Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বনানীর অফিস থেকে আর কে মিশন রোড

রে জাউ ল ক রি ম রা জু । | প্রকাশের সময় : ২৭ জুন, ২০১৯, ১২:৩৭ এএম

বনানীর ক্যাম্প অফিস থেকে আর কে মিশন রোড। যেন খুব দ্রুতই পেরিয়ে গেল তেত্রিশটা ব্ছর। এর মাঝে হয়ে গেছে অনেক উত্থান- পতন। আনন্দ-বেদনা আর না ফেরার দেশে চলে যাবার মতো হৃদয়ে রক্তক্ষরণের ঘটনা। বলছিলাম দৈনিক ইনকিলাবের কথা। দেশের সংবাদপত্র জগতে ধূমকেতুর মতো উদয় হলেও হারিয়ে যায়নি। শত ঘাত-প্রতিঘাত সয়ে নক্ষত্রের মতো জ্বল জ্বল করছে। অবিচল রয়েছে দেশ ও জনগণের পাশে থাকার অঙ্গীকার নিয়ে। তিন দশকের বেশি সময় ধরে চলার পথটি সব সময় মসৃণ ছিল না। প্রবাদ রয়েছে ‘উচিত কথা বললে কুটুম বেজার হয়’। সত্য ও নির্ভীকভাবে পথ চলতে গিয়ে বড় কুটুম ছোট কুটুম যাদের স্বার্থে যেখানে আঘাত লেগেছে তারাই বেজার হয়ে পথ চলা রোধ করতে পদে পদে কাঁটা বিছিয়েছে। প্রধান ফটক বন্ধ করেছে। যন্ত্রপাতি খুলেছে। নির্ভীক সম্পাদককে মধ্যরাতে উচ্চ আদালতে জামিন নিতে হয়েছে। 

এমনি অনেক ঘটনা ঘটে গেছে এ দীর্ঘ সময় পথ চলতে। ক্ষণিকের জন্য পথ চলা বন্ধ করলেও অপমৃত্যু ঘটাতে পারেনি।
কারণ এর বড় শক্তি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অসীম রহমত। হাজারো পীর- মাশায়েখ, ওলি-আউলিয়ার দোয়া সর্বোপরি সাধারণ মানুষের আকুণ্ঠ ভালোবাসায় এর পথ চলা রুখতে পারেনি। আর পারবেও না। কারণ নামটি যে ইনকিলাব। মানে বিপ্লব। নামের যথার্থতা বজায় রেখেছে জন্ম থেকেই। কোনো বিপ্লব এমনি এমনি সাফল্য অর্জন করে না। অনেক চড়াই উৎরাই পেরুতে হয়। দৈনিক ইনকিলাবও এর ব্যতিক্রম নয়।
১৯৮৬ সালের ৪ জুন দৈনিক ইনকিলাবের পথ চলা শুরু হয়। এর আগে বনানীর ক্যাম্প অফিসে চলে প্রস্তুতি। ইনকিলাবের প্রধান কান্ডারী হযরত মওলানা এম এ মান্নান (রহ:) একঝাঁক নবীন-প্রবীণ গণমাধ্যমকর্মী আর তার সুযোগ্য সন্তানকে সাথে নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। সম্পাদকের গুরুদায়িত্ব দেন বয়সে তরুণ তার বড় সন্তান এ এম এম বাহাউদ্দীনকে। সবার অক্লান্ত পরিশ্রমে অল্প সময়ের মধ্যে পাঠকের মধ্যে স্থান করে নেয়। অকল্পনীয় গতিতে বাড়ে সার্কুলেশন। এর পেছনে মাদ্রাসাশিক্ষকদের অবদান কম নয়। ইসলামের পক্ষে কথা বলার মূখপত্র পেয়ে তারাও এগিয়ে আসেন গ্রাহক হতে। পৌঁছে যায় একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে। দৈনিক ইনকিলাব প্রকাশের সময় যারা নাক সিটকিয়েছিলেন বিরূপ করেছিলেন তাদের উঁচু নাক ভোঁতা হয়ে যায়। ইনকিলাব এগিয়ে চলে। বনানীর ক্যাম্প অফিস থেকে আর কে মিশন রোডের নিজস্ব ঠিকানায় চলে আসে। এখান থেকেই তার পথ চলা অব্যাহত রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাবের সাথে আমার যোগসূত্র ঘটে শুরুতেই। তখন ডামি ইস্যু বের হয়। আমার দীর্ঘদিনের পরিচিত মিনহাজ ভাইয়ের আমন্ত্রণে বনানীর অফিসে যাই। দেখি পত্রিকা প্রকাশের বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। উৎসাহ দেন তাদের সাথে শামিল হবার। তখন আমি দৈনিক আজাদের সংবাদদাতা। যদিও আমার হাতে খড়ি ১৯৭৮ সালে রাজশাহীর একমাত্র পত্রিকা সাপ্তাহিক রাজশাহী বার্তায়। একপর্যায়ে সংবাদপত্র নেশার মতো হয়ে যায়। দৈনিক ইনকিলাবে সংবাদ পাঠাতে থাকি। যদিও তখন সংবাদ পাঠানো এখনকার মতো সহজ ছিল না। টেলিফোন আর টেলিগ্রাফ অফিসের টরে টক্কা ভরসা। লাইন পাওয়া সহজ ছিল না। জরুরি খবর টেলিফোনে আর অন্যগুলো ডাকযোগে। অতঃপর ১৯৮৭ সালে রাজশাহী জেলা সংবাদদাতা হিসেবে নিয়োগপত্র আর পরিচয়পত্র পেলাম (যা আজো সযতেœ রেখেছি)। সে এক অন্যরকম অনুভ‚তি। এর মাঝে একদিন মুখোমুখি হয়েছিলাম সম্মানীত সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীনের। সুর্দশন তারুণ্যে ভরা টগবগে এক মানুষ। অসাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। তার সাথে মুখোমুখি হবার পর আরেকটি মুখ স্মৃতিতে ভাসছিল। ১৯৮০ সাল তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। কানাডা ওয়ার্ল্ড ইয়ুথের একটা স্কলারুশপে বাংলাদেশ থেকে ১৬ জন ছয় মাসের একটা কর্মসূচিতে কানাডা গিয়েছিলাম। তখন সাংবাদিকতা করতাম। তরুণ সাংবাদিক জেনে সেখানকার দি মিরর পত্রিকার সম্পাদক আমার একটা সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন, যা প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছিল। সেখানে পরিচয় ছিল সাংবাদিক। এবার আরেকজন সম্পাদকের মুখোমুখি। অনেক দিকনির্দেশনা দিলেন।
মওলানা এম এ মান্নান দৈনিক ইনকিলাবে প্রবীণ আর নবীনের সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন। যেমন তরুণ সম্পাদক দিয়েছেন। তেমনি দেশজুড়ে প্রতিনিধি হিসেবে তারুণ্যের প্রাধান্য দিয়েছিলেন। কারণ হয়তো ছিল প্রবীনের বুদ্ধিমত্তা আর তারুণ্যের শক্তিতে সংবাদপত্র জগতে বিপ্লব ঘটাতে চেয়েছিলেন। যাতে সফলও হয়েছিলেন। ইনকিলাব ভবনে অনেক বরেণ্য সাংবাদিকের সমাগম ঘটেছিল। যাদের অনেকের সান্নিধ্য পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করেছি। ইনকিলাব সত্যি সত্যি বিপ্লব হয়ে এসেছিল সংবাদপত্র জগতে। প্রথমেই বিভাগীয় শহরগুলোয় ইনকিলাবের সুসজ্জিত অফিস স্থাপন করে। আধুনিক প্রযুক্তি ফ্যাক্সের ব্যবহার সবে বাংলাদেশে শুরু হয়েছে। দামও আকাশছোঁয়া। তারপর ইনকিলাব ভবন তো বটে অফিসগুলোয় ফ্যাক্স স্থাপন করে সবাইকে চমকে দেয়া হয়। রাজশাহীর প্রথম ফ্যাক্স ইনকিলাবের। এর ব্যবহার দেখার জন্য অনেকে আসতেন। খবর ছবি কিভাবে দ্রæত চলে যাচ্ছে দেখতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আসতেন বিদেশে তাদের শিক্ষা সংক্রান্ত জরুরি ডকুমেন্ট আদান- প্রদানের জন্য অনুরোধ নিয়ে। রাজশাহীতে আন্তর্জাতিক টেনিস টুর্নামেন্টের খবর বিদেশে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করতেন। সৌজন্যের খাতিরে তাদের কিছু অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারিনি। ফ্যাক্স প্রসঙ্গে লেখার সময় মনে পড়ছে এডিটরের পিএ নুরুল ইসলাম নুরুর কথা। ফ্যাক্স ছিল সম্পাদক সাহেবের রুমে। অফিসগুলো থেকে খবর নিয়ে তা সম্পাদক সাহেবকে দেখানোর পর বার্তা বিভাগে যেত। রাজশাহী থেকে ফ্যাক্সে সংযোগ পেতে বিড়ন্বনা হতো বলে ঢাকা থেকে প্রতিদিন নুরু রিং করে ফ্যাক্সের মাধ্যমে খবর নিত। তার সাথে ছোট ভাইয়ের মতো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে বিভাগীয় শহরের বাইরেও অফিস করা হয়, যা দেখে অন্য অনেক পত্রিকা অফিস স্থাপন করে। সম্পাদক সাহেব ইনকিলাবের অফিসগুলোকে নার্সিং করে পিলার