নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
তিনশো ছড়ানো ইনিংস যেমন আছে, তিনশোর্ধ রান তাড়া করে জিতেছেও বেশ কিছু দল। গতি আর স্যুইংয়ের পসরা সাজিয়ে পেসাররা যেমন করেছে উল্লাস, ঘূর্ণির জাদুকরী ছোবলে প্রতিপক্ষের বুকে কাঁপন ধরিয়েছেন স্পিনাররাও। তারপরও কোথায় যেন একটা ছন্দপতন ছিল গোটা আসর জুড়েই। কেমন যেন পানসে, একতরফা হতে বসেছিল বিশ্বকাপ। অবশেষে মাঝ পথ ছাড়িয়ে এসে সেই ছন্দ খুঁজে পেয়েছে বিশ্বকাপ। অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন না হলেও গত চারদিনের রোমাঞ্চকর চার ম্যাচে আমূলে বদলে গেছে লিগ টেবিলের চেহারা। ক্রিকেট বিশ্বকাপ পেয়েছে আসল বিশ্বমঞ্চের মাধুর্য্য।
ইংল্যান্ডকে ২০ রানে হারিয়ে চমকের শুরুটা করেছিল শ্রীলঙ্কা। তার আগের দিন অবশ্য রোমাঞ্চকর এক ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে একাই হারিয়ে দিয়েছেন কেন উইলিয়ামসন। আর গত পরশু দুটি ম্যাচের ফলে অবশ্য কোনো চমক নেই। অপেক্ষাকৃত ভালো দুটি দলই জিতেছে। কিন্তু ম্যাচ দুটি দেখে থাকলে বলতে হবে, এমন রাত যেন বারবার আসে! দুপুরে আসরের অন্যতম ফেভারিট ভারতের বুকে কাঁপন তুলে মাত্র ১১ রানে হেরে যায় লড়াকু আফগানিস্তান। আর রাতে যেন বিশ্বকাপের সকল সৌন্দর্য্যরে পসরা সাজিয়ে বসেছিল নিউজিল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ। বার বার রঙ বদলের ম্যাচটি ক্যারিবিয়ানরা হেরে যায় ৫ রানে। তবে হাজারো ভক্তের মন জয় করে নিয়েছেন সেঞ্চুরিয়ান কার্লোস ব্রাথওয়েট। আজ কি তেমনই আরেক রোমাঞ্চের অপেক্ষা করছে সাউদাম্পটনে? রোজ বোলের এই মাঠেই যে সেমির কক্ষপথে ফেরার স্বপ্ন নিয়ে সেই আফগানদের মুখোমুখি বাংলাদেশ।
এই বিশ্বকাপে এখনও একটাও ম্যাচ জেতেনি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটি। উড়তে থাকা ভারতের কাছে মাত্র ১১ রানে হারার পর স্বাভাবিকভাবেই অনেক বেশি আত্মবিশ্বাস নিয়ে আজ খেলতে নামবে আফগানরা। এবারও খেলা সাউদাম্পটনেই। ব্রিটেনের আবহাওয়া অফিস বলছে, আজ সারাদিনই শুকনো রোদ থাকবে দক্ষিণ সমূদ্রপাড়ের এই শহর। তাই ভারত-আফগানিস্তান ম্যাচের মতই স্পিনাররা প্রধান ভূমিকা নিতে পারেন এ ম্যাচেও। গুলবাদিন নাঈবও আবার চেষ্টা করবেন স্পিনের সাঁড়াশি আক্রমণে বাংলাদেশকে বেঁধে ফেলতে। তবে তাদের ব্যাটসম্যানরা বড় ইনিংস না খেললে জেতার আশা খুব কম। দলে আছে মোহাম্মদ নবীর মতো জাত লড়াকু। ব্যাটে-বলে ভারতের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত খেলেছিলেন আফগানিস্তানের সবথেকে অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। রশিদ-মুজিবের সঙ্গে আজও তাঁর অফস্পিনকে কাজে লাগাতে পারে আফগানরা, কারণ বাংলাদেশের টপ অর্ডারে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের যে ছড়াছড়ি। সেই সঙ্গে তার ব্যাটিং তো আছেই।
