Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশের স্মৃতিতে অম্লান মোহাম্মদ আলী

প্রকাশের সময় : ৫ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জাহেদ খোকন : এই নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন সর্বকালের সেরা বক্সার, বক্সিং রিংয়ের রাজা দ্য গ্রেটেস্ট মোহাম্মদ আলী। গতকাল সকালে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার ফিনিক্স অ্যারিনা হাসপাতালে ৭৪ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন তিনি। তার মৃত্যুতে শোকাহত গোটা বিশ্ব। শোক ভর করেছে বাংলাদেশেও। মোহাম্মদ আলী ছিলেন বাংলাদেশের অকৃত্তিম বন্ধু। ১৯৭৮ সালের ১৮ ফেব্রæয়ারি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমন্ত্রণে পাঁচদিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন মোহাম্মদ আলী। ঢাকায় অবস্থান করলেও, গিয়েছেন সুন্দরবন, সিলেটের চা বাগান, পাহাড়ি শহর রাঙ্গামাটি এবং দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। মোহাম্মদ আলী যখন কক্সবাজার সফরে যান তখন তাকে সংবর্ধনা দেয় জেলাবাসী। ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেই এই বক্সিং গ্রেটকে কলাতলীতে একখÐ জমি উপহার দেয়া হয়। আর তা দেন কক্সবাজার জেলার তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা আখতার নেওয়াজ খান বাবুল। তখন জমির কাগজপত্রও মোহাম্মদ আলীর হাতে তুলে দেয়া হয়। বাংলাদেশ সফরে অনেক স্মৃতি রেখে যান এই বক্সিং গ্রেট। তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামের (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম) দক্ষিণে পল্টন ময়দানের একপ্রান্তে নিজের নামে একটি মুষ্টিযুদ্ধ স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করেন। এটি নির্মাণের জন্য অর্থায়নও করে যান। তবে মোহাম্মদ আলী স্টেডিয়াম নামের এই স্থাপনাটি এখনো টিকে থাকলেও সেদিনকার উদ্বোধন ফলকটি আর নেই।
ওই সময় তিনি ঢাকা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের ১২ বছরের কিশোর মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের সঙ্গে বক্সিং ম্যাচও খেলেন। আর ওই ম্যাচে হেরে যান মোহাম্মদ আলী। হাজার হাজর দর্শক উপভোগ করেছিলেন ওই ম্যাচটি। যা এখনো স্মৃতিতে ভেসে বেড়ায় সেদিনকার সেই ১২ বছরের কিশোর মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের। তার কাছে মোহাম্মদ আলী ছিলেন স্বপ্ন পুরুষ। কিংবদন্তি এই বক্সারের সঙ্গে গিয়াসউদ্দিনের প্রদর্শনী ম্যাচ খেলার সৌভাগ্য হলেও মোহাম্মদ আলীর বাহুতলে গিয়ে নিজেকে স্বার্থক মনে করেছেন ‘বাংলার আলী’ খ্যাত আবদুল হালিম। তার কাছে মোহাম্মদ আলী মানেই ছিলেন প্রাণ পুরুষ। তাই তো আবদুল হালিম ও গিয়াসউদ্দিনের স্মৃতিতে আজও অ¤øান মুষ্টিযোদ্ধার সর্বকালের সেরা মোহাম্মদ আলী। ঢাকা সফরে যদিও প্রথমে মোহাম্মদ আলীর লড়াই কথা ছিল ‘বাংলার মোহাম্মদ আলী’ খ্যাত আবদুল হালিমের।
কিন্তু তখন মোহাম্মদ আলী বলেছিলেন সত্যিকারের লড়াই করার মতো মানসিকতা তার নেই। শুধু ‘ফান বক্সিং’ করবেন। আর তখনই বক্সিং ফেডারেশন বাসাবোর ছেলে ১২ বছরের কিশোর গিয়াসউদ্দিনকে লড়াইয়ের জন্য নির্বাচিত করে। মোহাম্মদ আলীর মৃত্যুর দিন তাকে নিয়ে স্মৃতি হাতড়ে গিয়াসউদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন,‘আমি প্রথমে বিশ্বাস করতেই পারছিলাম না যে, গ্রেট মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে লড়বো। তবে আমি দ্রæত প্রস্তুতি নিয়ে রিংয়ে নেমে পড়েছিলাম।’
স্মৃতি হাতড়ে গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘এমন মানুষের সান্নিধ্যের দিনক্ষণ কখনোই ভুলা যায় না। ১৯৭৮ সালের ১৮ ফেব্রæয়ারি ঢাকায় পা রাখার পরই মোহাম্মদ আলী চলে যান সিলেট চা বাগান পরিদর্শনে। পরদিন তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামের (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম) মাঝখানে স্টেজ করে বক্সিং রিং বসানো হয়। সুবিশাল পরিসরে সেখানেই এই বক্সিং গ্রেটকে নাগরিক সংবর্ধনা দেয়া হয়। এর পরেই পল্টনস্থ মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করেন তিনি। আর প্রদর্শনী ম্যাচের আয়োজন করা হয় তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামে বসানো বক্সিং রিংয়েই। কিন্তু মোহাম্মদ আলী বড় নয়, ছোট একজন বক্সারকে খুঁজছিলেন প্রদর্শনী ম্যাচ খেলার জন্য। যেখানে আমি নির্বাচন হই।’ গিয়াস উদ্দিন আরো বলেন, ‘সেই প্রদর্শনী ম্যাচের কথা আজও আমার স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে। একটি বাউটের খেলা হয়। যেখানে তিন মিনিট করে তিন রাউন্ড ও এক মিনিট করে তিন রাউন্ডের খেলা হয়েছিল। মাঝে তিন মিনিটের বিরতিও ছিল। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বক্সার। তার বিরুদ্ধে খেলতে গিয়ে আমার হাত-পা যেন কাঁপছিল। কিন্তু তিনিই আমাকে উৎসাহ যুগিয়েছিলেন। আমার প্রত্যেকটি ঘুষিতেই তিনি পড়ে যাওয়ার ভান করছিলেন। সবাই ভেবেছে আমিই নকআউট করে দিচ্ছিলাম মোহাম্মদ আলীকে। আমি দেখেছিলাম তার বাম গালে একটা কাটা দাগ, তিনি আমাকে মুখে মারতে মানা করেছিলেন। যদিও দীর্ঘদেহী মোহাম্মদ আলীর মুখে মারার মতো দীর্ঘ হাত আমার ছিল না। আমি তার বুকে-পেটে মারার চেষ্টা করেছিলাম।
সেই সময়ের কথা বলে বুঝানো যাবে না। কতটা আনন্দ, উচ্ছ¡াস আর ভালোলাগা আমাকে ছুঁয়ে গিয়েছিল। আজ যখন তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন, তখন খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। একজন আইডলকে হারিয়েছি আমরা।’
১৯৬৮ থেকে ’৮০ সাল পর্যন্ত দেশের বক্সিংয়ে সেরা সময় কাটিয়েছেন আবদুল হালিম। যাকে বাংলার আলীও বলা হতো। ১৯৭৮ সালের ১৯ ফেব্রæয়ারির কথা স্মৃতির ঝাঁপি থেকে খুললেন হালিম, ‘ছয় ফুট তিন ইঞ্চির মোহাম্মদ আলীর সামনে যেন আমি ক্ষুদে (৫ ফুট ২ ইঞ্চি) মানুষ ছিলাম। তারপরও উনার সঙ্গে আমারই ফাইট করার কথা ছিল। কিন্তু ছোট বাচ্চার সঙ্গে ফাইট করার কথা জানান মোহাম্মদ আলী। ফলে সুযোগটি পেয়ে যায় গিয়াস উদ্দিন। দর্শকের ভীড় ঠেলে যখন আমি উনাকে বললাম, আমি আপনার সঙ্গে ছবি তুলতে চাই।’ তখন আমার মুখের সামনে ঘুষি মারতে উদ্যোত হন। সেই ছবি আজও আমার কাছে প্রাণের চেয়ে বেশি প্রিয় হয়ে রয়েছে। আজও আমি সেই দিনের কথা ভুলতে পারিনি।’ বাংলাদেশ সফরে মোহাম্মদ আলীকে স্বাগত জানাতে ঢাকা বিমানবন্দরে জড়ো হয়েছিলো ২০ লাখেরও বেশি মানুষ। ওই সফরেই তাকে দেয়া হয় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দেয়া নাগরিকত্ব পেয়ে ওই অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমাকে যদি কখনও আমেরিকা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়, তবে ভাববো আরেকটি দেশ আছে আমার, সেটি বাংলাদেশ।’ বাংলাদেশের যেখানেই গেছেন সেখানেই মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়েছেন দ্য গ্রেট মোহাম্মদ আলী। যে কারণে তখন তিনি বার বার বলেছেন, আবার ফিরবেন এই সবুজ বাংলায়। কিন্তু না, তার আর ফেরা হলো না। চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

 



 

Show all comments
  • K.m. Syful Islam ৫ জুন, ২০১৬, ১১:৫৩ এএম says : 0
    জিয়ার সময় আসছে একথা বিবিসি ভুলেওতো একবার উচ্চারন করলো না
    Total Reply(0) Reply
  • Sorif ৫ জুন, ২০১৬, ১:১৫ পিএম says : 0
    sobai ke akdin chole jate hobe
    Total Reply(0) Reply
  • Azad ৫ জুন, ২০১৬, ১:৩৭ পিএম says : 0
    amra sokarto
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশের স্মৃতিতে অম্লান মোহাম্মদ আলী
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