হিসেবে গড়ে তোলেন। এখানকার দায়িত্বরত সাংবাদিকদের গড়ে তোলেন অল রাউন্ডার হিসেবে। সামাজিক রাজনৈতিক উন্নয়ন দুর্নীতি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য অর্থনীতি জলবায়ু ফসলের মাঠের অবস্থা খেলাধুলা সব বিষয়ে রিপোর্ট করার জন্য নির্দেশনা দিতেন। আমাদের অবস্থা ছিল জুতো সেলাই থেকে চন্ডী পাঠের মতো। এতে করে আমরা সমৃদ্ধ হয়েছিলাম। অনেকে অলরাউন্ডার হয়েছিলেন। যদিও আমি আজ পর্যন্ত সেঞ্চুরি করতে পারিনি। একজন ভালো সাংবাদিক বা লেখক হতে পরিনি। এটা আমার দুর্ভাগ্য। তাছাড়া সবাই তো আর সব কিছু হতে পারে না। তবে ভালো সাংবাদিক হতে না পারলেও পেয়েছি মানুষের ভালোবাসা আর সম্মান, যা কোনো কিছু দিয়ে মূল্যায়িত করা যাবে না। ইনকিলাবের কারণে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নে, সিটি প্রেসক্লাব, সাংবাদিক কল্যাণ তহবিলের মতো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখতে পেরেছি। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাচিত সহকারী মহাসচিব ও সহ-সভাপতি হিসেবে বেশ কয়েক দফা দায়িত্ব পালন করেছি। এ সময় ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলার সাংবাদিক বন্ধুদের সান্নিধ্য পেয়েছি। প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে দু’জন সাবেক বিচারপতির আবু সাঈদ চৌধুরী ও এবাদত হোসেনসহ বরেণ্য ব্যক্তিদের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি, যা আমাকে ধন্য করেছে।
মাওলানা মান্নান হুজুর আমাকে বেশ স্নেহ করতেন। প্রায়ই রাত এগারোটা-সাড়ে এগারোটার মধ্যে ইনকিলাব ভবন থেকে বাড়ি যাবার আগে ফোন দিতেন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোঁজখবর নিতেন। আমার চাচা এমরান আলী সরকার ও তিনি একই মন্ত্রিসভায় ছিলেন। চাচার খবরাখবরও জিজ্ঞেস করতেন। জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য বার তিনেক রাজশাহী এসেছিলেন। খুব কাছাকাছি ছিলাম। রাজশাহী সার্কিট হাউজে অবস্থানকালে ইনকিলাব প্রকাশ সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন আমি যখন চাঁদপুর থেকে নৌকায় নদী পেরিয়ে ঢাকায় আসতাম দেখতাম ঢেউ আর স্রোতের বিপরীতে কিভাবে মাঝি নদী পাড়ি দিচ্ছে। এর মধ্যে একটা রোমাঞ্চ কাজ করত। উপদেশ দিয়েছিলেন গড্ডালিকা প্রবাহে গা না ভাসিয়ে সত্যের মুখোমুখি দাঁড়াবার। যত প্রতিক‚ল অবস্থা হোক সত্যকে ধারণ করতে হবে। লিখতে গিয়ে বার বার তার চেহারা ভেসে উঠছে। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুন।
তার সুযোগ্য সন্তান সম্পাদক এ এম্ এম বাহাউদ্দীন দেশের আর পাঁচ-দশটা সম্পাদকের মতো নন। শত শত কোটি টাকা আয়ের সুযোগ থাকলেও সেদিকে কখনো ফিরে তাকাননি। অথচ তার সরলতা ভদ্রতা আর বিশ্বাসকে পুঁজি করে সান্নিধ্যে থেকে অনেকেই বিপুল পরিমাণ বিত্তবৈভব অর্জন করে সরে পড়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে কঠোর আবার কোমলতায় ভরা মন। তার ব্যক্তিত্বে কঠোরতা আর কোমলতার ছাপ সুস্পষ্ট। কখনো ওপরটা আখরোটের মতো হলেও ভেতরটা রসালো আমের মতো।
