Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

ছুটির দিনে হজ চিকিৎসক দল পরিবর্তন

৫৪ জনকে বাদ দিয়ে নতুন করে ৫৪ জনকে তালিকায় সন্নিবেশ

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ২ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন। আজ মঙ্গলবার ২ জুলাই রাতেই হজ চিকিৎসক দলের সঙ্গী হয়ে সউদী আরব যাাবেন। হঠাৎ করে গতকাল সোমবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে হজ চিকিৎসক দলের তালিকা থেকে ৫৪ জন নার্সকে বাদ দেয়া হয়। অথচ ইতোমধ্যে হজ ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমা দেয়া, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকাদান শেষে সনদ সংগ্রহ এমনকি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামেও অংশগ্রহণ করেছেন তারা। আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠদের হজে যাওয়ার কথা ঘোষণা দিয়ে এমনকি কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়ে পবিত্র হজ পালনে সউদী আরব যাওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেয়া শেষ। কিন্তু আকস্মিকভাবে তালিকা থেকে নাম বাদ দেয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা। অনেকে কান্নাকাটিও করছেন। প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।

এ দিকে নতুন তালিকায় স্থান পাওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নার্স গতকাল ইনকিলাবকে জানান, আমি আজ (সোমবার) জেনেছি তালিকায় নাম আছে। এখন এত অল্প সময়ে কিভাবে সব কিছু সম্পন্ন করব, এ নিয়ে বিপাকে আছি। এমনকি চিকিৎসক দলের সঙ্গী হয়ে হজে যাওয়া হবে কি না, এ নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন।

তিনি আরও জানান, নতুন তালিকার অনেকেই জানেন না, তাদের নাম হজ চিকিৎসক দলে আছে। অপর এক নার্স জানান, আজ (সোমবার) জেনেছি আমার নাম হজ চিকিৎসক দলে রয়েছে। কিন্তু আমার পাসপোর্টের মেয়াদ নেই। এখন কী করব ভেবে পাচ্ছি না। সূত্র মতে, গত শনিবার সরকারি ছুটির দিনে হজ চিকিৎসক টিম থেকে ঘোষিত ৫৪ নার্সের নাম প্রত্যাহার করে নতুন ৫৪ জনের নাম ঘোষণা করে আদেশ জারি করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। গত শনিবার (২৯ জুন) ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (হজ) এস এম মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত হজ চিকিৎসক দল পুনর্গঠনের বিজ্ঞপ্তিতে নার্স/ব্রাদার ৭৫ জনের মধ্যে ১ থেকে ৫৪ নম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপ্রাপ্ত সকল নার্সের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। সেই সঙ্গে নতুন ৫৪ জনের নাম দিয়ে গতকাল সোমবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে তালিকা প্রকাশ করে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন হজ মৌসুমে সউদী আরবে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য ২০৭ সদস্যের মেডিক্যাল টিম ঘোষণা করে গত ২৬ মে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ৯০ জন চিকিৎসক, ৭৫ জন নার্স/ব্রাদার, ৩৪ জন ফার্মাসিস্ট ও ৮ জন স্বাস্থ্য সহকারী/প্যারামেডিকিস ও ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান ছিলেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের একটি স্বার্থান্বেষী গ্রুপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম ভাঙ্গিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ৫৪ জনের একটি তালিকা দিয়ে আগের তালিকা থেকে ৫৪ জনকে বাদ দিয়ে নতুন তালিকাকে হজ টিমে অন্তর্ভুক্তির কথা জানায়। এরই প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দ্রুততার সাথে গত শনিবার (২৯ জুন) ছুটির দিনে নতুন তালিকা ধর্ম মন্ত্রণালয়কে দেয়। ধর্ম মন্ত্রণালয়ও নতুন তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে গতকাল। এতে আগের তালিকায় থাকা ১ থেকে ৫৪ জনের নাম বাদ দিয়ে নতুন করে ৫৪ জনের নামের তালিকা দেয়া হয়।

