির তরল জ্বালানি শেষ হয়ে গিয়ে সেই খোলসটিও সমুদ্রে খসে পড়ে। এ বার বাকি একটি তরল জ্বালানির প্রপেল্যান্ট চেম্বারকে সঙ্গে নিয়ে কোনও মহাকাশ যানকে পিঠে চাপিয়ে রকেট তার প্রয়োজনীয় গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। তার মানে এ ক্ষেত্রে চন্দ্রযান-২ চাঁদের কক্ষপথে ঢুকে পড়ার আগে পর্যন্ত ওই জিএসএলভি মার্ক–থ্রি রকেটের তরল জ্বালানি ভরা শেষ প্রপেল্যান্ট চেম্বারটি রকেটের সঙ্গেই থাকবে। যেই চাঁদের অভিকর্ষ বলের টানে তার কক্ষপথে ঢুকে পড়বে চন্দ্রযান-২, রকেট থেকে বেরিয়ে তরল জ্বালানি ভরা শেষ প্রপেল্যান্ট চেম্বার-সহ রকেটের বাকি খোলসটিও মহাশূন্যে ছড়িয়ে পড়বে।
কলকাতা ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স (আইসিএসটি) কর্মকর্তা বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী সন্দীপ চক্রবর্তী বলছেন, ‘আমার কাছে যতদূর খবর রয়েছে, ওই ‘ও’ রিং-এর গন্ডগোলের জন্যই যাত্রা বাতিল হয় চন্দ্রযান ২-এর।’ এর আগে জানুয়ারি মাসেও ল্যান্ডারের একটি পা ভেঙে যাওয়ায় চন্দ্রযান ২-এর ইসরোর উৎক্ষেপণ পিছিয়ে দিয়েছিল ইসরো। তারপর ল্যান্ডারের ওজন বাড়িয়ে প্রায় দেড় টন করা হয়। তার ফলে ওই ল্যান্ডারকে পিঠে চাপিয়ে রওনা করানোর জন্যে জিএসএলভি মার্ক ২ রকেটের বদলে এ বার আরও শক্তিশালী জিএসএলভি মার্ক-থ্রি রকেটকে বেছে নেওয়া হয়েছিল।’
১৯৮৬ সালে এই ‘ও’ রিং কাজ করেনি বলেই উৎক্ষেপণের এক মিনিট ২৯ সেকেন্ড-এর মধ্যেই সাত মহাকাশচারীকে নিয়ে ভেঙে পড়েছিল চ্যালেঞ্জার মহাকাশযান। তখন ফ্লোরিডায় অসম্ভব ঠাণ্ডায় জমে গিয়েছিল ওই ‘ও’ রিং। যা তদন্ত করে জানিয়েছিলেন নোবেল পুরস্কার জয়ী বিজ্ঞানী রিচার্ড ফাইনম্যান। সূত্র: বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।