নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
![img_img-1720345249](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678440025_nnn.jpg)
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার তিনি। এই মুকুট মাথায় নিয়ে টানা তিন বিশ্বকাপে খেলতে নামা একমাত্র ক্রিকেটারও তিনিই। ইংল্যান্ডে ব্যাট হাতে যার শুরুটাও হয়েছিল দুর্দান্ত। বিশ্বকাপটাই যেন করে নিয়েছেন নিজের একার সম্পত্তি! দুর্দান্ত ব্যাটিং কিংবা ঘূর্ণির জাদুতে- যেখানেই হাত দেন ফলে সোনা। শুরু থেকেই মেতেছেন রেকর্ড ভাঙাগড়ার খেলায়। ব্যাটিংয়েই কি সাবলীল, দুর্দান্ত! মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে পেয়েছেন ব্যাক-টু-ব্যাক সেঞ্চুরি। একটি ম্যাচ বাদে সব ক’টিতেই খেলেছেন পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস। ৬ ম্যাচে ২ সেঞ্চুরি আর ৭ ফিফটিতে পাঁচশো’র কাছাকাছি (৪৭৬) রান নিয়ে এখনও তার নামটি জ্বলজ্বল করছে তালিকার শীর্ষে। কিন্তু গতকালের আগ পর্যন্ত বোলার সাকিবকে যেন দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। যারাই তার অলরাউন্ড খেতাব নিয়ে ‘সন্দেহ’ করছিলেন, একদিনের ব্যবধানে তারাই এখন সাকিবের কীর্তিতে দিচ্ছেন করতালি! দৃশ্যপটে আবির্ভাব যে রাজার মতই!
রোজ বোল যেন মালা নিয়ে অপেক্ষায় রেকর্ডের বরপুত্রকে বরণ করে নিতে। শুরু থেকে শুরু করি। সুযোগ এসেছিল আগের ম্যাচেই। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিপুল রান তাড়ায় ৪১ বলে ৪১ রানে থেমে গেলে বাড়ে অপেক্ষা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে এই মাইলফলকে যেতে তাই ৩৫ রান লাগত সাকিব আল হাসানের। তিনে নেমে প্রতি ম্যাচেই ব্যাটিংয়ে ঝলক দেখানো সাকিব সাবলীল ব্যাট চালিয়ে দ্রæতই স্পর্শ করলেন তা। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সাকিবের নামের পাশে যোগ হয়ে গেছে এক হাজার বিশ্বকাপ রান। বিশ্বকাপে রান সংগ্রহে সাকিব ছাড়িয়ে গেছেন সৌরভ গাঙ্গুলি, মার্ক ওয়াহদের মতো তারকাদেরও।
উইকেট মন্থর, মাঠ বড়। আফগান অফ স্পিনার মুজিব-উর-রহমান আর মোহাম্মদ নবিকে সামলাতে কৌশল বদলে নামে বাংলাদেশ। তামিম ইকবালের সঙ্গে ইনিংস ওপেন করতে নামেন লিটন দাস। শুরু থেকে তিনিও ছিলেন সাবলীল। মুজিবের বলে দলের ২৩ রানে তিনি ক্যাচ দিয়ে ফেরত গেলে ক্রিজে আসেন সাকিব। দ্বিতীয় উইকেটে তামিমের সঙ্গে গড়েন ৫৯ রানের জুটি। তাতে সাকিবই ছিলেন বেশি স্বচ্ছন্দ। ৫৩ বলে ৩৬ রান করে তামিম ফেরার পর মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে দলকে টেনেছেন সাকিব। উইকেটের ভাষা পড়ে অতটা আগ্রাসী হননি। এক, দুই