ঠিক তার উল্টো চিত্র বাংলাদেশ শিবিরে। গত তিন ম্যাচের তিনটিতেই ৩২০র’ বেশি রান দিয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাটসম্যানদের কাজ হালকা করার দায়িত্ব নিতেই হবে বোলারদের। ধারহীন নির্বিষ বোলিংয়ের সঙ্গে ভাবাচ্ছে ফিল্ডিংটাও। গত তিনটে ম্যাচের তিনটেতেই ৩২০র বেশি রান দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে সাকিব আল হাসানকে তিন নম্বরে তুলে আনার পর থেকেই একের পর এক বড় স্কোর গড়ছে মাশরাফির দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে রান তাড়ায় ৩২২ তুলতে মাত্র ৪১.৩ ওভার নিয়েছিলেন সাকিব-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা; তারপর মুশফিকের হার না মানা সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ৩৮২ তাড়া করে তারা ৮ উইকেটে ৩৩৩ নিয়ে শেষ করে বাংলাদেশ। তা যে দলের ব্যাটিং-ই ভালো হোক আফগান স্পিনাররা তো আর পাল্টাচ্ছেন না! তাঁদের তূণের বিষ একই থাকবে। কৌশলের বিষ দিয়ে সেই বিষক্ষয় করা যাবে কি না, সেটাই প্রশ্ন।
ভারতের তারকাসমৃদ্ধ ব্যাটিং অর্ডার কিন্তু পারেনি। ‘রহস্য’ স্পিনার খ্যাত রশিদ খান এবং মুজিব উর রহমানের বিপক্ষে তাঁদের হাঁসফাঁস করা ছিল চোখে পড়ার মতো। আসলে মন্থর উইকেটে চার আফগান স্পিনারেই ভুগেছে ভারত। দেখে মনে হয়নি এ দলটাই নাকি ‘ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্পিন খেলতে পারে’! কাল রোহিত-ধোনিদের স্পিনজালে হাঁসফাঁস করা দেখে বাংলাদেশের সমর্থকেরা নিশ্চয়ই ভাবছেন, ভারতেরই যদি এমন ত্রাহি ছুটে যায় তাহলে মাশরাফির দলের কী হবে!
সবার আগে যে কথাটি বলা যায়, নতুন ম্যাচ মানেই সবকিছু নতুন করে শুরু করা। রশিদ-মুজিব যে আজও বিষ ছড়াবেন, সেই নিশ্চয়তা দিচ্ছে কে? ছড়ালেও সমাধান ব্যাটসম্যানেরাই সবচেয়ে ভালো জানেন। বিপিএলের সুবাদে আফগান স্পিনাররা তামিম-মুশফিকদের কাছে চেনা বইয়ের মতো। স্পিন পড়তে খুব একটা অসুবিধা হওয়ার কথা না। আর বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানেরাও আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। মাইকেল হাসি এ কারণেই অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে তুলনাটা টেনেছেন। আর দলে আছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার স্পিনার সাকিব আল হাসান, চোট কাটিয়ে ফিরেছেন মোসাদ্দেক হোসেন, মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে কিছুটা শঙ্কা থাকলেও বল হাতে দেখা যাবে মিতব্যয়ী এই বোলারকে। সব মিলিয়ে আফগানদের স্পিন জাল ফেলা আর মুশফিকদের সেই জাল কাটতে দেখার দুর্দান্ত একটা লড়াই আশা করাই যায়। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ট্রেন্টব্রিজে চোখধাঁধানো অপরাজিত শতরান করেছিলেন মুশফিক। চার বছর আগে বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ৭১ করে ম্যাচ জেতান তিনি। এদিনও তাঁর থেকে বড় স্কোর আশা করবে বাংলাদেশ।
প্রাথমিক পর্বে তিনটি ম্যাচ বাকি বাংলাদেশের। দুটি জিতলেও হয়তো গাণিতিক সম্ভাবনা থাকবে সেমি-ফাইনাল খেলার। তবে সেক্ষত্রে নির্ভর করতে হবে অনেক যদি-কিন্তুর ওপর। তিনটির সবকটি জিতলেও আসতে পারে সমীকরণ, তবে তখন সম্ভাবনা উজ্জ্বল হবে অনেকটাই। এই বাস্তবতা খুব ভালোভাবে জানে বাংলাদেশ দলও। আগের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারলেও দারুণ লড়াইয়ের পর আত্মবিশ্বাস বেড়েছে দলের। গত এশিয়া কাপে সবশেষ মুখোমুখি লড়াইয়ে রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে ৫ রানে জিতেছিল বাংলাদেশ। তারপরও চমক জাগাতে পটু আফগানদের হাল্কাভাবে নেবার উপায় যে নেই!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।