ঢাকার বাইরের অফিসগুলোর প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি অন্যরকম। সব পরিবারের সাথে তার যেন আত্মার বন্ধন। প্রত্যেকের সন্তানকে তার নিজ সন্তানের মতো স্নেহ করেন। বছরে একবার সকলের পরিবার পরিজন নিয়ে কক্সবাজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে সাথে নিয়ে আনন্দ করেন। তৃণমূল পর্যায়ের প্রতিনিধিদের একেবারে কাছাকাছি যাবার জন্য অফিসভুক্ত এলাকায় প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন। তাদের কথা শোনেন পরামর্শ দেন। সবাইকে আপন করে নেবার এমন ব্যাপারটি অন্য কোনো পত্রিকায় আছে কি না আমার জানা নেই। আমাদের নিয়ে কক্সবাজার জাফলং কিংবা সিলেটের টিলা ভ্রমণ অনেকের কাছে ঈর্ষণীয় বটে। আমাদের সন্তানদের বিয়ে-শাদীর মতো অনুষ্ঠানে অনেক ব্যস্ততার মাঝেও হাজির হয়ে অভিভাবকের মতো দায়িত্ব পালন করেন। আমাদের নাড়ি-নক্ষত্র তার নখদর্পণে। আমরাও তার আত্মার জালে জড়িয়ে পড়েছি।
ইনকিলাবের সহকারী সম্পাদক প্রিয়ভাজন মুন্সি আব্দুল মাননান বর্ষপূর্তি সংখ্যায় লেখা দেয়ার কথা বলেন। সবিনয়ে বলেছিলাম আমাকে দিয়ে হয় না। তিনি বলেছিলেন আপনার এলাকার ভালো ভালো রিপোর্টগুলো নিয়ে একটা লেখা দেন। লিখতে বসে ধান ভানতে নিজের গীত গেয়ে বসলাম।
তবে এ অঞ্চলের উন্নয়নে মোটা দাগে দৈনিক ইনকিলাবের বিশাল অবদান রয়েছে। মনে পড়ে কৃষিপ্রধান এ অঞ্চলের অন্যতম সেচ প্রকল্প বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে কম ষড়যন্ত্র হয়নি। প্রকল্পের প্রাণপুরুষ প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান আসাদকে সঙ্গে নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন বরেন্দ্রের এ প্রান্ত হতে ও প্রান্তে। সরেজমিন প্রকল্পের সম্ভাবনা নিয়ে রিপোর্ট হয়েছে বহু। সবশেষে বিরোধীরা টিকতে পারেনি। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক নিয়ে ষড়যন্ত্র কম ছিল না। এ অঞ্চলে স্বতন্ত্র একটা ব্যাংক মহল বিশেষ মেনে নিতে পারেনি। নেপথ্যে ষড়যন্ত্রকারী মহল ছিল তৎপর। ব্যাংক কর্মকর্তারা বহুদিন অফিস আর বাসায় এসেছেন ফাইলপত্র নিয়ে। এ নিয়ে অনেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। রণভঙ্গ দিয়েছে ষড়যন্ত্রকারীরা। এসব ক্ষেত্রে বেশ ক’টি পত্রিকা তাদের সঙ্গী হয়েছিল। কিন্তু ইনকিলাবের কাছে টিকতে পারেনি। ফারাক্কার প্রভাবে এ অঞ্চলে মরুময়তার দিকে ধাবিত হয়। পদ্মা নদী মরে যায়। পরিবেশ হয়ে ওঠে চরম ভাবাপন্ন। অথচ সহযোগী অনেক গণমাধ্যম ছিল নীরব। ভারত আর ফারাক্কার নাম নিতে তাদের অবস্থা ছিল ভাসুরের নাম নিতে বারণ। ইনকিলাব বছরের পর বছর ধরে ফারাক্কার বিরূপ প্রভাব গজলডোবায় তিস্তার মরণ দশা, জিকে সেচ প্রকল্প আর তিস্তা ব্যারাজ। শাখা নদ-নদী নিয়ে অসংখ্য প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এখনো করছে। ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এ দেশের মাটি মানুষের পক্ষে সোচ্চার রয়েছে। ভাসানীর ফারাক্কা লংমার্চের কথা প্রায় ভূলে গেলেও ইনকিলাব মনে রেখেছে। প্রতি বছর দিনটিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করে স্মরণ করিয়ে দেয়। কৃষিপ্রধান এ অঞ্চলের ধান আম পান লিচু শাকসবব্জি উৎপাদনে সম্ভাবনা আর সমস্যা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ অব্যাহত রেখেছে। একেবারে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকের সুখ-দুঃখের কথা। তাদের চাওয়া-পাওয়া সব তুলে ধরেছে। ধান আর আম এ নিয়ে এ অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতি আবর্তিত। সেসব বিষয়ে প্রতিবেদন অব্যাহত রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে প্রতিনিয়ত সজাগ রয়েছেন পত্রিকার কান্ডারী সম্পাদক সাহেব। ঘুরে ঘুরে সবাইকে দিয়ে এসব বিষয়ে রিপোর্ট করান। আমরা মিস করলেও তিনি মিস করেন না।
