তৌহিদবাদীরাই ভারতের আদিবাসী
হিন্দ অঞ্চলে যত লোক বসবাস করে তারাই হিন্দী বা হিন্দু। ফারসী ও তুর্কীতে হিন্দুস্তান। আরবীতে
২০২০ টোকিও অলিম্পিক গেমসে এবার বাংলাদেশের স্বপ্ন আরচ্যার রোমান সানা। লাল-সবুজদের দ্বিতীয় ক্রীড়াবিদ হিসেবে তিনি সরাসরি অলিম্পিক গেমসে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। নেদারল্যান্ডসে সদ্য সমাপ্ত বিশ্ব আরচ্যারি চ্যাম্পিয়নশিপের রিকার্ভ পুরুষ এককে ব্রোঞ্জপদক জিতে এই তীরন্দাজ সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। ১৩ জুন আসরের সেমিফাইনালে উঠেই রোমান যোগ্যতা অর্জন করেন ২০২০ টোকিও অলিম্পিকে সরাসরি খেলার। দেশসেরা গলফার সিদ্দিকুর রহমানের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে কোটা প্লেসে অলিম্পিকে খেলবেন রোমান সানা। সিদ্দিকুর ২০১৬ সালে কোট প্লেস পেয়ে ব্রাজিল অলিম্পিকে খেলেছিলেন। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে মালয়েশিয়ান প্রতিপক্ষ খাইরুল আনোয়ারের কাছে হারলেও ১৬ জুন ব্রোঞ্জের লড়াইয়ে ইতালি’র প্রতিপক্ষ মৌরো নেসপোলিকে ৭-১ সেট পয়েন্টে হারিয়ে বিশ্ব আরচ্যারি চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে দেশের পক্ষে প্রথম পদক জিতে নেন রোমান সানা। তার এই সাফল্যে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে বাংলাদেশের আরচ্যারি। দেশের ক্রীড়াবোদ্ধারা মনে করেন, টোকিও অলিম্পিক গেমসেও কিছু একটা করে দেখাবেন রোমান। তাদের বক্তব্য, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে যে ক্রীড়াবিদ পদক জিততে পারেন, তার অবশ্যই যোগ্যতা আছে অলিম্পিকে ভালো করার।
অলিম্পিক বরাবরই আমাদের কাছে স্বপ্নের এক ক্রীড়া আসর। যেখানে স্বাধীনতার চার দশক পরে এসেও প্রায় সব ক্রীড়া ডিসিপ্লিনেই বাংলাদেশের অংশগ্রহণ শুধু মাত্র অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য, সেখানে অলিম্পিকে খেলা অনেক বড় কৃতিত্বের। তাও আবার সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করা। কিছুদিন আগেও একমাত্র ক্রিকেট ছাড়া অন্যান্য ক্রীড়া ডিসিপ্লিনে বাংলাদেশ খেলতো শুধুমাত্র অংশগ্রহণ করার জন্যই। এক সময় লাল-সবুজ ফুটবলের জনপ্রিয়তা থাকলেও এখন তা কমে প্রায় শূণ্যের কোটায় এসে দাঁড়িয়েছে। মূলত ধীরে ধীরে বাংলাদেশের ক্রিকেট উঠে আসায় ফুটবলের জোয়ার কমে যায়। ফুটবলে যেখানে লাল-সবুজরা দক্ষিণ এশিয়ার গন্ডি পেরুতে পারেনা, সেখানে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে দাপটের সঙ্গেই খেলে বাংলাদেশ। কালের বিবর্তনে ক্রিকেট এখন দেশের শীর্ষ ক্রীড়া ডিসিপ্লিনের মর্যাদা পেলেও ফুটবল কিন্তু আবার উঠে আসার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে বয়সভিত্তিক নারী ফুটবলে এখন বাংলাদেশের মেয়েরা দারুণভাবে উঠে আসছে। এছাড়া অন্যসব খেলায় তেমন সফলতা না থাকলে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অর্জন দক্ষিণ এশিয়ার অলিম্পিক খ্যাত সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমস থেকে পদক জয়।
মনে আছে ২০০২ সালের কথা? ওই বছর ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে বসেছিলো কমনওয়েলথ গেমসের ১৭তম আসর। বরাবরের মতোই ওই আসরে বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা শুধুই নিয়মরক্ষার জন্য অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ একদিন আসলো সুখবর। আসিফ হোসেন খান নামের পাবনার এক তরুণ ম্যানচেস্টার কমনওয়েলথ গেমসের শ্যুটিং ডিসিপ্লিনে সোনা জিতেছেন। তিনি আসরের ১০ মিটার এয়ার রাইফেল ইভেন্টে স্বর্ণপদক জয় করে সবাইকে চমকে দেন। চারদিকে হইচই পড়ে যায়। রাতারাতি তারকা বনে যান আসিফ। তাকে নিয়ে বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখা শুরু করে অলিম্পিক পদক জেতার। কিন্তু যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাকে অলিম্পিকের জন্য তৈরি করার কথা ছিলো তার কিছুই দেয়া হয়নি। উল্টো ২০০৬ সালে অনুশীলনের জন্য স্টেডিয়ামে প্রবেশের পথে পুলিশ তাকে মারধর করে। জখম হয় তার হাত দুটো। সুস্থ হয়ে আবার খেলা শুরু করলেও আস্তে আস্তে হারিয়ে যান আসিফ হোসেন খান। এখন খেলা ছেড়ে তিনি বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) কোচিং করাচ্ছেন। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হলো ভারতের যে শ্যুটার অভিনব বিন্দ্রাকে হারিয়ে আসিফ কমনওয়েলথে স্বর্ণ জিতেছিলেন, ওই বিন্দ্রাই ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে স্বর্ণ জিতে তার দেশকে গর্বিত করেছেন। আর বাংলাদেশের আসিফ হারিয়ে যান কালের অতল গহবরে!