বাতিল হওয়া তালিকার একাধিক নার্স জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সকল নিয়ম মেনেই তাদেরকে মনোনীত করা হয়। গত ২৩ মে হজ চিকিৎসক টিমে এসব নার্সের নামে সরকারি অর্ডার (জিও) হয়, যা ২৬ মে ধর্ম মন্ত্রণালয় তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। ইতোমধ্যে এসব নার্স হজ ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকাদান শেষে সনদ সংগ্রহ এমনকি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামেও অংশগ্রহণ করেন। প্রথমবারের মতো এ ধরনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া কর্মস্থল থেকে ছুটিও নিয়েছেন। মঙ্গলবার (আজ) সউদী আরবের উদ্দেশে যাত্রার প্রস্তুতি চলছিল। এমন সময় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে নতুন এক তালিকা দিয়ে বলা হয়, হজ চিকিৎসক টিমের নার্স অংশের পুনর্গঠন করা হলো। এ তালিকা দেখার পর সকলের মাথায় হাত।
নার্সরা এটা কিভাবে হলো জানতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করলে তাদেরকে দায়িত্বরতরা জনান, তারা কিছুই বলতে পারবেন না। এই তালিকাই চূড়ান্ত। আর কিছু বলতে পারবেন না।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা জানান, এ ধরনের অমানবিক কাজ কিভাবে সম্ভব। দীর্ঘদিন যাচাই-বাছাই শেষে এই তালিকা করা হয়। একদিন পরই সউদী যাওয়ার কথা, এ সময়ে নার্সদেরকে চিকিৎসক দল থেকে বাদ দেয়া কোনোভাবেই উচিত নয়। এতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। নার্সদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র এ প্রসঙ্গে বলেন, নিয়মানুযায়ী নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদফতর থেকে তালিকা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সেই তালিকা গত ২৩ মে পাঠিয়েছে, যা চূড়ান্তও হয়েছে। সে অনুযায়ী সব ধরনের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। হঠাৎ করে গত ২৯ জুনে একটি তালিকা দেয়া হয়। বলা হয় আগের তালিকা থেকে প্রথম ৫৪ জনকে বাদ দিয়ে নতুন তালিকা পুনর্গঠন করতে। আর সে অনুযায়ী ধর্ম মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিয়েছে।

এ দিকে বাতিল হওয়া ৫৪ জন নার্সের হজ গমন নিয়ে সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছিল। নতুন করে ৫৪ জনের তালিকা পুনর্গঠন করে তাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা নিয়ে বিপাকে পড়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। তাদের মতে, কয়েক মাসে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। এখন অল্প সময়ে নতুন তালিকার প্রস্তুতি কিভাবে সম্পন্ন হবে তা তারা বলতে পারছেন না। এমনকি নতুন তালিকায় থাকা অনেক নার্স এখনো জানেন না, তাদের নাম হজ চিকিৎসক দলে আছে। তাই নতুন দলটির চিকিৎসক দলের সঙ্গী হওয়া নিয়েও জট লেগে আছে।

যদিও সার্বিক বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক ইনকিলাবকে জানান, হজ চিকিৎসক দলে সুযোগ পাওয়া নার্সদের বিরুদ্ধে সঠিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করে তালিকায় আসার অভিযোগ আসে। আর নার্সদের এই অভিযোগের ভিত্তিতেই নতুন করে তালিকা পুনর্গঠন করা হয়েছে। স্বল্প সময়ে তালিকা থেকে নাম বাদ দেয়া এবং নতুন নাম আসা নার্সদের চিকিৎসক দলের সঙ্গী না হওয়ার শঙ্কা প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, সময় কম থাকায় অভিযোগের যাচাই-বাছাই করা সম্ভব হয়নি। তবে নতুন তালিকায় আসা নার্সদের চিকিৎসক দলের সঙ্গে যাওয়া নিয়ে একটু সমস্যা হবে। কারণ সময় কম। তবে দু-একদিন সময় বেশি লাগলেও হাজীদের চিকিৎসাসেবাসহ সব কিছু সঠিকভাবেই হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হজ

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