পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উন্নয়ন মানে যেমন রেল তেমনি লোকসানের তালিকায়ও আছে রেল। গত ১০ বছরে সরকার রেলওয়েতে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করেছে। বরাদ্দের পরও প্রতি বছর রেলওয়েতে ভর্তুকি বাড়ছেই। তারপরেও কাঙ্খিত সেবা দিতে পারছে না রেল। শিডিউল বিপর্যয়, চলন্ত পথে ইঞ্জিন বিকল হওয়া, টিকিট কালোবাজারি, হকারদের উৎপাতসহ নানা কারণে ট্রেনভ্রমণে যাত্রীদের ভোগান্তি নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এসবের প্রেক্ষিতে রেলওয়ের যাত্রী পরিবহনে বেশকিছু সমস্যা চিহ্নিত করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। স¤প্রতি এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন লেপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে পরিবহন খাতে বিদ্যমান সমস্যা ও উহা দূরীকরণে করণীয় প্রসঙ্গে একটি বিশেষ প্রতিবেদন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে যাত্রী পরিবহনে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে রেলওয়ের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় রেলওয়ে একটি ভঙ্গুর যাত্রীসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রেলওয়ের উন্নয়নে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও সংস্থাটি এখনও সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কাঙ্খিত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি। বিশেষ করে জনবল সংকট, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম, দুর্নীতি আর দূরদর্শিতার অভাবে রেলওয়ের বিবর্ণ চিত্র দিনকে দিন প্রকট আকার ধারণ করেছে। একমাত্র ভুক্তভোগীরাই বলতে পারবে বাংলাদেশ রেলওয়ের বর্তমান বেহাল দশার কথা। রেলওয়ের যাত্রী পরিবহনে বেশকিছু সমস্যা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিবহন খাতে বেহাল অবস্থা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। রেলের একটি সাধারণ বগির অতিপরিচিত দৃশ্য হচ্ছে জানালা নেই, দরজা ভাঙা, বিকল ফ্যান, বেহাল অবস্থা বাথরুমের। বেশিরভাগ বগিই থাকে অন্ধকারে নিমজ্জিত। পথে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ট্রেন। অতিরিক্ত হকারের চাপ, পকেটমারদের দৌরাত্ম্য, খাবার গাড়ি নিয়ে সিন্ডিকেট ব্যবস্থা, টিকিট কালোবাজারি, অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ, পুরোনো বগি দিয়ে কোনো রকমে কাজ চালিয়ে নেওয়া ও মেরামত না করা প্রভৃতি নানা সমস্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে আর ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ যাত্রীরা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শিডিউল মেনে না চলা, যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে যথাযথ দৃষ্টি না দেওয়া, কোচ অর্থাৎ বগিগুলোর দুরবস্থা, সিংহভাগ ইঞ্জিনের আয়ু ক্ষয়ে যাওয়া, সংশ্লিষ্ট একটি দুষ্টচক্রের দুর্নীতি-স্বেচ্ছাচারিতা প্রভৃতি কারণে রেলের অবস্থা ক্রমেই শোচনীয় হয়ে পড়েছে। যাত্রীচাহিদার কারণে মেরামতের মাধ্যমে মেয়াদোত্তীর্ণ যাত্রীবাহী কোচগুলো ব্যবহার করা হলেও এগুলো মোটেই সুবিধাজনক ও নিরাপদ নয়। বছরের পর বছর অবহেলা, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব আর সময়ের চাহিদা অনুযায়ী উন্নয়নের উদ্যোগ না নেওয়ায় রেলের আজকের এই দুরবস্থা। বর্তমান সরকার টানা দুই মেয়াদে এ খাতের সংস্কারে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে; তবে আরও সংস্কার প্রয়োজন মর্মে প্রতীয়মান হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কমলাপুর স্টেশন থেকে দূরদূরান্তে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনের ইঞ্জিন প্রায়ই বিকল হয়ে পড়ে। এতে ওই ট্রেনের নারী-পুরুষ ও শিশুসহ হাজার হাজার যাত্রীকে পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে। অনেক চেষ্টার পর প্রকৌশলীরা ইঞ্জিন সচল করতে প্রায়ই ব্যর্থ হন। ইঞ্জিন পরিবর্তন করে এক থেকে দু’ঘণ্টা, কখনও কখনও তার চেয়েও বেশি বিলম্বে ছেড়ে যায় গন্তব্যের উদ্দেশে। এমন অবস্থা চলছে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-দিনাজপুর রুটসহ অধিকাংশ রুটে।
