গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে কি লেখা আছে তা বোঝার মতো বয়স অথবা ক্ষমতা হয়তো এই বাচ্চাগুলোর নেই কিন্তু এ ধরনের প্ল্যাকার্ড নিয়ে তাদের দাঁড়িয়ে থাকা সমাজের বর্তমান ভয়াবহতা আমাদের বেশ ভালোই করেই উপলব্ধি করিয়েছে। একটা সময় ছিলো আমরা নারী নির্যাতনের বিপক্ষে এভাবে রাস্তায় দাঁড়াতাম, মানব বন্ধন করতাম, মিছিল করতাম। কিন্তু আমাদের সমাজের অবস্থা এখন এতটাই খারাপ আমাদেরকে এই ছোট ছোট কোমলমতি বাচ্চাদের হাতেও এ ধরনের প্ল্যাকার্ডে দেখতে হচ্ছে।
ছবি গুলো কারিগর ফাউন্ডেশন পরিচালিত সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের স্কুল "আমবাগ পাঠশালা" থেকে সংগ্রহ করা। আজ শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে স্কুলের সামনে ওরা মানববন্ধন করছে। মানুষ নামের কিছু পশুর কাছে এই শিশুরা পর্যন্ত নিরাপদ নয়। ভাবতে পারছেন এর ভয়াবহতা! দিন কে দিন পরিস্থিতি এরকম দাড়াচ্ছে আমরা কাউকেই বিশ্বাস করত্র পারছি না। আমার বলতে খুব লজ্জা ও খারাপ লাগছে যে নিজের আপন পিতার কাছে ধর্ষনের মতো ঘটনাও আজকাল আমাদের দেশে ঘটছে। আমরা আসলে এখন ঠিক কোন অবস্থানে নিজেদের নিয়ে গেছি তা কি একবার ভেবে দেখেছি?
একটা সময় ছিলো এধরনের শিশু নির্যাতনের ঘটনা আমরা আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে দেখতাম। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশেও ব্যাপক হারে তা ছড়িয়ে পরেছে। পত্রিকার পাতা খুললে প্রায় প্রতিদিন এরকম ২-১ টা শিশু নির্যাতনের খবর চোখে পরে। চাচার কাছে শিশু নির্যাতিত, নানার কাছে নির্যাতিত, প্রতিবেশীর কাছে নির্যাতিত। আশে পাশের সব মানুষ গুলোই যতি এরকম নোংরা মানষিকতার হয়ে থাকে তাহলে বিশ্বাস করার আর কেই বা বাকি রইলো। গত ৬ মাসে প্রায় ৮৯৫ জন শিশুকে বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০৪ জন কে নির্মম ভাবে হত্যা করে হয়েছে। ভাবতে পারেন?
ছোট শিশু! যার এখন খেলার কথা, বেণী দুলিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা সেই পিচ্চি মেয়েগুলো হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছে।অনেক কে তো নির্মম ভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। ৬ মাসের শিশু পর্যন্ত আমাদের দেশে নিরাপদ নয়। এই বাংলাদেশের জন্যেই কি মুক্তিযোদ্ধারা জীবন দিয়ে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন? এই দেশ কি তারা দেখতে চেয়েছিলেন?
এই পরিস্থিতি থেকে আসলে পরিত্রাণের উপায় কি?
প্রথমত, আমাদের বিচার ব্যবস্থাকে শতভাগ সচ্ছ রাখতে হবে। বেশীরভাগ সময় দেখা যায় প্রভাবশালীদের ছত্র ছায়ায় অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে যায়। যতদিন না আমরা সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে পারবো ততদিন এ দেশে শিশু নির্যাতন বন্ধ করা যাবে না। ২০১১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৬ টি জেলায় একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে মোট নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে প্রায় ৫ হাজার কিন্তু বিচার কার্যকর হয়েছে মাত্র ৫ জনের।
দ্বিতীয়ত, পর্ণগ্রাফির যে সহজ লভ্যতা তা থেকে আমাদের দূরে সরে আসতে হবে। এ ব্যাপারে বর্তমান সরকারের উদ্যোগ বেশ প্রশংসা জনক৷ এটা অনেকটাই কমিয়ে নিয়ে আশা গেছে।
তৃতীয়ত, টিভি, নাটক, সিনেমায় যৌনতার ছড়াছড়ি। এ ব্যাপার টা বেশ সেনসেটিভ। অনেকেই এই বিষয় টি বেশ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিষয় টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বেশীরভাগ নাটকেই আজকাল গালাগালি ও যৌনতার ছড়াছড়ি। দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
চতুর্থত, সঠিক শিক্ষার অভাব । এখনো আমাদের মা বাবারে তাদের সন্তানদের সাথে এসব নিয়ে কথা বলতে লজ্জিতবোধ করেন। কিন্তু এ শিক্ষাটা বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকেই দেয়া জরুরী।ছোট বেলা থেকেই এ ব্যাপারে আপনার সন্তানকে যদি শিক্ষা দিয়ে গড়ে তুলতে পারেন তাহলে এ অবস্থা থেকে অনেকটাই বেড়িয়ে আসা যাবে। পাশাপাশি আপনার সন্তান কি করছে? কোন বই পড়ছে, কাদের সাথে চলাফেরা করছে এ সব বিষয়ে ধারনা রাখা উচিত।
এবং সর্বশেষ ধর্মীয় শিক্ষা। আপনার সন্তান কে নিজ নিজ ধর্মীয় শিক্ষা অবশ্যই দিতে হবে। কোন ধর্মই কখনো খারাপ কে সমর্থন করে না। কাজেই আপনি যদি আপনার সন্তান কে সঠিক ভাবে ধর্মীয় মূল্যবোধে গড়ে তুলতে পারেন তাহলে এ অবস্থা থেকে মুক্তি সম্ভব।
এই ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর হাতে যখন "আংকেল প্লিজ ডোন্ট রেপ" অথবা "আমাকে চকলেট দিন, মৃত্যু নয়" এর মতো প্ল্যাকার্ড দেখি তখন বেশ খারাপ লাগে, লজ্জিত বোধ হয় নিজের প্রতি।
আমাদের ক্ষমা করিস তোরা, আমরা তোদের জন্য নিরাপদ দেশ উপহার দিতে পারলাম না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।