নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
সাইফউদ্দিনের লেন্থ বল গুড়িয়ে দিল মুজিব-উর রহমানের স্টাম্প। উইকেটের পাশেই জয়ের আনন্দে মেতেছে বাংলাদেশ। ভাবিত শান্ত ভঙ্গিতে ধীর পায়ে দলের সেই উদযাপনে যোগ দিলেন সাকিব আল হাসান। যেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে পাওয়া বাংলাদেশের এই জয় আর দশটা জয়ের মতই।
চলতি বিশ্বকাপের ৩১তম ম্যাচে গতকাল বাংলাদেশের ২৬২ রানের জবাবে ২০০ রানে গুটিয়ে যায় আফগানিস্তান। আসরে বাংলাদেশের আগের দুই জয়ের মত গতকালের ৬২ রানের জয়টাও ছিল সাকিবময়। এই ম্যাচে তার কীর্তি অবশ্য আগের সবকিছুকেই ছাড়িয়ে গেছে। ম্যাচকে ঘিরে সাকিব ফিরিস্তি গাইতেই বয়ে যাবে অনেক সময়। বাঁ-হাতি গড়েছেন অনেকগুলো রেকর্ড। প্রথমে ব্যাটে এসে আসরে পঞ্চম পঞ্চাশোর্ধো ইনিংসে গড়ে দিয়ে যান শক্ত ভীত। সেই ভীতের উপর দাঁড়িয়ে দায়ীত্বশীল ব্যাটিং করেছেন মুশফিকুর রহিম।
বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন আস্থা রাখার মত পুঁজি। পরে বল হাতে সাকিব দেখা দেন আরো দানবীয় হয়ে। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বকাপে নিয়েছেন ইনিংসে পাঁচ উইকেট (৫/২৯)। ভারতের যুবরাজ সিংয়ের পর দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে গড়েছেন ইনিংসে পঞ্চাশ রান ও পাঁচ উইকেটের ডাবলের রেকর্ড। এই ম্যাচেই প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে পেরিয়েছেন বিশ্বকাপে এক হাজার রানের মাইলফলক। বিশ্বকাপে ৩০ উইকেট ও এক হাজার রানের ডাবলে পা রাখা একমাত্র খেলোয়াড়ও বিশ্বসেরা এই টাইগার অলরাউন্ডার। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশিবার (তিন) ম্যাচ সেরা হওয়া বাংলাদেশীও এখন সাকিব। এমন দিনে আবার আসরের সর্বোচ্চ (৪৭৬) রান সংগ্রহকারীর তালিকায় উঠে এসেছেন শীর্ষে।
সাউদাম্পটনের রোজ বোলের এই উইকেটের পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল আগেই। দুই দিন আগে এই মাঠেই আফগানদের হারাতে তিরঘাম ছুটে গিয়েছিল বিশ্বকাপ ফেভারিট ভারতের। ২২৪ রানের পুঁজি নিয়েও তারা ম্যাচ জিতেছিল অবলীলায়। একই স্লো উইকেটে রশিদ-মুজিব-নবিদের স্পিন সামলানোই ছিল বাংলাদেশের সামনে মূল চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জে শুধু জয় নয়, আফগানিস্তানের সাথে বাংলাদেশের শক্তির পার্থক্যটাও বুঝিয়ে দিয়েছে সাকিব-মুশফিকরা।
টসজয়ী আফগানিস্তানের বোলিংটা মন্দ হয়নি। রানের জন্য লড়াই করতে হয়েছে টাইগার ব্যাটসম্যানদের। থিতু হয়েও ইনিংস টেনে লম্বা করতে পারেননি তামিম ইকবাল, লিটন দাশ, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা। তবে সাকিব ও মুশফিকের সঙ্গে কার্যকরী জুটিতে কেউ না কেউ রেখেছেন অবদান। আফগানিস্তানের ফিল্ডিংটা আরেকটু ভালো হলে অন্তঃত ২০-২৫ রান তারা সেভ করতে পারত।
