বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
বরগুনায় রাস্তায় ফেলে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সময় রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি তাকে বাঁচানোর শত চেষ্টা করেও সফল হননি। মিন্নি ছাড়া কেউ রিফাতকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন। তবে সামাজিক যোগাযোগা মাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি মিশ্র প্রতিক্রিয়া চলছে। কেউ কেউ এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রিফাতের স্ত্রীর সঙ্গে অভিযুক্ত ঘাতক নয়ন বন্ডের সম্পর্ককের দিকটি দায়ী বলে ইঙ্গিত করেছেন। এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন নববধূ মিন্নি।
তিনি বলেছেন, ‘ফেসবুকে আমাকে নিয়ে বিভিন্ন লেখালেখি হচ্ছে বলে আমি শুনেছি। এসব যারা করছে, তারা সন্ত্রাসীদের বাঁচানোর জন্য আমাকে নিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করছেন। এই হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করে এরাও খুনের সঙ্গে জড়িত বলে আমি মনে করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ও এদেশের মানুষের কাছে আমার একটাই দাবি, যারা এমন আজেবাজে কথা বলছে তাদের যেন শাস্তি দেয়া হয়।’
শনিবার রাত ৮টার দিকে বরগুনা পৌর শহরের মাইঠা এলাকায় নিজ বাসভবনে গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন তিনি।
রিফাতকে ভালোবেসে বিয়ে করেছেন জানিয়ে মিন্নি বলেন, ‘আমাদের বিয়ের বয়স দুমাস। কিন্তু দুই-তিন বছর আমাদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। আমরা একজন-আরেকজনকে ভালোবাসতাম। বিষয়টি আমাদের পরিবারকে জানালে দুমাস আগে আমাদের আনুষ্ঠানিক বিয়ে হয়। আমার স্বামীকে সন্ত্রাসীরা চোখের সামনে কুপিয়ে হত্যা করল। ’
নয়ন দীর্ঘদিন ধরে তাকে উত্ত্যক্ত করে আসছেন জানিয়ে মিন্নি বলেন, ‘আমি তো আগেই বলেছি, বিয়ের আগে ও পরে নয়ন আমাকে রাস্তাঘাটে বিরক্ত করতো। জোর করে আমার রিকশায় ওঠতো। আমার সঙ্গে ছবি তুলতো।’
এসব জেনেও যারা রিফাত হত্যায় নয়ন-মিন্নির কথিত সম্পর্ককে দায়ী করছেন সেসব ফেসবুকে স্ট্যাটাসকারীদের উদ্দেশে স্বামীহারা এই গৃহবধূ বলেন, ‘ভাই, আপনারা এসব বাদ দিয়ে একটু খুনিদের ধরতে সহযোগিতা করুন।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুক্রবার বিকালে বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা সাংবাদিকদের জানানোর কথা ছিল। কিন্তু অসুস্থতার কারণে আমি প্রেসক্লাবে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে পারিনি।’
নৃশংস এই হত্যকাণ্ডে জড়িত সবার ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি।
প্রসঙ্গত,নিহত রিফাত শরীফের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ৬নং বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামে। তার বাবার নাম আ. হালিম দুলাল শরীফ। মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন রিফাত।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রী মিন্নিকে বরগুনা সরকারি কলেজে নিয়ে যান রিফাত। কলেজ থেকে ফেরার পথে মূল ফটকে নয়ন, রিফাত ফরাজীসহ আরও দুই যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালান। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন তারা। রিফাত শরীফের স্ত্রী মিন্নি দুর্বৃত্তদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই হামলাকারীদের থামানো যায়নি। তারা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যান। পরে স্থানীয় লোকজন রিফাত শরীফকে গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে রিফাত শরীফের মৃত্যু হয়।
নিহতের পরিবার জানায়, রিফাতকে কুপিয়ে হত্যায় অংশ নেয় নয়ন বন্ডসহ ৪-৫ জন। রিফাতের সঙ্গে দুই মাস আগে পুলিশলাইন সড়কের আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির বিয়ে হয়। বিয়ের পর নয়ন মিন্নিকে তার প্রেমিকা দাবি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর পোস্ট দিতে থাকেন।
রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, নয়ন প্রতিনিয়ত আমার পুত্রবধূকে উত্ত্যক্ত করত এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর পোস্ট দিত। এর প্রতিবাদ করায় আমার ছেলেকে নয়ন তার দলবল নিয়ে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।
এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় এখন পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে মূল আসামি নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।