নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
সেমিফাইনালের আগমূহুর্ত পর্যন্ত ফেবারিট তত্তে¡র বিশ্লেষণে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার পাল্লাই ছিল ভারী। অথচ গ্রæপ পর্বের শীর্ষে থাকা দল দুটোই বাদ পড়েছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের হারের সমাপ্তিটা লড়াইয়ের মাধ্যমে হলেও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যারন ফিঞ্চের দলের হারটা হয়েছে একপেশে ও হতাশজনক। কিন্তু তাতে বিশ্বসেরা মঞ্চের মাহাত্ব বেড়েছে বৈ কমেনি এক রত্তিও! কেন না, ক্রিকেট বিশ্ব যে পেতে যাচ্ছে তাদের নতুন চ্যাম্পিয়ন, ষষ্ঠ চ্যাম্পিয়ন!
ক্রিকেটের মর্যাদার আসরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা ব্যাতীত কারোরই শিরোপা জয়ের ইতিহাস নেই। এই পাঁচ দলের কেউই নেই এবারের ফাইনালে। সুযোগ এসেছিল ২০১৫ বিশ্বকাপে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডকে সে ফাইনালে হেসেখেলে হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। তাই ১৯৯৬ সালের পর থেকে ২৩ বছর পের ফের একবার পালাবদল হচ্ছে ক্রিকেট সা¤্রাজ্যে, মুকুট উঠছে নতুন রাজার মাথায়। ১৯৭৫ সালে হওয়া বিশ্বকাপের প্রথম আসরের পর থেকে ষষ্ঠ চ্যাম্পিয়নের দেখা পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৪৪ বছর। শিরোপা উঁচিয়ে ধরার ১০ দলের লড়াই এখন ২ দলের। আগামীকাল ভারতকে বিদায় করা নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে বিদায় জানানো ইংল্যান্ড ক্রিকেটতীর্থ লর্ডসে লড়বে শিরোপা নিষ্পত্তির লড়াইয়ে। ক্রিকেটপ্রেমীরা পাবে নতুন চ্যাম্পিয়ন। লিখেছেন
-মো: জাহিদুল ইসলাম
দ্বিতীয় সেমিফাইনালে চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী অস্ট্রেলিয়াকে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে ঠাঁই করে নিয়েছে ইংল্যান্ড। টস জিতে ব্যাটিং করা অজিদের ওকস-আর্চার-রশিদ নৈপুণ্যে সহজেই ২২৩ রানে আটকে দেয় স্বাগতিকরা। জবাবে রয়ের ব্যাটে চড়েই ১০৭ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটের বড় জয় পায় এউইন মরগ্যানের দল। ১৯৯২ সালের পর প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে ক্রিকেটের আবিস্কারক দেশটি। দীর্ঘ ২৭ বছর পর ফাইনালে ওঠায় আনন্দটাও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। ফাইনাল নিশ্চিত করার পর ইংলিশ অধিনায়কের কথায় তাই ফুটে উঠল, ‘যথেষ্ট ভালো লাগছে, খুব ভালো অনুভব করছি। গত তিন ম্যাচের পারফরম্যান্স, আমরা দল হিসেবে ক্রমেই ভালো থেকে আরও ভালো করেছি। এটিই গুরুত্বপূর্ণ। টুর্নামেন্টের আগে আমরা এটিই আলোচনা করেছি যে সেমি-ফাইনাল ও ফাইনালে উঠতে হলে নিজেদের ছাড়িয়ে যেতে হবে প্রতি ম্যাচেই।’ তবে এখনও বিশ্বাসের ঘোর কাটেনি বলেও জানালেন এই অভিজ্ঞ সেনানী, ‘২০১৫ বিশ্বকাপে যেভাবে বিদায় নিয়েছিলাম (বাংলাদেশের কাছে হেরে) তার পর আজকের আগ পর্যন্ত আপনি যদি আমাকে বলেন আমরা ফাইনাল খেলব (এবার), নির্ঘাত আমি হেসে দিতাম। তবে চেষ্টা আর সেরাটা দেবার তাদিগ থাকলে সবই সম্ভব।’
অথচ দুর্দান্ত এই দলই গ্রæপ পর্বে এক সময় পড়েছিলো ছিটকে পড়ার আশঙ্কায়। গ্রæপ পর্বে নিজেদের ৬ষ্ঠ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপ্রত্যাশিত হার। পরের ম্যাচে আবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরে শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল সেমির স্বপ্ন। কিন্তু পরের দুই ম্যাচে ভারত ও নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেয় মরগ্যানবাহিনী। ‘সেমিফাইনালের অজেয়’ দলকে হারিয়ে এখন স্বপ্নপূরণের চূড়ান্ত ধাপে এসে পড়েছে আয়োজক দেশটি। বিশ্বকাপে এর আগেও তিনবার ফাইনালে গিয়েও শিরোপাজয়ের স্বাদ পায়নি ক্রিকেটের আঁতুরঘর দেশটি। এবারের প্রেক্ষাপট অবশ্য ভিন্ন, দুর্দান্ত ইংল্যান্ডের সামনে প্রতিটি প্রতিপক্ষকেই দিতে হয়েছে কঠিন পরীক্ষা। তাই বৈচিত্রময় এই দলটিকে নিয়ে একটু আশা করাই যায়। আইসিসি ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দলটি এবারের আসরে গ্রæপ পর্ব শেষ করেছিল তিনে থেকে।
ফাইনালের পথ পাড়ি দিতে ব্যাটে-বলে সমান পারদর্শীতা দেখিয়েছে দলটি। ওপেনারদের জয়জয়কার হলেও ইংলিশ ব্যাটিংয়ের নেতৃত্ব দিয়েছেন জো রুট। ২টি সেঞ্চুরি ও ৩টি হাফসেঞ্চুরিতে ৬৮ গড়ে ৫৪৯ রান নিয়ে স্বাগতিকদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে দলের এই নির্ভরযোগ্য নাম্বার থ্রি। ওপেনার জনি বেয়ারস্টো ২টি শতক ও সমানসংখ্যক অর্ধশতকে ৪৯৬ রান নিয়ে আছেন তার পরেই। চোট কাটিয়ে দলে ফেরা জেসন রয় একটি সেঞ্চুরি ও ৪টি পঞ্চাশোর্ধ ইনিংসের জোড়ে করেছেন ৪২৬ রান। ইংলিশ দলের অন্যতম কান্ডারি অলরাউন্ডার বেন স্টোকস চারটি অর্ধশত রানের ইনিংস খেলেছেন। তার সংগ্রহ ৩৮১। দলের প্রয়োজনে জ্বলে উঠছেন অধিনায়ক এউইন মরগ্যান নিজেও। তিনি করছেন ৩৬২ রান। একটি করে সেঞ্চুরি ও হাফসেঞ্চুরি আছে তার নামের পাশে। ইনিংসের শেষভাবে দ্রæত রান তোলায় ইংলিশদের ভরসা জস বাটলার। একটি শতক ও অর্ধশতকে ২৫৩ রান তার দখলে। স্টাইকরেট ১৩০.৪১!
বিশ্বকাপের শুরু থেকেই আলোচিত ছিলেন ইংলিশ বোলার জোফরা আর্চার। সেমিফফাইনাল পর্যন্ত ১০ ম্যাচ খেলে ১৯ উইকেট তার দখলে। দলের প্রয়োজনে বিভিন্ন স্পেলে অধিনায়কের আস্থা তিনিই। মাত্র ৪.৬১ ইকোনমি রেটে বল করে গেছেন এই পেসার। উইকেট শিকারে তারপরেই আছেন গতি দিয়ে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করা মার্ক উড। ৯ ম্যাচে প্রতিপক্ষ ১৭ ব্যাটসম্যানকে বিদায় করেছেন তিনি। আর্চারের সঙ্গে জুটি বাঁধা ওকস সেমিফাইনালের সেরা খেলোয়াড়। অজি ব্যাটিং লাইনআপ একাই গুড়িয়ে দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত ১৩ উইকেট আছে তার ঝুলিতে। ইংলিশ পেসারদের ভিড়ে স্বগৌরবে অবস্থান করে নিয়েছেন লেগ স্পিনার আদিল রশিদ। ১১ উইকেট নিয়েছেন তিনি। এছাড়াও লিয়াম প্লাঙ্কেট (৮) ও বেন স্টোকস (৭) দলের প্রয়োজনে যেকোন পরিস্থিতিতে ব্রেক থ্রু এনে দিতে পারেন।
ইংল্যান্ড দলের বর্তমান ফর্মের বিচারে শিরোপা জয়ের অন্যতম দাবিদার তারা। দলটি খেলছেও ভয়ডরহীন ক্রিকেট। কিন্তু তিনবার ফাইনালে গিয়েও শিরোপা জিততে পারেনি দু:ভাগা দলটি। সেমিফাইনালের ম্যাচ দেখে অন্তত মনে হচ্ছে ফাইনাল ভীতি কাজ করছে না ইংলিশ শিবিরে। তবে সুখবরও আছে মরগ্যানের দলের জন্য। সবশেষ দুই আসরে আয়োজক দেশের হাতেই উেিঠছে শিরোপা। ২০১১ বিশ্বকাপে ভারত, ২০১৫ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া। ২০১৯ বিশ্বকাপে কি ইংল্যান্ড?
যেভাবে ফাইনালে
গ্রæপ পর্ব
প্রতিপক্ষ ফল
দক্ষিন আফ্রিকা ১০৪ রানে জয়ী
পাকিস্তান ১৪ রানে হার
বাংলাদেশ ১০৬ রানে জয়ী
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৮ উইকেটে জয়ী
আফগানিস্তান ১৫০ রানে জয়ী
শ্রীলঙ্কা ২০ রানে হার
অস্ট্রেলিয়া ৬৪ রানে হার
ভারত ৩১ রানে জয়ী
নিউজিল্যান্ড ১১৯ রানে জয়ী
সেমিফাইনাল
অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে জয়ী
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।