Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নরসিংদীতে উদ্বেগজনক ধর্ষণের ঘটনা

৬ মাসে শতাধিক

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : | প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

রেকর্ড সংখ্যক নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে নরসিংদীতে। অব্যাহত ধর্ষণের ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ৬ মাসেই সংঘটিত হয়েছে কমবেশি শতাধিক ধর্ষণ। এরমধ্যে সরকারিভাবেই রেকর্ড করা হয়েছে ৮৫ টি ধর্ষণের ঘটনা।

পক্ষান্তরে আসক’র রেকর্ড অনুযায়ী বছরের প্রথম ৬ মাসে সারা দেশে ধর্ষণ হয়েছে ৬৩০ টি। নরসিংদী জেলার মত এত বেশিসংখ্যক নারী ও শিশু ধর্ষণ অন্য কোন জেলায় ঘটেছে বলে জানা যায়নি। গত বছর ২০১৮ সালে নরসিংদীতে ধর্ষণের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৬০টি। চলতি বছর ধর্ষণের হার অনুযায়ী গত বছরের তুলনায় এ বছর আরো বেশি সংখ্যক ধর্ষণের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত ১১ বছরে নরসিংদী জেলায় কমবেশি দুই সহস্রাধিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২০০৮ সালে ২৪টি, ২০০৯ সালে ৪৬টি, ২০১০ সালে ৭৫ টি, ২০১১ সালে ৭৬ টি, ২০১২ সালে ১০৯ টি, ২০১৩ সালে ১২০ টি, ২০১৪ সালে ১৭৬টি, ২০১৫ সালে ১৮০ টি, ২০১৬ সালে ১২৭ টি ,২০১৭ সালে ১৩৬ টি এবং ২০১৮ সালে রেকর্ড করা হয়েছে ১৬০ টি ধর্ষণের ঘটনা। চলতি বছরে ৬ মাসে সংগঠিত ৮৫ টি ধর্ষণ ঘটনার মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৮টি, ফেব্রুয়ারিতে ১০ টি, মার্চে ১৩ টি, এপ্রিলে ১৯ টি, মে ১৫ টি এবং জুনে ২০ ধর্ষণের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এরমধ্যে নরসিংদী সদর ও মাধবদী থানায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বেশি। বহু সংখ্যক ধর্ষণেরই মামলা হচ্ছে না। যে সব মামলা হচ্ছে, তাও সুষ্ঠু তদন্ত হচ্ছে না। থানা থেকে মামলাগুলো আদালত পর্যন্ত আসতে পারছে না। সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তি ও তাদের সন্তানরা এসব ধর্ষণের সাথে জড়িত বিধায় সামাজিক বিচারের নামে মামলাগুলো অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এক শ্রেণীর রাজনৈতিক নেতা, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার এবং সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা পুলিশের উপর প্রভাব খাটিয়ে মামলাগুলো থানা থেকেই নষ্ট করে দিচ্ছে। যা কিছু মামলা আদালতে যাচ্ছে সেগুলোও থেকে যাচ্ছে দুর্বল ও ত্রুটিপূর্ণ। মামলার আলামত, স্বাক্ষী ও চার্জশিটে ত্রুটি থাকায় মামলার প্রসিকিউশন প্রসিকিউশন দুর্বল হয়ে পড়ছে। এর ওপর সাক্ষীর অভাবে বিচার হচ্ছে না। সমাজের প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতাদের ভয় ও বাধার মুখে মামলার সাক্ষীরা আদালতে সাক্ষ্য দিতে সাহস পাচ্ছে না। এই সুযোগে আইনের ফোকর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে ধর্ষকরা।

গত মাসে শিবপুর উপজেলায় সাবিনা নামে এক প্রতিবন্ধী যুবতীকে গলাটিপে হত্যা করে লাশকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এমনিভাবে ৫ বছরের শিশু থেকে ৩০/৩৫ বছরের নারী কেউই ধর্ষণের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের শিকার হচ্ছে কর্মজীবী নারী, স্কুল কলেজের ছাত্রী ও শিশুরা। অব্যাহত ধর্ষণের ঘটনায় নরসিংদী জেলা শহরসহ সকল শ্রেণীর অভিভাবকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। অভিভাবকেরা তাদের মেয়েদেরকে স্কুল-কলেজে পাঠিয়ে সার্বক্ষণিক আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। বিভিন্ন কর্মস্থলেও নারীরা নিরাপত্তা পাচ্ছে না। কর্মস্থলে চাকরি করা, বাড়ি থেকে কর্মস্থলে যাওয়া আসা সব ক্ষেত্রেই নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। স্থানীয় অপরাধ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মাদক সেবন এবং পর্নোছবির ছড়াছড়ির কারণে দিন দিন যৌন সন্ত্রাস বেড়েই চলছে। উঠতি বয়সের ছেলেরা স্মার্টফোনের মাধ্যমে যেখানে সেখানে বসে দিনরাত পর্নোছবি দেখছে। আর ঝুঁকে পড়েছে ধর্ষণের দিকে। এসব বেওয়ারিস লাশের বেশিরভাগই ধর্ষণের শিকার হয়ে নিহত হয়েছে। কিন্তু ধর্ষক ও হত্যাকারীরা ধরা পড়ছে না। লাশ উদ্ধার সুরতহাল রিপোর্ট ও ময়নাতদন্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে এসব ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