রান নিয়ে এগিয়েছেন দেখে শুনে। ৪৫ বলে ৩৫ রানে যেতে সাকিব মেরেছেন মাত্র একটি বাউন্ডারি। বিশ্বকাপে এক হাজার রান ছুঁতে সাকিব করেছেন ২ সেঞ্চুরি আর ৭ ফিফটি। এই মাইলফলকে পৌঁছানোর বেশ কয়েক ওভার আগেই অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নারকে (৪৪৭) টপকে এবারের আসরে রান সংগ্রহেও এক নম্বরে উঠে যান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
বিশ্বকাপে হাজার রান ও ২৫ উইকেটের ডাবল ছিল কেবল আর একজনেরই- ৩৮ ম্যাচ খেলে ১ হাজার ১৬৫ রানের পাশাপাশি ২৫টি উইকেট নিয়েছিলেন লঙ্কান কিংবদন্তি সনাৎ জয়সুরিয়া। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জার্সিতে সবচেয়ে বেশি রান করায় সাকিবের পরেই আছেন মুশফিকুর রহিম। ২৬ ম্যাচে ৮৩৭ রান করেছেন তিনি। গতকালও ছিল অনন্য এক কীর্তিতে সাকিব-মাহমুদউল্লাহর পাশে বসার সুযোগ। দলকে টেনে নেওয়া ইনিংসটি আরেকটু দীর্ঘ করতে পারলেই ব্যাক-টু-ব্যাক সেঞ্চুরি পেতেন ৮৩ রানে ফেরা এই অভিজ্ঞ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। তারপরই সাকিবের সমান ২৭ ম্যাচ খেলে তামিম আছেন ৬৮২ রানে।
২০০৭ বিশ্বকাপে প্রথমবার নেমেই ভারতের বিপক্ষে ফিফটি করেছিলেন সাকিব। এরপর খেলেছেন ২০১১ আর ২০১৫ বিশ্বকাপে। আগের তিন বিশ্বকাপ মিলিয়ে যেখানে তার রান ছিল ৫৪৬। সেখানে এবার এক বিশ্বকাপেই ছাড়িয়ে গেছেন সাড়ে চারশোর কোটা। এগিয়ে যাচ্ছেন আরও বড় কিছুর দিকে।
বরাবরের মতো সেই যাত্রাপথে পাশে পাচ্ছেন বিশ্বস্ত মুশফিককে। এই জুটির রসায়নও দুর্দান্ত। বাংলাদেশের সফলতম জুটি আরেকবার হাল ধরেছিল দলের। জুটির রান বড় হয়নি। কিন্তু নতুন কীর্তি গড়েছেন দুজন। বাংলাদেশের সফলতম জুটির রান তিন হাজার ছাড়িয়েছে। ৮২ ইনিংসে তাদের জুটি থেকে এসেছে ৩০১৭ রান। তাদের দুজনের কাছাকাছিও নেই কোনো জুটি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০৪৩ রান করেছেন মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ।
নড়বড়ে তামিম ইকবাল সাজঘরে ফেরার পর ব্যাটিংয়ে আসেন মুশফিক। তৃতীয় উইকেটে সাকিবকে নিয়ে গড়েন ৬১ রানের জুটি। বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যাটিং করেন দুজন। ৫১ বলে তাদের জুটি ছুঁয়ে ফেলে পঞ্চাশ। ব্যাটিং ধারাবাহিকতায় এগিয়ে যান দুজন। মনে হচ্ছিল আজও তাদের জুটির রান বড় হবে। সাকিব ফিরে যাওয়ায় সেই সুযোগটি হয়নি।তবে ম্যাড়ম্যাড়ে উইকেটে দুজন লড়াই করে রানের চাকা সচল রাখেন দারুণভাবে। ৩৯.১৮ গড়ে রান তোলেন এই জুটি। ৬টি শতরানের জুটির পাশাপাশি তাদের জুটিতে আছে ১৯টি হাফ সেঞ্চুরি। ২০১৪ সালে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৪৮ রান তুলেছিলেন দুজন। যা তাদের সর্বোচ্চ রানের জুটি। এ ছাড়া শতরানের বাকি জুটিগুলো হলো, ১১৬ (জিম্বাবুয়ে), ১০৫ (জিম্বাবুয়ে), ১১৪ (আফগানিস্তান), ১৪২ (দক্ষিণ আফ্রিকা) ও ১০৬ (ইংল্যান্ড)।