বিএনপির শাসনামলে রেলওয়ের সংকোচননীতির সমালোচনার পাশাপাশি বর্তমান সরকারের মেয়াদেও এ খাতে অপরিকল্পিত বিনিয়োগের উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, বিপুল অর্থ ব্যয় করে চীন থেকে ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট বা ডেমু ট্রেন আমদানি করা হয়েছিল আমাদের বিদ্যমান বাস্তবতা কিংবা প্রেক্ষাপট বিবেচনা না করেই। মাত্র সাড়ে চার বছরেই আমদানি করা এসব ডেমুর প্রায় সবই অচল হয়ে পড়েছে, যার মধ্যে পুরোপুরি অকেজো হয়ে গেছে সাতটি। এসব মেরামতের দক্ষতা কিংবা কারখানা আমাদের নেই। অথচ এগুলো আমদানি করা হয়েছিল এসব বিবেচনা না করেই।
রেলের ওয়ার্কশপগুলোর করুণ চিত্রের বর্ণনা উঠে আসে প্রতিবেদনে। এ প্রসঙ্গে বলা হয়, বাংলাদেশ রেলওয়ের কোচ বা বগিগুলোর দিকে দৃষ্টি দিলে রেলের সার্বিক অব্যবস্থাপনা, আন্তরিকতার অভাব এবং সেবার নিম্নমানের চিত্র ফুটে ওঠে। বাংলাদেশ রেলওয়ের নতুন কিছু আমদানি করা ব্যতীত প্রায় সব বগি বা কোচ পুরোনো ও জরাজীর্ণ। অথচ রেলের জন্য চট্টগ্রাম ও সৈয়দপুরে দুটি ওয়ার্কশপ রয়েছে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওয়ার্কশপগুলো বর্তমানে বন্ধ হওয়ার উপক্রম। রেলের কোনো যন্ত্রাংশ সেখানে এখন মেরামত হয় না। সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে রেলের নিম্নমানের যন্ত্রাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়, যা অল্প কিছুদিন পর আবার নষ্ট হয়ে যায়। অথচ ওয়ার্কশপে যদি এসব মেরামত হতো তাহলে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রাও বেঁচে যেত এবং কাজও অনেক শক্ত বা দীর্ঘস্থায়ী হতো। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে রেলের দুটি ওয়ার্কশপে এখন আর কোনো কাজ হয় না। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী দেশে রেল ওয়ার্কশপের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।
রেলের লোকসানের বিষয়ে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, সেবার নিম্নমানসহ বিভিন্ন সমস্যা থাকার পরও রেলে যাত্রীসংখ্যা কখনও কম হয় না। বরং প্রতিদিনই প্রতি কোচে ভিড় পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ সিটসংখ্যার চেয়ে বেশি যাত্রী গমন করে থাকে। ঈদসহ বিভিন্ন উৎসব ও ছুটিতেও রেলের টিকিট নেওয়ার জন্য রীতিমতো দু-একদিন মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে এবং রেল তিনগুণ/চারগুন যাত্রী পরিবহন করে থাকে। কিন্তু প্রতিবছর রেলওয়ে খাতে সরকারের বিপুল অঙ্কের টাকা ক্ষতি হয়ে থাকে। যেখানে এই খাত থেকে আয় হওয়ার কথা, সেখানে উল্টো বিপুল অঙ্কের টাকা ক্ষতি হচ্ছে। সুতরাং এ বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন মর্মে প্রতীয়মান হয়।
উল্লিখিত সমস্যাগুলোর বাইরে টিকেট কালোবাজারি, খাবার গাড়ি নিয়ে সিন্ডিকেট ব্যবসা, অনুমোদনহীন হকার সমস্যা, পকেটমার, টয়লেট সমস্যা, টিকিট চেকারদের দ্বারা যাত্রীদের অহেতুক হয়রানির বিস্তারিত প্রতিবেদনটিতে উঠে এসেছে। এছাড়া রেলের প্রচুর জায়গাজমি দিন দিন বেদখল হয়ে যাওয়ার বিষয়েও বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে রেলের সেবার মানোন্নয়নে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, উন্নতমানের কোচ ক্রয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করা; বিদ্যমান কোচগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা; ট্রেনের বাতি, ফ্যান, জানালা অতি দ্রুত মেরামত ও পুনঃস্থাপন করা, কোচের বাইর ও ভিতর সীটসহ পরিবেশ আধুনিকায়ন, পরিত্যক্ত ও অপদখলকৃত জমি উদ্ধার করে সুষ্ঠুভাবে রক্ষণাবেক্ষণ, প্রতিটি কোচে একজন করে অ্যাটেনডেন্ট রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং টিকেট কালোবাজারী রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।
এছাড়া, রেলের নিয়ন্ত্রণকারী প্রশাসন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। পাশাপাশি রেলের দুর্নীতি, অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা চিহ্নিত করে রেলের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এ বিষয়ে অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন এবং একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করে সে মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।