বিশ্ব আরচ্যারি চ্যাম্পিয়নশিপে নেদারল্যান্ডস থেকে সদ্য ব্রোঞ্জপদক জয়ী তীরন্দাজ রোমান সানার ক্ষেত্রেও কী এমনটা ঘটবে? যিনি টোকিও অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। যে খেলাটি সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষ তেমনটা জানেই না, সেই খেলাতেই বাজিমাত করেছেন রোমান। নেদারল্যান্ডসের আরচ্যারি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে তিনি খেলেছেন বিশ্বের ৯২টি দেশের ২০০ প্রতিযোগির সঙ্গে লড়াই করে। এটা বিদেশের মাটিতে রোমানের প্রথম পদক জয় নয়। এর আগে দু’টি স্বর্ণপদক জিতেছিলেন তিনি বিদেশের মাটিতে। ২০১৪ সালে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে প্রথম এশিয়ান আরচ্যারি গ্রাঁ প্রি এবং ২০১৭ সালে কিরগিজস্তানে ‘আন্তর্জাতিক আরচ্যারি টুর্নামেন্ট থেকে স্বর্ণ জিতেছিলেন রোমান। কিন্তু বিশ্বকাপে পদক জেতার মাহাত্মই আলাদা। তাছাড়া বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে আগামী অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন কম কথা নয়। তাকে নিয়ে বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখতেই পারে। এখন বাংলাদেশ আরচ্যারি ফেডারেশনের উচিত হবে রোমান’কে দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণের আওতায় আনার। যদিও তারা এ কাজটি করবে বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইতোমধ্যে আরচ্যারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজিব উদ্দিন আহমেদ এবং পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের কর্মকর্তারা ঘোষণা দিয়েছেন যে, টোকিও অলিম্পিকে খেলার জন্য রোমান সানা’র সব ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা তারা করবেন।
বিশ্ব আরচ্যারি চ্যাম্পিয়নশিপের সফল মিশন শেষে ১৯ জুন দেশে ফিরে আসেন লাল-সবুজের কৃতি তীরন্দাজ রোমান সানা সহ বাংলাদেশ জাতীয় আরচ্যারি দল। ওইদিন সকালে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছানোর পর যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো: জাহিদ আহসান রাসেল, এমপি উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশ আরচ্যারি দলকে। বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা শেষে জাতীয় আরচ্যারি দলকে সংবর্ধনা দেয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম সংলগ্ন শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্সে। এখানে সংবর্ধনায় সিক্ত হন দেশের কৃতি আরচ্যার রোমান সানা ও জাতীয় আরচ্যারি দল। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রোমান সানা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই সংবর্ধনা আমাকে টোকিও অলিম্পিকে খেলায় অনুপ্রাণিত করবে। আশা করি আমাদের পুরুষ রিকার্ভ দলটিও খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে। আগামী বছরের জুনে অলিম্পিকের আগে জার্মানির বার্লিনে ওয়ার্ল্ড আরচ্যারি চ্যাম্পিয়নশিপেই যোগ্যতা যাচাই হবে।’ অনুষ্ঠানে আরচ্যারি ফেডারেশনের পক্ষ থেকে জাতীয় দলের খেলোয়াড়, কর্মকর্তা ও কোচদেরকে ক্রেস্ট উপহার দেয়া হয় এবং জাতীয় আরচ্যারি দলের পৃষ্ঠপোষক সিটি গ্রুপ পুরস্কার হিসেবে রোমান সানা’কে দেয় ২ লাখ টাকার চেক। হয়তো সামনে তার জন্য আরো পুরস্কার অপেক্ষা করছে। কিন্তু পুরস্কারের চেয়ে রোমানের এখন বেশি প্রয়োজন পর্যাপ্ত গাইডলাইন, ভালো কোচ ও নিবিড় অনুশীলন। নইলে অতীতের আসিফ হোসেন খানদের মতই হারিয়ে যাবে রোমানরাও। আবার হতাশ হতে হবে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।