Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

না ফেরার দেশে সবার প্রিয় অজয় দা

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০১৯, ৮:৩৫ পিএম | আপডেট : ৮:৩৭ পিএম, ১২ জুলাই, ২০১৯

না ফেরার দেশে চলে গেলেন সবার প্রিয় ক্রীড়া সাংবাদিক অজয় দা। বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসজেএ) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, দৈনিক সংবাদের ক্রীড়া সম্পাদক ও বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক অজয় বড়–য়া আর নেই। শুক্রবার ১২ জুলাই বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টা ২০ মিনিটে লন্ডনের সেন্ট বার্টস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্ত্রী, এক পুত্র, দুই কন্যা,নাতি-নাতনী সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অজয় বড়–য়ার মরদেহ বাংলাদেশে আনা হবে।

বয়স সত্তুর পেরুলে কি হবে? বিশ্বকাপ ক্রিকেটের খবর সংগ্রহ করতে ঠিকই ইংল্যান্ড পাড়ি দিয়েছিলেন অজয় বড়–য়া। দেশের প্রাচীনতম জাতীয় পত্রিকা দৈনিক সংবাদের হয়ে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের খবর সংগ্রহের জন্য গত ৩১ মে সস্ত্রীক লন্ডন যান এই বর্ষিয়ান ক্রীড়া সাংবাদিক। বাংলাদেশের প্রথম তিনটি ম্যাচ কাভারও করেন। জুনের শেষ সপ্তাহে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। বড় সন্তান হীমাদ্রি বড়–য়া টুটুলের বাসায় ক’দিন জ্বরে ভোগার পর ২৩ জুন লন্ডনের কিং জর্জ হাসপাতালে ভর্তি হন। নিয়োমোনিয়া, হৃদরোগ ও অন্যান্য জটিলতায় পরে অজয় বড়–য়াকে সেন্ট বার্র্টস হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এই হাসপাতালেই তার হৃদপিন্ডে ঢাকায় স্থাপন করা পেসমাকার খুলে সাময়িকভাবে স্থাপন করা হয়। সফল অস্ত্রোপাচারের পর জ্ঞান ফিরলেও তিনি আর স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরেননি। চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণের মধ্যেই ছিলেন। ৮ জুলাই থেকে তার শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে। ১১ জুলাই সন্ধ্যায় সিটি স্ক্যান রিপোর্টে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের বিষয়টি নিশ্চিত হয় তার পরিবার। এক পর্যায়ে এই হাসপাতালেই পরের দিন লন্ডন সময় রাত ২ টা ২০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অজয় বড়–য়া।

প্রথিতযশা এই বর্ষিয়ান ক্রীড়া সাংবাদিক ১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ সালে চট্টগ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল ও চট্টগ্রাম কলেজে এসএসসি, এইচএসসি শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি অন্যরকম আগ্রহ ছিল অজয় বড়–য়ার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল দলের হয়ে নিয়মিত খেলতে তিনি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে পশ্চিম পাকিস্তান সফর করেন। ক্রীড়াক্ষেত্রে অবদান স্বরুপ বিশ^বিদ্যালয় ব্লু পদকও পান সবার প্রিয় অজয় দা। এক সময় জগন্নাথ হলের ক্রীড়া সম্পাদকও ছিলেন। শুধূ তাই নয়, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ঢাকা আবাহনীর হয়ে ফুটবলও খেলেছেন। ছাত্র জীবনে বাম রাজনীতির (বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন) সাঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন এই ক্রীড়া সাংবাদিক। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে স্বাধীনতার পর সাংবাদিকতায় নিজের ক্যারিয়ার গড়ায় মন দেন। তখন থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ক্রীড়া ও বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করেন। ১৯৭৪ সালে দৈনিক সংবাদে ক্রীড়া প্রতিবেদক হিসেবে যোগদানের পর মৃত্যু অবধি এই পত্রিকার ক্রীড়া সম্পাদক ও ইউনিট চীফ হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। পেশাগত জীবনে তিনি অনেক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট কাভার করেছেন। ১৯৮০ সালে ব্যাংককে যুব এশিয়ান ফুটবল কাভারের মধ্য দিয়ে তার দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট কাভার করা শুরু হয়। ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ডে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। দৈনিক সংবাদের হয়েই ওই বিশ্বকাপ কাভার করেন অজয় বড়–য়া।

ক্রীড়া সাংবাদিক অজয় বড়–য়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বিএসজেএ, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, ফুটবল ফেডারেশন, হকি ফেডারেশন, আরচ্যারি ফেডারেশন, রোলার স্কেটিং ফেডারেশন, ফুটবল ক্লাব অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি ও বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস কমিউনিটি সহ বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অজয় দা
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