বাংলাদেশের ইনিংসের প্রাণ বলা যায় মুশফিকুর রহিমের ৮৭ বলে চার বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় করা ৮৩ রানের ইনিংসটি। এই ইনিংস দিয়েই তামিম ও সাকিবের পর তৃতীয় বাংলাদেশী হিসাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১১ হাজার রানের মাইলফলক পেরিয়েছেন মুশফিক। এসময় দায়ীত্বশীল ব্যাটিংয়ে সাকিব ও মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে গড়েন দুটি ফিফটি ও মোসাদ্দেকের সঙ্গে একটি চল্লিশোর্ধো রানের জুটি। এদিনই সাকিব-মুশফিক জুটি ছাড়িয়েছে তিন হাজার রানের মাইলফলক। সাকিবের ৬৯ বলে এক বাইন্ডারিতে করা ৫১ রানের ইনিংসই বলে দেয় এই উইকেটে রান তোলা কতটা কঠিন ছিল। তামিম ৩৬ রান করতে লেগেছে ৫৩ বল।
বাংলাদেশের শুরুটা ছিল লিটনের মন খারাপ করা আউটের মধ্য দিয়ে। দলীয় ২৩ রানে লিটনকে শর্ট কাভারে নেওয়া হাশমতউল্লাহ শহিদি ক্যাচটা মাটি স্পর্শ করেছিল কি-না এই বিতর্কে হয়ত এখন আর যাবে না টাইগার ক্রিকেট ভক্তরা। কিন্তু ম্যাচ হারলে নিশ্চিত উগ্র টাইগার ভক্তদের তোপের মুখে পড়তেন টিভি আম্পায়ার আলিম দার। গ্রাউন্ড আম্পায়ার ‘সফট সিগনালে’ আউট দেখিয়ে আলিম দারের স্বরণাপন্ন হন। সেখানে বার বার রিপ্লে দেখে গ্রাউন্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে বহাল থাকেন আলিম দার। অথচ রিপ্লে দেখে মনে হচ্ছিল ক্যাচ নেয়ার সময় বল মাটি স্পর্শ করেছিল। সৌম্যের লেগ বিফোরে নেওয়া রিভিউয়েও প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত দেন এই পাক আম্পায়ার। লিটন ধাক্কা দ্রæতই সামলে নেন তামিম-সাকিব জুটি। এরপর ছোট কিন্তু কার্যকরী জুটিতে এগোয় বাংলাদেশ।
শেষ দিকে মুশফিকের সঙ্গে ৩৩ বলে ৪৪ রানের মূল্যবান জুটিতে ২৪ বলে ৩৫ রানের ক্যামিও উপহার দেন দলে ফেরা মোসাদ্দেক। বাংলাদেশ পায় ৭ উইকেটে ২৬২ রানের বিশ্বাসী সংগ্রহ।
আফগান শিবিরে যাকে নিয়ে বেশি ভয় ছিল সেই রশিদের ১০ ওভারে আসে ৫২ রান। ৩৯ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সফল বোলার মুজিব।
সাত ম্যাচে তৃতীয় জয়ে পয়েন্ট তালিকার পাঁচে উঠে এসেছে টাইগাররা। এক ম্যাচ কম খেলে এক পয়েন্ট বেশি নিয়ে চারে ইংল্যান্ড। ১১ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে নিউজিল্যান্ড। শীর্ষ সাত দলের পয়েন্ট পার্থক্য এক করে।
সেমিফাইনালে যেতে শেষ তিন ম্যাচ বাংলাদেশের সামনে কার্যত পরিণত হয়েছে নক আউট ম্যাচে। এর প্রথমটি জিতে এক ধাপ এগিয়ে গেল মাশরাফি বাহিনী। সামনে রইল ভারত ও পাকিস্তান বাধা। দলে সাকিব থাকলে সেই বাধা পেরুনোর দুঃসাহস দেখাতেই পারে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ২৬২/৭
আফগানিস্তান : ৪৭ ওভারে ২০০
ফল : বাংলাদেশ ৬২ রানে জয়ী
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।