এতো গেল ব্যাটসম্যান সাকিবের রেকর্ড নামা। অলরাউন্ডার হতে হলে তো বোলিংও চাই। সাউদাম্পটনে নিজের প্রথম ওভারেই আফগান ওপেনার রহমত শাহর উইকেট তুলে নেওয়ার মধ্যদিয়ে রেকর্ডের গোড়াপত্তনের শুরু। বিশ্বমঞ্চে সাকিবের উইকেট বেড়ে দাঁড়ায় ২৯-এ। টপকে যান ২৬ ম্যাচে ২৮ উইকেট পাওয়া ভারতের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার কপিল দেবকে। পাশে তখন ইংল্যান্ডের ফিল ডেফ্রেইটাসের। ব্যাট হাতে ৫০ প্লাস আর বল হাতে কমপক্ষে ১ উইকেট এমন কীর্তিতে সপ্তমবার নাম লেখালেন সাকিব। যা বিশ্বরেকর্ডও বটে। সাকিবের পরেই আছেন দিলশান, লঙ্কান এই অলরাউন্ডার এই কীর্তিতে নাম লিখিয়েছেন ৬ বার।
এর পরের শিকারটি গুলবাদিন নাইব। আফগান অধিনায়ককে লিটন দাসের ক্যাচে পরিণত করেই পেয়ে গেলেন আরেক বিশ্বরেকর্ডের দেখা।
এর আগে বিশ্বকাপে ৯০০ রান ও ২৫ উইকেটের ‘ডাবল’ ছিল সাকিবসহ মাত্র তিনজন ক্রিকেটারের। বাকি দুজন ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ ওয়াহ ও শ্রীলঙ্কার সনাথ জয়াসুরিয়া। তিনটি বিশ্বকাপে (১৯৮৭, ১৯৯২ ও ১৯৯৯) মোট ৩৩ ম্যাচ খেলে ৯৭৮ রানের সঙ্গে ২৭ উইকেট পেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি অধিনায়ক ওয়াহ। জয়াসুরিয়া খেলেছেন পাঁচটি (১৯৯২-২০০৭) বিশ্বকাপে ৩৮ ম্যাচ। ১১৬৫ রানে পাশাপাশি বাঁ হাতি স্পিনে পেয়েছেন ২৭ উইকেট।
পরের একে একে তুলেছেন আসগর আফগান, মোহাম্মদ নবী আর নাজিবুল্লাহ জাদরানকে। ব্যাস হয়ে গেল কীর্তি! বিশ্বকাপে এই প্রথম ম্যাচে ৫ উইকেট নিলেন কোনো বাংলাদেশি বোলার। বিশ্বকাপের ৫৮তম, এবারের আসরই এর মধ্যে দেখে ফেলেছে ৪টি। বিশ্বমঞ্চের এক ম্যাচে ৫০ রান ও ৫ উইকেট নেওয়া মাত্র দ্বিতীয় নামটিও সাকিব। ২০১১ বিশ্বকাপে এই ডাবল করে দেখিয়েছিলেন ভারতের যুবরাজ সিং। ডাবলের কীর্তি আছে আরো। এদিনই ছুঁয়েছেন বিশ্বকাপের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০০ রান ও ৩০ উইকেটের ডাবল। তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপের একই আসরে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিলেন তিনি! দিনশেষে বাংলাদেশের জয়ের হাসির পাশে তিলক হয়ে রইলো সাকিবের ১০-১-২৯-৫ স্পেলটি। যা বাংলাদেশি কোন বোলারের বিশ্বকাপেতো বটেই, ওয়ানডেতে এমনকি ইংল্যান্ডেও সেরা বোলিং ফিগার। এখন পর্যন্ত এবারের বিশ্বকাপেও সেরা বোলিং।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।