এই ইনকিলাব রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেক নেতার জন্ম দিয়েছে। ঘষে মেজে জিরো থেকে হিরো বানিয়েছে। মন্ত্রী-মেয়র-এমপি এমনকি জাতীয় পর্যায়ে বাঘা বাঘা নেতা হয়েছে। ইনকিলাবে কাভারেজ পাবার জন্য অনেকে মুখিয়ে থাকতেন। ইনকিলাব অফিসে একবার না এলে পেটের ভাত হজম হতো না। রমজান মাসের ইফতার পার্টিতে মন্ত্রী-মেয়র-এমপি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নগরীর বিশিষ্টজনরা উপস্থিত থাকতেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ অনেক গুণীজন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আসতেন। কেউ কেউ লেখা দিতেন। বিশেষ করে বিশিষ্ট কলাম লেখক ও অধ্যাপক এবনে গোলাম সামাদ প্রায় প্রতিদিন আসতেন। লেখা দিতেন। তার বহু লেখা ছাপানো হয়েছে। গুণী এই মানুষটির সান্নিধ্য পেয়েছিলাম। একপর্যায়ে তিনি আমাকে তার পরিবারের একজন ভাবতেন। বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে আলোচনা হতো। আমরা আলোকিত হতাম।
ইনকিলাব আমার পেশার জগত হলেও আরেকটি নেশা আমার রয়ে গেছে। আর্তমানবতার সেবায় কিছু করার জন্য মনটা সব সময় আকুলি-বিকুলি করে। বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সাথে জড়িয়ে রয়েছি ত্রিশ দশক ধরে। সর্বোচ্চ পরিষদে নির্বাচিত হয়ে দশ বছর ছিলাম। এ সুবাদে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, আইলা, সিডর, রোহিঙ্গা ক্যাম্প সর্বত্র ছুটে যাবার সুযোগ হয়েছে। পাশে দাঁড়িয়েছি ত্রাণ নিয়ে। শীত গ্রীষ্ম বর্ষা সব মওসুমেই দুর্যোগকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করি। নিজের সক্ষমতা না থাকলেও আল্লাহপাক এ দু’হাত দিয়ে লাখো মানুষের মাঝে কম্বল, খাবারসহ বিভিন্ন সামগ্রী দেয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। হাজারো শোকরিয়া তার দরবারে। স্বার্থপরের মতো ত্রাণ নিতে আসা মানুষগুলোর কাছে দোয়া চেয়েছি। আশা যদি এদের কারো দোয়ার বরকতে আল্লাহপাক তার এ পাপী বান্দাকে যেন মাফ করে দেন। আরেকটা নেশা মানুষের রক্ত। যার রক্তের প্রয়োজন সেই বোঝেন এর মর্ম। এক ব্যাগ রক্তের জন্য কত আকুতি। বিশেষ করে ক্যান্সার হেমোফেলিয়া কিডনি ডায়ালাইসিস, থ্যালাসেমিয়া রোগীর। এসব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য একটা ব্ল্যাড ব্যাংকের স্বপ্ন ছিল। আল্লাহ তা পূরণ করেছেন। চেষ্টা করছি প্রয়োজনের সময় রক্ত নিয়ে ঐসব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। ইনকিলাব আমার পেশা আর রেডক্রিসেন্ট আমার নেশা। অন্য সব প্রতিষ্ঠান থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি। পেশা আর নেশা নিয়ে আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি। শোকর আলহামদুলিল্লাহ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন