নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ইতিহাস বড়ই নিষ্ঠুর। স্বার্থপর ইতিহাস তার পাতায় পরম মমতায় আগলে রাখে শুধু বিজয়ীদের। সোনালী সে পাতায় পরাজিতের কোনো ঠাঁই নেই। খেলার মাঠ হোক কিংবা রণক্ষেত্র-জয়ের ইতিকথাও কেউ মনে রাখতে নারাজ। সব ভুলে মানুষ শুধু কুর্নিশ জানায় শুধু বিজয় তিলকধারীকেই। ডিজিটাল যুগে ব্যাপারটা আরও নির্মম। এই অমোঘ সত্যটা নিশ্চয়ই জানে ভারত-অস্ট্রেলিয়াও। এবারের বিশ্বকাপ আসরে তাদের দাপটের গল্প সীমাবদ্ধ ছিল গ্রæপ পর্ব পর্যন্তই। এবারের বিশ্বকাপের রাউন্ড রবিন লিগের শীর্ষ দুই দলের কথা মানুষ একদিন ভুলে যাবে। অথচ এর আগের এগারোবার আয়োজিত বিশ্বকাপে এই দুই দলেরই আছে সাতবার জয়ের ইতিহাস। মোটের উপর অর্ধেকেরও বেশি। যারমধ্যে অস্ট্রেলিয়া পাঁচবার ও ভারত দুইবার।
একটা প্রবাদ আছে, শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। বাস্তবতার নিরিখে শেষ ভালো মানেই চূড়ান্ত সাফল্য। যেমন ১৯৬৯ সালে চাঁদে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে পদার্পণ করা নিল আর্মস্টংয়ের কথা আমাদের সবারই জানা। তেমনি আজ ক্রিকেটের হিমালয়ে পর্বতে পৌছানোর লড়াই। দীর্ঘ দেড় মাস ও ৪৭ ম্যাচের ঘাম ঝড়ানো লড়াইয়ের পর বহুল কাঙ্খিত ফাইনাল আজ। শেষ যুদ্ধে উড়ন্ত ইংল্যান্ডের সামনে আত্মবিশ্বাসী নিউজিল্যান্ড। ক্রিকেটের তীর্থস্থান লর্ডসে বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে তিনটায় মুখোমুখি হবে প্রথমবারের মতো শিরোপাপ্রত্যাশী দুই দল। ত্রিশ হাজার দর্শকের সামনে ছষ্ঠ দল হিসেবে বিশ্বকাপজয়ী দেশগুলোর কাতারে নাম লেখানোর সুযোগ কেন উইলিয়ামসন ও এউইন মরগ্যানের।
ম্যাচ শুরুর আগে বেশ অনেকটাই এগিয়ে থাকবে আয়োজক ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপে ব্যাট ও বল হাতে বিস্ফোরক নৈপুন্য প্রদর্শণ করেছে মরগ্যানের দল। ফাইনালেও এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চান ইংলিশ অধিনায়ক। দলের সবাই আত্মবিশ্বাসী এবং নিজেদের সর্বোচ্চ উজাড় করে দিতে চান, ‘বিশ্বকাপের আগে থেকেই আমরা ইতিবাচক ক্রিকেট খেলেছি। বিশ্বকাপেও সেই ধাবারাহিকতা ছিল। আমরা চাই ফাইনাল ম্যাচ জিতে এবারের আসরটি রাঙিয়ে রাখতে। এজন্য ব্যাটে-বলে আমাদের নিজেদের সেরাটাই দিতে হবে। দলের প্রত্যেকেই আগামীকালের (আজ) ম্যাচের জন্য মুখিয়ে আছি।’ অন্যদিকে বিশ্বকাপের ফাইনালে আয়োজতদের বিরুদ্ধে নিজেদের স্বভাসুলভ ক্রিকেট চালিয়ে যেতে চান উইলিয়ামসন। ফাইনাল ম্যাচে আয়োজক হওয়ায় ইংল্যান্ডই বেশি চাপে থাকবে বলে মনে করেন উইলিয়ামসন। তবে শেষটা নিজেদের করে রাখতে হলে সোরটাই দিতে হবে বলে মানছেন কিউই অধিনায়ক, ‘ফাইনাল ম্যাচে অবম্যই একটা চাপ কাজ করবে। তবে আমি মনে করি ইংল্যান্ড নিজেদের মাঠে খেলবে, সমর্থদের একটা ঢ়েউ থাকবে তাদের পক্ষে। তাই চাপে তারাই বেশি থাকবে। তবে ফাইনাল ম্যাচ জিততে হলে দলগত পারফরম্যান্স দিয়েই সে কাজ করতে হবে।’
বিশ্বকাপের আগে থেকেই বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে ফেবারিটের তালিকায় ইংল্যান্ডই ছিল প্রথম সারিতে। অন্যদিকে সেখানে নিউজিল্যান্ড নিয়ে তেমন কোন সাড়াশব্দ হয়নি। কিন্তু বিশ্বমঞ্চে শুরুতেই অপরাজিত থেকে নজর কাড়ে কিউইরা। এরপর সেমিতে ভারতকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে শান্তিপূর্ণ দেশটি। বিশ্লেষকদের সঙ্গে দ্বিমত করার কোন সুযোগ নেই। কারন গত চার বছর ইংলিশদের ধারাবাহিত ফর্ম। কিন্তু ভিন্ন সুর পরিসংখ্যানের পাতায়।
এখন পর্যন্ত দুটি দল মুখোমুখি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছে ৯০ বার। যার মধ্যে ৪৩ বারই জিতেছে ব্ল্যাকক্যাপসরা। ইংল্যান্ডের জয় ৪১টি। ২টি ম্যাচ টাই ও ৪টি পরিত্যক্ত হয়েছে। বিশ্বকাপের আসরেও এগিয়ে আছে কেন উইলিয়ামসনের নিউজিল্যান্ড। মুখোমুখি ৯ বারের দেখায় পাঁচবারই ক্রিকেটের আবিস্কারকদের কাঁদিয়েছে তারা। বাকি চার ম্যাচে জয় তুলে নিয়েছে মরগ্যানের ইংল্যান্ড। আরেকটি পরিসংখ্যান দেখে নিজের চোখকেই হয়তো বিশ্বাস করবেন না অনেকেই। কারন নিজের মাঠে সবাই বাঘের ভ’মিকায় থাকে। এক্ষেত্রে ভিন্ন। ইংলিশদের চিরচেনা কন্ডিশনেও মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে কিউইরা। ইংল্যান্ডের মাঠে ৩৮ ম্যাচে স্বাগতিকদের ১৭ জয়ের বিপরীতে নিউজিল্যান্ডের জয় ২১ ম্যাচে। তবে এই পিছিয়ে থাকার ভীড়েও একটি জায়গায় এগিয়ে আছে মরগ্যানরা। সেটা হল-দুই দলের মুখোমুখি শেষ পাঁচ লড়াই। বিশ্বকাপের একটি ম্যাচসহ চার জয়ের বিপরীতে একটি মাত্র হার ইংল্যান্ডের।
এবারের আসরে ইংল্যান্ডের মূল শক্তি তাদের ব্যাটিং। যদিও বল হাতেও তারা প্রায় সমানভাবেই এগিয়ে। তবে ইংলিশ বিস্ফোরক ব্যাটিংই মূলত জয়ের ভীত গড়ে দেয় স্বাগতিকদের। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ড দলের মূল শক্তি তাদের বোলিং। ছোট রানের লক্ষ্যও আটকে ফেলার ক্ষমতা আছে বোল্ট-ফার্গুসনদের। তবে নিরপেক্ষ ক্রিকেট সমর্থকেরা একটি বিষয়ে অবশ্যই আনন্দিত হবেন। কারন ২৩ বছর পর তারা পেতে যাচ্ছেন নতুন চ্যাম্পিয়নের দেখা। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার পরে নতুন কোন দল পারেনি ক্রিকেটর আভিজাত্যের এই ক্লাবে প্রবেশ করতে। সেবারই সর্বশেষ নতুন কোন চ্যাম্পিয়ন পেয়েছিল ক্রিকেট। নতুন দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ এসেছিল ২০১৫ বিশ্বকাপে। কিন্তু গতবার ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হেসে খেলে হারিয়েছিল স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। যারা পাঁচটি শিরোপা (১৯৮৭, ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭, ২০১৫) জিতে বিশ্বকাপে সবচেয়ে সফল দল। ভারত (১৯৮৩, ২০১১) জিতেছে দুটি বিশ্বকাপ। এ নিয়ে মোট পাঁচবার বিশ্বকাপ আয়োজন করল ইংল্যান্ড (১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৮৩, ১৯৯৯ ও ২০১৯)। এর আগে তিনবার ফাইনালে (১৯৭৯, ১৯৮৭ ও ১৯৯২) উঠলেও কখনও শিরোপার উচ্ছ¡াসে মেতে উঠতে পারেনি ক্রিকেটের জন্মভূমি।
এখন দেখার বিষয়, ২৭ বছরের আক্ষেপ মিটিয়ে শিরোপা ইংল্যান্ডের ঘরে ওঠে, নাকি গতবারের আফসোস মেটায় নিউজিল্যান্ড। তবে শিরোপাউৎসব উইলিয়ামসন করুন, কিংবা মরগ্যান। ক্রিকেট বিশ্বের কাছ থেকে দুজনই পাবেন ধন্যবাদ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।